www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রতন কাকা

আমি আজ একজন অতি সাধারণ মানুষের গল্প আপনাদের বলতে চাই। তিনি সবার কাছে সাধারণ হলেও আমার কাছে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। একজন অসাধারণ নেতা, নেতাদের মহানেতা। মানুষটি আর কেউ নয়, আমার রতন কাকা। তাঁর পুরা নাম রতন রুবেন রোজারিও, পিতা-আন্তনী রোজারিও। সবুজে ঘেরা গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার হাড়িখোলা গ্রামে তাঁর জন্ম, তাঁর বেড়ে উঠা। এমন সবুজ গ্রামে এমন মহান লোকের জন্ম হয়, তা ভেবেই বুকটা আমার কয়েক হাত লম্বা হয়ে যায়। মনে হয়, যেন সৃষ্টিকর্তা এক অপার মহিমায় এই গ্রামকে, এই গ্রামের মানুষগুলোকে তৈরী করেছেন।

যাহোক, আমার রতন কাকা একজন দক্ষ সংগঠন ছিলেন। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি ছিলেন আমাদের গ্রামের অগ্রগামী যুব সংঘের সভাপতি। তখন এই সভাপতিকে আমার পৃথিবীর সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে মনে হয়েছে। তাঁর মত নেতা যেন এই বাংলাদেশ কেন বিশ্ব ব্রম্মান্ডে নেই। তাঁর মধ্যে আমি বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পেয়েছি, খুঁজে পেয়েছি নেলসন ম্যান্ডেলাসহ হাজারো নেতাকে। তাঁর একটা কথাকে আমাদের এক একটি অমৃতখন্ড হিসেবে মনে হয়েছে। তাঁর আদেশকে মনে হয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ নেতার আদেশ। তাঁর আদেশকে মনে হয়েছে ঐশ্ব আদেশ, যা স্বয়ং ঈশ্বরেরই আদেশ যা অবশ্য পালনীয়। আমরা যারা তাঁর শিয্য ছিলাম তারা মহানন্দে তাঁর আদেশ পালন করতাম। কোন ধরনের দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছিলো না আমাদের মনে। আমরা বলতাম এবং ভাবতাম, নেতার বাণী বন্দুকের গুলির মত। একবার যেহেতু বের হয়েছে তা আর ফেরানো যাবে না। সুতরাং আমরা মহানন্দে নেতার আদেশ পালনে উদ্যোগী হতাম।

একবার এলাকার একটি রাস্তা ভেঙ্গে গেল। নেতা বলেছে রাস্তা মেরামত করতে হবে। নেতার আদেশ পেতে না পেতেই আমরা তাঁর শিষ্যরা হাজির। আমরা যেন ঐশ্ব আদেশ পেয়ে গেলাম। আর ক্ষনিকের মধ্যে রাস্তা মেরামত শেষ করে ফেললাম। নেতা ও (রতন কাকা) আমাদের সাথে ছিলো। তিনি কোদালে এক কোপ দিলে আমরা মনের আনন্দে পাঁচটা কোপ দিয়ে ফেলতাম। আবার যেহেতু নেতা আমাদের সাথে ছিলো সেহেতু কর্ম স্পৃহা আরও পাঁচ গুণ বেড়ে গিয়েছিলো। এভাবে নেতার সাথে জীবনের স্বর্ণের সময়গুলো কাটিয়েছি, আর ধন্য হয়েছি।

