মলন দেয়ার আনন্দ
‘মলন’ শব্দটি বাংলা অভিধানে আছে কি না জানি না। কখনও অভিধানে দেখার চেষ্টাও করি নি। কখনো প্রয়োজনও পড়ে নি। তবে অনলাইন বাংলা অভিধানে ‘মলন’ এর অর্থ মর্দন; বিলেপন; মর্দিত করণ। অভিধানের এত শক্ত ভাষা বুঝি না ভাই। আমি ছোটকাল থেকে জেনেছি যে, ‘মলন’ একটি কার্য যার মাধ্যমে ধান গাছ থেকে ধান ও খের আলাদা করা হয়। গরু দিয়ে পিষ্ট করা ধান গাছকে খের বলা হল। এই খের গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে একটি কথা বলে রাখি, এই কার্য সম্পাদন করার মূল ভূমিকা পালন করে গরু। এই লীলা সাঙ্গ করার্থে গরুকে সর্বদা ধানগাছের উপর দিয়ে কষ্ট করে সারিবদ্ধভাবে হাঁটতে হয়।
যা হোক, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। আগে (আমরা যখন ছোট ছিলাম) আমাদের এলাকায় অনেক ধান হত। আউস ধান, আমন ধান ও বোরো ধান। এই হাড় ভাঙ্গা রোদে আমরা ক্ষেতে-খামারে ধান বুনে, ধান কেটে বাড়ী এনে ‘মলন’ দিতাম। আমাদের ছেলে-মেয়েদের তা বলতে তারা তা বিশ্বাস করতে চায় না। তো ‘মলন’ সাধারণত ভোরে বা বিকালে দেয়া হত। কারণ দিনের বেলায় গরু সাধারণত: হাল বাওয়া বা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকতো। ভোর বা বিকাল হলেই শুরু হত এই ‘মলন’ দেয়ার কার্য। আর আমি গরুর পিছনে চরকার মত ঘুরতে থাকতাম, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে। নিজেকে তখন যোদ্ধা যোদ্ধা মনে হত। এই যুদ্ধ ভাতের জন্য। আরে সে কি যন্ত্রণা! মাঝে মাঝে গরু খেদিয়ে ক্রান্তিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাতাম। আরে কি সর্বনাশ! গরু যখন মল ত্যাগ করতো তখন হতো আরেক বিপত্তি। খের টেনে পুডুলি পাকিয়ে মল ধরার আগেই মল (গোবর) পড়ে শেষ। অর্ধেক পড়তো হাতে আর অর্ধেক পরতো খেরের উপর। এভাবে এক গরুর শেষ হতে না হতে আরেক গরুর মল ত্যাগ পর্ব শুরু হয়ে যেত। কি যে খারাপ অবস্থা হত! তা বর্ণনাতীত। এই কঠোর খাঁটুনীর পরে যখন সোনালী ধানে গোলা ভরে যেত তখন মনটা একেবারে আনন্দে ভরে উঠতো। সারা বছরের খাবার যোগার এই ‘মলন’-এর মাধ্যমে। এভাবে এসএসসি পর্যন্ত পড়াকালে গ্রামে থাকাবস্থায় মনের মাধুরী মিশিয়ে এই ‘মলন’ দিয়েছি। এসএসসি-এর পর ঢাকায় আসার সুবাদে আর ‘মলন’ দেয়ার কার্যটি সম্পন্ন করতে হয়নি আমার। তবে এই ‘মলন’ দেয়ার বিষয়টি আমি হয়তোবা কখনও ভুলবো না।
স্বপন রোজারিও, ২৭/০৯/২০
যা হোক, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। আগে (আমরা যখন ছোট ছিলাম) আমাদের এলাকায় অনেক ধান হত। আউস ধান, আমন ধান ও বোরো ধান। এই হাড় ভাঙ্গা রোদে আমরা ক্ষেতে-খামারে ধান বুনে, ধান কেটে বাড়ী এনে ‘মলন’ দিতাম। আমাদের ছেলে-মেয়েদের তা বলতে তারা তা বিশ্বাস করতে চায় না। তো ‘মলন’ সাধারণত ভোরে বা বিকালে দেয়া হত। কারণ দিনের বেলায় গরু সাধারণত: হাল বাওয়া বা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকতো। ভোর বা বিকাল হলেই শুরু হত এই ‘মলন’ দেয়ার কার্য। আর আমি গরুর পিছনে চরকার মত ঘুরতে থাকতাম, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে। নিজেকে তখন যোদ্ধা যোদ্ধা মনে হত। এই যুদ্ধ ভাতের জন্য। আরে সে কি যন্ত্রণা! মাঝে মাঝে গরু খেদিয়ে ক্রান্তিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাতাম। আরে কি সর্বনাশ! গরু যখন মল ত্যাগ করতো তখন হতো আরেক বিপত্তি। খের টেনে পুডুলি পাকিয়ে মল ধরার আগেই মল (গোবর) পড়ে শেষ। অর্ধেক পড়তো হাতে আর অর্ধেক পরতো খেরের উপর। এভাবে এক গরুর শেষ হতে না হতে আরেক গরুর মল ত্যাগ পর্ব শুরু হয়ে যেত। কি যে খারাপ অবস্থা হত! তা বর্ণনাতীত। এই কঠোর খাঁটুনীর পরে যখন সোনালী ধানে গোলা ভরে যেত তখন মনটা একেবারে আনন্দে ভরে উঠতো। সারা বছরের খাবার যোগার এই ‘মলন’-এর মাধ্যমে। এভাবে এসএসসি পর্যন্ত পড়াকালে গ্রামে থাকাবস্থায় মনের মাধুরী মিশিয়ে এই ‘মলন’ দিয়েছি। এসএসসি-এর পর ঢাকায় আসার সুবাদে আর ‘মলন’ দেয়ার কার্যটি সম্পন্ন করতে হয়নি আমার। তবে এই ‘মলন’ দেয়ার বিষয়টি আমি হয়তোবা কখনও ভুলবো না।
স্বপন রোজারিও, ২৭/০৯/২০
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফয়জুল মহী ২৭/০৯/২০২০Valo laglo golpo .best of luck