মৌমাছি ও কাঠুরিয়া
এক কাঠুরিয়া গাছ কাটতে গেল বনে। কিন্তু সে গাছ না কেটে মন খারাপ করে শুয়ে আছে একটা গাছের ছায়ায়। এদিক দিয়ে ভনভন করে উড়ে যাচ্ছিল একটা মৌমাছি। সে কাঠুরিয়াকে মন খারাপ করে শুয়ে থাকতে দেখে তার কাছে গেল। মৌমাছিটি কাঠুরিয়ার কাছে গিয়ে বলে- এই কাঠুরিয়া, তুমি এভাবে শুয়ে আছো কেন? কী হয়েছে তোমার?
কাঠুরিয়া মোচড় দিয়ে উঠে বলে- ভাই মৌমাছি, আমি অতি গরিব মানুষ। এক আঙ্গুল জমি নেই আমার। এই কুঠারটাই আমার সম্বল। এই বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে লাকড়ি করি, তারপর এগুলো বাজারে বিক্রি করে সাত মুখের সংসার চালাই। আজও এসেছিলাম গাছ কাটতে। কিন্তু আমি আজ গাছ কাটা শুরু করার আগে বনের গাছের দিকে ভালো করে তাকালাম। দেখলাম, কোনো গাছে ফুল ফুটেছে, কোনোটায় ফল ধরেছে, কোনোটায় পাখিরা বসে মনের সুখে গান করছে আর ওই গাছটার মোটা ডালাটায় দেখলাম মৌমাছিরা মধুর চাক বেধেছে। ওসব দেখে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। ভাবছি, কোন গাছটা কাটবো। অনেকণ যাবৎ শুয়ে থেকে চিন্তা করছি আমি। কিন্তু গাছ কেটে লাকড়ী না করতে পারলে সবাইকে নিয়ে উপুস করতে হবে আমার!
কাঠুরিয়ার কথা শুনে মৌমাছির খুব মায়া হলো, সে কাঠুরিয়াকে বলে-ইশ্ তোমার এত কষ্ট! তুমি এতই গরিব যে এ ভয়ংকর বন থেকে গাছ কেটে নিতে ভয় পাও না। জানো, কত হিংস্র প্রাণী আছে এ বনে? যে কোনো সময় তোমার বিপদ হতে পারে!
কাঠুরিয়া বলে-ক্ষুধার চেয়ে বড় কষ্ট আর নেই। তাই জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে এখানে এসে গাছ কেটে নিয়ে যাই।
মৌমাছি বলে-আচ্ছা তুমি তো অনেক গাছ কেটেছ, তো লাগিয়েছ কয়টা?
অনেক গাছ কেটেছি ঠিকই কিন্তু লাগাইনি একটিও। আর আমার তো জায়গা-জমি নেই, গাছ লাগাব কোথায়? বলল কাঠুরিয়া।
মৌমাছি বলে- নিজের জায়গা নেই বলে গাছ লাগাওনি; তবে গাছ কাটো কার জায়গা থেকে, শুনি?
কাঠুরিয়া চুপ করে রইল।
মৌমাছি বলে-তুমি আর গাছ কাটবে না, বুঝেছো? গাছ কাটলে কত বড় তি হয় তা তুমি জানো? দেখ না, বন যে উজাড় হয়ে যাচ্ছে! আমরা মধুর চাক বাধবো কোথায়? পশু-পাখিরাই বা কোথায় থাকবে? আর তোমাদেরই বা কী অবস্থা হবে তখন?
কাঠুরিয়া বলে, বারে! আমরা তো আর তোমাদের মতো গাছের ডালে থাকি না। আমাদের আবার কী সমস্যা হবে?
মৌমাছি বলে- কী হবে মানে? মারা যাবে একদম, বুঝেছো বোকা কাঠুরিয়া। তুমি কি জানো, গাছ তোমাদের কত বড় বন্ধু? এই গাছই তো জীবন বাঁচিয়ে রাখে?
কাঠুরিয়া বলে- আরে, না না, আমি গরিব বলে এ বনের গাছ আমার জীবন বাঁচায়। গাছ কাটি লাকড়ি করি। আর লাকড়ি বিক্রি করে জীবন বাঁচাই। কিন্তু সব মানুষ তো আমার মতো গরিব নয় যে তাদের জীবন বাঁচাবে গাছ। এরা তো গাছের দিকে ফিরেও চায় না। এখন তুমি আমাকে এগুলো কী শুনাচ্ছ, আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। একটু বুঝিয়ে বলো তো শুনি।
মৌমাছি বলে- তাহলে শোনো, অক্সিজেন নামের এক ধরণের গ্যাস আছে। এই গ্যাস ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। শ্বাস নেওয়ার সময় প্রতিবারই এই গ্যাস মানুষ গ্রহণ করে। আর এ অক্সিজেন কে দেয় জানো? দেয় এই গাছ। সব গাছ যদি রাগ করে অক্সিজেন দেয়া কিছুণের জন্য বন্ধ করে দেয় তা হলে ধনী-গরিব বলে কোনো কথা নেই; সবাই মারা যাবে। এখন বুঝতে পারছ জীবন বাঁচানোর জন্য গাছের কত প্রয়োজন?
হাত থেকে কুঠারটা ফেলে দিয়ে কাঠুরিয়া রাগ দেখিয়ে বলে, তা বুঝলাম। তবে কীভাবে চলবে আমার এত বড় সংসার, না খেয়ে?
কেউ না খেয়ে মরবে না। এতদিন তো এ বনই তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এর পরেও বাঁচিয়ে রাখবে। সারাজীবন ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে তোমাকে একটা ভালো কাজ করতে হবে কাঠুরিয়া ভাই।
কাঠুরিয়া বলে- কী কাজ করতে হবে আমাকে, বলো।
-প্রতিদিন তোমাকে দুটি করে গাছের চারা এনে এ বনে লাগিয়ে দিতে হবে।
-এতে আমার লাভ?
-শুধু তোমারই না এতে সবারই লাভ। তুমি বাঁচবে এবং আমরা সবাই বাঁচবো। তুমি আমার কথা রাখো, তারপরে দেখা যাবে, কী করা যায়।
কাঠুরিয়া ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে চলে বাড়ি গেল।
পরেরদিন কাঠুরিয়া মাথায় করে দু’টি কাঠের চারা এনে লাগিয়ে দিল বনে। এতে বনের সবাই খুশি হয়ে গেল। গাছেরা বলল, ধন্যবাদ কাঠুরিয়া বন্ধু তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
ওম্মা, কোথা হতে ভন ভন করে চলে এলো মৌমাছি। সে কাঠুরিয়ার হাতে পাতামোড়ানো আধাকেজি পরিমাণ মধু তুলে দিয়ে বলল, এই নাও তোমার পুরস্কার। প্রতিদিন এভাবে তুমি গাছ লাগিয়ে বন বাঁচাবে; আমরা মধু দিয়ে বাঁচাবো তোমাকে। আর এ সবুজ বন বাঁচাবে আমাদের সবাইকে। এবার বুঝেছ? কাঠুরিয়া খুশিতে টগবগ করতে লাগল।
কাঠুরিয়া এখন কুঠারের পরিবর্তে চারাগাছ নিয়ে আসে বনে আর যাওয়ার সময় নিয়ে যায় মূল্যবান মধু। সে বাজারে মধু বিক্রি করে তার সংসার চালায়। তার কোনো অভাব রইল না। বনের গাছপালা, পশু-পাখি ও মৌমাছিদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল কাঠুরিয়ার।
কাঠুরিয়া মোচড় দিয়ে উঠে বলে- ভাই মৌমাছি, আমি অতি গরিব মানুষ। এক আঙ্গুল জমি নেই আমার। এই কুঠারটাই আমার সম্বল। এই বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে লাকড়ি করি, তারপর এগুলো বাজারে বিক্রি করে সাত মুখের সংসার চালাই। আজও এসেছিলাম গাছ কাটতে। কিন্তু আমি আজ গাছ কাটা শুরু করার আগে বনের গাছের দিকে ভালো করে তাকালাম। দেখলাম, কোনো গাছে ফুল ফুটেছে, কোনোটায় ফল ধরেছে, কোনোটায় পাখিরা বসে মনের সুখে গান করছে আর ওই গাছটার মোটা ডালাটায় দেখলাম মৌমাছিরা মধুর চাক বেধেছে। ওসব দেখে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। ভাবছি, কোন গাছটা কাটবো। অনেকণ যাবৎ শুয়ে থেকে চিন্তা করছি আমি। কিন্তু গাছ কেটে লাকড়ী না করতে পারলে সবাইকে নিয়ে উপুস করতে হবে আমার!
কাঠুরিয়ার কথা শুনে মৌমাছির খুব মায়া হলো, সে কাঠুরিয়াকে বলে-ইশ্ তোমার এত কষ্ট! তুমি এতই গরিব যে এ ভয়ংকর বন থেকে গাছ কেটে নিতে ভয় পাও না। জানো, কত হিংস্র প্রাণী আছে এ বনে? যে কোনো সময় তোমার বিপদ হতে পারে!
কাঠুরিয়া বলে-ক্ষুধার চেয়ে বড় কষ্ট আর নেই। তাই জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে এখানে এসে গাছ কেটে নিয়ে যাই।
মৌমাছি বলে-আচ্ছা তুমি তো অনেক গাছ কেটেছ, তো লাগিয়েছ কয়টা?
অনেক গাছ কেটেছি ঠিকই কিন্তু লাগাইনি একটিও। আর আমার তো জায়গা-জমি নেই, গাছ লাগাব কোথায়? বলল কাঠুরিয়া।
মৌমাছি বলে- নিজের জায়গা নেই বলে গাছ লাগাওনি; তবে গাছ কাটো কার জায়গা থেকে, শুনি?
কাঠুরিয়া চুপ করে রইল।
মৌমাছি বলে-তুমি আর গাছ কাটবে না, বুঝেছো? গাছ কাটলে কত বড় তি হয় তা তুমি জানো? দেখ না, বন যে উজাড় হয়ে যাচ্ছে! আমরা মধুর চাক বাধবো কোথায়? পশু-পাখিরাই বা কোথায় থাকবে? আর তোমাদেরই বা কী অবস্থা হবে তখন?
কাঠুরিয়া বলে, বারে! আমরা তো আর তোমাদের মতো গাছের ডালে থাকি না। আমাদের আবার কী সমস্যা হবে?
মৌমাছি বলে- কী হবে মানে? মারা যাবে একদম, বুঝেছো বোকা কাঠুরিয়া। তুমি কি জানো, গাছ তোমাদের কত বড় বন্ধু? এই গাছই তো জীবন বাঁচিয়ে রাখে?
কাঠুরিয়া বলে- আরে, না না, আমি গরিব বলে এ বনের গাছ আমার জীবন বাঁচায়। গাছ কাটি লাকড়ি করি। আর লাকড়ি বিক্রি করে জীবন বাঁচাই। কিন্তু সব মানুষ তো আমার মতো গরিব নয় যে তাদের জীবন বাঁচাবে গাছ। এরা তো গাছের দিকে ফিরেও চায় না। এখন তুমি আমাকে এগুলো কী শুনাচ্ছ, আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। একটু বুঝিয়ে বলো তো শুনি।
মৌমাছি বলে- তাহলে শোনো, অক্সিজেন নামের এক ধরণের গ্যাস আছে। এই গ্যাস ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। শ্বাস নেওয়ার সময় প্রতিবারই এই গ্যাস মানুষ গ্রহণ করে। আর এ অক্সিজেন কে দেয় জানো? দেয় এই গাছ। সব গাছ যদি রাগ করে অক্সিজেন দেয়া কিছুণের জন্য বন্ধ করে দেয় তা হলে ধনী-গরিব বলে কোনো কথা নেই; সবাই মারা যাবে। এখন বুঝতে পারছ জীবন বাঁচানোর জন্য গাছের কত প্রয়োজন?
হাত থেকে কুঠারটা ফেলে দিয়ে কাঠুরিয়া রাগ দেখিয়ে বলে, তা বুঝলাম। তবে কীভাবে চলবে আমার এত বড় সংসার, না খেয়ে?
