কালোমেঘ বলয়
@@@@@
সে এসেছিলো এই দেশটায় থাকবে বলে, তার বয়স ২৭, তার প্রেমিক ছিলো, ব্রেকআপ হয়েছে, শুধু বিয়ের পরে যে বিচ্ছেদ সেই বিচ্ছেদ টাকে মানুষ বড় করে দ্যাখে, কিন্তু যে কোনো বিচ্ছেদের যন্ত্রনা ভীষণ কষ্টের, ভেঙে দেয় হৃদয়ের পাড়, রঞ্জুর একটা ভালো সরকারী চাকুরী হওয়ার পর থেকে ও আর ফোন ধরছিলোনা, এতোই নিমগ্ন ছিলো পূর্বা যে বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো গোটা ব্যাপারটা, তা প্রায় ১০ বছরের চেনাজানা, ঠিক গৃহশিক্ষক নয়, মাঝে মধ্যে ম্যাথস দেখাতে আসতো, পরিবারে একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিলো, বাবার কাছ থেকে চাকরি পাওয়ার সময় বড় অংকের লোনও নিয়েছিলো ঘুষ দেওয়ার জন্যে, বলেছিলো চাকরি পেলে ফিরিয়ে দেবে, সবাই অলিখিত সম্পর্কের কথাটা জানতো...কিন্তু রঞ্জু আর ফেরেনি, বাবা-মা শেষমেষ বললেন," যা হয়েছে মা ভালোই হয়েছে, "
কিন্তু পূর্বার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলোনা, বড়মামা লণ্ডনে থাকেন,স্পেনে একটা স্কলারশীপের জন্যে গাইড করলেন, জাস্ট যায়গাটা চেঞ্জ করা, ও এখন স্পেনে, নতুন শহর, প্রথমে সবকিছুতে একটা গা ছমছমে অনুভব, রাস্তাঘাটে মানুষ কম, সবকিছু ঢাকার থেকে আলাদা, অজানা ভাষা, অন্যরকম লোকজন, তারপরও দেশটা হয়তো ভালো।
রাহাত অনেক ছোটবেলায় এখানে এসেছে বাবা-মা'র সাথে, দুর্দান্ত ভাষা জানে সে, স্কুল এখানে, কলেজ, ইউনিভার্সিটি এখানে,বাবা মা একজন দেশী অথবা বংশোদ্ভূত মেয়ে খুঁজছেন, একটা মেয়ে দেখা হয়েছে, বয়স অল্প, একটু খুঁতও আছে, যার কারণে বিষয়টি ঝুলে থাকার মতো, পূর্বাকে রাহাত বাসে প্রায়ই যেতে দেখে, কেমন বিষন্ন নারী সে, স্পেনের যুবতী মেয়েরা উচ্ছল পাখির মতো, সাজগোজ আর স্মার্টনেস মিলিয়ে বেশ কিছু আঁচ করা যায়...অভিবাসীদের মেয়েরাও বেশ স্মার্ট, চালচলনে আপনারা বুঝতে পারবেন, পূর্বা আমার বাঙালি মুখাবয়াব দেখে জিজ্ঞেস করলো, আমাকে কি এই ঠিকানাটায় এলে বলবেন, রাহাত কনফার্ম হলো মেয়েটি এখানকার নয়, রাহাত কয়েক মুহূর্ত ভেবে বললো আর দুটো স্টেশন পরে, আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেবো, রাহাত তার অফিস থেকে টিউশনে যাচ্ছিলো,তৃতীয় স্টপেজে সে নামবে,পূর্বা নেমে গেলো ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষণ দিশাহারার মতো তাকিয়ে রইলো, চারটি রাস্তা কোন রাস্তায় যাবে সে? আবার একটি বয়স্ক নারীকে জিজ্ঞেস করলো তিনি ইংরেজি বোঝেননা, কয়েকটা হার্টবিট মিস করলো পূর্বা, এবার একটি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো, সে পেন্সিলভেনিয়া থেকে বেড়াতে এসেছে, হাতে এক বিশাল কালচে সোনালী ফারের ভাল্লুক, বলল, নাক বরাবর গিয়ে ডানদিকে, একসপ্তাহ আগে একবার এসেছিলো রাতে, এখন লোকেশনটা চিনতে পারলো, চারদিকে প্রচুর বিশাল বিশাল পুরনো স্টোন পাইনের গাছ, আর অদ্ভূত নিরবতা, এই শীতেও পাখিদের ডাক শোনা যাচ্ছে, টিয়া নাকি, কাজ সেরে ফিরতে ৮ টা বাজলো, রাহাত তাকে দেখলো, সে তাকে দেখলোনা, নির্ধারিত স্টপেজে নেমে গেলো পূর্বা... রাহাত চিন্তার জাল বুনলো...
নিশির মা-বাবা ভাবছিলেন থাক তাহলে দেশে তার বান্ধবীর ছেলের সাথে বিয়ে দেবেন মেয়েকে, দেশে ফিরে যাবেন তখন, ২০ বছর প্রবাসে আছেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে দেশে ফিরে যাবেন, দেশে বেশ সম্পদ করেছেন তারা, নিশি একজন সুন্দরী নারী এক্টুখানি শারীরিক খুঁত বদলে দেয় সবটুকু আশা, স্বপ্নকে, তার স্প্যানিশ ক্লাসমেটরা বলে কেনো নিশি স্কার্ফ পরে বারোমাস মুখ ঢেকে রাখে, সুন্দর স্মার্ট রাফাতকে অনেকে এর মাঝে প্রপোজও করেছে, নিশি মন খারাপ করে তার ২১ বছর বয়সে তাকে কেউ প্রপোজ করেনি, বান্ধবী ঋতু বলছিলো মন খারাপ করিসনা, হয়তো তোকে সত্যিকারের ভালোবাসবে কেউ কোনো একদিন, নিশি বললো, আমি ভালোবাসা খুঁজিনা, মানুষের বিষ্ময় চাহনি, আর অবজ্ঞা আমাকে হীনমন্য করে...
রাহাত বললো,
"পুর্বা আমরা ক্যাফে খেতে পারি..."
"হ্যা পারি, আপনিও বাঙালী "
"আপনার প্লান কি?"
"প্লান নেই..."
এইসব টুকরো আলাপে পরিচয় আগায়...
রঞ্জুর ফোন বেজে উঠে, কয়েকবার, পূর্বা কেটে দেয়, রাহাত বলে, "কে কল করছে, রিসিভ করুন..."
পূর্বা বলে, দেশ থেকে আমার প্রাক্তন...
"কাম ব্যাক করতে চাইছে? "
"সম্ভব নয়..."
"আমারও একজন ছিলো এখানে, স্কুল থেকে...,একজন সুগার ড্যাডির সাথে আছে এখন..."
পূর্বার প্লেনে "এমন কিছু" চোখে পড়েছিলো... অবিশ্বাস্য নয়... এমনসব অসংগতি দেখলে অসস্তিতে অস্তিত্ব ভরে যায় তার, নিতে পারেনা সে...।
পূর্বা একা তাই রাহাতের সাথে দেখা করতে ভালো লাগে, আর বাংলায় কথা বলার এডেড এডভান্টেজ, রাহাত গলা নামিয়ে অত্যন্ত আকুতি নিয়ে বললো "কোনো প্লান আছে, "
"প্লান নেই..."
"আমাকে হয়তো, পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করতে হবে, আপনার প্লান থাকলে জানাবেন।"
"প্লান নেই... "
রাহাত খুব হতাশ হলো পূর্বার এই নির্মোহ উত্তর শুনে...অনেককিছু প্লান করা শুরু করেছিলো সে, এমন ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ খুঁজছিলো সে, কিন্তু না পূর্বা প্রস্তুত নয়, বিষন্নতার কালো মেঘবলয় যেনো ঘিরে আছে তাকে, সে কি এই বৃত্ত থেকে বের হবেনা? নাকি বের হোতে চায়না...?
সে এসেছিলো এই দেশটায় থাকবে বলে, তার বয়স ২৭, তার প্রেমিক ছিলো, ব্রেকআপ হয়েছে, শুধু বিয়ের পরে যে বিচ্ছেদ সেই বিচ্ছেদ টাকে মানুষ বড় করে দ্যাখে, কিন্তু যে কোনো বিচ্ছেদের যন্ত্রনা ভীষণ কষ্টের, ভেঙে দেয় হৃদয়ের পাড়, রঞ্জুর একটা ভালো সরকারী চাকুরী হওয়ার পর থেকে ও আর ফোন ধরছিলোনা, এতোই নিমগ্ন ছিলো পূর্বা যে বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো গোটা ব্যাপারটা, তা প্রায় ১০ বছরের চেনাজানা, ঠিক গৃহশিক্ষক নয়, মাঝে মধ্যে ম্যাথস দেখাতে আসতো, পরিবারে একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিলো, বাবার কাছ থেকে চাকরি পাওয়ার সময় বড় অংকের লোনও নিয়েছিলো ঘুষ দেওয়ার জন্যে, বলেছিলো চাকরি পেলে ফিরিয়ে দেবে, সবাই অলিখিত সম্পর্কের কথাটা জানতো...কিন্তু রঞ্জু আর ফেরেনি, বাবা-মা শেষমেষ বললেন," যা হয়েছে মা ভালোই হয়েছে, "
কিন্তু পূর্বার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলোনা, বড়মামা লণ্ডনে থাকেন,স্পেনে একটা স্কলারশীপের জন্যে গাইড করলেন, জাস্ট যায়গাটা চেঞ্জ করা, ও এখন স্পেনে, নতুন শহর, প্রথমে সবকিছুতে একটা গা ছমছমে অনুভব, রাস্তাঘাটে মানুষ কম, সবকিছু ঢাকার থেকে আলাদা, অজানা ভাষা, অন্যরকম লোকজন, তারপরও দেশটা হয়তো ভালো।
রাহাত অনেক ছোটবেলায় এখানে এসেছে বাবা-মা'র সাথে, দুর্দান্ত ভাষা জানে সে, স্কুল এখানে, কলেজ, ইউনিভার্সিটি এখানে,বাবা মা একজন দেশী অথবা বংশোদ্ভূত মেয়ে খুঁজছেন, একটা মেয়ে দেখা হয়েছে, বয়স অল্প, একটু খুঁতও আছে, যার কারণে বিষয়টি ঝুলে থাকার মতো, পূর্বাকে রাহাত বাসে প্রায়ই যেতে দেখে, কেমন বিষন্ন নারী সে, স্পেনের যুবতী মেয়েরা উচ্ছল পাখির মতো, সাজগোজ আর স্মার্টনেস মিলিয়ে বেশ কিছু আঁচ করা যায়...অভিবাসীদের মেয়েরাও বেশ স্মার্ট, চালচলনে আপনারা বুঝতে পারবেন, পূর্বা আমার বাঙালি মুখাবয়াব দেখে জিজ্ঞেস করলো, আমাকে কি এই ঠিকানাটায় এলে বলবেন, রাহাত কনফার্ম হলো মেয়েটি এখানকার নয়, রাহাত কয়েক মুহূর্ত ভেবে বললো আর দুটো স্টেশন পরে, আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেবো, রাহাত তার অফিস থেকে টিউশনে যাচ্ছিলো,তৃতীয় স্টপেজে সে নামবে,পূর্বা নেমে গেলো ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষণ দিশাহারার মতো তাকিয়ে রইলো, চারটি রাস্তা কোন রাস্তায় যাবে সে? আবার একটি বয়স্ক নারীকে জিজ্ঞেস করলো তিনি ইংরেজি বোঝেননা, কয়েকটা হার্টবিট মিস করলো পূর্বা, এবার একটি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো, সে পেন্সিলভেনিয়া থেকে বেড়াতে এসেছে, হাতে এক বিশাল কালচে সোনালী ফারের ভাল্লুক, বলল, নাক বরাবর গিয়ে ডানদিকে, একসপ্তাহ আগে একবার এসেছিলো রাতে, এখন লোকেশনটা চিনতে পারলো, চারদিকে প্রচুর বিশাল বিশাল পুরনো স্টোন পাইনের গাছ, আর অদ্ভূত নিরবতা, এই শীতেও পাখিদের ডাক শোনা যাচ্ছে, টিয়া নাকি, কাজ সেরে ফিরতে ৮ টা বাজলো, রাহাত তাকে দেখলো, সে তাকে দেখলোনা, নির্ধারিত স্টপেজে নেমে গেলো পূর্বা... রাহাত চিন্তার জাল বুনলো...
নিশির মা-বাবা ভাবছিলেন থাক তাহলে দেশে তার বান্ধবীর ছেলের সাথে বিয়ে দেবেন মেয়েকে, দেশে ফিরে যাবেন তখন, ২০ বছর প্রবাসে আছেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে দেশে ফিরে যাবেন, দেশে বেশ সম্পদ করেছেন তারা, নিশি একজন সুন্দরী নারী এক্টুখানি শারীরিক খুঁত বদলে দেয় সবটুকু আশা, স্বপ্নকে, তার স্প্যানিশ ক্লাসমেটরা বলে কেনো নিশি স্কার্ফ পরে বারোমাস মুখ ঢেকে রাখে, সুন্দর স্মার্ট রাফাতকে অনেকে এর মাঝে প্রপোজও করেছে, নিশি মন খারাপ করে তার ২১ বছর বয়সে তাকে কেউ প্রপোজ করেনি, বান্ধবী ঋতু বলছিলো মন খারাপ করিসনা, হয়তো তোকে সত্যিকারের ভালোবাসবে কেউ কোনো একদিন, নিশি বললো, আমি ভালোবাসা খুঁজিনা, মানুষের বিষ্ময় চাহনি, আর অবজ্ঞা আমাকে হীনমন্য করে...
রাহাত বললো,
"পুর্বা আমরা ক্যাফে খেতে পারি..."
"হ্যা পারি, আপনিও বাঙালী "
"আপনার প্লান কি?"
"প্লান নেই..."
এইসব টুকরো আলাপে পরিচয় আগায়...
রঞ্জুর ফোন বেজে উঠে, কয়েকবার, পূর্বা কেটে দেয়, রাহাত বলে, "কে কল করছে, রিসিভ করুন..."
পূর্বা বলে, দেশ থেকে আমার প্রাক্তন...
"কাম ব্যাক করতে চাইছে? "
"সম্ভব নয়..."
"আমারও একজন ছিলো এখানে, স্কুল থেকে...,একজন সুগার ড্যাডির সাথে আছে এখন..."
পূর্বার প্লেনে "এমন কিছু" চোখে পড়েছিলো... অবিশ্বাস্য নয়... এমনসব অসংগতি দেখলে অসস্তিতে অস্তিত্ব ভরে যায় তার, নিতে পারেনা সে...।
পূর্বা একা তাই রাহাতের সাথে দেখা করতে ভালো লাগে, আর বাংলায় কথা বলার এডেড এডভান্টেজ, রাহাত গলা নামিয়ে অত্যন্ত আকুতি নিয়ে বললো "কোনো প্লান আছে, "
"প্লান নেই..."
"আমাকে হয়তো, পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করতে হবে, আপনার প্লান থাকলে জানাবেন।"
"প্লান নেই... "
রাহাত খুব হতাশ হলো পূর্বার এই নির্মোহ উত্তর শুনে...অনেককিছু প্লান করা শুরু করেছিলো সে, এমন ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ খুঁজছিলো সে, কিন্তু না পূর্বা প্রস্তুত নয়, বিষন্নতার কালো মেঘবলয় যেনো ঘিরে আছে তাকে, সে কি এই বৃত্ত থেকে বের হবেনা? নাকি বের হোতে চায়না...?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
উত্তম চক্রবর্তী ১৩/০৯/২০২৪অনন্য চেতনার প্রতিফলন।
-
আলমগীর সরকার লিটন ৩১/০৭/২০২৪চমৎকার এক গল্প উপহার
-
ফয়জুল মহী ৩০/০৭/২০২৪খুব সুন্দর
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৯/০৭/২০২৪বেশ