নকশা
মাস তিনেক পূর্বে কথা নেই, বার্তা নেই, আমার এক বাল্যবন্ধু অফিসে এসে হাজির। অনেকদিন পরে দেখা, সম্পূর্ণভাবে ঠাহর করতে পারছি না। হঠাৎ করে কে অফিস রুমে ঢুকে পড়ল অনুমতিবিহীনভাবে এবং একটা অধিকারের ভাব নিয়ে। হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। কম্পিউটারের মনিটর থেকে চোখ দু’টি বিচ্ছিন্ন করে টেবিলের সামনে দেখলাম বল্যবন্ধু দণ্ডায়মান। তাঁকে দেখে আহত লজ্জাবতী গাছের মত চুপসে গেলাম। যার সাথে এতোদিনের উঠা-বসা, চলা-ফেরা, পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা এবং স্কুলে একই বেঞ্চে বসা, তাঁকে প্রথমে চিনতে না পেরে নিজেকে মস্ত বড় অপরাধী বোধ করতে লাগলাম। বন্ধু একজন যাজক। ব্রত জীবন ধারণ করেছেন। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তাঁর প্রবল আকর্ষণ রয়েই গেছে। তাই জীবনের মাঝপথে এসে এখনও ছাত্র। ফিলিপাইনে পড়ছে। ক্রেডিট ইউনিয়নের উপর একটি ‘থিসিস’ করছে। ক্রেডিট ইউনিয়নের সাথে জড়িত বিধায় আমার নিকট তাঁর আগমন ঘটেছে ক্রেডিট সম্পর্কে কিছু ধারণা এবং কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করার নিমিত্তে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে আমি তাঁকে কিছু ডকুমেন্ট দিলাম এবং তাঁর সাথে ক্রেডিট ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করলাম। সে প্রদত্ত ক্রেডিট ইউনিয়ন ‘মুখপত্র’ অধ্যয়ন করার চেষ্টা করলো। ‘মুখপত্র’র কোথাও কোন নকশা বা গ্রাফ খুঁজে পাওয়া গেল না। সে আমাকে সাফ সাফ বলে দিলো, মুখপত্রটি ভালো হয়নি। কারণ জিজ্ঞেস করতেই সে বললো- এখানে কোন নকশা, গ্রাফ বা তুলনামূলক চিত্র নেই। এই বিষয়টিতো আগে কখনও চিন্তা করিনি। ‘গ্রাফ আঁকা তো পরিসংখ্যানের ছাত্রদের কাজ। সব লেখায় গ্রাফ আঁকবে কিভাবে?’ সে আমাকে এই বলে উপদেশ দিলো যে- প্রতিটি লেখার সাথে একটি করে নকশা বা গ্রাফ থাকলে লেখা তথা মুখপত্রের মান ভালো হ’ত। তাঁর কথাটা মনে রাখলাম। কোন লেখা লিখলে সেখানে আমার বন্ধুর পরামর্শ মোতাবেক গ্রাফ একে দিবো বলে তাঁর সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।
কিছুদিন আগে একটি এলাকায় একটি নির্বাচন হয়ে গেল। একটি যুব সংগঠনের নির্বাচন। যুব সংগঠন বা সমিতির নির্বাচন যে এরকম হয় তা দেখে অতিশয় চিন্তিত হলাম। এ ধরনের পরিস্থিতি আরও একটি সংগঠনের নির্বাচনে হয়েছিলো। এ ধরনের নির্বাচনে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠে। আগের বৎসরগুলোতে যেখানে ৪০/৫০ জন অংশগ্রহণকারী পাওয়া যেত না, লোক ডেকে নিয়ে কার্যকরী পরিষদ গঠন করতে হতো, সেখানে ১০০০ অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতি আমাকে শুধু অবাকই করেনি, সাথে সাথে করেছে চিন্তামগ্ন ও ব্যথিত। নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়ী ভাড়া করে যুবক-যুকতীদের নির্বাচনস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। কেউ বুঝে এসেছে এবং কেউ এসেছে হুজুকে। নিবন্ধন করা হয়েছে ফ্রি। আমার আশ্চর্য লাগে, যে সংগঠনের নিজস্ব কোন ফান্ড নেই, অফিস নেই, অনুষ্ঠান করতে হয় সমাজের লোকের/প্রতিষ্ঠানের টাকায়, সেখানে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষমতায় আসতে হবে কেন? ক্ষমতার কি এতোই লোভ? চেয়ারের