ঠিকানার গল্প
ঠিকানার গল্প
🌍🌍🌍🌍
আমার নাম আলাউদ্দিন অনু। আমার বয়স ৫৩, জীবনের প্রথম ২০ বছর বাবার বাসায় ছিলাম, সোনার চামচ মুখে নিয়ে বলা যায়, কিন্তু কথাটি আপেক্ষিক, তবে দু:খ, ক্ষুধার কষ্ট, নিরাপত্তার হুমকি আমাকে খুব কমই স্পর্শ করেছে, বাবা আগলে রাখতেন আমাদের,সব বিপদ মাথায় নিতেন তিনি, তিনি ছিলেন বীরের থেকেও সাহসী, বলা যায় একাই একশো, জানিনা এতো সাহস তিনি কোথায় পেতেন! তবে ভীষণ আবেগপ্রবণ ছিলেন তিনি,ভবিষ্যতের ভাবনা তাঁকে কোনোদিন ভাবতে দেখিনি, তিনি সঞ্চয়ে বিশ্বাস করতেননা, সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলায় বিশ্বাস করতেননা, তাঁর সমসাময়িক দূর্নীতিগ্রস্থদের তিনি অসম্ভব ঘৃণার চোখে দেখতেন।
পড়াশোনার জন্যে আমাকে ঘর ছাড়তে হোলো, আমার ঠিকানা এই প্রথমবারের মতো বদল হোলো, ফেলে এলাম আমার ঘুমানোর ঘর, পড়ার টেবিল, মফসল, বিশাল বাগান বাড়ি, পুকুর, মাঠ, আকাশের বিস্তৃতি ফেলে রেখে এলাম শহরে, সেখানে হলে ঠাঁই হলো, বাবার কাছে রাজনীতির প্রথম হাতেখড়ি, বাবার কাছে একটা মতাদর্শের পাঠ পেয়েছিলাম, এখানে এসে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম, যাচাই বাছাই করত্তে গিয়ে হয়রান হয়ে রাজনীতি থেকে বিযুক্ত হোলাম, কিভাবে একা পথ চলতে হয়, কিভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে হয় এইসবের পাঠ নিজের অজান্তে শুরু হয়ে গেলো, মাথায় একটি দুশ্চিন্তা ভর করলো, বাবার ব্যক্তিত্ব বলয় থেকে বের হয়ে একটি স্বতন্ত্র জীবন চাই আমার...!
সে এক দুরূহ যাত্রা, আমি বিলাসিতাকে না বললাম, পরিশ্রমী হয়ে উঠতে থাকলাম, পড়ার পাশাপাশি চাকুরির প্রস্তুতি নিতে থাকলাম, আমার অনেক সতীর্থ তখন অর্থহীনতার সাগরে খড়কুটোর মতো ভাসমান, কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসাবে ছোট ছোট কাজ করতে করতে কর্পোরেটে চাকুরী পেয়ে গেলাম, আমার চারপাশে দূর্নীতির মহাসাগর দেখে হতবিহবল আমি, আমার চারপাশে একটি গণ্ডী এঁকে দিলাম, অনন্ত লোভের গলায় পরিয়ে দিলাম এক শক্ত লাগাম, লাগামটা হাতছাড়া হোতে দেইনা, যা বলছিলাম এর মাঝে স্বদেশে আমাকে ঠিকানা বদলাতে হয়েছে বহুবার, হল থেকে মেসে, মেস থেকে জেলাশহর গুলোতে, সেখান থেকে আবার বড় শহরে, কাজের চাপে আমার আর রাজনীতি চর্চা করার সুযোগ হয়নি, বন্ধুমহলে একদিন আলোচনায় উঠে এলো," আমাদের প্রজন্ম কোনো মরণঘাতী যুদ্ধ দেখেনি, আমরা কি তাহলে ভাগ্যবান! "
বাবা শেষের দিকে নানামুখী পারিবারিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে বেঁচে ফেলেন তাঁর পৈত্রিক ভিটা, অনেকটা সর্বসান্ত হয়ে যান তিনি, তাঁর অন্য সন্তানেরা তাঁর ক্যাশ বৃদ্ধ বয়সে ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়, আমাদের পৈত্রিক ভিটা বলে আর কিছু রইলোনা।আমার কোনো স্থায়ী ঠিকানা করা হয়নি, কর্মসূত্রে ঘুরছি বিভিন্ন যায়গায়, কোনো কোনো যায়গায় অনেকদিন থাকলে সেই ঘর-বাড়ী, শহরের উপর মায়া পড়ে যায়, মায়া পড়ে যায় অলিগলি, পথঘাটের উপর...
সেইসব মায়া পেছনে ফেলে চলে যেতে হয় নতুন আর একটি ঠিকানায়...
শুনছি দেশে দুর্দিন আসবে, যুদ্ধ হবে, দুর্ভিক্ষ হবে, মানচিত্র বদলে যাবে, বদলে যাবে পৃথিবীর অন্যদেশের মানচিত্রও!
তাহলে কি মুছে যাবে প্রিয় দেশের নাম?
আমার বর্তমান ঠিকানা!
