নদী নিরজনে-স্মৃতির রাজ্যে বরিশাল
নদী নিরজনে-স্মৃতির রাজ্যে বরিশাল
🌏🌎🌍🌏🌎🌍
বয়স কতো হবে ৭ কিবা ৮ পরিবারের সাথে বরিশালের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছি, সারাদিন কেঁদেছি খুকুমণি আর বড় ফুফুর জন্যে, শিশুমন, ভীষণ আবেগপ্রবণ ছিলাম আজ বুঝি আজ আবেগশুন্য হয়ে উঠাই হয়তো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠা...
যা বলছিলাম, সেই ঐতিহ্য বাহী স্টিমারে চেপে বসলাম পুরো পরিবার, বাবা-মা তখন ভীষণ যুবক, আমাদেরকে আর পরিবারের মালপত্র সামলে যাচ্ছেন, পরে বুঝলাম এটা একটা ব্রেক জার্ণি,এরপর আমরা বরিশালে গিয়ে উঠি একটি বিশাল নৌকায়, এতো দীর্ঘ জার্ণি আমি আগে কখনো করিনি, এমনিতেই আমার জার্ণি ভীতি আছে, স্টিমারে মায়ের রান্না খিচুড়ি খেয়েছিলাম, ক্ষুধার মুখে সে যেনো অমৃত, আর স্টীমারে সে প্রথমবারের মতো উঠার অভিজ্ঞতা, আমি ছিলাম বাবার সবচেয়ে অনুগত সন্তান, অনেকটা এ সম্পর্ক গুরু আর শীষ্যর মতো, ঐ বয়সে বাবাকে মনে করতাম আমার অভিধান, উইকিপিডিয়া আর বাবা আমাকে নিরাশ করেননি,তাঁর শিক্ষকসত্তাকে উজাড় করে দিয়েছেন আমার সাধারণ জ্ঞানের তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি করার জন্যে,বাবা-মায়েরর কাছে সন্তানের ঋণ কখনও পরিশোধ্যোগ্য নয়, এটা পরিশোধের উর্দ্ধে, শুধু বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যে কষ্ট করেন তার তুলনা হবেনা... আর আমার মতো সৌভাগ্যবান শিশু আমি চারপাশে দেখতামনা, বাবা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সমস্ত ডেক,ইঞ্জিনঘর, ক্যাপ্টেন এর চেম্বার সব দেখালেন, বাবা নারীশিশুর বিকাশ আর উন্নয়নে ছিলেন বদ্ধপরিকর, বৈষম্য করেননি এতোটুকু, ঐসময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী,মার্গারেট থেচার আর ইসরাইলের গোল্ডামেয়ার তাঁকে স্বপ্নবান মানুষ করেছিলো... এক একটা যুগ পৃথিবীর জন্যে এক একটি বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করে, করে না কি? এমনছোট নদী কিভাবে বড় নদীতে মেশে, কিভাবে বড় বড় ঢেউ এতোবড় স্টিমারকে দুলিয়ে দেয়, দেখে বিস্ময়ের সীমা রইলোনা... তখন গভীর রাত, আমার ক্লান্ত ঢুলু ঢুলু চোখ, বিশাল ঢেউ, আর সবার উপরে বাবার অতন্দ্র প্রহরী হাত, বাবারা সন্তানের কাছে সব থেকে বড় হিরো...তখন সকাল, আমরা নাস্তা করেছি, বরিশাল বন্দরে যাত্রা বিরতি, বিভিন্ন নৌকা যাত্রীদের তুলে নিতে এসেছে, নদীতে উত্তাল ঢেউ, তারমাঝে দক্ষমাঝীরা যাত্রী দের তুলে নিচ্ছে, এই নৌকা আমাদের মানুষ আর মালপত্র তুলে দিলো বড় একটি নৌকায়, আমাদের গার্হস্থ জিনিস কিছুই মিসিং হোলোনা, তারপর কতো নদী পার হয়ে তৃতীয় দিনে গন্তব্যে পৌঁছেছিলাম, নৌকায় ছিলেন দুইজন দক্ষ মাঝী, এই দীর্ঘ যাত্রায় আমি বাবার দুসাহসকে ভুলতে পারিনা, হয়তো তার ব্যক্তিগত সাহস বেশি ছিলো, মনে পড়ে মাঝী দুজন নৌকা নোঙর করে ছোট্ট একটা গঞ্জ থেকে বিশাল দুটি ইলিশমাছ কিনেছিলেন আর নৌকাতেই মাছগুলো রান্না হয়েছিলো, মনে হয় এমন বরফমুক্ত তাজা ইলিশ আমি জীবনে খাইনি, আর একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার না করলেই নয়, মা আর বড় বোন, সেটি ছিলো একটি খাল কিন্তু স্রোতস্বিনী, ওঁরা গোছল করে নিলেন, মায়ের কাছে ছিলো সংসার খরচের টাকা, এটি জলের স্রোতে ভেসে যেতে পারতো, ভাগ্য সহায় ভেসে যায়নি, সেইসময় ব্যাংক বীমার প্রচলন ছিলোনা, বাবা মাসের স্যালারি এক সাথে তুলে ফেলতেন, কি শংকার বিষয় বলুন তো? পরবর্তিত্তে, এই ঘটনা স্মৃতি হয়ে আসতো আমাদের পারিবারিক আড্ডার আসরে...
সেসময়ে বরিশাল ছিলো এক বিচ্ছিন্ন এলাকা, বিশেষ করে ভোলা, লালমোহন, চরফ্যাশন এসব প্রত্যন্ত অঞ্চল... বিশেষ করে আমাদের পরিবারে কাছে। যাইহোক কতো নদী, উপনদী, সংকীর্ণ খাল পাড়ি দিয়ে এক বিকেলে নৌকা ভীড়ল গন্তব্যে, কিন্তু হায় নির্ধারিত বাসায় আমরা উঠতে পারলামনা, উদবিগ্ন, অনিশ্চয়তা ঘিরে রইলো শিশুচিত্ত আর গোটা পরিবারের মাঝে, কিন্তু বাবার চেহারায় কোনো টেনশন নেই, কিভাবে যে পারতেন উনি, ঠিকই একটা অফিসিয়াল বাসা ম্যানেজ করে ফেললেন আর আমরা এক নৌকা ফার্ণিচার নিয়ে উঠে পড়লাম সে বাসায়, মাঝীরা দামদস্তুর শেষে সহায়তা করলেন সে কাজে, একজন ভেঙে ফেললেন মায়ের যত্নে রাখা কিছু পোরসেলিনের কাপ পিরিচ, আমাদেরও কেনো যেনো সেই শোকে মন খারাপ হয়ে গেলো, হবে না? মা যে ওগুলো কোলকাতা নিউমার্কেট থেকে শখ করে কিনেছিলেন, এখন বুঝতে পারি তিনি কতোটা কষ্ট পেয়েছিলেন সেদিন...
দেখুনতো ভেতরকার ইচ্ছে ছিলো বরিশালের নদ নদীর গল্প শোনাবো আপনাদেরকে, সেসময় বাংলাদেশ সবুজে সবুজ তুমি নীলিমায় নীল, সেই সুন্দরের সাক্ষী শুধু এই গরীবের এই দুটি চোখ! শিশু ছিলাম তাই আজ মিলাতে পারিনা সেইসব নদী আর জনপদের নাম, জানেন ভীষণ আফসোস হয় এর জন্যে, কিন্তু আফসোস হয়ে লাভ কি সেই ৭, ৮ বছরের শিশুটি কি দেখেছিলো কি দ্যাখেনি, তার নিউরনে কি উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিলো তাকে আজ মধ্য বয়সে বসে নির্ধারণ করা যাবে কি?
তবে পাঠকদের কৌতুহলকে কিছুটা মিটিয়ে দেবো এই লেখায়, জানিনা কতোটুকু পারবো?
🌏🌎🌍🌏🌎🌍
বয়স কতো হবে ৭ কিবা ৮ পরিবারের সাথে বরিশালের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছি, সারাদিন কেঁদেছি খুকুমণি আর বড় ফুফুর জন্যে, শিশুমন, ভীষণ আবেগপ্রবণ ছিলাম আজ বুঝি আজ আবেগশুন্য হয়ে উঠাই হয়তো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠা...
