www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাবা

এইতো গতো কুরবানীর আগের দিন, রাত ৯ টার দিকে যখন বাড়িতে আসলাম, কথা বলেছিলাম।
কি কথা বলেছিলাম ঠিক তা মনে নেই।
কিন্তু একটা কথা মনে আছে।
আব্বা বলেছিলো "কার ছেলে দেখতে হবে না"।
পরের দিন সকালে গোসল করে আব্বাকে বললাম ফোনে টাকা লাগবে।
সে একজনকে ফোন দিয়ে ৫০ টাকা ভরে দিলো।
নামায শেষে এসে আমি গরু জবাই এর ওখানে গেলাম।
আর আব্বা দোকানে ছিলো,চা খাওয়ার জন্য।
গরু জবাই শেষে আমি একটু দোকানের দিকে যাচ্ছিলাম।
পথে আব্বার সাথে দেখা।
বললো তার শরীর টা ভালো না।
বাড়ি চলে গেলো তারপর।
দুপুরে একসাথে গরুর কলিজা দিয়ে ভাত খাইলাম।
তারপর আমি বিকালে ঘুরতে বের হলাম।
রাতে ঘুরে এসেও আব্বার সাথে কথা বলে ঘুমাতে গেলাম।
ভোর হলো।
হঠাৎ আমি উঠে দেখি আব্বা নিচে পড়ে আছে,
এক হাতের উপরে পুরো শরীর।
ভয় পেয়ে আমি মা কে ডাক দিলাম।
আর আমি তাকে ঠিক ভাবে শোয়ালাম।
প্রিয়া আপু,আম্মা,আর আমি মিলে আব্বাকে উপরে উঠিয়ে শোয়ালাম।
আম্মা বললো আব্বা মাঝে মাঝেই পরে যায় এমন।আবার থিক হয়ে যাবে।
আমিও তাই জানতাম।
তাই ওতটা ঘাবড়ে যাই নি।
আব্বাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
আব্বা এখন কেমন লাগছে?
আব্বা উত্তর দিলো ভালো।
আমি তা শুনে ভয় না পেয়ে বাড়ি থেকে চলে গেলাম।
সেদিন আমার পিকনিক খাওয়ার কথা বন্ধুদের সাথে।
সেখানে গিয়ে আমি কাজ করছিলাম।
বড় আপু ফোন দিলো বললো বাজার থেকে ডাক্তার নিয়ে আসতে।
আব্বার অবস্থা ভালো না।
আমি সাথে সাথে চলে গেলাম একজন ডাক্তার নিয়ে।
সে বললো আমার হাতে কিছু নেই।
তাকে মেডিকেল এ নিয়ে যাওওয়ার পরামর্শ দিলো।
বরিশাল সাগরদী মেডিকেল এ নিয়ে গেলাম।
ওখানে নিয়ে গিয়ে কোন লাভ হলো না।
শুধুই ফেলে রাখে।
কিন্তু তখন ও আব্বা মুখে বাজিয়ে বাজিয়ে বলে লাইট জ্বালা।
৩ ঘন্টা এভাবেই বলতে থাকলো।
আর কথা বললো না।
তারপর সবাই মতামত দিলো ঢাকা নিয়ে আসবে।
৪ দিনের মাথায় আমরা ঢাকা নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নিয়ে আসলাম আব্বাকে।
কিছুদিনের মধ্যেই আব্বা একটু ঠিক হতে লাগলো।
ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলো।
কিন্তু হঠাৎ আবার স্ট্রোক করলো।
ডাক্তাররা যা আশা করেছিলো তা এখন আর নেই।
ডাক্তার বলেছে যতোদিন বাচেন এভাবেই থাকবেন।
নির্বাক হয়ে।
তাও হাল ছাড়া হলো না।
২০ ফেব্রুয়ারী।
আমি আর মা থাকতাম আব্বার হাসপাতালে।
সকালে প্রতিদিনই আমি মাকে আগে নাস্তা এনে খাওয়াতাম।
আর আমি ১০ টার পর খাইতাম।সেদিনো তাই করলাম।
খাওওয়া শেষ করে আর টেষ্ট এর রিপোর্ট নিয়ে আমি লিফট এর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় মা ফোন দিলো।
বললো তাড়াতাড়ি আয়।
আর কিছু লাগবে না।
লিফট এর অপেক্ষা না করে আমি পুরো ৮ তলা দৌড়ে উঠে গিয়ে দেখি অক্সিজেন খুলে ফেলা হচ্ছে।
বুঝে গেলাম।
বাবা নেই।
বাবার হাসিটা আজ খুব মিস করি।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৭৩৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast