আপন না হও তুমি
আপন না হও তুমি
🌏🌎🌍
তালিকায় কেউ নেই তাঁর এখন, আমেনা বেগম কি একটু বোকা, বাইরে থেকে মানুষ এসব মনে করে, হয়তো সে বোকা, ৪৫ বছরের আমেনা লেখাপড়া জানেন, তবে এমন কোনো মেধাবী কেউ নয়, গড়পড়তা সাধারণ মানুষ, তিনি শিখেছেন অন্যকে প্রায়রিটি দিতে তার পরিবার থেকে, প্রথমত তিনি বাবাকে ভীষণ ভালোবাসতেন, বলা যায় অন্ধের মতো, এরপরে ছোট ভাইকে নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়াতেন। দাদী, ফুফু আর মা শিখিয়েছিলেন স্বামীকে যত্ন করতে,বিয়ের পরে তিনি বাবা, ভাইকে ভুলতে বাধ্য হলেন, একজন গৃহবধু হিসাবে তাকে নির্ভর করতে হলো স্বামীর উপরে, সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক দিক দিয়ে তিনি স্বামীর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে গেলেন, তার পছন্দ অনুযায়ী রান্নবান্না, আসবাবপত্র, পোশাক আশাক, এমনকি কাকে ভোট দেবেন, কোথায় যাবেন, কোথায় যাবেননা ইত্যাদি...
সব এক ধরণের ছন্দে চলছিলো কিন্তু বছর পাঁচেক হলো তার স্বামী রহিম সাহেব কেমন যেনো বদলে গেলেন, তাদের মধ্যকার সংযোগ কেমন যেনো শিথিল হয়ে গেলো, আমেনা যেনো কি একটা আঁচ করছিলেন, কিন্তু নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বললেন, "না এমনটা হতে পারেনা! " কিন্তু মানুষ যা আঁচ করে তা মিথ্যে হয়না, এর পেছনে সত্যের সংযোগ থাকে, রহিম সাহেব রাত জেগে সেটব্যাকে গিয়ে নীচু স্বরে কার সাথে যেনো কথা বলতেন, আগের থেকে একটু পোশাক আশাকে বেশি নজর দিতে শুরু করলেন, রাত করে বাড়ি ফেরা শুরু করলেন দু'এক রাত ফিরতেনও না, জবাবদিহীতা রহিম সাহেবের স্বভাবে আগেও ছিলোনা... আমেনা তার দুই ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসতেন, ছেলেদেরকে তিনি সর্বর্স দিয়ে বড় করছেন, একটি ২২ অন্যটি ১৭, তার বাচ্চারা ভীষণ সেন্সেটিভ, তাকে বার বার জিজ্ঞেস করে, আম্মা আপনার কি মন খারাপ? তিনি কথা ঘুরিয়ে উত্তর দেন, "না বাবা, এই শরীরটা তেমন ভালোনা"...
কিন্তু একদিন সবকিছু জানাজানি হয়ে যায়...
আমেনা খুব ভেঙে পড়লেন যেনো আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারবেননা তিনি, কিন্তু
বাচ্চাদের কথা ভেবে উঠে দাঁড়ালেন...দাঁড়াতে হয়...
কিন্তু আমরা সেই আমেনাকে আর খুঁজে পেলামনা, একদিন আমেনা ভেবেছিলেন দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি বিষ খাবেন,
না, তা হয়না,
আজকাল পত্রিকায় এসব শোনা যায়,
আহারে তা কেনো হবে?
ওদের কি দোষ, ওদেরকে তো তিনি এভাবে মেরে ফেলতে পারেননা!
বিষন্নতার দিনগুলো ভীষণ ভারী সহযে ফুরোতে চায়না, আয়নায় মুখ দেখেন তিনি,
এ কে?
নিজেকে যেনো চিনতে পারছেননা যেনো আমেনা, হঠাত কি তার বয়স বেড়ে গেলো? অনেকক্ষণ একা একা কাঁদলেন তিনি।
ঋতু এসেছিলো সেদিন, তার কলেজের বান্ধবী, পরিপাটি সুন্দর, ব্যক্তিত্বময়, একটা কলেজে পড়ায়, একটা নারীদের সংস্থাও আছে তার।
ঋতু বললেন, "আমার ওখানে আসিস, বেড়িয়ে যাস।"
ঋতুর একজন বিশ্বাসী লোক দরকার, দুটো কাজ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলো সে, "তুই অফিসে বসবি, একটু একটু করে কাজে মন বসাবি, এখন থেকে আমার নয় এটা তোর প্রতিষ্ঠান", ঋতু জানে আমেনা নির্লোভ, সত পরিশ্রমী মানুষ...
এমন একজন মানুষই তো সে খুঁজছিলো...
নতুন ব্যস্ততার স্রোতে ডুবে আছেন তিনি , একদিন হঠাত জানা অজানা কারণে মনটা বিষন্ন লাগে আমেনা বেগমের, কিছু না বলা কথা কাউকে বলতে ইচ্ছে করে, মোবাইল ফোনের নাম্বারগুলো স্ক্রল করতে থাকেন তিনি,দারুণ অবহেলায়, ঘৃণায় রহিম সাহেবের নাম্বার স্কিপ করে যান তিনি, ঘৃণাকে তিনি আজও অতিক্রম করতে পারেননি,আরও কতোশত নাম্বার এই ফোনে তার, কিন্তু আমেনা কাউকে ফোন করেননা, যেনো এমন, এখন তার তালিকায় কেউ নেই, বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই, নির্ভরতা নেই, অপেক্ষা নেই, যেনো ভীষণ ভারমুক্ত তিনি এখন, বৃষ্টি মুখর দিনে পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে পুরনো দিনের চির আধুনিক গান, "যখন জমেছে মেঘ আকাশে...." একটা পোশাক বদলে ভাড়া বাসার ছাদে যান তিনি, তার গাছগুলোতে পানি দেন, তার যত্নে সবুজ আর সতেজ হয়েছে গাছগুলো...
পুরনো, শুকনো, সব মরা পাতাগুলো খুব সতর্ক হাতে সরিয়ে ময়লার বাক্সে ফেলে দেন তিনি...।
🌏🌎🌍
তালিকায় কেউ নেই তাঁর এখন, আমেনা বেগম কি একটু বোকা, বাইরে থেকে মানুষ এসব মনে করে, হয়তো সে বোকা, ৪৫ বছরের আমেনা লেখাপড়া জানেন, তবে এমন কোনো মেধাবী কেউ নয়, গড়পড়তা সাধারণ মানুষ, তিনি শিখেছেন অন্যকে প্রায়রিটি দিতে তার পরিবার থেকে, প্রথমত তিনি বাবাকে ভীষণ ভালোবাসতেন, বলা যায় অন্ধের মতো, এরপরে ছোট ভাইকে নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়াতেন। দাদী, ফুফু আর মা শিখিয়েছিলেন স্বামীকে যত্ন করতে,বিয়ের পরে তিনি বাবা, ভাইকে ভুলতে বাধ্য হলেন, একজন গৃহবধু হিসাবে তাকে নির্ভর করতে হলো স্বামীর উপরে, সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক দিক দিয়ে তিনি স্বামীর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে গেলেন, তার পছন্দ অনুযায়ী রান্নবান্না, আসবাবপত্র, পোশাক আশাক, এমনকি কাকে ভোট দেবেন, কোথায় যাবেন, কোথায় যাবেননা ইত্যাদি...
সব এক ধরণের ছন্দে চলছিলো কিন্তু বছর পাঁচেক হলো তার স্বামী রহিম সাহেব কেমন যেনো বদলে গেলেন, তাদের মধ্যকার সংযোগ কেমন যেনো শিথিল হয়ে গেলো, আমেনা যেনো কি একটা আঁচ করছিলেন, কিন্তু নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বললেন, "না এমনটা হতে পারেনা! " কিন্তু মানুষ যা আঁচ করে তা মিথ্যে হয়না, এর পেছনে সত্যের সংযোগ থাকে, রহিম সাহেব রাত জেগে সেটব্যাকে গিয়ে নীচু স্বরে কার সাথে যেনো কথা বলতেন, আগের থেকে একটু পোশাক আশাকে বেশি নজর দিতে শুরু করলেন, রাত করে বাড়ি ফেরা শুরু করলেন দু'এক রাত ফিরতেনও না, জবাবদিহীতা রহিম সাহেবের স্বভাবে আগেও ছিলোনা... আমেনা তার দুই ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসতেন, ছেলেদেরকে তিনি সর্বর্স দিয়ে বড় করছেন, একটি ২২ অন্যটি ১৭, তার বাচ্চারা ভীষণ সেন্সেটিভ, তাকে বার বার জিজ্ঞেস করে, আম্মা আপনার কি মন খারাপ? তিনি কথা ঘুরিয়ে উত্তর দেন, "না বাবা, এই শরীরটা তেমন ভালোনা"...