এতই মোহ! যে সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ১০০০ লোক হয় না সেখানে শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এতো অংশগ্রহণকারী হওয়া কি সমীচিন? এটা ভেবে দেখা অতীব জরুরী। এই কোমলমতি যুব ভাই-বোনেরা এতো টাকা পেল কোত্থেকে তার উৎসও খুঁজে দেখা প্রয়োজন। আজ দুঃখের সাথে বলতে হয়- আপনি একটি ভালো কাজ করতে চান, আপনি কোন অনুদান পাবেন না। একটি স্কুল বা অনাথ আশ্রমের কথা যদি আপনি বলেন তাহলে অনুদান তো দূরের কথা, উল্টো আপনার মাথা ঠিক আছে কি না সে বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে কুণ্ঠা বোধ করবে না অথবা গোপনে গোপনে আপানাকে পাগলাগারদে নেয়ার অভিযান শুরু হয়ে যাবে। অথচ আপনি যদি নির্বাচন করেন তবে আপনার টাকার অভাব হবে না, চারিদিক থেকে অনুদান আসতে থাকবে। লাগবে ৫ টাকা পাবেন ১০ টাকা। ‘টাকা দেবে গৌরি সেন’-এর মত অবস্থা। এটাই আমাদের সামাজের বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে। আমাদের আজ ভাবতে হবে আমরা কোন পর্যায়ে আছি। আামদের আত্মমূল্যায়ণ করার সময় এসেছে। সেক্সপিয়ারের সেই অমর বাণী 'নো দাইসেল্প'' আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। কেউ কিছু দিলেই আমাদের তা হাত পেতে নিতে হবে তাও জীবনে সঠিক নয়। এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে না ঘটুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
যাহোক, এবার আসল কথায় আসা যাক। বন্ধুর কাছে সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলাম যে, আমি আমার লেখায় গ্রাফ এঁকে দেব। পরিসংখ্যানের ছাত্রের মত বিভিন্ন ড্যাটা নিয়ে গ্রাফ আঁকতে বসলাম। গত বৎসর যেখানে ৪০/৫০ জন অংশগ্রহণকারী, এবার সেখানে ১০০০ জন। বৃদ্ধি হার অনেক বেশী। গত বৎসরগুলোতে যেখানে ছিল মাটির কাছাকাছি এ বৎসর সেখানে আকাশচুম্বি। এ ধরনের গ্রাফ সাধারণত হয় না। যে কোন বিষয় বৃদ্ধি বা হ্রাসের একটি হার বজায় থাকে। গত বৎসর ৫০ হলে এ বৎসর ১০০, আগামী বৎসর ১৫০ এরুপ। কিন্তু ৫০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০০০, তা হয় না। এ ধরনের গ্রাফ ভালো লাগলো না। বন্ধুকে মনে মনে মন্দ বলতে লাগলাম। আবার ড্যাটাগুলো দিয়ে পাই চার্ট আঁকলাম। এতেও দেখা গেল এ বৎসরের উপস্থিতি বৃত্তের প্রায় সব অংশ দখল করে আছে। বিরক্ত হয়ে সব গ্রাফ বা নকশা বাদ দিয়ে দিলাম। আবার সেই গ্রাফ বা নকশাবিহীন লেখা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করতে হলো। প্রবাসী বন্ধুও আমাকে মাফ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
কিছুদিন আগে একটি এলাকায় একটি নির্বাচন হয়ে গেল। একটি যুব সংগঠনের নির্বাচন। যুব সংগঠন বা সমিতির নির্বাচন যে এরকম হয় তা দেখে অতিশয় চিন্তিত হলাম। এ ধরনের পরিস্থিতি আরও একটি সংগঠনের নির্বাচনে হয়েছিলো। এ ধরনের নির্বাচনে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠে। আগের বৎসরগুলোতে যেখানে ৪০/৫০ জন অংশগ্রহণকারী পাওয়া যেত না, লোক ডেকে নিয়ে কার্যকরী পরিষদ গঠন করতে হতো, সেখানে ১০০০ অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতি আমাকে শুধু অবাকই করেনি, সাথে সাথে করেছে চিন্তামগ্ন ও ব্যথিত। নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়ী