www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গ্রাম বাংলার মঞ্চ নাটক

আমি আশি ও নব্বই-এর দশকের কথা বলছি। সেই সময় আমাদের এলাকায় সুন্দর সুন্দর মঞ্চ নাটক হত। শুধু আমাদের এলাকায় বললে ভুল হবে, ধারণা করি, সারা বাংলায় এ ধরনের নাটক হত। আমাদের পার্শবর্তী গ্রাম চড়াখোলাতে ও এ ধরনের নাটক হত। চড়াখোলাবাসীর একটা সুবিধা ছিলো যে, তাদের একটি স্কুল রয়েছে। যত ধরনের অনুষ্ঠান হত, তা সেই স্কুলেই হত। কিন্তু আমাদের এলাকায় কোন স্কুল বা অনুষ্ঠান করার কোন জায়গা ছিলো না। তাই বিভিন্ন বাড়ীতে বাড়ীতে অনুষ্ঠান করতে হতো। আমি হলফ করে বলতে পাড়ি, আমাদের এলাকায় সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান বা নাটক হয়েছে সম্ভবত জগুর বাড়ীতে। এছাড়াও পিয়ন বাড়ী, রাগীর বাড়ী, আন্টু কস্তার বাড়ী প্রভৃতি স্থানে সে সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা নাটকগুলো মঞ্চস্থ হত। তবে একটা কথা বলতে পারি, নাটকের জন্য জায়গার কোন অভাব হতো না। এক বাড়ীতে না এক বাড়ীতে জায়গা পেয়েই যেতাম। তখনকার মানুষগুলো এতো মহৎ ছিলো যে, জায়গা দেয়ার ব্যাপারে কোন কারপন্য ছিলো না।

ঐ সময়ে গ্রাম বাংলায় দুই ধরনের নাটক মঞ্চস্থ হতো একটাকে বলতাম সামাজিক এবং একটাকে বলতাম রাজনৈতিক। সামাজিক নাটকে কোন জৌলুস ছিলো না। গ্রাম বাংলার মানুষের হাসি-কান্না নিয়ে এগুলি মঞ্চস্থ হত। মঞ্চ করার জন্য একটি চকি লাগতো। চকিটা পেতে একটু কষ্ট হত। কিন্তু যে কোন এক ভাবে না এক ভাবে চকি যোগার হয়ে যেত। চকির পর দুই একটা বেড শীট, সামিয়ানা ও শাড়ী কাপড় হলেই সব কিছু যোগার হয়ে যেত। এই সামান্য কিছু জিনিস যোগার করতে পারলে কত যে ভাল লাগতো তা ভাষায় প্রকাশ করা যেত না। তখন নারী চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নারীরা এগিয়ে আসতো না। ফলে পুরুষদের দিয়ে নারী চরিত্রে অভিনয় করানোর ঘটনা অহরহ ঘটতো। এখন অবশ্য এমনটা দেখা যায় না। আমার এখন দুটি সমাজিক নাটকের কথা খুব ভাল মনের আছে। একটি কয়লা থেকে হীরে এবং অপরটি লক্ষ্মীর হাতে ভিক্ষের ঝুলি। এই নাটকগুলো আমার অনেক অনেক ভালো লাগতো। নাটকগুলো মঞ্চস্থ হলে দু:খের দৃশ্যের সময় চোখে জল এসে যেত। একবার আমার মনে আছে, আমাদের একটি নাটক খুব সুন্দর হয় এবং অনেক বেশী প্রশংসা কুড়ায়। ফলে মিশনের বড় ফাদার আমাদের দলকে আহবান করে মিশনে ঐ নাটকটি মঞ্চস্থ করার জন্য। এটা ছিলো আমাদের জন্য বিরাট সম্মানের ব্যাপার। আর আমরা সানন্দে ঐ কাজটি সম্পন্ন করে সারা মিশনে সবার পরিচিত হয়ে গেলাম। আহা, কি আনন্দ!

আরেক ধরনের নাটক ছিলো যাকে আমরা বলতাম রাজনৈতিক। বিষয়টা ঠিক আছে কি না জানিনা। তবে আমরা তাই বলতাম। এই নাটক বাহ্যিক জৌলুসে ভরা। বাদ্য-যন্ত্র, পোষাক, কি নেই এই নাটকে? এই নাটক হলে এলাকায় সাজ সাজ রব পড়ে যেত। দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসতো এই নাটক দেখার জন্য। কি অবস্থা! শত শত টাকা নিয়ে বসে থাকতো সম্মানিত দরশকবৃন্দ। যাদের অভিনয় ভালো হতো তাদেরই দরশকরা টাকা দিতো। এ আনন্দ রাখার জায়গা ছিলো না। এই নাটকে রাজা বাদশাদের চরিত্রে অভিনয় করতে পারলে নিজেকে রাজা রাজা মনে হত। আমাদের এলাকায় একটি রাজনৈতিক নাটক বেশী হত- সেটি ছিলো বাহরাম বাদশা। যারা অভিনয় করতো তারা মঞ্চ কাঁপানো অভিনয় করতো। বাদশা একটা হাসি দিলে সারা জগৎ হাসতো। আর বাদশা যখন তলোয়ার খাপের মধ্যে রাখতো তখন যে বিকট আওয়াজ হত তা যেন এক মাইল দূর থেকে শুনা যেত। আর একটা নাটক ছিলো বিমাতার চক্রান্ত। চড়াখোলা স্কুলে চড়াখোলা দল এই নাটকটি করতো। কি যে অভিনয় শৈলী ছিলো তা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। নাটকের সেই অভিনয় শিল্পীদের তেলেসমতি এখনো চোখে ভাসে। তখন পরমটার হিসেবে খ্যাতি ছিলো দিলীপ গমেজ এর নাম।

এখন আর সেই দৃশ্য নেই। মানুষ যে কষ্ট করে কিছু নিজে করবে তার কোন চেষ্টা নেই। তাই মানুষ দেখে চলেছে অন্যের নাটক। এর কি আর হবে অবসান?
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৪৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৯/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর লেখনী
  • পি পি আলী আকবর ১১/০৯/২০২০
    ভালো
  • Biswanath Banerjee ১০/০৯/২০২০
    ভাল
  • ফয়জুল মহী ০৮/০৯/২০২০
    Valo laglo
 
Quantcast