গল্প ও প্রবন্ধ
মাছ ধরা
বাংলার একটি প্রবাদ আছে। ‘মাছে ভাতে বাঙ্গলী।’ আমাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি ১০০% সত্য। আমরা যে কত মাছ ধরেছি আর কত মাছ খেয়েছি, তা লিখে শেষ করা যাবে না। আজ-কালকার ছেলে-মেয়েদের মাছ ধরার কথা বলতে তা তাদের কাছে গল্পের মত মনে হয়। আমরা প্রচুর মাছ খেয়ে অন্তত বলতে পারছি যে, আমরা আমাদের চোখগুলো ভাল রাখতে পেরেছি। এখনও চশমা লাগে না। আমাদের পূর্বপূরুষদের কাউকে আমি চশমা পড়তে দেখি নি। আর বর্তমান প্রজন্মের মানুষের ১০/১৫ বছরের মাথায় চশমা আবশ্যিকভাবে নিতে হয়। এর কারণ হল- মলা ডেলা মাছ না খাওয়া। আমার সন্তানদের ক্ষেত্রেও কিন্তু চশমার ব্যতিক্রম হয় নি!
আমাদের বাড়ী পাত্তুরী বিলের পাশে। কেন যে বাপ-দাদারা বিলের কাছে গিয়ে বাড়ী করেছিলো, তা মাথায় আসে নি। এখন বুঝতে পারছি- কারি কারি মাছ খেয়ে চক্ষু ঠিক রাখবার জন্যই হয়তো বা পূর্বপূরুষরা বিলের ধারে গিয়ে বাড়ী করেছে। এজন্য অন্তরের অন্ত:স্থল হলে তাদেরকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই বিলের ধারে গিয়ে বাড়ী করার জন্য। বিলের ধারে বাড়ী থাকায় আরও একটি সুবিধা হয়েছে। তা হলো অটো সাঁতার শিখা। আমরা মার পেটে থেকে পড়ে ধরতে গেলে অটো সাঁতার শিখে গেছি। কাউকে শেখাতে হয় নি। এখন নৌকা বা লঞ্চ ডুবি হলে আমি নিশ্চিতভাবে এক গাঙ সাতরিয়ে পার হয়ে নিজেকে অন্তত রক্ষা করতে পারবো। এই আস্থাটুকু অন্তত আমার মধ্যে রয়েছে।
তো যাহোক, যা বলছিলাম। আমাদের বাড়ী যেহেতু বিলের ধারে সেহেতু আমরা অনেকভাবে মাছ ধরার সুযোগ পেয়েছি। ভরা বর্ষায় আমরা কুন্দা বা নৌকায় করে জালি দিয়ে কচুরীপানার নীচ থেকে কৈ মাছসহ অন্যান্য মাছ ধরেছি। জালি একটি মাছ ধরার উপাদান (ফাঁদ) বিশেষ যা ৩টি বাঁশ দিয়ে ত্রিভ‚জাকৃতির করে তৈরী করা হয় এবং এর নীচে জাল থাকে। আর খেও দিলে এই জালে মাছ ধরা পরে। ভরা বর্ষায় বরশি দিয়ে কত যে কৈ মাছসহ অন্যান্য মাছ ধরেছি, তা বলা মুসকিল। বরশিও একধরনের মাছ ধরার উপাদান বা ফাঁদ বিশেষ যার লম্বাটে অংশকে ছিপ বলা হয়। ছিপের আগায় সূতা বাঁধা থাকে এবং সূতার শেষ প্রান্তে থাকে লোহার হুগ। আর এই হুগে আধার লাগিয়ে পানিতে ছাড়া হয় এবং উপরে ইন্ডিকেটর হিসেবে থাকে টুনকাঠি। মাছে আধার খেলে টুনকাঠি খরব দেয় আর তখনই হ্যাচকা টানে ডাঙ্গায় উঠে আসে মাছ। আরে ভাই, কি যে আনন্দ, ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। পানি কমতে শুরু করলে সকাল বেলা পুটিসহ অনেক মাছ বেয়ে থাকতো। আর আমরা টেডা দিয়ে সেই মাছ মারতাম, বিশেষ করে পুটি মাছ, বোয়াল মাছ, নলা মাছ। পানিতে জাল পেতে রেখে অনেক মাছ ধরেছি। বিলে বা পুকুরে যখন অল্প পানি তখন পল দিয়ে দল বেঁধে মাছ ধরতাম। বড় বড় শোল মাছ, সিং মাছসহ আরও কত কি! মাঝে মাঝে