কিন্তু একদিন সবকিছু জানাজানি হয়ে যায়...
আমেনা খুব ভেঙে পড়লেন যেনো আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারবেননা তিনি, কিন্তু
বাচ্চাদের কথা ভেবে উঠে দাঁড়ালেন...দাঁড়াতে হয়...
কিন্তু আমরা সেই আমেনাকে আর খুঁজে পেলামনা, একদিন আমেনা ভেবেছিলেন দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি বিষ খাবেন,
না, তা হয়না,
আজকাল পত্রিকায় এসব শোনা যায়,
আহারে তা কেনো হবে?
ওদের কি দোষ, ওদেরকে তো তিনি এভাবে মেরে ফেলতে পারেননা!
বিষন্নতার দিনগুলো ভীষণ ভারী সহযে ফুরোতে চায়না, আয়নায় মুখ দেখেন তিনি,
এ কে?
নিজেকে যেনো চিনতে পারছেননা যেনো আমেনা, হঠাত কি তার বয়স বেড়ে গেলো? অনেকক্ষণ একা একা কাঁদলেন তিনি।
ঋতু এসেছিলো সেদিন, তার কলেজের বান্ধবী, পরিপাটি সুন্দর, ব্যক্তিত্বময়, একটা কলেজে পড়ায়, একটা নারীদের সংস্থাও আছে তার।
ঋতু বললেন, "আমার ওখানে আসিস, বেড়িয়ে যাস।"
ঋতুর একজন বিশ্বাসী লোক দরকার, দুটো কাজ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলো সে, "তুই অফিসে বসবি, একটু একটু করে কাজে মন বসাবি, এখন থেকে আমার নয় এটা তোর প্রতিষ্ঠান", ঋতু জানে আমেনা নির্লোভ, সত পরিশ্রমী মানুষ...
এমন একজন মানুষই তো সে খুঁজছিলো...
নতুন ব্যস্ততার স্রোতে ডুবে আছেন তিনি , একদিন হঠাত জানা অজানা কারণে মনটা বিষন্ন লাগে আমেনা বেগমের, কিছু না বলা কথা কাউকে বলতে ইচ্ছে করে, মোবাইল ফোনের নাম্বারগুলো স্ক্রল করতে থাকেন তিনি,দারুণ অবহেলায়, ঘৃণায় রহিম সাহেবের নাম্বার স্কিপ করে যান তিনি, ঘৃণাকে তিনি আজও অতিক্রম করতে পারেননি,আরও কতোশত নাম্বার এই ফোনে তার, কিন্তু আমেনা কাউকে ফোন করেননা, যেনো এমন, এখন তার তালিকায় কেউ নেই, বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই, নির্ভরতা নেই, অপেক্ষা নেই, যেনো ভীষণ ভারমুক্ত তিনি এখন, বৃষ্টি মুখর দিনে পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে পুরনো দিনের চির আধুনিক গান, "যখন জমেছে মেঘ আকাশে...." একটা পোশাক বদলে ভাড়া বাসার ছাদে যান তিনি, তার গাছগুলোতে পানি দেন, তার যত্নে সবুজ আর সতেজ হয়েছে গাছগুলো...
পুরনো, শুকনো, সব মরা পাতাগুলো খুব সতর্ক হাতে সরিয়ে ময়লার বাক্সে ফেলে দেন তিনি...।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
উত্তম চক্রবর্তী ২৪/০৯/২০২৪সুন্দর ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে প্রিয় লেখক।
-
শ.ম. শহীদ ৩০/০৮/২০২৪খুবই বুদ্ধিদীপ্ত লেখা।
-
উত্তম চক্রবর্তী ২১/০৮/২০২৪চেতনার গভীরে যখন আঘাত হানে তখন মনের অস্থিরতা তৈরি করে। বাস্তব ধর্মী গল্পের বাস্তব চিত্র ।
-
ফয়জুল মহী ১১/০৮/২০২৪অসাধারণ উপস্থাপন
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১১/০৮/২০২৪সুন্দর