মধুকবির বীরাঙ্গনারা
'বৈজয়ন্ত ধামে নিত্য শচীকান্ত বলী/ভীত অস্ত্র ভয়ে যার,হেন ভীমরথী/যুঝিবে তোমার হেতু-আমি আদেশিলে!'-নারীর ভাষ্যে এমন বীররসের সঞ্চার বোধ করি মধু কবির পক্ষেই সম্ভব।আর তাই তাঁর হাত ধরেই বাংলা কবিতা সাবালকত্বের আঙিনায় পদার্পণ করেছে আমরা আজ যেসব আধুনিক কবিতার সঙ্গে পরিচিত, তাঁর সৃষ্টির উৎসমুখ তিনিই খুলে দিয়েছিলেন "অমিত্রাক্ষর ছন্দ" সৃষ্টির মাধ্যমে। প্রবাহমান পয়ারের আট-ছয় পর্ব ভাগসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি বজায় রেখে শুধুমাত্র অন্তমিলের বৈশিষ্ট্যটির বিয়োজন ঘটিয়ে তিনি সৃষ্টি করলেন অমিত্রাক্ষর ছন্দ।এই ছন্দে লিখিত কবিতাগুলির মধ্যে প্রবহমান পয়ারের শৃঙ্খলাজনিত দৃঢ়তা যেমন রইল,তেমনি অন্তমিলের বিধিনিষেধ না থাকায় ভাবের প্রকাশও অনায়াস ও অনর্গল হলো। মাইকেল মধুসূদন এই ছন্দে বেশ কয়েকটি কাব্য রচনা করেছেন "বীরাঙ্গনা কাব্য" তার অন্যতম এবং বাংলা সাহিত্যে এটি এই ধরনের প্রথম কাব্য অর্থাৎ পত্রকাব্য। "বীরাঙ্গনা কাব্য" এগারোটি সর্গে বিন্যস্ত প্রতিটি সর্গই আসলে এক একটি চিঠি।এই চিঠিগুলি রচনা করতে গিয়ে মধুসূদন শুধু তাঁর কাব্যপ্রতিভার পরিচয়ই রাখেননি, জন্ম দিয়েছেন নারীকেন্দ্রিক কাব্য রচনার পটভূমিও,যা বাংলা সাহিত্যের ধারাকে ক্রমশ ঋদ্ধ করেছে।
প্রথম চিঠিটি শকুন্তলা লিখেছেন দুষ্মন্তকে।গান্ধর্ববিবাহ করে রাজা দুষ্মন্ত রাজ্যে ফিরে গিয়ে আর শকুন্তলার খোঁজ নেননি।তাই আকুল হয়ে শকুন্তলার এই চিঠি।একে কবি চিত্রিত করেছেন অপূর্ব পারঙ্গমতায়-'হেরি যদি ধূলারাশি,হে নাথ,আকাশে;/পবন-স্বনন যদি শুনি দূর বনে;/অমনি চমকি ভাবি,মদকল করী,/বিবিধ রতন অঙ্গে,পশিছে আশ্রমে'।এরপর আশা-নিরাশার দোলায় দোদুল্যমান আকুলতা ক্রমে হতাশায় পরিণত হয়-'কিন্তু বৃথা ডাকি,কান্ত।কিলোভে ধাইবে/আর মধুলোভী অলি এ মুখ নিরখি,-/শুকাইলে ফুল,কবে কে আদরে তারে?' নিদ্রায়ও শকুন্তলা দুষ্মন্তের কথাই ভাবেন,-'দয়া করি কভু যদি বিরামদায়িনী/নিদ্রা,সুকোমল কোলে,দেন স্থান মোরে,/কত যে স্বপনে দেখি কব তা কেমনে?' চিঠির শেষে শকুন্তলার এই হতাশা-সম্পৃক্ত আকুলতা পর্যবসিত হয় এক চরম আশাবাদে,-'কিন্তু মজ্জমান জন,শুনিয়াছি,ধরে/তৃণে,আর কিছু যদি না পায় সম্মুখে!/জীবনের আশা,হায়,কে ত্যজে সহজে! (ক্রমশ)
প্রথম চিঠিটি শকুন্তলা লিখেছেন দুষ্মন্তকে।গান্ধর্ববিবাহ করে রাজা দুষ্মন্ত রাজ্যে ফিরে গিয়ে আর শকুন্তলার খোঁজ নেননি।তাই আকুল হয়ে শকুন্তলার এই চিঠি।একে কবি চিত্রিত করেছেন অপূর্ব পারঙ্গমতায়-'হেরি যদি ধূলারাশি,হে নাথ,আকাশে;/পবন-স্বনন যদি শুনি দূর বনে;/অমনি চমকি ভাবি,মদকল করী,/বিবিধ রতন অঙ্গে,পশিছে আশ্রমে'।এরপর আশা-নিরাশার দোলায় দোদুল্যমান আকুলতা ক্রমে হতাশায় পরিণত হয়-'কিন্তু বৃথা ডাকি,কান্ত।কিলোভে ধাইবে/আর মধুলোভী অলি এ মুখ নিরখি,-/শুকাইলে ফুল,কবে কে আদরে তারে?' নিদ্রায়ও শকুন্তলা দুষ্মন্তের কথাই ভাবেন,-'দয়া করি কভু যদি বিরামদায়িনী/নিদ্রা,সুকোমল কোলে,দেন স্থান মোরে,/কত যে স্বপনে দেখি কব তা কেমনে?' চিঠির শেষে শকুন্তলার এই হতাশা-সম্পৃক্ত আকুলতা পর্যবসিত হয় এক চরম আশাবাদে,-'কিন্তু মজ্জমান জন,শুনিয়াছি,ধরে/তৃণে,আর কিছু যদি না পায় সম্মুখে!/জীবনের আশা,হায়,কে ত্যজে সহজে! (ক্রমশ)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ০৬/০৩/২০২০ভালোই
-
কামরুজ্জামান সাদ ১৬/১১/২০১৭সুন্দর লিখেছেন প্রাবন্ধিক।
-
সোলাইমান ১৬/১১/২০১৭অতি সুন্দর উপস্থাপনা।।।
কবিতা পাঠে মুগ্ধতা রেখে গেলাম।।।। -
সাঁঝের তারা ১৫/১১/২০১৭ভালো আলোচনা ...