পলর মধ্যে সিং বা মাগুর মাছ ধরা পড়লে মাছে দিতো এক গাঁই। আর তখন মা রে, বাবা রে বলে কন্না করতে করতে পালাতাম, কিসের মাছ ধরা, কিসের কি! আর ডাঙ্গায় এসে দুর্বা ঘাসের রস দিলেই বিষ পালিয়ে যেত। অনেক সময় পানিতে ডুবানো নৌকা বা কুন্দা হেচে সিং মাছসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া যেত। অনেক সময় গর্ত থেকেও সিং বা মাগুর মাছ পাওয়া যেতো। কখনো কখনো এই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতো সাপ! আরে বাপ রে বাপ! আর তখন মাছ ধরা রেখে দিতাম এক দৌড়! ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি অবস্থা হতো। সকাল বেলা স্বচ্ছ পানিতে বরশি দিয়ে বাইলা মাছ ধরতে খুবই মজা লাগতো। জালি দিয়ে কচুরীপানার মধ্য থেকে ভেদা এবং ইচা মাছ (চিংড়ি) ধরতাম। রাতের বেলা নৌকা দিয়ে বিলে গিয়ে হারিক্যান জালিয়ে রাখতাম, আর সেই হারিক্যানের আলোয় কাইকা মাছ দেখা যেত আর তা তখন টেডা দিয়ে মারতাম। শুনেছি রাতের বেলা এইভাবে মাছ ধরলে নাকি পিচাশ তাড়া করে! জানি না, তা সত্যি বা মিথ্যা কি না! আগে আমাদের এলাকায় নল হত। নল পানিতে ভেসে থাকে। এই নলের মধ্যে সুতা দিয়ে বরশি বেঁধে অনেক মাছ ধরেছি। অল্প পানিতে বরশির ছিপ গেঁথে রেখে মাছ ধরেছি। বর্ষার আগমনের সময় চাই পেতে অনেক মাছ ধরেছি। মাছ ধরার যত অবলম্বন আছে তার সবই আমাদের জানা ছিলো। এই সুখের দিনগুলো কোথায় যে চলে গেছে, ভেবে পাই না। মনে হয়, আবার গ্রামে ফিরে যাই শুধু মাছ ধরার জন্য এবং চোখ সতেজ রাখার জন্য।
মাছ হল প্রাণী বিশেষ। আমার জীবনে আমি মাছ নামক অনেক প্রাণী হত্যা করেছি। এতো মাছ ধরে হত্যা করেছি যে, খেতে না পেড়ে শুটকি পর্যন্ত বানিয়েছি। আজ আমি সৃষ্টিকর্তার নিকট এই প্রাণী হত্যার জন্য কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
স্বপন রোজারিও, ২৭/০৯/২০
মর্মান্তিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ
স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে একজন তরুণীকে গণ ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। শুক্রবার রাত পৌনে আটটা থেকে সাড়ে আটটার দিকে ধর্ষণের এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে ওই তরুণীর স্বামী শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। ইহা মর্মান্তিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
