অদেখা
শিশির তখন থাকতো মেয়েদের একটা হলে, হলের মুখে ছেলেদের উটকো ভীড় লেগেই থাকতো,কতো রকমের অদ্ভূত মানুষ যে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতো, হলে ঢুকতে বের হোতে ওর খুব অস্ব্স্তি হোতো এজন্যে...তবে রাজুর সাথে পরিচয় আর সম্পর্ক হওয়ার পর কেঊ স্লিপ কল দিলে ও ফিরিয়ে দিতো না ...অস্বীকার করতো না...মানুষদের জন্যে কেমন যেনো মায়া লাগতো ...ওর বন্ধুরা রাজুর স্লিপ ওকে নিয়মিত খুশী হয়ে পৌঁছে দিতো...
ওর পাসের রুমে থাকতেন দারুণ মেধাবী একজন সিনিয়র আপা...সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত ...রাজু আর শিশিরের ব্যাপারে তার কৌতুহল আর শুভকামনার সীমা ছিলো না ...আজ তারা কি গল্প করলো, কোথায় কোথায় বেড়ালো...সব খুঁটিয়ে খুটিয়ে জানতে রেখার খুব ভালো লাগতো ...শিশির সহজাত অভ্যাসে কিছু রান্না হলে রেখা আপাকে খাওয়াতে পছন্দ করতো ...সম্পর্কটি বন্ধুত্বেরও অধিক যেনো...এমনি বেশ চলছিলো, শিশিরের পরিবার থেকে বিয়ের চাপ এলে তড়িঘড়ি করে রাজুকে বিয়ে করার কথা বলতে হয় ...রাজু তখনই বিয়ে করতে চায়নি ...বিভিন্ন চাপের মুখে রাজু যেনো অনুরোধে ঢেকি গেলার মতো রাজি হোলো ...যখন এগুলো আগাচ্ছে রেখা আপা শিশির কে ডেকে বললেন, শিশির তোমাকে অনেক দিন ধরে একটা কথা বলতে চাই ...কিন্তু আমি জানি একথাটা এখন আর বলা ঠিক হবে না ।।
কি কথা রেখাআপা ? বলেন না প্লিজ...
মানে আমার এক ভাগ্নে আছে তোমাকে তার দারুণ পছন্দ , আমাকে একবার তোমার সাথে কথা বলতে বললো...
শিশির আতকে ঊঠে বললো ,কি বলেন আপা, রাজুকে ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবতে পারিনা ...এমনকি রাজু যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তাও না ...প্লিজ আপা তাকে না করে দেন...
কিছুদিন বাদে রেখা আপা বললেন,তুমি আর একবার ভেবে দেখতে পারো ...তুমি রিফিউজ করেছে বলে ওর চোখে রীতিমতো পানি দেখলাম ...আর একবার কি ভাবা যায় শিশির ?
অনেক দ্বন্দ্ব আর মালিন্য ঘেটে শিশির আর রাজুর বিয়ে ঠিক হোলো...বেশিরভাগ অজুহাত রাজুর... বিয়ের আগমুহুর্তে সমস্ত রোমাণ্টিকতা বিদায় নিয়েছে তার মধ্য থেকে ...কেমন যেনো এক অনীহা তার মাঝে ...শিশির কিছুই বুঝতে পারছেনা এই কি সেই তার ভীষন চেনা রাজু নাকি অন্য কেঊ !
রেখা আপা বিয়ের দিন সকালে বললেন আমার ভাগ্নে আবিদ সব ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে বসে আছে যদি রাজু শেষ মূহুর্তে তোমাকে বিয়ে করতে রাজী না হয় সেই অপেক্ষায়...
শিশির বললো এসব এই মূহুর্তে কি বলছেন রেখা আপা আপনি ...প্লিজ অন্য কিছু বলেন আজ আমাদের একটা শুভদিন...
রেখা আপা উঠে গেলেন ,কিছুমনে কোরোনা শিশির আমার মন বলছে তোমরা সুখী হবে না ...
আপা প্লিজ আজকের দিনে এসব কথা নয়, আপনি যাবেন না ...আজ সারাদিন আমার পাশে থাকুন, আপনি যে আমার খুব কাছের মানুষ ...
আমি চলে যাচ্ছি শিশির , তোমার উপর রাগ করে নয় মনে অনেক দূঃখ নিয়ে,বোকা ছেলেটা আমাকে বিপদেই ফেললো...বাবা মারা গেছে সন্ত্রাসীদের হাতে ,আমাদের কাছেই মানুষ...আমিও যে ওকে খুব স্নেহ করি
সেদিন রেখা আপা আর দাঁড়াননি চলে গেলেন ।শিশিরের জীবনে কতোটা যায়গা জুড়ে যে রেখা আপা ছিলেন তা কেবল তারা দুজনেই জানতো...
শিশিরের বিস্ময় মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো যখন বিয়ের পরের দিন রাজু প্রথমে যৌতুক আর ডিভোর্সের কথা তুললো ...শিশির যেনো কিছু মেলাতে পারছে না ! এ কিভাবে সম্ভব ? গল্প -উপন্যাসে শুনেছে মেয়েদের উপর যৌতুকের চাপ দেওয়া হয়...তাই বলে বিয়ের পরদিনই....তার মনে হোলো রাজু হয়তো রসিকতা করছে ...কিন্তু যখন ওর মাকে ডেকে তাঁর সামনে স্পষ্ট করে বলল ...তখন শিশিরের প্রথম মনে হোলো, সে কোথাও চলে যাবে এখান থেকে ...কিন্তু কোথায় যাবে ...তার তো কোনো জব নেই...
চলে যাই যাই করে রাজুর সাথে তার টানাপোড়েনের স্ংসারের আজ পাঁচ বছর মতো হোতে চললো ...এর মাঝে এক ফুটফুটে ছেলে শিশু এসেছে তাদের ঘরে ...তার বয়স তিন বছর...
শাশুড়ি বলেছিলেন ,একটা বাচ্চা নাও দেখবে রাজীবের দোষ ত্রুটিগুলো সেরে যাবে...
আজ রাজীব ওকে ছেলেসহ ঘর থেকে বের করে দিলো ...ওর চোখের সামনে গ্রিলে তালা লাগিয়ে দিলো...ও প্রসুনকে কোলে নিয়ে হাঁটছে ...কোথায় যাবে এখনো জানে না ...হয়তো বাবার বাড়িতে কয়েকটা দিন ...তেমন কিছু ভাবতে পারছেনা ...সম্ভবত মাথা ঠিকমতো কাজ করছে না...
এখন অনেক কিছু শিশিরকে একা সামলাতে হয় ,কতোকি কাজই না করতে হয় তাকে ...এমনকি উটকো মানুষদের মোকাবলা ...এই প্রথমবার তার মনে হোলো সে খুব ভুল করেছে আবিদের প্রস্ংগটি পুরো উপেক্ষা করে...কেমন হতো আবিদ ? ...রাজুর ঠিক বিপরীত... না রাজুরই মতো অন্য আর একজন ...পাগলের মতো কী ভাবছে এসব...আবিদ নামের মানুষটাকে সে তো কোনদিন দেখেনি ...দেখার প্রয়োজন ছিলো তাও ভাবেনি ...কিন্তু ভাবতে বেশ লাগে ...অদেখা আবিদ তো তাকে চেনে ...কোনদিন চলার পথে আবি্দ কি তাকে খুঁজে নেবে ...নাকি প্রসুনের দায় সে কাঁধে নিয়ে হাঁটবে একা এব্ং একা ...
ওর পাসের রুমে থাকতেন দারুণ মেধাবী একজন সিনিয়র আপা...সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত ...রাজু আর শিশিরের ব্যাপারে তার কৌতুহল আর শুভকামনার সীমা ছিলো না ...আজ তারা কি গল্প করলো, কোথায় কোথায় বেড়ালো...সব খুঁটিয়ে খুটিয়ে জানতে রেখার খুব ভালো লাগতো ...শিশির সহজাত অভ্যাসে কিছু রান্না হলে রেখা আপাকে খাওয়াতে পছন্দ করতো ...সম্পর্কটি বন্ধুত্বেরও অধিক যেনো...এমনি বেশ চলছিলো, শিশিরের পরিবার থেকে বিয়ের চাপ এলে তড়িঘড়ি করে রাজুকে বিয়ে করার কথা বলতে হয় ...রাজু তখনই বিয়ে করতে চায়নি ...বিভিন্ন চাপের মুখে রাজু যেনো অনুরোধে ঢেকি গেলার মতো রাজি হোলো ...যখন এগুলো আগাচ্ছে রেখা আপা শিশির কে ডেকে বললেন, শিশির তোমাকে অনেক দিন ধরে একটা কথা বলতে চাই ...কিন্তু আমি জানি একথাটা এখন আর বলা ঠিক হবে না ।।
কি কথা রেখাআপা ? বলেন না প্লিজ...
মানে আমার এক ভাগ্নে আছে তোমাকে তার দারুণ পছন্দ , আমাকে একবার তোমার সাথে কথা বলতে বললো...
শিশির আতকে ঊঠে বললো ,কি বলেন আপা, রাজুকে ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবতে পারিনা ...এমনকি রাজু যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তাও না ...প্লিজ আপা তাকে না করে দেন...
কিছুদিন বাদে রেখা আপা বললেন,তুমি আর একবার ভেবে দেখতে পারো ...তুমি রিফিউজ করেছে বলে ওর চোখে রীতিমতো পানি দেখলাম ...আর একবার কি ভাবা যায় শিশির ?
অনেক দ্বন্দ্ব আর মালিন্য ঘেটে শিশির আর রাজুর বিয়ে ঠিক হোলো...বেশিরভাগ অজুহাত রাজুর... বিয়ের আগমুহুর্তে সমস্ত রোমাণ্টিকতা বিদায় নিয়েছে তার মধ্য থেকে ...কেমন যেনো এক অনীহা তার মাঝে ...শিশির কিছুই বুঝতে পারছেনা এই কি সেই তার ভীষন চেনা রাজু নাকি অন্য কেঊ !
রেখা আপা বিয়ের দিন সকালে বললেন আমার ভাগ্নে আবিদ সব ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে বসে আছে যদি রাজু শেষ মূহুর্তে তোমাকে বিয়ে করতে রাজী না হয় সেই অপেক্ষায়...
শিশির বললো এসব এই মূহুর্তে কি বলছেন রেখা আপা আপনি ...প্লিজ অন্য কিছু বলেন আজ আমাদের একটা শুভদিন...
রেখা আপা উঠে গেলেন ,কিছুমনে কোরোনা শিশির আমার মন বলছে তোমরা সুখী হবে না ...
আপা প্লিজ আজকের দিনে এসব কথা নয়, আপনি যাবেন না ...আজ সারাদিন আমার পাশে থাকুন, আপনি যে আমার খুব কাছের মানুষ ...
আমি চলে যাচ্ছি শিশির , তোমার উপর রাগ করে নয় মনে অনেক দূঃখ নিয়ে,বোকা ছেলেটা আমাকে বিপদেই ফেললো...বাবা মারা গেছে সন্ত্রাসীদের হাতে ,আমাদের কাছেই মানুষ...আমিও যে ওকে খুব স্নেহ করি
সেদিন রেখা আপা আর দাঁড়াননি চলে গেলেন ।শিশিরের জীবনে কতোটা যায়গা জুড়ে যে রেখা আপা ছিলেন তা কেবল তারা দুজনেই জানতো...
শিশিরের বিস্ময় মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো যখন বিয়ের পরের দিন রাজু প্রথমে যৌতুক আর ডিভোর্সের কথা তুললো ...শিশির যেনো কিছু মেলাতে পারছে না ! এ কিভাবে সম্ভব ? গল্প -উপন্যাসে শুনেছে মেয়েদের উপর যৌতুকের চাপ দেওয়া হয়...তাই বলে বিয়ের পরদিনই....তার মনে হোলো রাজু হয়তো রসিকতা করছে ...কিন্তু যখন ওর মাকে ডেকে তাঁর সামনে স্পষ্ট করে বলল ...তখন শিশিরের প্রথম মনে হোলো, সে কোথাও চলে যাবে এখান থেকে ...কিন্তু কোথায় যাবে ...তার তো কোনো জব নেই...
চলে যাই যাই করে রাজুর সাথে তার টানাপোড়েনের স্ংসারের আজ পাঁচ বছর মতো হোতে চললো ...এর মাঝে এক ফুটফুটে ছেলে শিশু এসেছে তাদের ঘরে ...তার বয়স তিন বছর...