একবার নেতার (রতন কাকা) চার নম্বর ভাই রাফু কাকার (রাফায়েল রোজারিও) বিয়েতে হঠাৎ নেতার হাতে একট বিরাট ক্যামেরা দেখলাম। নেতা মনের আনন্দে বড় ভাই-এর বিয়ের নানান ছবি তুলছেন। আমি নেতার অবস্থা দেখে অবাক হয়ে হলাম। যার হাতে কখনো ক্যামেরা দেখিনি আজ ভাইয়ের বিয়েতে তাঁর (নেতার) হাতে মস্ত বড় ক্যামেরা দেখে আমি তাঁকে দুনিয়ার শ্রষ্ঠ ফটোগ্রাফার হিসেবে আবিস্কার করেছি। আমার মনে হয়েছে, আমি যেন পৃ্থিবীর ১ নম্বর ফটোগ্রাফারের ফটো তোলার যাদু দেখছি। তখন আমি এতোই আবেগ প্রবন হয়ে গিয়েছিলাম যে, আমার কাছে তখন মনে হয়েছে যে ফটোগ্রাফিই দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান ও দামী পেশা এবং আমাকে জীবনে যদি কিছু হতে হয় তবে তা একমাত্র হবে ফটোগ্রাফার। আমার কাকার ফটো তোলার দৃশ্যটা আমার এখনও মনে লেগে আছে। যখনই কোন ফটোগ্রাফার দেখি তখনই মনে হয় আমার কাকাই যেন ছবি তুলছে।

কাকার নেতৃত্ব দেখেছি তখনকার গ্রামের বিয়ে বাড়ীতে। আরে বাপরে বাপ। বড় বিয়ে বাড়ীর কাজ তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় কোন সমস্যা ছাড়াই নিমেষে শেষ হয়ে যেত। ৫০০ মানুষের রান্না, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপার কিভাবে যে তাঁর হাতের ছোঁয়ায় শেষ হয়ে যেত তা ভাবতেই অবাক লাগে। তিনি ম্যানেজমেন্টের উপর কোন লেখাপড়া করেনি, অথচ ম্যানেজ করার অসীম জ্ঞান তার মধ্যে ছিলো। আমি তাঁকে দেখে হতবাক হতাম এবং তাঁর উৎসাহে উৎসাহিত হতাম। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরন করে আমারও সুযোগ হয়েছিলো গ্রামে অনেক বিয়ে বাড়ীর কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে। এজন্য আমি কাকাকে আজ সাধুবাদ জানাই।

আমি যখন হতাশ হয়ে যেতাম তখন সরাসরি আমার কাকার কছে চলে যেতাম। তিনি আমাকে উপদেশ দিতেন। জীবনের বড়ত্ব সম্পর্কে আমাকে বুঝাতেন। তাঁর উপদেশ আমার কাছে অমৃত সদৃশ মনে হত। জীবনে আবার প্রাণ ফিরে পেতাম। জীবনে আবার ঘুরে দাঁড়াবার সাহস পেতাম তারই প্রেরণায়। এত ছোট একটা মানুষের মন যে সমুদ্রের মত এত বড় হয় তা আমার কাকাকে না দেখলে বুঝা যায় না।

মানুষ আসলে মরে যায়। আমার কাকাও মরে গেছে অনেক দিন আগে। কোথায় চলে গেছে তাঁর কোন সীমা পরিসীমা নেই। কিন্তু মানুষের ভালো কাজগুলো কখনো মরে না। আমার কাকার কাজগুলো কখনও মরবে না। কোন এক শুভাকাঙ্খী হয়তো কোন একদিন মানুষের ভালো কাজগুলো নিয়ে কথা বলবেই বলবে।

যাহোক, আজ আমার কাকাকে অনেক মনে পড়ছে। আমার বিশ্বাস, আমার কাকা অবশ্যই আমার জন্য স্বর্গ থেকে প্রার্থনা করেছেন বলেই অনেক দিন পরে হলেও কাকাকে স্মরণ করেছি, তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে পেরেছি।

স্বপন রোজারিও, মধুবাগ, ঢাকা, ০৭/০৮/২০, ২:০১ মিনিট।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩২১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৮/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সত্যিই খুব সুন্দর লিখেছেন।
  • ফয়জুল মহী ০৭/০৮/২০২০
    Best wishes
  • সুন্দরতর
 
Quantcast