যা বলছিলাম, সেই ঐতিহ্য বাহী স্টিমারে চেপে বসলাম পুরো পরিবার, বাবা-মা তখন ভীষণ যুবক, আমাদেরকে আর পরিবারের মালপত্র সামলে যাচ্ছেন, পরে বুঝলাম এটা একটা ব্রেক জার্ণি,এরপর আমরা বরিশালে গিয়ে উঠি একটি বিশাল নৌকায়, এতো দীর্ঘ জার্ণি আমি আগে কখনো করিনি, এমনিতেই আমার জার্ণি ভীতি আছে, স্টিমারে মায়ের রান্না খিচুড়ি খেয়েছিলাম, ক্ষুধার মুখে সে যেনো অমৃত, আর স্টীমারে সে প্রথমবারের মতো উঠার অভিজ্ঞতা, আমি ছিলাম বাবার সবচেয়ে অনুগত সন্তান, অনেকটা এ সম্পর্ক গুরু আর শীষ্যর মতো, ঐ বয়সে বাবাকে মনে করতাম আমার অভিধান, উইকিপিডিয়া আর বাবা আমাকে নিরাশ করেননি,তাঁর শিক্ষকসত্তাকে উজাড় করে দিয়েছেন আমার সাধারণ জ্ঞানের তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি করার জন্যে,বাবা-মায়েরর কাছে সন্তানের ঋণ কখনও পরিশোধ্যোগ্য নয়, এটা পরিশোধের উর্দ্ধে, শুধু বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যে কষ্ট করেন তার তুলনা হবেনা... আর আমার মতো সৌভাগ্যবান শিশু আমি চারপাশে দেখতামনা, বাবা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সমস্ত ডেক,ইঞ্জিনঘর, ক্যাপ্টেন এর চেম্বার সব দেখালেন, বাবা নারীশিশুর বিকাশ আর উন্নয়নে ছিলেন বদ্ধপরিকর, বৈষম্য করেননি এতোটুকু, ঐসময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী,মার্গারেট থেচার আর ইসরাইলের গোল্ডামেয়ার তাঁকে স্বপ্নবান মানুষ করেছিলো... এক একটা যুগ পৃথিবীর জন্যে এক একটি বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করে, করে না কি? এমনছোট নদী কিভাবে বড় নদীতে মেশে, কিভাবে বড় বড় ঢেউ এতোবড় স্টিমারকে দুলিয়ে দেয়, দেখে বিস্ময়ের সীমা রইলোনা... তখন গভীর রাত, আমার ক্লান্ত ঢুলু ঢুলু চোখ, বিশাল ঢেউ, আর সবার উপরে বাবার অতন্দ্র প্রহরী হাত, বাবারা সন্তানের কাছে সব থেকে বড় হিরো...তখন সকাল, আমরা নাস্তা করেছি, বরিশাল বন্দরে যাত্রা বিরতি, বিভিন্ন নৌকা যাত্রীদের তুলে নিতে এসেছে, নদীতে উত্তাল ঢেউ, তারমাঝে দক্ষমাঝীরা যাত্রী দের তুলে নিচ্ছে, এই নৌকা আমাদের মানুষ আর মালপত্র তুলে দিলো বড় একটি নৌকায়, আমাদের গার্হস্থ জিনিস কিছুই মিসিং হোলোনা, তারপর কতো নদী পার হয়ে তৃতীয় দিনে গন্তব্যে পৌঁছেছিলাম, নৌকায় ছিলেন দুইজন দক্ষ মাঝী, এই দীর্ঘ যাত্রায় আমি বাবার দুসাহসকে ভুলতে পারিনা, হয়তো তার ব্যক্তিগত সাহস বেশি ছিলো, মনে পড়ে মাঝী দুজন নৌকা নোঙর করে ছোট্ট একটা গঞ্জ থেকে বিশাল দুটি ইলিশমাছ কিনেছিলেন আর নৌকাতেই মাছগুলো রান্না হয়েছিলো, মনে হয় এমন বরফমুক্ত তাজা ইলিশ আমি জীবনে খাইনি, আর একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার না করলেই নয়, মা আর বড় বোন, সেটি ছিলো একটি খাল কিন্তু স্রোতস্বিনী, ওঁরা গোছল করে নিলেন, মায়ের কাছে ছিলো সংসার খরচের টাকা, এটি জলের স্রোতে ভেসে যেতে পারতো, ভাগ্য সহায় ভেসে যায়নি, সেইসময় ব্যাংক বীমার প্রচলন ছিলোনা, বাবা মাসের স্যালারি এক সাথে তুলে ফেলতেন, কি শংকার বিষয় বলুন তো? পরবর্তিত্তে, এই ঘটনা স্মৃতি হয়ে আসতো আমাদের পারিবারিক আড্ডার আসরে...
