www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কতিপয় কাপুরুষ

- suman
"কতিপয় কাপুরুষ"
আমি একজন মহিলা মেম্বার, কিভাবে নির্বাচিত হয়েছি সে গল্প আর একদিন বলবো, আজ একটি গল্পের মধ্যে অনুপ্রবেশ করবো আমরা, আমাদের টিম দুপক্ষের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা খেয়েছে, এখনো কোনো মিমাংসার মুখ দেখছিনা, ঘটনার মূল চরিত্র রহিম, আমাদের বাগানে প্রায় দিন মজুরি করে, আমার স্বামী তাকে কাজে ডাকে কারণে অকারণে, তাই তার প্রতি আমাদের এক অন্যরকম নির্ভরতা কাজ করে, যদিও আরো জনা পাঁচেক মজুর এসে আমার বাবার কাছ থেকে পাওয়া এই বিশাল বাগানটা দেখাশোনা করে, দিনশেষে প্রচুর জ্বালানি কাঠ নিয়ে তারা বাড়তি লাভের দেখা পায়, সবকিছুর যখন অনেক দাম তখন বিনামুল্যে এই কাঠকুটো, শাকসবজী, ফলমূল, মাঝে মধ্যে মাছ মিলে গিলে মুখে এক প্রাপ্তির রেখা ফুটে উঠে, দিন দিন আমি একজন জটিল মানুষ হয়ে উঠছি, কোনোকিছু আর সহজ সরল মনে হয়না, প্রায়ই আমাকে সালিশের অংশ হোতে হয়, একটা রাজনৈতিক দলের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত, সেখানেও বেশ সময় দিতে হয়, আমাদের এলাকার শেষ প্রান্তে রহিমদের বাড়ি, ভোটের সময় ছাড়া আমার ওখানে তেমন একটা যাওয়া পড়েনা, দুটো খাল পেরিয়ে যেতে হয়,তাছাড়াও শহরে পারিবারিক বিভিন্ন কাজ আর মিছিল মিটিং লেগেই থাকে, আরও আছে বিয়ের দাওয়াত আমাকে ছাড়া যেনো ওদের অনুষ্ঠান হবেইনা, আগে প্রতিটায় যেতাম, আজকাল একটু বেছে বেছে যাই, রহিম একদিন এসে আমার স্বামীর সাথে কি যেনো বলছিলো, সালিশটা যেনো তার পক্ষে হয়,
"উনি তো আমাদের মেম্বার", আমি কিছুটা আঁচ করলাম, পরে একে একে জানা গেলো অনেক কিছু, ওর বউয়ের সাথে পরিষদে ১০টাকার চাল আনতে দেখা হলে কি যেনো বলতে চেয়েছিলো, আমার জরুরী মিটিং ছিলো শোনা হয়নি, সত্যি বলতে কি পরিষদে গেলে, রাস্তাঘাটে এতো মানুষ আই কন্টাক্ট করতে চায় যে সবাইকে সবসময় ঠিকঠাক সাড়া দেওয়া যায়না, কিন্তু বুঝতে দেইনা, এই এক যন্ত্রনা একদিকে পাওয়ার এক্সারসাইজের সুখ, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনের বারোটা বেজে গেছে, যাক সেকথা, রহিম তার বউয়ের সাথে ছাড়াছাড়ি চায়, আমাকে সাহায্য করতে হবে সালিশের দিনে, বউয়ের সাথে আর ঘর করা সম্ভব নয়, বউয়ের মাঝে বড়লোকী ভাব, পরিষদে চাল আনতে যেতে চায়না, বাপের বাড়ি গেলে ফিরতে চায়না, নামাজকালাম, ঘরকন্যায় মন নেই।
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম আর কোনো অভিযোগ আছে?
তখন রহিম আর একদিকে শুন্য দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকলো, ওদের পরিবার সম্পর্কে কিছুটা জানি, রহিমের বাবার অনেক জমি ছিলো একে একে জমিগুলো বেঁচে এখন আছে শুধু ভিটে বাড়ি, রহিমের বয়স যখন ২৬ তখন ১৪ বছরের রেহানার সাথে তার পারিবারিক ভাবে সম্মন্ধ করে বিয়ে হয়, রেহানার মা মারা যাওয়ায় বিয়েটা একটু অল্প বয়সেই দেওয়া হয়, এর থেকে বেশি বয়স হলে, সমাজে নিন্দে হবে, রেহানার বাবা অবস্থাপন্ন মানুষ, রহিমদের বাড়ি থেকে ৬০/৭০ মাইল দূরে তাদের বাড়ী, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা জটিল, তখন রহিমদের অবস্থা অতোটা খারাপ ছিলোনা, এখান থেকে ২০ বছর আগে। কিন্তু রহিমের বাবার জমি বেঁচে বিশাল সংসার চালানোর কৌশলটি ক্রমশ তাদের সর্বসান্ত করে ফেললো, একটু বোকাসোকা মাথামোটা প্রকৃতির রহিম সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হলো, আবারও জমি বিক্রি করে ব্যবসা শুরু, কিন্তু ব্যবসায় মন নেই রহিমের, দোকান প্রায়ই বন্ধই থাকে, ব্যবসা করা হোলোনা রহিমের, বেশ কিছুদিন ঘরে বসেছিলো রহিম, এরমাঝে ঘরে এসেছে ৫টি নতুন মুখ, প্রথমটি ছেলে, আরো ছেলের আশায় আরও ৪টি মেয়ে, আরো আছে অসুস্থ বাবা,মা আর দুটি অবিবাহিত বোন, ইনকাম যা তাতে সংসার চলেনা, ভিটেবাড়িটা বিক্রি করলে কতোটাকা পাবে সে নিয়ে কেবল যোগ বিয়োগ করে সে, কিন্তু বউ কোনমতেই সেটি বেঁচতে দেবেনা , রেহানা ভাবে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দিলে এতোগুলো বাচ্চা নিয়ে কোথায় দাঁড়াবে তারা? খরচ পোষায়না বলে প্রায়ই বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক আনে সে, কখনো কখনো বাচ্চাদের নিয়ে অনেকটা দিন কাটিয়ে আসে, থাকনা তার স্বামী কটা দিন একা একা তার আপনজনদের নিয়ে, কিন্তু কোনো ভাবেই বুঝি আর জোড়াতালি দেওয়া যাবেনা, রহিম মরিয়া ভিটেবাড়ি সে এবার বেঁচে দেবেই, রেহানাকে খুব মারলো রহিম, চ্যালাকাঠ দিয়ে, বাঁশ দিয়ে, মারতে মারতে ঘরের বাইরে নিয়ে এলো, রোগাপটকা প্রায়ই উপোষী থাকা রেহানা বললো, "তুমি আমার ধর্মের বাপ, আর মেরোনা আমাকে", মসজিদের পেছনের জঙ্গলে নিয়ে আরো মারলো রহিম, যেনো দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে গেছে সে, রেহানা ভেজা কাদার মধ্যে নেতিয়ে পড়লো, খবর গেলো তার বাপের বাড়ি, ভাইয়েরা নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করলো, বৃদ্ধ বিষয়ী বাবা মামলার আয়োজন করলেন, আমি মধ্যস্থতায় এগিয়ে গেলাম, কিন্তু অপরপক্ষ মরিয়া, বউপেটানো রহিমের পুরনো অভ্যাস, এবার প্রথম নয়, এলাকার সবাই জানে, আর ফিরে আসবেনা রেহানা, কোনমতেই না, ভাই-বাবা আটকে রাখে তাকে, সন্তানরা ভাগাভাগি হয়ে দুই পরিবারে আছে, রহিমের পরিবারে ঠিকমতো রান্নাবান্না হয়না, বৃদ্ধ মা কেবল কাঁদেন, আমার সাথে দেখা করতে এলেন,বললেন, "জোড়া লাগিয়ে দাও মা, আমার ছেলের কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছিনা",
আমাকে বাচ্চাদের কথা ভেবে আরও দুজন গণ্যমান্যকে নিয়ে রেহানার বাপের বাড়ি যেতে হলো, রেহানার বাবা ছাগল জবাই করেছেন, তারপক্ষের গণ্যমান্যদেরও ডেকেছেন, শেষে বুঝিয়ে দিলেন এই বউনির্যাতনকারী গোঁয়ারের কাছে জীবন থাকতে মেয়েকে তাঁরা দেবননা কোনোমতেই, আমাকে তারা সম্মান করেছিলো, কিন্ত ভিন্ন এলাকা থেকে যাওয়া আমি সালিশে হেরে চলে এলাম, একটা সূক্ষ যন্ত্রণা কাজ করছিলো কি? নাকি রেহানার বিপন্ন-বিষন্ন মুখটা ভুলতে পারছিলাম না আমি...!

