নতুন টিচার
আমাদের স্কুলে গণিতের নতুন টিচার এসেছেন। খুবই রাগী। ভয়ে আমাদের কলজে গেছে শুকিয়ে। তিনি নাকি খুবই কড়া। ছাত্রীদের হাতে মারেন না, বেতেও মারেন না। দাঁতে মারেন আর চোখে মারেন। চোখ পাক দিয়ে কটমট করে দাঁতে এমন চূরা মারেন যে ভয়ে শরীর কাঁপাকাপি শুরু হয়ে যায়। পড়া না পারলে শাস্তির এমনই ব্যবস্থা।
বেতমারা নিষেধ, তাতে কী? তিনি অনেক গবেষণা করে বেতমারার পরিবর্তে কঠিন শাস্তি দেওয়ার কৌশল আবিষ্কার করে ফেলেছেন। বেতমারার চেয়ে কঠিন শাস্তি। এমন শাস্তি যে, বলাও যায় না আবার সওয়াও যায় না। একেবারে চোখ দিয়ে পানি বের করে ছাড়েন। এ শাস্তির জন্য স্যারকে কেউ কিছু বললে, স্যার সাফ সাফ বলে দেন, ‘বেতমারা নিষেধ বলে আমি কখনও বেত নিয়ে ক্লাসে যাই না। শাসন করা তো আর নিষেধ না। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়া না পারলে, দুষ্টুমি করলে তাদের ভেংচি-ধমক দিয়ে হলেও তো সোজা রাখতে হবে। নইলে আমার মাস্টারি চলবে কী করে।’ এবার বোঝেন!
স্যারের আরেকটা গুণ হলো, তিনি কখনও হাসেন না। তাঁর হাসি নাকি কেউ দেখেনি। তাঁর দাঁতও কেউ দেখেনি। খালি দাঁতে চূরা দেওয়ার সময় নাকি একটুখানি দাঁত দেখা যায়। সবসময় রাগন্ত হয়ে থাকেন। এমন সব কথা শুনে আমরা খুব টেনশানে পড়ে গেলাম।
আজ স্যারের প্রথম ক্লাস।
আমরা খুব ভয়ে ভয়ে আছি। সহপাঠীরা বলছে, ‘সুমাইয়া, স্যার যদি কিছু প্রশ্ন করে তো জবাব দিয়ে দিস। সাবধান, আমাদের কিছু বলতে বলবি না।’ ক্লাসে আসার সময় হয়েছে আর আমাদের চিনচিন করে পেটব্যথা শুরু হয়ে গেছে। ভয়ে মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর চেষ্টা করি কিন্তু জিহ্বাটাও শুকিয়ে ঠনঠনা। স্যারের হাতে একটা রেজিষ্টার আর চক-ডাস্টার। মাথাটা ডানদিকে কাৎ করে খুব জোরে হেঁটে এসে ক্লাসে ঢুকলেন। আমি আগেই ক্লাসের সবাইকে সিজিল হয়ে বসতে বলেছিলাম।
স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। আমরা রোবটের মতো দাঁড়ালাম আবার বসে পড়লাম।
আমরা টানটান হয়ে মাথা সোজা করে বসে আছি। ঠিক যেন মূর্তি। কেউ চুল পরিমাণও নড়ছি না। স্যার কতক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ক্লাস ক্যাপটেইন কে?
দাঁড়িয়ে জবাব দিলাম, আমি স্যার।
স্যার আরেকদিকে তাকিয়ে বললেন, নাম কি?
কার নাম স্যার? বললাম আমি।
স্যার বললেন, তোমার নাম জানতে চাইছি।
আমার নাম সুমাইয়া।
পুরা নাম বলো।
সুমাইয়া বরকতউল্লাহ।
তোমরা ক্লাসের সবাই এভাবে পাথর হয়ে বসে আছে কেন? এনি প্রোবলেম?
জ্বী স্যার, ভয়ে আমরা এভাবে বসে আছি।
ভয়ে? কীশের ভয়?
আপনার ভয়। আমরা আপনাকে ভীষণ ভয় পাচ্ছি স্যার।
আমাকে ভয়! স্যার অবাক হয়ে বললেন।
জ্বী স্যার।
আমাকে ভয় পাচ্ছ মানে? আমি তো তোমাদের নতুন টিচার। আজই প্রথম এলাম। আমাকে ভয় পাওয়ার কী আছে?
আপনি আজ এসেছেন সে কথা সত্য কিন্তু আপনি যে কেমন একজন স্যার, সেই কথা আসছে সাতদিন আগে থেকে।
আমি কেমন মানে? তোমাদের কি ভুল ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে নাকি? কী শুনেছ, সত্য করে বলো।
শুনছি তো স্যার অনেক কথাই। সবকথা বললে যদি আপনি রেগে যান, তখন?
ভণিতা করো না। কী শুনেছ নির্ভয়ে বলো।
আমি কোনো ভণিতা করছি না স্যার। আমরা শুনছি আপনি ভয়ংকর রাগী স্যার। আপনি বেতের পরিবর্তে দাঁতে চুরা মারেন, পড়া না পারলে, দুষ্টুমি করলে আপনি এমন শাস্তি আর লজ্জা দেন যে, চোখের পানি নাকের পানি এক করে কাঁদতে হয়। আপনি সবসময় রাগন্ত হয়ে থাকেন। আপনি জীবনেও হাসেন না। আপনার দাঁত নাকি আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি। ক’দিন ধরে আমরা এসব কথা শুনছি স্যার। আমি কোনো মিথ্যা বলিনি। এ কথা স্কুলের সবাই জানে। এসব কথা শুনে আমরা ভয়ে ভয়ে আছি। এই দেখেন স্যার, আপনার ভয়ে আমরা কেমন কাঁপছি, থত্থর!
খুব ভয়ানক কথা! শোনো, এসব কথা মোটেও সত্য না। আমি মোটেও এমন টিচার নই। তোমরা নির্ভয়ে ক্লাস করো।
আপনি তো আমাদের সঙ্গে বেজার মুখে কথা বলছেন এখনও। আর আপনি একটি কথাও তো বলেননি হাসি দিয়ে। আমরা কীভাবে বিশ্বাস করি যে আপনি এমন না।
তাই নাকি, হে: হে: হে:
স্যারের হাসি দেখে আমরাও সাহস করে একটুখানি হাসলাম।
পরে স্যার আমাদের দু’টি অংক এমন সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন যে, আমরা সবাই খুশি হয়ে গেলাম।
বেতমারা নিষেধ, তাতে কী? তিনি অনেক গবেষণা করে বেতমারার পরিবর্তে কঠিন শাস্তি দেওয়ার কৌশল আবিষ্কার করে ফেলেছেন। বেতমারার চেয়ে কঠিন শাস্তি। এমন শাস্তি যে, বলাও যায় না আবার সওয়াও যায় না। একেবারে চোখ দিয়ে পানি বের করে ছাড়েন। এ শাস্তির জন্য স্যারকে কেউ কিছু বললে, স্যার সাফ সাফ বলে দেন, ‘বেতমারা নিষেধ বলে আমি কখনও বেত নিয়ে ক্লাসে যাই না। শাসন করা তো আর নিষেধ না। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়া না পারলে, দুষ্টুমি করলে তাদের ভেংচি-ধমক দিয়ে হলেও তো সোজা রাখতে হবে। নইলে আমার মাস্টারি চলবে কী করে।’ এবার বোঝেন!
স্যারের আরেকটা গুণ হলো, তিনি কখনও হাসেন না। তাঁর হাসি নাকি কেউ দেখেনি। তাঁর দাঁতও কেউ দেখেনি। খালি দাঁতে চূরা দেওয়ার সময় নাকি একটুখানি দাঁত দেখা যায়। সবসময় রাগন্ত হয়ে থাকেন। এমন সব কথা শুনে আমরা খুব টেনশানে পড়ে গেলাম।
আজ স্যারের প্রথম ক্লাস।
আমরা খুব ভয়ে ভয়ে আছি। সহপাঠীরা বলছে, ‘সুমাইয়া, স্যার যদি কিছু প্রশ্ন করে তো জবাব দিয়ে দিস। সাবধান, আমাদের কিছু বলতে বলবি না।’ ক্লাসে আসার সময় হয়েছে আর আমাদের চিনচিন করে পেটব্যথা শুরু হয়ে গেছে। ভয়ে মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর চেষ্টা করি কিন্তু জিহ্বাটাও শুকিয়ে ঠনঠনা। স্যারের হাতে একটা রেজিষ্টার আর চক-ডাস্টার। মাথাটা ডানদিকে কাৎ করে খুব জোরে হেঁটে এসে ক্লাসে ঢুকলেন। আমি আগেই ক্লাসের সবাইকে সিজিল হয়ে বসতে বলেছিলাম।
স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। আমরা রোবটের মতো দাঁড়ালাম আবার বসে পড়লাম।
আমরা টানটান হয়ে মাথা সোজা করে বসে আছি। ঠিক যেন মূর্তি। কেউ চুল পরিমাণও নড়ছি না। স্যার কতক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ক্লাস ক্যাপটেইন কে?
দাঁড়িয়ে জবাব দিলাম, আমি স্যার।
স্যার আরেকদিকে তাকিয়ে বললেন, নাম কি?
কার নাম স্যার? বললাম আমি।
স্যার বললেন, তোমার নাম জানতে চাইছি।
আমার নাম সুমাইয়া।
পুরা নাম বলো।
সুমাইয়া বরকতউল্লাহ।
তোমরা ক্লাসের সবাই এভাবে পাথর হয়ে বসে আছে কেন? এনি প্রোবলেম?
জ্বী স্যার, ভয়ে আমরা এভাবে বসে আছি।
ভয়ে? কীশের ভয়?
আপনার ভয়। আমরা আপনাকে ভীষণ ভয় পাচ্ছি স্যার।
আমাকে ভয়! স্যার অবাক হয়ে বললেন।
জ্বী স্যার।
আমাকে ভয় পাচ্ছ মানে? আমি তো তোমাদের নতুন টিচার। আজই প্রথম এলাম। আমাকে ভয় পাওয়ার কী আছে?
আপনি আজ এসেছেন সে কথা সত্য কিন্তু আপনি যে কেমন একজন স্যার, সেই কথা আসছে সাতদিন আগে থেকে।
আমি কেমন মানে? তোমাদের কি ভুল ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে নাকি? কী শুনেছ, সত্য করে বলো।
শুনছি তো স্যার অনেক কথাই। সবকথা বললে যদি আপনি রেগে যান, তখন?
ভণিতা করো না। কী শুনেছ নির্ভয়ে বলো।
আমি কোনো ভণিতা করছি না স্যার। আমরা শুনছি আপনি ভয়ংকর রাগী স্যার। আপনি বেতের পরিবর্তে দাঁতে চুরা মারেন, পড়া না পারলে, দুষ্টুমি করলে আপনি এমন শাস্তি আর লজ্জা দেন যে, চোখের পানি নাকের পানি এক করে কাঁদতে হয়। আপনি সবসময় রাগন্ত হয়ে থাকেন। আপনি জীবনেও হাসেন না। আপনার দাঁত নাকি আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি। ক’দিন ধরে আমরা এসব কথা শুনছি স্যার। আমি কোনো মিথ্যা বলিনি। এ কথা স্কুলের সবাই জানে। এসব কথা শুনে আমরা ভয়ে ভয়ে আছি। এই দেখেন স্যার, আপনার ভয়ে আমরা কেমন কাঁপছি, থত্থর!
খুব ভয়ানক কথা! শোনো, এসব কথা মোটেও সত্য না। আমি মোটেও এমন টিচার নই। তোমরা নির্ভয়ে ক্লাস করো।
আপনি তো আমাদের সঙ্গে বেজার মুখে কথা বলছেন এখনও। আর আপনি একটি কথাও তো বলেননি হাসি দিয়ে। আমরা কীভাবে বিশ্বাস করি যে আপনি এমন না।
তাই নাকি, হে: হে: হে:
স্যারের হাসি দেখে আমরাও সাহস করে একটুখানি হাসলাম।
পরে স্যার আমাদের দু’টি অংক এমন সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন যে, আমরা সবাই খুশি হয়ে গেলাম।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ৩০/১০/২০১৩স্যার কে কি বাকি সময়গুলো এরকম মজার প্যেছিলেন? নাকি সত্যি রাগী!!
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ৩০/১০/২০১৩বর্ননা ভঙ্গি চমৎকার।ভালো লাগলো।সহমত আবু সালেহ
-
আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ ৩০/১০/২০১৩গল্প শ্রেণীতে না রাখাই ভাল ছিল আপু। তবে দারুন হয়েছে কিন্তু।ভাল থেক সুমি(সুমাইয়া বড় নাম আমার কাছে। রাগ করলে নাকি!)
-
জহির রহমান ৩০/১০/২০১৩আপু, এটা কি গল্প নাকি অভিজ্ঞতা? আমার মনে হয় অভিজ্ঞতা! আসলে রাগী স্যারদের কখনো আমার ভালো লাগেনি। রাগী স্যারদেরও হাসিয়েছি, আর আমাদের সাথে ফ্রি করে নিয়েছি।
আমাদের গণিত স্যারও ছিলেন প্রতিষ্ঠানে অনেকটা ভয়ার্ত মুক্তির মত। হাসতেন খুবই কম, আবার কঠিন রাগী রাগী চেহারা নিয়ে ক্লাশে আসতেন। এমন স্টুডেন্ট খুঁজে পাওয়া যেতো না যে স্যারের নাম শুনলে একটুও ভড়কে যেতো না। আপনার মতো অনেক সাহস নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে সব ঠিক হয়ে গেছিল।
স্যার আমাকে অনেক অনেক পছন্দ করতেন। আজ স্যারকে প্রচন্ড মিস করছি। বছরে দু'একবার দেখা হয়...
স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করছি (আমিন)।