কেউ না খেয়ে মরবে না। এতদিন তো এ বনই তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এর পরেও বাঁচিয়ে রাখবে। সারাজীবন ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে তোমাকে একটা ভালো কাজ করতে হবে কাঠুরিয়া ভাই।
কাঠুরিয়া বলে- কী কাজ করতে হবে আমাকে, বলো।
-প্রতিদিন তোমাকে দুটি করে গাছের চারা এনে এ বনে লাগিয়ে দিতে হবে।
-এতে আমার লাভ?
-শুধু তোমারই না এতে সবারই লাভ। তুমি বাঁচবে এবং আমরা সবাই বাঁচবো। তুমি আমার কথা রাখো, তারপরে দেখা যাবে, কী করা যায়।
কাঠুরিয়া ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে চলে বাড়ি গেল।
পরেরদিন কাঠুরিয়া মাথায় করে দু’টি কাঠের চারা এনে লাগিয়ে দিল বনে। এতে বনের সবাই খুশি হয়ে গেল। গাছেরা বলল, ধন্যবাদ কাঠুরিয়া বন্ধু তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
ওম্মা, কোথা হতে ভন ভন করে চলে এলো মৌমাছি। সে কাঠুরিয়ার হাতে পাতামোড়ানো আধাকেজি পরিমাণ মধু তুলে দিয়ে বলল, এই নাও তোমার পুরস্কার। প্রতিদিন এভাবে তুমি গাছ লাগিয়ে বন বাঁচাবে; আমরা মধু দিয়ে বাঁচাবো তোমাকে। আর এ সবুজ বন বাঁচাবে আমাদের সবাইকে। এবার বুঝেছ? কাঠুরিয়া খুশিতে টগবগ করতে লাগল।
কাঠুরিয়া এখন কুঠারের পরিবর্তে চারাগাছ নিয়ে আসে বনে আর যাওয়ার সময় নিয়ে যায় মূল্যবান মধু। সে বাজারে মধু বিক্রি করে তার সংসার চালায়। তার কোনো অভাব রইল না। বনের গাছপালা, পশু-পাখি ও মৌমাছিদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল কাঠুরিয়ার।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রাখাল ১৩/১১/২০১৩চমৎকার...গল্প
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ৩০/১০/২০১৩চমৎকার গল্প। নিয়মিত লিখলে আরো ভালো হবে। ছোটদের শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে এই গল্প থেকে, অসাধারণ আইডিয়া
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ২৯/১০/২০১৩বাস্তব বিষয় বস্তুর চমৎকার গল্প।খুবই ভালো লাগলো।
-
সহিদুল হক ২৯/১০/২০১৩সুমাইয়া, গল্প লেখার হাতটা তোমার ভালোই।গল্পের বিষয়বস্তুও খুব ভাল।লেখা চালিয়ে যাও নিয়মিত।
শুভ কামনা রইলো। -
আরজু নাসরিন পনি ২৯/১০/২০১৩তারুণ্যে সুস্বাগতম, সুমাইয়া ।
বাহ্
খুব সচেতনতামুলক লেখা ।
শুভকামনা রইল ।। -
אולי כולנו טועים ২৯/১০/২০১৩খুব সুন্দর -
খুবই সুন্দর লেখা ! -
suman ২৮/১০/২০১৩দারুণ সুন্দর আপনার গল্প বলার ধরন ...আরো লিখুন ...
-
জহির রহমান ২৮/১০/২০১৩আমি সুমাইয়া আপুর একজন ক্ষুদ পাঠক। উপদেশমুলক গল্প গুলো আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ি। এই গল্পটিও তার ব্যতিক্রম নয়। অনেক সুন্দর একটি গল্প। আমাদের সচেতন করে দিয়ে গেছে।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপু। -
কবীর হুমায়ূন ২৮/১০/২০১৩উপদেশ মূলক গল্প। ভালো লাগলো। একটি শ্লাগানও বটে। এরূপ আরো সুন্দর লেখা পড়তে চাই। ভালো থেকো।