সন্তানগুলোর শুকনো মুখের দিকে তাকানো যায়না, ১২/১৩ বছরর বড়মেয়েটির রুক্ষ চুল, নোংরা জামা পরা, শাক তুলতে এসেছে চেয়ারম্যানদের বিলে...
পাঁচ পাঁচটি সন্তান একবছরের শিক্ষা সেশন মিস করলো, মাস্টারনিরা আমার কাছে অভিযোগ দিয়ে গেছে ওদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনার জন্য, অভিভাবকের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যে,
যে আর্থিক জরিমানা হয়েছে রহিমের, টাকার অংকে সেও কম নয়, রেহানাকে ফিরিয়ে আনার জন্যে বৈদ্যের বাড়ীতে কয়েকদফায় হাজার পনেরো টাকা গেছে?

হয়তো রেহানা একদিন ফিরে আসবে, কিন্তু রহিম কি বদলাতে পারবে নিজেকে?
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০৭/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর ব্যাখ্যা
    • suman ০৭/০৭/২০২৪
      ধন্যবাদ আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্যে...
  • ফয়জুল মহী ০২/০৭/২০২৪
    অসাধারণ প্রকাশ করেছেন
    শুভ কামনা আপনার জন্য।
    • suman ০২/০৭/২০২৪
      সম্মানিত কবি ও কথা সাহিত্যিক আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই আপনার মুল্যবান বক্তব্যের জন্যে...
 
Quantcast