www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নরীর সম্মান

কবি সুফিয়া কামালের পংক্তিমালা দিয়ে লেখা শুরু করছি।
যত বীর, যত মহান মানব
জগতে এসেছে, তারে
জঠরে ধরেছে, পালন করেছে
স্তন্যদুগ্ধ ধারে
সে যে, ‘নারী’ সে যে মাতা মহিয়সী
কোথায় তুলনা তার।
সর্ব্বাংসহা জননী, শ্রেষ্ঠ
সৃষ্টি সে বিধাতার
আমরা এখনও নারীদের তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি প্রতিনিয়ত। আমাদের দেশের নারীদের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। পরিবারির বা সামাজিক প্রথা ভেঙ্গে নারীরা এখনও অনেক জায়গায় যেতে পারছেন না। অপরদিকে পুরুষরা যখন যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারছে, চলাফেরা করছে। তাদের (পুরুষদের) কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। পরিবার ও সমাজের বিধিবদ্ধ নিয়মগুলো যেন তাদের (পুরুষদের) পালনের জন্য নয়, বিষয়গুলো যেন শুধু নারীদের বেলায় প্রযোজ্য। শিক্ষা ক্ষেত্রেও নারীদের উপর বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়। এমনও দেখা যায়, কোন পরিবারে নারীদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং পুরুষদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়। ভাল মাছ বা মাছের মাথা প্রথমে পুরুষদের দেয়া হয়। অন্যান্য খাবারের বেলায়ও পুরুষদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। পরিবারে পুরুষদের খাওয়ানোর পর খাবার উদ্বৃত্ত থাকলে নারী বা মহিলারা তা খেয়ে থাকে। চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের স্থান পেছনে। পরিবারে কোন পুরুষ অসুস্থ্য হলে পরিবারের সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়, তাকে কোন ডাক্তারের কাছে নিবে, কোন হাসপাতালে ভর্তি করবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু পরিবারের কোন নারী অসুস্থ্য হলে এরকম দৃশ্য দেখা যায় না। নারীরা অসুস্থ্য হলে তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত হয়। অথচ একজন মানব সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য একজন নারীকে প্রানান্ত কষ্ট করতে হয় এবং সে সময় তার সুষ্ঠু চিকিৎসাসহ ভালো ভালো খাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হ’ল নারীদের সে সুবিধা দেয়া হয় না। নরীরা স্বভাবতই বেশী কাজ করে। রান্না থেকে শুরু করে ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে আনা-নেয়া ও তাদের লেখাপড়ার বিষয়ে তদারকি করাসহ যাবতীয় কাজ নারীদের করতে হয়। কিন্তু এ কাজের কোন মূল্য দেয়া হয় না। নারীদের কাজের মূল্য দিতে হবে। তাদের কাজের জন্য বেতন দিতে হবে। আমরা যদি নারীদের কাজের জন্য বেতন দেই তবে তা আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা করবে। পুরুষরা অফিসে কাজ করার পর ঘরে আর তেমন কোন কাজ করতে চায় না। যে নারীরা চাকুরি করে তাদের অফিস ও বাসা দু’টাই সামলাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে চাকুরীর স্থলে ও মহিলারা বৈষম্যের শিকার। চাকুরী পাওয়া এবং চাকুরীতে প্রমোশনের ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষদের বেশী অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে নারীদের চাকুরী করতেও দেয়া হয় না। যার ফলে আমাদের দেশে এমন অনেক শিক্ষিত নারী রয়েছে যারা তাঁদের মেধা খাটানোর জন্য ক্ষেত্র পাচ্ছে না এবং এর ফলে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে না। সাস্কৃতিক অঙ্গনেও নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হয় না। এখনও গ্রামে-গঞ্জে ‘নারীরা খেলাধুলা করছে’ এমন দৃশ্য দেখা যায় না। অবশ্য এ ধরনের দৃশ্য শহরেও দেখা যায় না তেমন। যার ফলে নারীরা খেলাধুলার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। পুরুষরা যে কোন পোষাক পরিধান করতে পারে। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীরা যে কোন পোষক-পরিচ্ছদ পরিধান করতে পারে না। আমাদের সমাজ নারীদের যে কোন পোষাক পরিধান অনুমোদন করে না। বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মতামতকেও তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। ৬০ বছর হলে পুরুষরা কাজে থেকে অব্যাহতি নেন কিন্তু নারীরা অব্যাহতি নিতে পারেন না। নারীদের জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে যেতে হয়।
এমনি বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার আমাদের গোটা নারী সমাজ। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘পৃথিবীতে কল্যাণকর যা কিছু রয়েছে তার অর্ধেক নারীর অবদান।’ এ নারীদের সুবিধা বঞ্চিত রেখে কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই আসুন আমরা নারীর প্রতি বৈষম দূর করি। নর-নারী হাত ধরি, পৃথিবীটাকে গড়ি।
নারীদের কাজের মূল্য দিতে না পারলে আমাদের দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। নারীদের ঘরের কাজের জন্য বেতন না দিলে মাথাপিছু আয় কোনভাবে বাড়বে না।
স্বপন রোজারিও
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৯৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১০/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast