ঘুড়ি উড়ানো
ছেলেবেলায় ঘুড়ি উড়াতে আমার খুব ভালো লাগতো। স্কুল থেকে বাড়ী এসেই কাগজ, ঝাড়ুর কাঠি ও ভাত নিয়ে ঘুড়ি বানাতে লেগে যেতাম। ঝাড়ু থেকে কাঠি নিলে ঠাকু মা দিতো এক দৌঁড়ানী। দৌঁড়ানীর চোটে সব ফেলে পালাতাম জান বাঁচানোর জন্য। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার লেগে যেতাম ঘুড়ি তৈরী করতে। আমরা যখন ঘুড়ি বানাতাম তখন কোন আঠা পেতাম না। ভাত দিয়ে আঠার কাজ সারতাম। ছো্ট্ট বেলা শুধু একটি ঘুড়ি পেলে আমি নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে স্বার্থক মানুষ মনে করতাম। একটা ঘুড়ি আমার হলে মনে হত, সারা দুনিয়াটা আমার দখলে চলে এসেছে। আমি যেন কালজয়ী রাজা হয়ে যেতাম। আমি ঘুড়িকে একটি পৃথিবীর সমান মনে করতাম। তাই ঘুড়ি পেলে পৃথিবী পাওয়ার মত মনে হতো। ছোট বয়সে কেন যে আমার এমন লাগতো তা এখনও বুঝতে পারি না। আমার ছেলেবেলায় অন্য মানুষের একটি ঘুড়ি কুড়িয়ে পাওয়ার খুব বাসনা ছিলো।মনে হত এই যেন একটা ঘুড়ি কুড়িয়ে পেয়ে আকাশের চাঁদ যেন হাতে পেলাম। তখন দুই ধরনের ঘুড়ি ছিলো। একটি লেজ ছাড়া এবং একটি লেজওয়ালা। লেজওয়ালা ঘুড়ি বানানো খুব সহজ ছিলো। কোনরকমভাবে বানালেই তা আকাশে উড়তো। লেজওয়ালা ঘুড়ি বেশী উঁচুতে উড়তে পারতো না তার লেজের জন্য। কিন্তু লেজ ছাড়া ঘুড়ি হিসাব করে নিপুন হাতে বানাতে হত। দুই দিকের ভার সমান হতে হতো। একদিকের ভার বেশী বা কম হলে লেজ ছাড়া ঘুড়ি এক দিকে কাত হয়ে যেত এবং তা উঠানো যেতো না। ঘুড়ি বানাতে গিয়ে এ্ই ভাবে যে কত সময় নষ্ট হয়েছে তার কোন হিসেব নাই। তার পরেও একটি সার্থক ঘুড়ি বানাতে পারলে জীবন ধন্য হয়ে যেত। তখন (সত্তর থেকে নব্বই-এর দশক ) অনেকেই ঘুড়ি উড়াতো। কেউ কেউ আবার ঢাউস উড়াতো, কেউ আবার ডোল ঘুট্টি। আমাদের এলাকায় পেট্রিক কোড়াইয়া (মদন বাড়ী) বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বানানোর ওস্তাদ ছিলো। তিনি একজন শিল্পমনা মানুষ। তিনি চিত্রশিল্পীও বটে। ঘুড়ি, লাঙ্গনসহ বিভিন্ন জিনিস তিনি শিল্পীর মননে তৈরী করতে পারতেন। তাঁর হাতের স্পর্শ পেছে যে কোন জিনিস সুন্দর হয়ে যেতো। তিনি যা কিছু তৈরী করেছেন তা খুবই সুন্দর ও নিখুঁদ ছিলো। আমার হিসেবে তিনি লিল্পকলায় পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলো। কিন্তু প্রচারের অভাবে হয়তো তিনি পুরস্কারটি পেলেন না। চড়াখোলাতে বেনেডিক্ট কোড়াইয়া (পলাশের বাবা) নামে আরেক জন শিল্পমনা মানুষ ছিলেন। তিনি যা কিছু বানাতেন তা খুবই নান্দনিক গোছের ছিলো। আমার জানা মতে, আমাদের এলাকায় সবচেয়ে বড় ও নান্দনিক ঢাউস তিনিই বানাতেন ও ওড়াতেন। বড় সৌখিন ও প্রতিভাবান মানুষ তিনি। তাঁর ঢাউস উঠানোর ডাক শুনেনি একম লোক আমাদের এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
-স্বপন রোজারিও, মধুবাগ, ঢাকা, ১৪/০৮/২০
-স্বপন রোজারিও, মধুবাগ, ঢাকা, ১৪/০৮/২০
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এম. মাহবুব মুকুল ১৫/০৮/২০২০দারুণ! শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল।
-
Md. Jahangir Hossain ১৪/০৮/২০২০বেশ! ভাল লাগলো
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৪/০৮/২০২০ঢাউসের নাম মনে পড়ে গেল!
-
সুব্রত ব্রহ্ম ১৪/০৮/২০২০শৈশবের স্মৃতি ফিরে পেলাম। খুব ভালো লাগলো ভাই।
-
ফয়জুল মহী ১৪/০৮/২০২০মনোমুগ্ধকর লেখনশৈলী দারুণ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৪/০৮/২০২০খুবই ভালো লেখা