www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অপ্রত্যাশিত বিকেল

সকাল থেকেই আকাশের বুকে কালো মেঘ অপেক্ষা করছে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পরার জন্য। একটা ভ্যাপসা গরম ঘিরে রেখেছে চারপাশ। চৈত্রের তাপদাহ দুপুরে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসলেও অস্থিরতায় সময় গুনছে অপু। বৃষ্টি অপুর ভালোই লাগে, কিন্তু আজ যেন মন থেকেই চাচ্ছে না যে বৃষ্টিটা হোক। পুকুর পাড়ের বাঁধানো ঘাটটায় উদাস হয়ে বসে যেন সূর্যেরই প্রতীক্ষা করছিলো সে। কয়েক দিন ধরে সে আজকের জন্যই প্রস্তুত হচ্ছিলো, আর কোন ভাবেই চাচ্ছিল না একটা বৃষ্টি তার পরিকল্পনা নষ্ট করুক।

স্নানটা সেরে ঘরে প্রবেশ করতেই রান্না ঘর থেকে ডাক আসলো " কি রে আজ কোথাও যাচ্ছিস নাকি? এত তাড়াতাড়ি কখনো তো স্নান করিস না। আজ তো তোর দৈনিক রুটিন এর অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। কি হয়েছে তোর আজ?"
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জামাটা গায়ে জড়িয়ে সে মাকে ভাত দিতে বলল।

ভাত খাওয়ার ভঙ্গিটাও আজ অন্য রকম লক্ষ্য করলো ওর মা, অপুর অলক্ষ্যেই মিটমিট করে হেসে বলল " তা এখনি বের হবি না বিকেলে?"
অপু এক রকম চমকে গিয়েই জবাব দিলো "এখনই"

দ্রুত খাওয়া শেষ করে আলমারি থেকে কিছু টাকা বের করে নিয়ে চিৎকার করে বলল " মা, আসি।"

আজ সত্যিই তার রুটিন এর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চারপাশের পরিবেশটা ওর অন্যরকম লাগছে। পরিচিত মেঠো পথটা কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে, পথটা যেন শেষই হচ্ছিলো না আজ। পাকা রাস্তায় এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে লাগল সে। তার মনে হচ্ছিল অনন্ত কাল ধরে সে গাড়ির জন্য বসে আছে কিন্তু একটা গাড়িও আজ এদিকে আসছে না।
হঠাৎ একটি গাড়ি দেখতে পেয়ে নিজের অজান্তেই একটা বিজয়ের হাসি হেসে হাত দিয়ে গাড়িটা থামালো।

যখন গাড়িটা শহরের সেন্ট্রাল বাস টার্মিনালে এসে থামল তখন দুপুর প্রায় শেষ হতে চলছে।
এখনো সূর্যটা মেঘ সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সে একটা রিক্সা নিয়ে শহরের পরিচিত একটা ফুলের দোকানের সামনে দাঁড়ালো। হাতে কয়েকটা অর্ধ ফুটন্ত রজনীগন্ধা নিয়ে রিক্সায়ালাকে নদীর কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল। শহরের পাশ দিয়ে নদীটা এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে সুন্দরবনের দিকে। শহরে পা দেয়ার পর থেকেই আলাদা একটা উত্তেজনা কাজ করছিল তার মনে। হাতের রজনীগন্ধার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে।

নদীর পাড়ে এসেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্তের হাসি হেসে মনে মনে বলল " না, ঠিক সময়ই এসে গেছি।"
নদীর দিকে মুখ করে বসে নৌকা চলাচল দেখছিল এক দৃষ্টিতে, সব কিছু আজ নতুন লাগছে। তার মনের মত নদীটাও আজ বড় অশান্ত মনে হল।

কিছুক্ষনের মধ্যে তার দীর্ঘদিনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে। ফেসবুকে যার সাথে পরিচয়, যার সাথে ছয় মাস ধরে অনেক কথা হয়েছে তাকে আজ সামনাসামনি দেখতে পাবে সে। একটা অপরিচিত অনুভূতি কাজ করছে তার মনে। এই প্রথম কোন মেয়ের জন্য অপেক্ষা করা, ফুল কেনা। এ যেন এক নতুন অভিজ্ঞতা।

চারপাশের থমথমে পরিবেশটা দক্ষিনের শীতল বাতাস মধুর করে তুলেছে। মেয়েটাই ওকে এখানে আসতে বলেছিল। যদিও জায়গাটা তার কাছে নতুন তারপরও অপুর কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। শুধু মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করছিল কিভাবে মেয়েটার সামনে দাঁড়াবে।
দেখতে দেখতে কখন যে তিন ঘন্টা কেটে গেল বুঝতেই পারলনা অপু। ততোক্ষনে দিনের আলোও নিভে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করছে।

অপু ফোনটা বের করল মেয়েটাকে ফোন করার জন্য। পরোক্ষনে ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে বিড়বিড় করে বলল " আমি কেন ফোন করতে যাব। সে ই তো আমাকে এখানে আসতে বলছিল। সে ই তো আমার দিকে আগে এগিয়েছে। আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি। তাকে তো জোর করে দায়িত্ব পালন করাতে বাধ্য করতে পারি না।"
একটা অপ্রকাশিত অভিমান কাজ করছিল অপুর মনে।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, পাখিগুলোও নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। মাঝ নদীতে মাঝিদের নিভুনিভু করে জ্বলন্ত প্রদীপের শিখা দেখা যাচ্ছে। চারদিকে একটা বিষাদময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই পরিবেশটা খুবই বিরক্তিকর লাগছে অপুর।

" না! এভাবে আর বসে থাকা যাচ্ছে না।" আড়ষ্ঠ গলায় উচ্চারন করল সে। এক প্রকার লাফ দিয়ে সে নদীর জলে নেমে পরল। তারপর আস্তে আস্তে রজনীগন্ধা গুলো নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে শহরের দিকে হাটা শুরু করল। তার এই অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা নদীর জল ছাড়া হয়তো কেউ বুঝতে পারল না।

অপু যখন বাস টার্মিনালে পৌছালো তখন অন্ধকার শহরটাকে পুরোপুরি গ্রাস করেছে।
কিছুক্ষন আগে সে যে স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছিল তা এই অন্ধকার শহরটা পুরোপুরি ভেঙ্গে দিল।

বাসটা অপু আর অপুর ভাঙ্গা স্বপ্ন এবং একরাশ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলছে। কখন যে ওর চোখে পানি এসে গিয়েছিল তা ও লক্ষ্য করেনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও চোখটা বন্ধ করল। অপুর এই অব্যাক্ত কষ্ট বোধ হয় মেঘটাও সহ্য করতে পারল না। তাই হয়তো আকাশের বুক থেকে অঝরে ঝরতে লাগল বৃষ্টি হয়ে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০৭০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পরিপাটি লেখা
 
Quantcast