www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমায় নাকি ভূতে ধরেছে

পরীক্ষর রেজাল্ট দিবে। সাজুগুজু করে স্কুলে গেলাম। রেজাল্ট পাওয়ার আনন্দে টগবগ করছি আমরা। রেজাল্টশিটটা হাতে পেলাম। এক নজর দেখেই পাকখেয়ে পড়ে গেলাম মাটিতে।

আমাকে নিয়ে স্কুল জুড়ে শুরু হলো চিল্লাচিল্লি, হৈ-চৈ আর ছুটোছুটি। কেউ পানি ঢালছে, কেউ বাতাস করছে। আমার সহপাঠীরা কান্না কান্না করে বলছে, `সুমাইয়া জীবনেও গণিতে এত কম নাম্বার পায় না; সে ৩৯ পায় কিভাবে? এই নাম্বার দেখেই সে পড়ে গেছে।’ স্কুলের বৃদ্ধ দপ্তরি চাচা এসে চুপি দিয়ে জ্ঞানীর মত করে বলছে, `আরে কিয়ের নাম্বারের কতা কও তোমরা, আমার তো মনে অইতাছে এই মাইয়ারে ভূতে ধরেছে, ভূতে ধরলে মানুষ এম্বায় পইরা গিয়া ঝিম মাইরা থাহে, মাইয়ার লক্ষণ তো ভাল ঠেকতাছে না গো! যাই, ধর্ম স্যারকে নিয়া আসি।’

ছুটে এলেন ধর্ম স্যার। তিনি এসে বললেন, `দেহি সরো সরো তোমরা। কী অইছে দেকতাছি।’ স্যার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলেন। তারপর বিড়বিড় করে মুখটা উপরে তুললেন। লম্বা একটা শ্বাস টেনে গাল ফুলিয়ে আমার মুখ বরাবর মারলেন জোরে ফু। এভাবে তিনবার ফু দিলেন। তার ওপর পরা পানির ছিটা। স্যারের ফু-এর সাথে পান-জর্দার ভয়ংকর গন্ধে আমার নাড়িভূড়ি ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। হাঁচি আর কাশিতে আমি ধণুকের মতো বাঁকা হয়ে গেলাম।

কয়েকজন বলছে, `হায়! আয়! স্যার, দেখেন, দেখেন সে কেমন বাঁকা হয়ে গেছে, দেখছেন স্যার, দেখছেন?’
স্যার একটা ধমক দিয়ে বললেন, `ধ্যাত, তরা চুপ কর। না বুইজ্জা আন্দাজে দেকছেন, দেকছেন করিছ না। ফু-এর এ্যাকশান তো হবায় শুরু অইছে, দেহছ না ছেরি এহন কী করে! বাঁইক্কা-বুইক্কা, মুছরাইয়া-কুছরাইয়া ঠিক অয় কেমনে, চাইয়া খালি দেক। ভূত-পেত্নী আছর করলে এহন বাপ ডাইক্কা পালাইবে। ধুনপুন মনে করিছ না, শক্ত ফু দিছি।’

কতক্ষণ পরপর পানির ছিটা, নানান কথা আর জর্দার উটকো গন্ধে আমি বেহুঁশ হয়ে গেলাম। যা করবে আল্লায়, ডান বাও তাকিয়ে একটা মোচড় দিয়ে উঠে তাওড়াতে তাওড়াতে সোজা বাসায় চলে এলাম।

গভীর রাত। চিন্তায় আমার ঘুম আসছে না। গণিতে ৩৯? ছিঃ। খালি ছটফট করছি। হঠাৎ দরজা-জানালা নড়ে উঠল। একটা ভূত এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! আমি তো ডরে লাফিয়ে উঠলাম। ভূতটা হাসি হাসি মুখে বলে, `ভয় পেয়ো না, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না, এদিক দিয়ে যাচিছলাম তো, চুপি দিয়ে দেখি তুমি খালি ছটফট করছ। তোমার কষ্ট কষ্ট মুখটা দেখে ভারি মায়া হলো আমার। তাই সোজা চলে এলাম তোমার ঘরে। এত করে কী ভাবছো তুমি? কোনো সমস্যা থাকলে বলো তো, শুনি। দেখি, আমি তোমার কোনো উপকার নি করতে পারি।’

আমি বললাম, `তুমি একটা ভূত! ভূতেরা কি মানুষের উপকার করতে পারে? তোমরা তো খালি ভয় দেখাতে পার আর মানুষের ক্ষতি করতে পার। এহ্ তুমি করবে আমার উপকার? যাও এখান থেকে।’

ভূতটা হেসে হেসে বলে,` তোমরা আমাদের এত খারাপ ভেবো না। আসলে তোমরা আমাদের যত খারাপ মনে কর আমরা তত খারাপ না। আমরা মেলা উপকার করতে পারি। আদেশ করে দেখো না।’

ভূতটা এত সুন্দর করে বলল যে, আমার একটু একটু বিশ্বাস হলো। আমি বললাম, `আমার যে সমস্যা তুমি এর আগা মাথা কিছুই বুঝবে না। এটা লেখাপড়ার ব্যাপার। লেখাপড়া না জানলে কী উপকার করবে তুমি, হেহ্?’
ভূতটা বলে, `কিচ্ছু বুজ না তুমি। আমি হলাম হুকুমের গোলাম। একবার হুকুম করো আমাকে, তারপরে দেখো আমি যে কী করি।’

আমি বললাম, `গণিতে সবসময় আমি নাইনটি আপ নাম্বার পেয়ে থাকি। আর এবার ফাইনাল পরীক্ষায় পেলাম থার্টি নাইন। আমার রোল নম্বর ৭-এ গিয়ে নেমেছে। আমি মুখ দেখাবো ক্যামনে? এই হলো আমার সমস্যা। তুমি কি পারবে, এ সমস্যার কোনো সমাধান দিতে?’ খালি পেরাপেরি।

`এই সমস্যা তোমার? নো চিন্তা। আগামীকালই এর সমাধান পেয়ে যাবে তুমি।’ হাঃ হাঃ হাঃ করে ভূতটা লাটিমের মতো ঘুরতে ঘুরতে অদৃশ্য হয়ে গেল।

পরেরদিন স্কুলে গেলাম। সহপাঠীরা দৌড়ে এসে বলল, `সুমাইয়া ধর্ম স্যারে ফু না দিলে কালকে তোমার খবর আছিল। অভিভাবক কক্ষ হতে কয়েকজন আন্টি দ্রুত এসে চোখ বড় করে বলছে, `দাঁড়াও তো মা, দাঁড়াও। তোমারে নাকি ভূতে ধরেছিল?’ ওনারা মায়া করে আমার মাথা হাতিয়ে দিয়ে বলে, `ভূতে তোমারে নাকি খাড়াত্তে অক্করে মাটিত ফালাইয়া দিছে? আল্লারে আল্লা, কী বিপদ! ধর্ম স্যার ফু-মন্তর না করলে তো সর্বনাশ অইয়া যাইত। লক্ষ টেকার ফু।’

চারদিকে খালি ধর্ম স্যারের ফু-এর প্রসংশা। দুই মহিলা গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে ’ফু’-এর জন্যে ধর্ম স্যারের পেছনে ছুটছে। ধর্ম স্যার বিরাট ব্যস্ত।

গণিত স্যার পাগলের মত খুঁজছেন আমাকে। স্যারের সামনে পড়তেই স্যার থাপ মেরে আমার হাত চেপে ধরে বললেন, `সুমাইয়া, এসো, এসো। তোমার ব্যাপারটা নিয়ে ভীষণ টেনশানে ছিলাম। বিশ্বাস করো, রাতে আমার একটুও ঘুম হয়নি। গণিতে নাম্বার তুলতে আমার বিরাট বড় ভুল হয়ে গেছে। তুমি গণিতে পেয়েছ ৯৩ আর রেজাল্টশীটে উঠেছে উল্টোটা মানে ৩৯। কিযে বিতিকিচিছরি কারবার বল তো! এখন নম্বরপত্র সব ঠিকঠাক করে দিয়েছি। আমার একটু ভূলের জন্য তুমি অনেক বড় কষ্ট পেয়েছ। আই এ্যাম ভেরি সরি সুমাইয়া। দারুন রেজাল্ট করেছ তুমি। তোমাকে অভিনন্দন।’

আমি স্যারের দেয়া অভিনন্দন যত্ন করে তুলে রেখেছি। একটুও ঊনিশ বিশ করিনি। এ অভিনন্দন আমি ভূতকে দেব না ধর্ম স্যারকে দেব-এ নিয়ে এখন মহা সমস্যায় পড়ে গেছি।

সুপ্রিয় পাঠক, এ সমস্যা সমাধানের ভার আপনার উপর ছেড়ে দিলাম।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৬৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রাখাল ১৩/১১/২০১৩
    এটা বাস্তব নয় সুমাইয়া
    স্বপ্ন দেখেছে ঘুমাইয়া
    তারপর করলো পোষ্ট
    সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো
    উপস্থাপনা যেনো মুরগীর রোষ্ট ।
    -----------------------------------
    ভূতকে আমি ভয় করিনা,ভয়করি ধর্মস্যারকে
    পান জর্দ্দার বিচ্ছিরি গন্ধ আমার মতো জানে আর কে?
    --------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • সুলতান মাহমুদ ১১/১১/২০১৩
    সুমাইয়াতো দেখছি সব্যসাচি লেখক
  • অসাধারন গল্প হয়েছে ।
  • জহির রহমান ০৭/১১/২০১৩
  • সায়েম খান ০৬/১১/২০১৩
    ধুর! ভূত বলে কিছু আছে নাকি? আপনি কি দেখেছিলেন রাতে? স্বপ্ন?
    • কি? ভূত নেই?
      আজ রাতে অন্ধকারে একা একা গোরস্থানের দিকে হেঁটে যাবেন। তখন দেখবেন ভূত আছে কি নেই।
      শুভেচ্ছা নিবেন।
      • জহির রহমান ০৭/১১/২০১৩
        ভুত আছে? নাকি জ্বিন? ভালো জ্বিন- মন্দ জ্বিন?
        • পরে কিন্তু অন্ধকারে গোরস্থানে নিয়ে রেখে আসব আপনাকে। তখন বুঝবেন মজা।
          ধন্যবাদ।
          • জহির রহমান ০৭/১১/২০১৩
            একসময় ভয় পেতাম। এখন আর পাইনা। আমার সাথে ভুতদের (আমার দৃষ্টিতে ভুত নয়- ভালো/খারাপ জ্বিন) এক সদস্যের দোস্তি রয়েছে। একদিনই দেখা দিয়েছি- পরে অনেক খুঁজেছি তাকে। :( আর দেখা করেনি। আমার সাথে অভিমান করেছে মনে হয়।
            • জহির ভাই আমি কিন্তু ভূত বিশ্বাস করি । কারন জ্বীনই ভূত । আর ভূতের অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে আমার সাথে কথা বইলেন ;)
              • জহির রহমান ০৮/১১/২০১৩
                অভিজ্ঞতা আমারো আছে ঢের!
                • tongue
  • মারজানা মৌরি ০৬/১১/২০১৩
    অসাধারন।
  • Înšigniã Āvî ০৬/১১/২০১৩
    darun vabe likhen....
  • অসাধারণ লেখনী।খুবই চমৎকার একটি গল্প।
    • খুউব ভালো লাগছে। ধন্যবাদ নিবেন।
  • ইসমাত ইয়াসমিন ০৬/১১/২০১৩
    বর্ণনা খুব সুন্দর হয়েছে। অভিনন্দন ধর্মও স্যারকে দিলে মন্দ হয়না, পরবর্তীতে তাহলে মার্ক বেশী পাওয়া যাবে। হা।।হা।।হা।
  • জহির রহমান ০৬/১১/২০১৩
    দক্ষ কারিগরের সুনিপুন সৃষ্টি।
    অসাধারণ লিখেছেন।
    শুভকামনা আপুর জন্য...
    • যা বললেন ভাই!
      অনেক অনেক ধন্যবাদ।
  • suman ০৬/১১/২০১৩
    অপূর্ব সুন্দর আর এমন জমিয়ে লিখতে পারার ক্ষমতায় আমি মুগ্ধ...শুভেচ্ছা রইলো...।
 
Quantcast