প্রতিটি মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা থাকে। এর একটা হল ‘মনুষত্ব’ আর অপরটি ‘পশুত্ব’। মানুষের মধ্যে সর্বদা মনুষত্বের হার বেশী থাকা বাঞ্ছনীয়। তবেই মানুষ মানুষ হয়। আর যদি পশুত্ব বেশী থাকে তবে মানুষ পশুতে পরিনত হয়। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে মনুষত্বের পরিবর্তে পশুত্বের হার বেড়ে গেছে। এইভাবে পশুত্ব বেড়ে গেলে আমরা মানুষরা পশুতে রূপান্তরিত হব। আর আমাদের সমাজ হবে পশুবেষ্টিত সমাজ যেখানে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই থাকবে না। আমরা সভ্যতা ছেড়ে আগের মত অসভ্য জাতিতে পরিনত হব। আমরা বন্য সভ্যতায় ফিরে যাব! সভ্য জাতি অসভ্য জাতিতে পরিনত হলে এ ধরণের দুর্ঘটনা আমাদের মাথা ব্যথার কোন কারণ হবে না।
মানুষ সামাজিক জীব। কিন্তু ইদানীং আমরা বড় অসামাজিক জীব হয়ে গেছি। আমরা সামাজিব জীব হলে এই ঘটনা ঘটতে পারতো না। একজনের বিপদে অন্য আরেকজন মানুষ এগিয়ে আসবে এই ধারনা থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে থাকে। কিন্তু একজন যখন বিপদে পড়ে এবং আরেকজন যখন এগিয়ে না আসে তখন মানুষকে সামাজিক জীব না বলে অসামাজিক জীব বলাই শ্রেয়। এখানে আরও একটা মারাত্মক বিষয় কাজ করেছে যাকে অবক্ষয় বা পশুত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই ঘটনায় ৬ থেকে ৭ জন বিপদগামী জড়িত ছিলো। তাদের মধ্যে একজনের মধ্যেও কি মনুষত্ববোধ জাগ্রত হয় নি। যদি হতো তবে ঘটনাটি অন্য রকম হতে পারতো। আমি হলফ করে বলতে পারি, তাদের মধ্যে যদি অন্ততপক্ষে একজনের হৃদয়ও জাগ্রত হতো তবে সেই সময় তাদের নিজেদের মধ্যে ন্যায় যুদ্ধ হত এবং তরুণীটি বেঁচে যেত। কিন্তু সেই ন্যায় যুদ্ধ তখন হয় নি। তারা সবাই ছিলো একমনা যাদের মনে পশু ভর করে বসেছিলো।
আমাদের আরেকটি সমস্যা আছে। তা হল বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রকৃত দোষী শাস্তি না পাওয়া। Justice delayed is justice denied. এজন্য অপরাধীরা মনে করে অন্যায় করলে বিচার হবে না। সুতরাং যত পাড়ি অন্যায় করে যাই! সম্প্রতি অবশ্য অনেক বিচার দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
তো যাই হোক, অবক্ষয়ের হাত থেকে আমাদের অবমুক্ত হতেই হবে এবং ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। তবে এই ধরনের ঘটনা কমে যাবে। কিন্তু যদি তা করতে আমরা ব্যর্থ হই তবে পশুর অসমাজে আমাদের বাস করতেই হবে।।
স্বপন রোজারিও, ২৭/০৯/২০
বাংলার একটি প্রবাদ আছে। ‘মাছে ভাতে বাঙ্গলী।’ আমাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি ১০০% সত্য। আমরা যে কত মাছ ধরেছি আর কত মাছ খেয়েছি, তা লিখে শেষ করা যাবে না। আজ-কালকার ছেলে-মেয়েদের মাছ ধরার কথা বলতে তা তাদের কাছে গল্পের মত মনে হয়। আমরা প্রচুর মাছ খেয়ে অন্তত বলতে পারছি যে, আমরা আমাদের চোখগুলো ভাল রাখতে পেরেছি। এখনও চশমা লাগে না। আমাদের পূর্বপূরুষদের কাউকে আমি চশমা পড়তে দেখি নি। আর বর্তমান প্রজন্মের মানুষের ১০/১৫ বছরের মাথায় চশমা আবশ্যিকভাবে নিতে হয়। এর কারণ হল- মলা ডেলা মাছ না খাওয়া। আমার সন্তানদের ক্ষেত্রেও কিন্তু চশমার ব্যতিক্রম হয় নি!
