শিশুসাহিত্যে নজরুল(3)
তবে শিশুদের জন্য কবিতা লেখার কায়দাকানুনই শুধু তাঁর করায়ত্ত ছিল না তিনি বিলক্ষণ বুঝতেন শিশুহৃদয়।এর নিদর্শন তাঁর বহু কবিতাতেই সহজলভ্য।শিশুহৃদয়ের স্বপ্নের রঙে রঙিন এই ছত্রগুলি-"আমি হবো সকালবেলার পাখি/ সবার আগে কুসুম বাগে /উঠবো আমি ডাকি!/...... ঝর্ণামাসি বলবে হাসি, খুকি এলি নাকি?/বলবো আমি নইকো খুকী,/ ঘুম জাগানো পাখি"। 'খুকী ও কাঠবেড়ালী' কবিতায় তিনি যেভাবে শিশুমনস্তত্ব চিত্রিত করেছেন তা অনির্বচনীয়।অনবদ্য রচনা-কুশলতায় তিনি লেখেন-"কাঠবেড়ালী! বাঁদুরীমুখী! মারবো ছুঁড়ে কিল?/দেখবি তবে? রাঙাদাকে ডাকবো? দেবে ঢিল!/পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে!/হেই ভগবান!খেয়োনা মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও!/আমিও খুবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও"।সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিরুদ্ধে নজরুল যে চিরসোচ্চার ছিলেন তা আমরা সকলেই জানি,নজরুলের জীবনচর্চা ও চর্যাই তার সপ্রমাণ নিদর্শন।যে সব সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষদের ক্ষেত্রে 'আমার জীবনই আমার বাণী' কথাটি প্রযোজ্য নজরুল তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য।শিশুদের মধ্যে তিনি জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন সম্প্রীতির ভাবনা।তাঁর 'পুতুলের বিয়ে' নাটকে চিন্তিত খেঁদি প্রশ্ন করে,"ইদিকে লগনের বেলা যে বয়ে গেল! আচ্ছা ভাই,মুসলমানের 'পুতুলের সাথে তোর পুতুলের বিয়া হবেক কি ক'রে।কমলি:না ভাই,ওকথা বলিসনে।বাবা বলেছেন,হিন্দু-মুসলমান সব সমান।অন্য ধর্মের কাউকে ঘৃণা করলে ভগবান অসন্তুষ্ট হন।ওদের আল্লাও যা,আমাদের ভগবানও তা।টুলি: সত্যি ভাই,এক দেশে জন্ম,এক মায়ের সন্তান।অন্য ধর্ম বলে কি তাকে ঘৃণা করতে হবে?"।সাম্প্রতিককালের রাষ্ট্রপরিচালিত সাম্প্রদায়িক বিভেদের বাতাবরণে তাই নজরুল চূড়ান্ত প্রাসঙ্গিক; যতটা বিদ্রোহী নজরুল হিসেবে ততটাই শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও। (সমাপ্ত)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মধু মঙ্গল সিনহা ০৩/০৩/২০১৮খুব ভালো লাগল