এমিলা দিদি
আমি প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় খুবই খারাপ ছাত্র ছিলো। লেখাপড়া আমার মগজে ঢুকতো না বললেই চলে। বিশেষ করে গণিত। আমি গণিতে বরাবরই দুর্বল ছিলাম। মাথায় ধরতো না কোন কিছু। এই অবস্থা দেখে আমার মা বিচলিত হয়ে যান। আমার মা ভাবতে থাকেন যে, আমার হয়তো বা আর কোন দিন লেখাপড়া হবে না। আমার বাবা লেখাপড়ার ব্যাপারে তেমন একটা উৎসাহী ছিলেন না। তো যাহোক, আমার লেখাপড়ার খারাপ অবস্থা দেখে আমার মা আমাকে দিন-রাত পড়াতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। আমার ফলাফল খারাপ থেকে খারাপতর হতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার লেখাপড়া ছেড়ে দেয়ার উপক্রম হয়। এমন সময় আমার মা শেষ একটা চেষ্টা করেন। আমাকে এমিলা দিদির কাছে নিয়ে যান। এমিলা দিদির বাড়ী চড়াখোলা গ্রামের বজুরীগ (রিবেরু) বাড়ী। তিনি তুমিলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক ছিলেন। এমিলা দিদিকে পেয়ে আমার জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে। তাঁর ছাত্র পড়ানোর যাদুকরী স্পর্শে আমি আলোকিত হতে থাকলাম। দিদির ছাত্র পড়ানোর মুনসিয়ানা এতো ভাল ছিলো যে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক শিক্ষার্থী লাইন ধরে আসতো তাঁর কাছে পড়ার জন্য। দিদি আমাকে পড়ানোর ফলে আমি এক সময় জ্বলে উঠলাম। দিদির কাছে এসে তালিম নেয়ার ফলে গণিত বিষয়টি আমার কাছে পানির মত সহজ হয়ে গেল। পরে গণিতের সাথে সাথে অন্যান্য বিষয়গুলোও আমার কাছে সহজ হতে লাগলো। এমিলা দিদির শিক্ষায় আমি আবার নতুন জীবন ফিরে পেলাম। আমি চির জীবন এমিলা দিদির কাছে কৃতজ্ঞ। আমি এতো ভালো শিক্ষিকা আর দেখি নি। দিদি একজন শিক্ষিকাই ছিলেন না, তিনি সমবায় সমিতির নেতাও ছিলেন বটে। আমার জানা মতে, তিনি তুমিলিয়া ও চড়াখোলা ক্রেডিটে সেবা দিয়েছেন। দিদি আজ স্বশরীরে আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর দেয়া শিক্ষা আমাদের মধ্যে রয়েছে। আমি দিদিকে আজকের দিনে স্মরণ করছি। আমি বিশ্বাস করি, স্বর্গে তিনি আমাদের জন্য প্রার্থনা করছেন।
-স্বপন রোজারিও, মধুবাগ, ঢাকা, ১৬/০৮/২০
-স্বপন রোজারিও, মধুবাগ, ঢাকা, ১৬/০৮/২০
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২০/০৮/২০২০গুনী মানুষের স্মরণ।
-
Biswanath Banerjee ১৭/০৮/২০২০Good
-
পি পি আলী আকবর ১৭/০৮/২০২০ভালো
-
ফয়জুল মহী ১৬/০৮/২০২০নৈসর্গিক প্রতিভায় নান্দনিক ও সুনিপুন প্রকাশ।