চট্টগ্রামে একদিন
চট্টগ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য্যরে কথা শুধু পুস্তকে অধ্যয়ন করেছি; দু'চোখ মেলে এর সজীব ও নির্মল ছবি দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করেছি বারবার; কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হয়ে উঠেনি কখনো। বৈচিত্রবিহীন জীবন কান্ডারীহীন নৌকা সদৃশ চলছে তো চলছেই। এর যেন কোন বিরাম নেই, নেই কোন ক্লান্তির লেশমাত্র। এ জীবন নৌকায় দক্ষিণা ঢেউ (কখনো ভিন দিক থেকে আসা) আঘাত হানছে তালিয়ে ফেলার নিমিত্তে, অথচ সে আঘাতকে বরন করে নিয়ে সন্মুখপানে ধেয়ে চলেছে অবিরত। এই যখন জীবনের অবস্থা; ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, তক্ষণে চট্টগ্রাম ভ্রমণের একটা সুযোগ পেলাম যা হাতছাড়া করা সম্ভব হয়নি।
৭মার্চ সেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর দিন। পূর্বের দিন গভীর রাতে ঢাকা থেকে যাত্রা আরম্ভ, উল্লেখিত দিন সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে যাত্রার যবনিকা। প্রথমে সেন্ট প্লাসিড হাই স্কুলে সবাই সমবেত হলাম, ঘুরে ঘুরে দেখলাম ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটি যা অতি প্রাচীন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুনেছি আমার ঠাকুর দাদাও সে স্কুলে বিদ্যা অর্জনের সুযোগ পেয়েছিল। মিশনারী ব্রাদার দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। জ্ঞানের আলো জ্বালাতে বিদ্যালয়টি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে সবাইকে। স্কুলের সাথে মিশন। সে মিশনের ভিতরের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম ও মনোমুগ্ধকর। চারিদিকে ফুলে-ফলে সজ্জিত বাগান, যেন সেই এদেন উদ্যান। কুমারী মারীয়ার সুন্দর ছবিটি গীর্জাটাকে যেমন করেছে ধর্মীয়ভাবে গাম্ভির্য্যপূর্ণ আবার করেছে দৃষ্টি নন্দনও। গীর্জাটা অনেকটা তেজগাঁও হলি রোজারি মিশনের পুরাতন গীর্জার ন্যায় যার কিনা তুমিলিয়া, নাগরী গীর্জার সাথে ও অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গীর্জাটা অবলোকন করলে মনে হয় দেশের সবগুলো পুরাতন গীর্জাই যেন একই কারিগরের তৈরী, আরও মনে হয় যে ঐ নির্দিষ্ট কারিগরের হাতের ছোঁয়া ছাড়া এদেশের কোন গীর্জাই প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং এ ঈশ্বরের গৃহগুলো নির্মাণ করতে করতেই তাঁর জীবনাবসান হয়েছে।
‘চিটাগং ওয়ার সেমিট্রি’ আমাদের প্রথম দর্শনীয় স্থান ছিল। একটি নাতিদীর্ঘ পাহাড় সদৃশ ভূমির নিম্নাংশে শ্যামল পরিবেশে এ কবরস্থানের অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিভিন্ন মহান ব্যক্তিদের কবরগুলো সেখানে রয়েছে সারি সারি। প্রতিটি কবরের গায়ে রয়েছে পরিচিতি ফলক। কবরস্থানে গিয়ে দু’দিনের জীবনেন কথা বারে বারে স্মরণে এসে মনকে আবেগাপ্লুত করে ফেললো। একদিন এমনি একটি স্থানে সাড়ে তিন হাত মাটির নীচে নিজেরও পাকা-পোক্ত বসত বাড়ী স্থাপন করতে হবে যা ভেবে হৃদয়ের অদৃশ্য চক্ষু দিয়ে দর দর করে পানি পড়তে লাগলো, জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার বাসনা জাগ্রত হল। জীবনে কি করেছি, জীবনে আরো মানব কল্যাণার্থে কি করতে হবে ইত্যাদি।
বাংলাদেশ আউল-বাউল-মাজারের দেশ। আমাদের দ্বিতীয় দেখার স্থান ছিলো বায়েজিৎ বোস্তামির মাজার। এই সেই বায়েজিৎ বোস্তামি, যাঁর মাতৃভক্তি কারও অজানা নয়। যাঁর মাতৃভক্তির কখা শুনলে এখনো হৃদয় জলে চক্ষু সিক্ত হয়ে যায় অজান্তে। মাজারের সামনে রয়েছে একটি বদ্ধ জলাশয়। জলাশয়ে রয়েছে বহু জল কাছিম। অনেক দর্শণার্থী খাবার কিনে সেই কাছিমগুলোকে নিজের মনে করে যতœসহকারে খাবার খাওয়াচ্ছে, যেমনটি মা তার সন্তানদের খাওয়ায়। কোন কোন দর্শণার্থী তাঁর মনোবাসনা পূরণ হবার লক্ষ্যে মাজারে দান-খয়রাৎ করে যাচ্ছে, কেউ কেউ আবার উদ্দেশ্য হাসিলের তরে বৃক্ষ ডালে সুতায় গিট বাঁধছে। যান্ত্রিক জীবনে অনেকেই এ মাজারে আসে একটু স্বস্তি¡র নিঃশ্বাস ফেলার জন্য, সৃষ্টিকর্তাকে একটু আপন মনে ডাকার জন্য।
এরপর ফয়েজ লেকের বহির্দিক ঘুরে বেড়ানো। সেখানে ছোট-ছোট দোকানে ঝিণুক সহ বাহারী জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এ ধরনের জিনিসপত্র দেখে দেখে কেটে গেল অনেকটা সময়। এরপর ফয়েজ লেকের আভ্যন্তরিক দিক দেখা। এটি একটি শুধু লেকই নয়। ফয়েজ লেক একটি পার্ক-কাম-লেক বিশেষ। এ লেকে রয়েছে বাহারী রাইডার। লেক ও রাইডারের সমন্বয়ে স্থানটি অনেকটা লেক-পার্কে পরিনত হয়েছে। এ লেকের স্বচ্ছ-স্নিগ্ধ জলের বুক চিরে ¯প্রীডবোর্ডগুলো চলছে জল পরীর মত। যা দেখে বৃক্ষ-ডালের পক্ষিকুল কাতর। এ জলে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালানোর সুযোগ থাকলে বিষযটা আরও প্রাকৃতিক মনে হত।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে আমাদের চট্টগ্রাম দেখার ইতি টানা হলো। পড়ন্ত বিকেলে আমরা পতেঙ্গায়। পশ্চিম আকাশে নিবু নিবু দিবাকরের প্রতিবিম্ব পানিতে পড়ে জলরাশি রক্তিম করে রেখেছে। প্রতিটি ঢেউ যেন মনিযুক্ত সর্পের ন্যায় জলাধারে কিলবিল করছে। আবার মূহুর্তে কোন যন্ত্র দানবের ধাক্কায় সেই সর্প মনিগুলো আগুনের স্ফুলিঙ্গের মত যেন ছিটকে যা”েচ্ছ দূর-দূরান্তে। এ এক অপূর্ব দৃশ্য! অনেক দর্শণার্থী সমুদ্রের লোনা জলে গোসল করে আনন্দ উপভোগ করছে, কেউ বা স্পীডবোর্ডে করে একটু পথ ভ্রমণ করে আবার গন্তব্যে ফিরে আসছে। অনেকে আবার পরিবার পরিজনের জন্য কিছু কেনাকাটায় ব্যস্ত। এমনিভাবে আমাদের চট্টগ্রামে কেটে গেলো একদিন।
৭মার্চ সেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর দিন। পূর্বের দিন গভীর রাতে ঢাকা থেকে যাত্রা আরম্ভ, উল্লেখিত দিন সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে যাত্রার যবনিকা। প্রথমে সেন্ট প্লাসিড হাই স্কুলে সবাই সমবেত হলাম, ঘুরে ঘুরে দেখলাম ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটি যা অতি প্রাচীন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুনেছি আমার ঠাকুর দাদাও সে স্কুলে বিদ্যা অর্জনের সুযোগ পেয়েছিল। মিশনারী ব্রাদার দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। জ্ঞানের আলো জ্বালাতে বিদ্যালয়টি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে সবাইকে। স্কুলের সাথে মিশন। সে মিশনের ভিতরের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম ও মনোমুগ্ধকর। চারিদিকে ফুলে-ফলে সজ্জিত বাগান, যেন সেই এদেন উদ্যান। কুমারী মারীয়ার সুন্দর ছবিটি গীর্জাটাকে যেমন করেছে ধর্মীয়ভাবে গাম্ভির্য্যপূর্ণ আবার করেছে দৃষ্টি নন্দনও। গীর্জাটা অনেকটা তেজগাঁও হলি রোজারি মিশনের পুরাতন গীর্জার ন্যায় যার কিনা তুমিলিয়া, নাগরী গীর্জার সাথে ও অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গীর্জাটা অবলোকন করলে মনে হয় দেশের সবগুলো পুরাতন গীর্জাই যেন একই কারিগরের তৈরী, আরও মনে হয় যে ঐ নির্দিষ্ট কারিগরের হাতের ছোঁয়া ছাড়া এদেশের কোন গীর্জাই প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং এ ঈশ্বরের গৃহগুলো নির্মাণ করতে করতেই তাঁর জীবনাবসান হয়েছে।