সেসময়ে বরিশাল ছিলো এক বিচ্ছিন্ন এলাকা, বিশেষ করে ভোলা, লালমোহন, চরফ্যাশন এসব প্রত্যন্ত অঞ্চল... বিশেষ করে আমাদের পরিবারে কাছে। যাইহোক কতো নদী, উপনদী, সংকীর্ণ খাল পাড়ি দিয়ে এক বিকেলে নৌকা ভীড়ল গন্তব্যে, কিন্তু হায় নির্ধারিত বাসায় আমরা উঠতে পারলামনা, উদবিগ্ন, অনিশ্চয়তা ঘিরে রইলো শিশুচিত্ত আর গোটা পরিবারের মাঝে, কিন্তু বাবার চেহারায় কোনো টেনশন নেই, কিভাবে যে পারতেন উনি, ঠিকই একটা অফিসিয়াল বাসা ম্যানেজ করে ফেললেন আর আমরা এক নৌকা ফার্ণিচার নিয়ে উঠে পড়লাম সে বাসায়, মাঝীরা দামদস্তুর শেষে সহায়তা করলেন সে কাজে, একজন ভেঙে ফেললেন মায়ের যত্নে রাখা কিছু পোরসেলিনের কাপ পিরিচ, আমাদেরও কেনো যেনো সেই শোকে মন খারাপ হয়ে গেলো, হবে না? মা যে ওগুলো কোলকাতা নিউমার্কেট থেকে শখ করে কিনেছিলেন, এখন বুঝতে পারি তিনি কতোটা কষ্ট পেয়েছিলেন সেদিন...
দেখুনতো ভেতরকার ইচ্ছে ছিলো বরিশালের নদ নদীর গল্প শোনাবো আপনাদেরকে, সেসময় বাংলাদেশ সবুজে সবুজ তুমি নীলিমায় নীল, সেই সুন্দরের সাক্ষী শুধু এই গরীবের এই দুটি চোখ! শিশু ছিলাম তাই আজ মিলাতে পারিনা সেইসব নদী আর জনপদের নাম, জানেন ভীষণ আফসোস হয় এর জন্যে, কিন্তু আফসোস হয়ে লাভ কি সেই ৭, ৮ বছরের শিশুটি কি দেখেছিলো কি দ্যাখেনি, তার নিউরনে কি উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিলো তাকে আজ মধ্য বয়সে বসে নির্ধারণ করা যাবে কি?
তবে পাঠকদের কৌতুহলকে কিছুটা মিটিয়ে দেবো এই লেখায়, জানিনা কতোটুকু পারবো?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শ.ম. শহীদ ১৭/১১/২০২৪স্মৃতি মন্থর! অসামান্য প্রকাশ!
-
শাহানারা মশিউর ১৯/০৮/২০২৪সেই কবে ফেলে দিনের স্মৃতি! ৭ কিবা ৮ বছর বয়সী একটি শিশুর নয়ন ও মনন এর দক্ষতায় স্তব্ধ হয়ে গেলাম। স্টিমার, নৌকা এবং আরো কতো উঠানামার মাধ্যমে অবশেষে বরিশাল। এমন সূক্ষভাবে দীর্ঘ একটি ভ্রমণের বর্ণনা দেয়া সহজ কাজ নয়। কীন্তু কবি তা সহজের চেয়েও সহজ করে একটি নান্দনিক উপস্থাপনা উপহার দিলেন পাঠকদের। সত্যিই অনন্য সুন্দর ও সুখপাঠ্য একটি ছোট গল্প।
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ১৮/০৮/২০২৪স্মৃতিচারণ সুন্দর।
-
সেলিম রেজা সাগর ১৭/০৮/২০২৪দারুণ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৭/০৮/২০২৪বেশ সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ১৬/০৮/২০২৪চমৎকার
শুভ কামনা রইলো