আমাদের বাড়ী পাত্তুরী বিলের পাশে। কেন যে বাপ-দাদারা বিলের কাছে গিয়ে বাড়ী করেছিলো, তা মাথায় আসে নি। এখন বুঝতে পারছি- কারি কারি মাছ খেয়ে চক্ষু ঠিক রাখবার জন্যই হয়তো বা পূর্বপূরুষরা বিলের ধারে গিয়ে বাড়ী করেছে। এজন্য অন্তরের অন্ত:স্থল হলে তাদেরকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই বিলের ধারে গিয়ে বাড়ী করার জন্য। বিলের ধারে বাড়ী থাকায় আরও একটি সুবিধা হয়েছে। তা হলো অটো সাঁতার শিখা। আমরা মার পেটে থেকে পড়ে ধরতে গেলে অটো সাঁতার শিখে গেছি। কাউকে শেখাতে হয় নি। এখন নৌকা বা লঞ্চ ডুবি হলে আমি নিশ্চিতভাবে এক গাঙ সাতরিয়ে পার হয়ে নিজেকে অন্তত রক্ষা করতে পারবো। এই আস্থাটুকু অন্তত আমার মধ্যে রয়েছে।
তো যাহোক, যা বলছিলাম। আমাদের বাড়ী যেহেতু বিলের ধারে সেহেতু আমরা অনেকভাবে মাছ ধরার সুযোগ পেয়েছি। ভরা বর্ষায় আমরা কুন্দা বা নৌকায় করে জালি দিয়ে কচুরীপানার নীচ থেকে কৈ মাছসহ অন্যান্য মাছ ধরেছি। জালি একটি মাছ ধরার উপাদান (ফাঁদ) বিশেষ যা ৩টি বাঁশ দিয়ে ত্রিভ‚জাকৃতির করে তৈরী করা হয় এবং এর নীচে জাল থাকে। আর খেও দিলে এই জালে মাছ ধরা পরে। ভরা বর্ষায় বরশি দিয়ে কত যে কৈ মাছসহ অন্যান্য মাছ ধরেছি, তা বলা মুসকিল। বরশিও একধরনের মাছ ধরার উপাদান বা ফাঁদ বিশেষ যার লম্বাটে অংশকে ছিপ বলা হয়। ছিপের আগায় সূতা বাঁধা থাকে এবং সূতার শেষ প্রান্তে থাকে লোহার হুগ। আর এই হুগে আধার লাগিয়ে পানিতে ছাড়া হয় এবং উপরে ইন্ডিকেটর হিসেবে থাকে টুনকাঠি। মাছে আধার খেলে টুনকাঠি খরব দেয় আর তখনই হ্যাচকা টানে ডাঙ্গায় উঠে আসে মাছ। আরে ভাই, কি যে আনন্দ, ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। পানি কমতে শুরু করলে সকাল বেলা পুটিসহ অনেক মাছ বেয়ে থাকতো। আর আমরা টেডা দিয়ে সেই মাছ মারতাম, বিশেষ করে পুটি মাছ, বোয়াল মাছ, নলা মাছ। পানিতে জাল পেতে রেখে অনেক মাছ ধরেছি। বিলে বা পুকুরে যখন অল্প পানি তখন পল দিয়ে দল বেঁধে মাছ ধরতাম। বড় বড় শোল মাছ, সিং মাছসহ আরও কত কি! মাঝে মাঝে পলর মধ্যে সিং বা মাগুর মাছ ধরা পড়লে মাছে দিতো এক গাঁই। আর তখন মা রে, বাবা রে বলে কন্না করতে করতে পালাতাম, কিসের মাছ ধরা, কিসের কি! আর ডাঙ্গায় এসে দুর্বা ঘাসের রস দিলেই বিষ পালিয়ে যেত। অনেক সময় পানিতে ডুবানো নৌকা বা কুন্দা হেচে সিং মাছসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া যেত। অনেক সময় গর্ত থেকেও সিং বা মাগুর মাছ পাওয়া যেতো। কখনো কখনো এই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতো সাপ! আরে বাপ রে বাপ! আর তখন মাছ ধরা রেখে দিতাম এক দৌড়! ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি অবস্থা হতো। সকাল বেলা স্বচ্ছ পানিতে বরশি দিয়ে বাইলা মাছ ধরতে খুবই মজা লাগতো। জালি দিয়ে কচুরীপানার মধ্য থেকে ভেদা এবং ইচা মাছ (চিংড়ি) ধরতাম। রাতের বেলা নৌকা দিয়ে বিলে গিয়ে হারিক্যান জালিয়ে রাখতাম, আর সেই হারিক্যানের আলোয় কাইকা মাছ দেখা যেত আর তা তখন টেডা দিয়ে মারতাম। শুনেছি রাতের বেলা এইভাবে মাছ ধরলে নাকি পিচাশ তাড়া করে! জানি না, তা সত্যি বা মিথ্যা কি না! আগে আমাদের এলাকায় নল হত। নল পানিতে ভেসে থাকে। এই নলের মধ্যে সুতা দিয়ে বরশি বেঁধে অনেক মাছ ধরেছি। অল্প পানিতে বরশির ছিপ গেঁথে রেখে মাছ ধরেছি। বর্ষার আগমনের সময় চাই পেতে অনেক মাছ ধরেছি। মাছ ধরার যত অবলম্বন আছে তার সবই আমাদের জানা ছিলো। এই সুখের দিনগুলো কোথায় যে চলে গেছে, ভেবে পাই না। মনে হয়, আবার গ্রামে ফিরে যাই শুধু মাছ ধরার জন্য এবং চোখ সতেজ রাখার জন্য।