‘চিটাগং ওয়ার সেমিট্রি’ আমাদের প্রথম দর্শনীয় স্থান ছিল। একটি নাতিদীর্ঘ পাহাড় সদৃশ ভূমির নিম্নাংশে শ্যামল পরিবেশে এ কবরস্থানের অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিভিন্ন মহান ব্যক্তিদের কবরগুলো সেখানে রয়েছে সারি সারি। প্রতিটি কবরের গায়ে রয়েছে পরিচিতি ফলক। কবরস্থানে গিয়ে দু’দিনের জীবনেন কথা বারে বারে স্মরণে এসে মনকে আবেগাপ্লুত করে ফেললো। একদিন এমনি একটি স্থানে সাড়ে তিন হাত মাটির নীচে নিজেরও পাকা-পোক্ত বসত বাড়ী স্থাপন করতে হবে যা ভেবে হৃদয়ের অদৃশ্য চক্ষু দিয়ে দর দর করে পানি পড়তে লাগলো, জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার বাসনা জাগ্রত হল। জীবনে কি করেছি, জীবনে আরো মানব কল্যাণার্থে কি করতে হবে ইত্যাদি।
বাংলাদেশ আউল-বাউল-মাজারের দেশ। আমাদের দ্বিতীয় দেখার স্থান ছিলো বায়েজিৎ বোস্তামির মাজার। এই সেই বায়েজিৎ বোস্তামি, যাঁর মাতৃভক্তি কারও অজানা নয়। যাঁর মাতৃভক্তির কখা শুনলে এখনো হৃদয় জলে চক্ষু সিক্ত হয়ে যায় অজান্তে। মাজারের সামনে রয়েছে একটি বদ্ধ জলাশয়। জলাশয়ে রয়েছে বহু জল কাছিম। অনেক দর্শণার্থী খাবার কিনে সেই কাছিমগুলোকে নিজের মনে করে যতœসহকারে খাবার খাওয়াচ্ছে, যেমনটি মা তার সন্তানদের খাওয়ায়। কোন কোন দর্শণার্থী তাঁর মনোবাসনা পূরণ হবার লক্ষ্যে মাজারে দান-খয়রাৎ করে যাচ্ছে, কেউ কেউ আবার উদ্দেশ্য হাসিলের তরে বৃক্ষ ডালে সুতায় গিট বাঁধছে। যান্ত্রিক জীবনে অনেকেই এ মাজারে আসে একটু স্বস্তি¡র নিঃশ্বাস ফেলার জন্য, সৃষ্টিকর্তাকে একটু আপন মনে ডাকার জন্য।
এরপর ফয়েজ লেকের বহির্দিক ঘুরে বেড়ানো। সেখানে ছোট-ছোট দোকানে ঝিণুক সহ বাহারী জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এ ধরনের জিনিসপত্র দেখে দেখে কেটে গেল অনেকটা সময়। এরপর ফয়েজ লেকের আভ্যন্তরিক দিক দেখা। এটি একটি শুধু লেকই নয়। ফয়েজ লেক একটি পার্ক-কাম-লেক বিশেষ। এ লেকে রয়েছে বাহারী রাইডার। লেক ও রাইডারের সমন্বয়ে স্থানটি অনেকটা লেক-পার্কে পরিনত হয়েছে। এ লেকের স্বচ্ছ-স্নিগ্ধ জলের বুক চিরে ¯প্রীডবোর্ডগুলো চলছে জল পরীর মত। যা দেখে বৃক্ষ-ডালের পক্ষিকুল কাতর। এ জলে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালানোর সুযোগ থাকলে বিষযটা আরও প্রাকৃতিক মনে হত।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে আমাদের চট্টগ্রাম দেখার ইতি টানা হলো। পড়ন্ত বিকেলে আমরা পতেঙ্গায়। পশ্চিম আকাশে নিবু নিবু দিবাকরের প্রতিবিম্ব পানিতে পড়ে জলরাশি রক্তিম করে রেখেছে। প্রতিটি ঢেউ যেন মনিযুক্ত সর্পের ন্যায় জলাধারে কিলবিল করছে। আবার মূহুর্তে কোন যন্ত্র দানবের ধাক্কায় সেই সর্প মনিগুলো আগুনের স্ফুলিঙ্গের মত যেন ছিটকে যা”েচ্ছ দূর-দূরান্তে। এ এক অপূর্ব দৃশ্য! অনেক দর্শণার্থী সমুদ্রের লোনা জলে গোসল করে আনন্দ উপভোগ করছে, কেউ বা স্পীডবোর্ডে করে একটু পথ ভ্রমণ করে আবার গন্তব্যে ফিরে আসছে। অনেকে আবার পরিবার পরিজনের জন্য কিছু কেনাকাটায় ব্যস্ত। এমনিভাবে আমাদের চট্টগ্রামে কেটে গেলো একদিন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আমিনুল ইসলাম সৈকত ১২/০৬/২০২১সুন্দর
-
সুব্রত ব্রহ্ম ২৪/০৪/২০২১Wow. Splandid.
-
দীপঙ্কর বেরা ১৪/০২/২০২১বেশ
-
এম এম হোসেন ০৫/০২/২০২১সুন্দর
-
কাজী জহির উদ্দিন তিতাস ১৮/০১/২০২১ভাল
-
Biswanath Banerjee ১৪/০১/২০২১amazing
-
Biswanath Banerjee ১২/০১/২০২১awesome
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৮/১২/২০২০awesome
-
ফয়জুল মহী ২৮/১২/২০২০বাহ চমৎকার অনুভূতি