ভাড়া করে যুবক-যুকতীদের নির্বাচনস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। কেউ বুঝে এসেছে এবং কেউ এসেছে হুজুকে। নিবন্ধন করা হয়েছে ফ্রি। আমার আশ্চর্য লাগে, যে সংগঠনের নিজস্ব কোন ফান্ড নেই, অফিস নেই, অনুষ্ঠান করতে হয় সমাজের লোকের/প্রতিষ্ঠানের টাকায়, সেখানে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষমতায় আসতে হবে কেন? ক্ষমতার কি এতোই লোভ? চেয়ারের এতই মোহ! যে সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ১০০০ লোক হয় না সেখানে শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এতো অংশগ্রহণকারী হওয়া কি সমীচিন? এটা ভেবে দেখা অতীব জরুরী। এই কোমলমতি যুব ভাই-বোনেরা এতো টাকা পেল কোত্থেকে তার উৎসও খুঁজে দেখা প্রয়োজন। আজ দুঃখের সাথে বলতে হয়- আপনি একটি ভালো কাজ করতে চান, আপনি কোন অনুদান পাবেন না। একটি স্কুল বা অনাথ আশ্রমের কথা যদি আপনি বলেন তাহলে অনুদান তো দূরের কথা, উল্টো আপনার মাথা ঠিক আছে কি না সে বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে কুণ্ঠা বোধ করবে না অথবা গোপনে গোপনে আপানাকে পাগলাগারদে নেয়ার অভিযান শুরু হয়ে যাবে। অথচ আপনি যদি নির্বাচন করেন তবে আপনার টাকার অভাব হবে না, চারিদিক থেকে অনুদান আসতে থাকবে। লাগবে ৫ টাকা পাবেন ১০ টাকা। ‘টাকা দেবে গৌরি সেন’-এর মত অবস্থা। এটাই আমাদের সামাজের বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে। আমাদের আজ ভাবতে হবে আমরা কোন পর্যায়ে আছি। আামদের আত্মমূল্যায়ণ করার সময় এসেছে। সেক্সপিয়ারের সেই অমর বাণী 'নো দাইসেল্প'' আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। কেউ কিছু দিলেই আমাদের তা হাত পেতে নিতে হবে তাও জীবনে সঠিক নয়। এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে না ঘটুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
যাহোক, এবার আসল কথায় আসা যাক। বন্ধুর কাছে সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলাম যে, আমি আমার লেখায় গ্রাফ এঁকে দেব। পরিসংখ্যানের ছাত্রের মত বিভিন্ন ড্যাটা নিয়ে গ্রাফ আঁকতে বসলাম। গত বৎসর যেখানে ৪০/৫০ জন অংশগ্রহণকারী, এবার সেখানে ১০০০ জন। বৃদ্ধি হার অনেক বেশী। গত বৎসরগুলোতে যেখানে ছিল মাটির কাছাকাছি এ বৎসর সেখানে আকাশচুম্বি। এ ধরনের গ্রাফ সাধারণত হয় না। যে কোন বিষয় বৃদ্ধি বা হ্রাসের একটি হার বজায় থাকে। গত বৎসর ৫০ হলে এ বৎসর ১০০, আগামী বৎসর ১৫০ এরুপ। কিন্তু ৫০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০০০, তা হয় না। এ ধরনের গ্রাফ ভালো লাগলো না। বন্ধুকে মনে মনে মন্দ বলতে লাগলাম। আবার ড্যাটাগুলো দিয়ে পাই চার্ট আঁকলাম। এতেও দেখা গেল এ বৎসরের উপস্থিতি বৃত্তের প্রায় সব অংশ দখল করে আছে। বিরক্ত হয়ে সব গ্রাফ বা নকশা বাদ দিয়ে দিলাম। আবার সেই গ্রাফ বা নকশাবিহীন লেখা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করতে হলো। প্রবাসী বন্ধুও আমাকে মাফ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পি পি আলী আকবর ১১/০১/২০২১ভালো লাগলো
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০২/০১/২০২১ভালো লাগল।
-
ফয়জুল মহী ০২/০১/২০২১নান্দনিক উপস্থাপন