শাশুড়ি বলেছিলেন ,একটা বাচ্চা নাও দেখবে রাজীবের দোষ ত্রুটিগুলো সেরে যাবে...
আজ রাজীব ওকে ছেলেসহ ঘর থেকে বের করে দিলো ...ওর চোখের সামনে গ্রিলে তালা লাগিয়ে দিলো...ও প্রসুনকে কোলে নিয়ে হাঁটছে ...কোথায় যাবে এখনো জানে না ...হয়তো বাবার বাড়িতে কয়েকটা দিন ...তেমন কিছু ভাবতে পারছেনা ...সম্ভবত মাথা ঠিকমতো কাজ করছে না...
এখন অনেক কিছু শিশিরকে একা সামলাতে হয় ,কতোকি কাজই না করতে হয় তাকে ...এমনকি উটকো মানুষদের মোকাবলা ...এই প্রথমবার তার মনে হোলো সে খুব ভুল করেছে আবিদের প্রস্ংগটি পুরো উপেক্ষা করে...কেমন হতো আবিদ ? ...রাজুর ঠিক বিপরীত... না রাজুরই মতো অন্য আর একজন ...পাগলের মতো কী ভাবছে এসব...আবিদ নামের মানুষটাকে সে তো কোনদিন দেখেনি ...দেখার প্রয়োজন ছিলো তাও ভাবেনি ...কিন্তু ভাবতে বেশ লাগে ...অদেখা আবিদ তো তাকে চেনে ...কোনদিন চলার পথে আবি্দ কি তাকে খুঁজে নেবে ...নাকি প্রসুনের দায় সে কাঁধে নিয়ে হাঁটবে একা এব্ং একা ...
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ২৪/১১/২০১৩একদম বাস্তব চিত্র
-
Înšigniã Āvî ১৪/১১/২০১৩baastob.....
upostapona daarun -
אולי כולנו טועים ১২/১১/২০১৩খুব সুন্দর লিখেছেন।
সমাজের খুব বাস্তব একটি চিত্র তুলে ধরলেন।
সমাজের বিবেকটি পাথর হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই। -
সায়েম খান ১২/১১/২০১৩চমৎকার গল্প, শত ব্যস্ততার মাঝেও পড়ি। কারণ: যতই পড়িবে ততই শিখিবে। অনেক ধন্যবাদ।
-
suman ১২/১১/২০১৩আমি আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় ছিলাম...
একটা সময় ছিলো চরিত্রে নামকরণের ব্যাপারে খুব উদ্বিগ্ন থাকতাম,,,্রোমাণ্টিক নামকরণ বেছে নিতাম ...এখন আটপৌরে নাম খুঁজি...খুজি চরিত্রের সাথে উপযোগী নাম...এই গল্পের অনেক চরিত্র আমার খুব কাছের ...এখানে অনেক detailing এর দরকার ছিলো ...ফোকাস করেছি আজ আবিদের উপর ...হয়তো ঠিক আবিদের উপর নয় বিশ্বাস ভাঙ্গার আগে ও পরে মানুষের আবেগ গুলো কিভাবে বদলে যায়...আর মানুষের পুরণো লালিত বোধগুলো কেমন খড়কুটোর মতো হয়ে যায় তার উপর...
এই যে মনযোগ দিয়ে পড়লেন ...নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে ...আপনাকে ব্লগে প্রতিদিন খুঁজে বেড়ানো একটা অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে... এতো ভালো লেখেন ঈর্ষা হয়... -
আরজু নাসরিন পনি ১২/১১/২০১৩খুব মন খারাপ করে দেয়া লেখা ।
দাম্পত্য সম্পর্ক বা সংসার জবিনটা কষ্টকর হয়ে উঠলে কখনো কখনো এই ধারণাটা চলে আসে, আর কেউ...যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়...তাকে খুঁজে পেতে মন চায় একটু শান্তির খোঁজে ।
অনেক ভালো লাগলো লেখাটা ।
রাজুর নামই কি রাজিব ? লেখার মাঝখানে একাধিকবার রাজিব নামটা এসেছে যে রাজু নামেই পরিচিতি পেয়েছে লেখায় ।
অনেক শুভেচ্ছা রইল, প্রিয় সুমন ।।