মাছ হল প্রাণী বিশেষ। আমার জীবনে আমি মাছ নামক অনেক প্রাণী হত্যা করেছি। এতো মাছ ধরে হত্যা করেছি যে, খেতে না পেড়ে শুটকি পর্যন্ত বানিয়েছি। আজ আমি সৃষ্টিকর্তার নিকট এই প্রাণী হত্যার জন্য কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
স্বপন রোজারিও, ২৭/০৯/২০
মর্মান্তিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ
স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে একজন তরুণীকে গণ ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। শুক্রবার রাত পৌনে আটটা থেকে সাড়ে আটটার দিকে ধর্ষণের এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে ওই তরুণীর স্বামী শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। ইহা মর্মান্তিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
প্রতিটি মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা থাকে। এর একটা হল ‘মনুষত্ব’ আর অপরটি ‘পশুত্ব’। মানুষের মধ্যে সর্বদা মনুষত্বের হার বেশী থাকা বাঞ্ছনীয়। তবেই মানুষ মানুষ হয়। আর যদি পশুত্ব বেশী থাকে তবে মানুষ পশুতে পরিনত হয়। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে মনুষত্বের পরিবর্তে পশুত্বের হার বেড়ে গেছে। এইভাবে পশুত্ব বেড়ে গেলে আমরা মানুষরা পশুতে রূপান্তরিত হব। আর আমাদের সমাজ হবে পশুবেষ্টিত সমাজ যেখানে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই থাকবে না। আমরা সভ্যতা ছেড়ে আগের মত অসভ্য জাতিতে পরিনত হব। আমরা বন্য সভ্যতায় ফিরে যাব! সভ্য জাতি অসভ্য জাতিতে পরিনত হলে এ ধরণের দুর্ঘটনা আমাদের মাথা ব্যথার কোন কারণ হবে না।
মানুষ সামাজিক জীব। কিন্তু ইদানীং আমরা বড় অসামাজিক জীব হয়ে গেছি। আমরা সামাজিব জীব হলে এই ঘটনা ঘটতে পারতো না। একজনের বিপদে অন্য আরেকজন মানুষ এগিয়ে আসবে এই ধারনা থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে থাকে। কিন্তু একজন যখন বিপদে পড়ে এবং আরেকজন যখন এগিয়ে না আসে তখন মানুষকে সামাজিক জীব না বলে অসামাজিক জীব বলাই শ্রেয়। এখানে আরও একটা মারাত্মক বিষয় কাজ করেছে যাকে অবক্ষয় বা পশুত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই ঘটনায় ৬ থেকে ৭ জন বিপদগামী জড়িত ছিলো। তাদের মধ্যে একজনের মধ্যেও কি মনুষত্ববোধ জাগ্রত হয় নি। যদি হতো তবে ঘটনাটি অন্য রকম হতে পারতো। আমি হলফ করে বলতে পারি, তাদের মধ্যে যদি অন্ততপক্ষে একজনের হৃদয়ও জাগ্রত হতো তবে সেই সময় তাদের নিজেদের মধ্যে ন্যায় যুদ্ধ হত এবং তরুণীটি বেঁচে যেত। কিন্তু সেই ন্যায় যুদ্ধ তখন হয় নি। তারা সবাই ছিলো একমনা যাদের মনে পশু ভর করে বসেছিলো।
আমাদের আরেকটি সমস্যা আছে। তা হল বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রকৃত দোষী শাস্তি না পাওয়া। Justice delayed is justice denied. এজন্য অপরাধীরা মনে করে অন্যায় করলে বিচার হবে না। সুতরাং যত পাড়ি অন্যায় করে যাই! সম্প্রতি অবশ্য অনেক বিচার দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
তো যাই হোক, অবক্ষয়ের হাত থেকে আমাদের অবমুক্ত হতেই হবে এবং ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। তবে এই ধরনের ঘটনা কমে যাবে। কিন্তু যদি তা করতে আমরা ব্যর্থ হই তবে পশুর অসমাজে আমাদের বাস করতেই হবে।।
স্বপন রোজারিও, ২৭/০৯/২০
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন ২৮/০৯/২০২০
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৭/০৯/২০২০সৎচিন্তা।
-
ফয়জুল মহী ২৭/০৯/২০২০অনন্যসাধারণ
সমসাময়িক আলোচনা। শুভেচ্ছা জানাই।