🌍🌍🌍🌍
আমার নাম আলাউদ্দিন অনু। আমার বয়স ৫৩, জীবনের প্রথম ২০ বছর বাবার বাসায় ছিলাম, সোনার চামচ মুখে নিয়ে বলা যায়, কিন্তু কথাটি আপেক্ষিক, তবে দু:খ, ক্ষুধার কষ্ট, নিরাপত্তার হুমকি আমাকে খুব কমই স্পর্শ করেছে, বাবা আগলে রাখতেন আমাদের,সব বিপদ মাথায় নিতেন তিনি, তিনি ছিলেন বীরের থেকেও সাহসী, বলা যায় একাই একশো, জানিনা এতো সাহস তিনি কোথায় পেতেন! তবে ভীষণ আবেগপ্রবণ ছিলেন তিনি,ভবিষ্যতের ভাবনা তাঁকে কোনোদিন ভাবতে দেখিনি, তিনি সঞ্চয়ে বিশ্বাস করতেননা, সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলায় বিশ্বাস করতেননা, তাঁর সমসাময়িক দূর্নীতিগ্রস্থদের তিনি অসম্ভব ঘৃণার চোখে দেখতেন।
পড়াশোনার জন্যে আমাকে ঘর ছাড়তে হোলো, আমার ঠিকানা এই প্রথমবারের মতো বদল হোলো, ফেলে এলাম আমার ঘুমানোর ঘর, পড়ার টেবিল, মফসল, বিশাল বাগান বাড়ি, পুকুর, মাঠ, আকাশের বিস্তৃতি ফেলে রেখে এলাম শহরে, সেখানে হলে ঠাঁই হলো, বাবার কাছে রাজনীতির প্রথম হাতেখড়ি, বাবার কাছে একটা মতাদর্শের পাঠ পেয়েছিলাম, এখানে এসে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম, যাচাই বাছাই করত্তে গিয়ে হয়রান হয়ে রাজনীতি থেকে বিযুক্ত হোলাম, কিভাবে একা পথ চলতে হয়, কিভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে হয় এইসবের পাঠ নিজের অজান্তে শুরু হয়ে গেলো, মাথায় একটি দুশ্চিন্তা ভর করলো, বাবার ব্যক্তিত্ব বলয় থেকে বের হয়ে একটি স্বতন্ত্র জীবন চাই আমার...!
সে এক দুরূহ যাত্রা, আমি বিলাসিতাকে না বললাম, পরিশ্রমী হয়ে উঠতে থাকলাম, পড়ার পাশাপাশি চাকুরির প্রস্তুতি নিতে থাকলাম, আমার অনেক সতীর্থ তখন অর্থহীনতার সাগরে খড়কুটোর মতো ভাসমান, কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসাবে ছোট ছোট কাজ করতে করতে কর্পোরেটে চাকুরী পেয়ে গেলাম, আমার চারপাশে দূর্নীতির মহাসাগর দেখে হতবিহবল আমি, আমার চারপাশে একটি গণ্ডী এঁকে দিলাম, অনন্ত লোভের গলায় পরিয়ে দিলাম এক শক্ত লাগাম, লাগামটা হাতছাড়া হোতে দেইনা, যা বলছিলাম এর মাঝে স্বদেশে আমাকে ঠিকানা বদলাতে হয়েছে বহুবার, হল থেকে মেসে, মেস থেকে জেলাশহর গুলোতে, সেখান থেকে আবার বড় শহরে, কাজের চাপে আমার আর রাজনীতি চর্চা করার সুযোগ হয়নি, বন্ধুমহলে একদিন আলোচনায় উঠে এলো," আমাদের প্রজন্ম কোনো মরণঘাতী যুদ্ধ দেখেনি, আমরা কি তাহলে ভাগ্যবান! "
বাবা শেষের দিকে নানামুখী পারিবারিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে বেঁচে ফেলেন তাঁর পৈত্রিক ভিটা, অনেকটা সর্বসান্ত হয়ে যান তিনি, তাঁর অন্য সন্তানেরা তাঁর ক্যাশ বৃদ্ধ বয়সে ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়, আমাদের পৈত্রিক ভিটা বলে আর কিছু রইলোনা।আমার কোনো স্থায়ী ঠিকানা করা হয়নি, কর্মসূত্রে ঘুরছি বিভিন্ন যায়গায়, কোনো কোনো যায়গায় অনেকদিন থাকলে সেই ঘর-বাড়ী, শহরের উপর মায়া পড়ে যায়, মায়া পড়ে যায় অলিগলি, পথঘাটের উপর...
সেইসব মায়া পেছনে ফেলে চলে যেতে হয় নতুন আর একটি ঠিকানায়...
শুনছি দেশে দুর্দিন আসবে, যুদ্ধ হবে, দুর্ভিক্ষ হবে, মানচিত্র বদলে যাবে, বদলে যাবে পৃথিবীর অন্যদেশের মানচিত্রও!
তাহলে কি মুছে যাবে প্রিয় দেশের নাম?
আমার বর্তমান ঠিকানা!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৭/১০/২০২৪অপূর্ব
-
মো শাকিল খান ০৩/১০/২০২৪সুন্দর!
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ৩০/০৯/২০২৪চমৎকার লেখা
-
ফয়জুল মহী ২৯/০৯/২০২৪বাহ্ বেশ চমৎকার লিখেছেন প্রিয়