www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মোড়ল ও একটি ভূত

গ্রামের নাম দরগারবন। এ গ্রামে আছে বহুদিনের পুরনো একটা বটগাছ। গ্রামের মোড়ল বটগাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। সে গাছ কাটার জন্য লোক ঠিক করে রাখল।
গাছ কাটার আগের দিন রাতে একটা ভূত এলো মোড়লের কাছে। ভূতটি বলল, হে মোড়ল, আপনি হলেন এ গ্রামের মাথা। আমরা এই পুরনো গাছটায় বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছি। আপনি এ গাছটি কেটে ফেলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা বাতিল করুন।
মোড়ল হুংকার ছেড়ে বলল, আমার গাছ আমি কাটবো, তুই বলার কে? আর এ গাছ কেটে ফেললে তোরা অন্যগাছে চলে যাবি, সমস্যা কোথায়?
ভূতটি বলল, আপনারা একে একে সব পুরনো গাছ কেটে ফেলেছেন। আমাদের বসবাসের জন্য এ গাছটি ছাড়া আশপাশে আর কোনো বড়ো গাছ নেই। এ গাছটি কাটবেন না দয়া করে।

মোড়ল বড়ো রাগী মানুষ। সে রেগেমেগে বলল, তোরা কোথায় থাকবি না থাকবি এটা তোদের ব্যাপার। গাছ আমি কাটবই। পারলে তোরা ঠেকিয়ে রাখিস। যা এখন আমার সামনে থেকে।
ভূতটি বলল, দেখুন, আমরা ইচ্ছা করলে আপনাদের অনেক তি করতে পারি, ভয় দেখাতে পারি। আমরা অনর্থক কারো তিও করি না, ভয়ও দেখাই না। আপনি যদি গাছটা কেটে ফেলেন তো আমরা ঘরহারা হয়ে পড়ব। ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো। তখন কিন্তু আপনারা শান্তিতে ঘুমুতে পারবেন না, বলে দিলাম।
ভূতের মুখে এ কথা শুনে মোড়ল বিছার মতো লাফিয়ে উঠলো। তিনি ভূতটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলেন।

মোড়ল পরের দিন গাছটি কেটে ফেলল।

রাতে মোড়ল বাথরুম করতে বাইরে গেল। অমনি ’ওরে আল্লারে’ বলে চিৎকার করতে করতে বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
কবিরাজ-বৈদ্য চলে এলো। তারা বলল, মোড়লের ওপর ভয়ংকর ভূতের আছর পড়েছে। শুরু হলো মোড়লের ভূত ছাড়ানোর চিকিৎসা।

মোড়ল চোখ বন্ধ করলেই খালি দেখতে পায়, তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছের মতো ক্ষড়ো কুচকুচে কালো অসংখ্য ভূত। হাতির দাঁতের মতো দাঁত, বিশাল কান আর তিনটা করে চোখ, গা ভর্তি লোম। তিনি একটু পর পর লাফিয়ে উঠেন আর আবোল-তাবোল বকেন। মোড়ল সামনে যাকে পায় তাকেই খামচে ধরে বলে, এই, এই, ধর আমাকে, আমাকে তুলে নিয়ে গেল ভুতেরা, ধর। আমার সামনে হাজার হাজার ভূত। আমাকে বাঁচা। এসব বলে তিনি হাউমাউ করে কান্নাকাটি করেন সারাদিন। মোড়লের কান্নাকটির জন্য বাড়ির কারোর চোখে আর ঘুম নেই।
ভূতেরা রাতে ভয়ংকর রূপধরে সারা গ্রামের ঘর-বাড়িতে, কলপাড়ে, পাকঘরে, রাস্তা-ঘাটে এলোমেলো ঘোরাফেরা করতে লাগল। মোটা-চিকন, ছোট-বড়, নানা ধরনের ভূতে ভরে গেছে গ্রাম। ঘর থেকে বের হলেই সামনে পড়ে ভূত। যার সামনে পড়ে সে-ই চিৎকার করে টাশকি খেয়ে পড়ে যায়। মুখ দিয়ে লালা বিজল পড়ে। জ্বর আসে। শরীর কাঁপে। আবোল-তাবোল বকে। এ রকম নানা বিপদ শুরু হয়ে গেল গ্রামে। কবিরাজ আর বৈদ্যের আসা-যাওয়া বেড়ে গেল গ্রামে।
মোড়লের সামনে আবার এলো ভূতটা। ভয়ংকর রূপ তার। মোড়ল ভূতটাকে এক নজর দেখেই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কাপড়-চোপর আর বিছানাপত্র নষ্ট করে ফেলল। মোড়ল তার দু’হাত সামনের দিকে ঠেলে বারবার বলছে, আর এদিকে আসিস না বাপ। যা চাইবি তাই দিব, কী চাস তুই, খালি একবার ক।
তাড়াতাড়ি গাছ লাগা। নইলে তোর খবর আছে, বলল ভুতেরা।
মোড়ল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, আর খবরের কাম নেই বাপ। আমি এক্ষুনি গাছ লাগানো শুরু করছি।
মোড়ল গ্রামের সবাইকে নিয়ে শুরু করে দিল বৃক্ষরোপণ। দেখতে দেখতে গাছে গাছে ছেয়ে গেল দরগারবন গ্রাম।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৪১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast