www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মধুকবির বীরাঙ্গনারা(6)

(পরবর্তী অংশ)
ষষ্ঠ পত্রটি বিরহকাতর দ্রৌপদী লিখেছেন অস্ত্র শিক্ষার জন্য অনেককাল যাবৎ স্বর্গে অবস্থানরত তাঁর স্বামী অর্জুনকে।পত্রের প্রথমেই দ্রৌপদী লিখছেন যে তাঁর কথা অর্জুনের মনে পড়ে কিনা।অবশ্য কেনই বা পড়বে-'দেব-ভোগ-ভোগী তুমি দেবসভা মাঝে/আসীন দেবেন্দ্রাসনে!সতত আদরে/সেবে তোমা সুরবালা,-পীনপয়োধরা'।এরপর স্বর্গের অপ্সরাদের সৌন্দর্য এবং স্বর্গের বর্ণনা যা দ্রৌপদী শুনেছেন তা বর্ণনা করে লিখছেন-'সশরীরে স্বর্গভোগ!কার ভাগ্য হেন/তোমা বিনা,ভাগ্যবান,এ ভবমন্ডলে?/ধন্য নর-কুলে তুমি!ধন্য পূণ্য তব!'।অতএব কি করেই বা অর্জুনের তাঁকে মনে পড়বে,তবু যেমন করে পদ্ম একমাত্র সূর্যের স্পর্শেই প্রস্ফূটিত হয় তেমনি তাঁর হৃদয়ও কেবলমাত্র ধনঞ্জয়ের জন্যই স্পন্দিত হয়।তাই তিনি লেখেন-'যা ইচ্ছে করুন ধর্ম্ম,পাপ করি যদি/ভালবাসি নৃমণিরে,-যা ইচ্ছা,নৃমণি!/হেন সুখ ভুঞ্জি,দুঃখকে ডরে ভুঞ্জিতে?'।তারপর তিনি লিখছেন যৌবনকাল থেকেই তিনি অর্জুনকে স্বামীরূপে কামনা করে এসেছেন।তিনি লিখছেন তাঁর স্বয়ংবর সভার কথা,যেখানে সমস্ত রথী লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হবার পরে-'ভস্মরাশি মাঝে গুপ্ত বৈশ্বানর-রূপে/কি কাজ করিলা তুমি,কে না জানে ভবে,/রথীশ্বর?বজ্রনাদে ভেদিল আকাশে/মৎস্যচক্ষুঃ তীক্ষ্ম শর।'।কিন্তু তারপরই যখন সমস্ত রথীরা অর্জুনকে ঘিরে ধরলেন তখন যে কথা বলে অর্জুন তাঁকে সাহস দিয়েছিলেন তাও তিনি অনুপুঙ্খ লিখেছেন পত্রে-'আশারূপে মোর পাশে দাঁড়াও রূপসী!/দ্বিগুণ বাড়িবে বল চন্দ্রমুখ হেরি/চন্দ্রমুখি! যতক্ষণ ফণীন্দ্রের দেহে/থাকে প্রাণ,কার সাধ্য হরে শিরোমণি?/আমি পার্থ!'।কিন্তু আজ অর্জুনকে ছাড়া তিনি অত্যন্ত ব্যাকুল এবং সেই ব্যাকুলতা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর লেখনিতে-'ইচ্ছা করে ত্যাজি প্রাণ ডুবি জলাশয়ে;/কিম্বা পান করি বিষ; কিন্তু ভাবি যবে,/প্রাণেশ,ত্যাজিলে দেহ আর না পাইব/হেরিতে ও পদযুগ-সান্ত্বনি পরাণে' এই ব্যাকুলতা তীব্রতম রূপ পায় যখন দ্রৌপদী পত্রান্তে লেখেন-'কি কহিনু নরোত্তম?কী কাজ উত্তরে?/পত্রবহ সহ ফিরি আইস এ বনে!'। (ক্রমশ)
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৫০২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/১১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast