লোকায়ত রবীন্দ্রনাথ
আপাতদৃষ্টিতে লোকায়ত দর্শন বা চিন্তনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দর্শন বা দৃষ্টিভঙ্গির মিল খুঁজে পাওয়াটা অসম্ভব মনে হতে পারে।কারন রবীন্দ্রনাথ যথেষ্ট আধুনিকমনস্ক হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী আর লোকায়ত 'ঈশ্বর' নামক ধারণাটিকেই সমূলে বিনাশ করার পক্ষপাতী।কিন্তু একটু আয়াস করলেই কাঙ্ক্ষিত মিলটি খুঁজে পাওয়া যায়।লোকায়ত দর্শন তাদের গূঢ় তত্ত্ব ও গোপন সাধনপথ পেরিয়ে মানুষকেই সর্ব্বৈ সত্য বলে জ্ঞান করেছে আর বিশ্বপথিক রবীন্দ্রনাথও ঠিক এখানেই পেয়ে গিয়েছেন গভীর নির্জন পথের চাবিকাঠি।গড়ে উঠেছে এক অদ্ভুত সমন্বয় যা একদিকে যেমন ঋদ্ধ করেছে রবীন্দ্রনাথ ও লোকায়ত উভয়কেই তেমনি অন্যদিকে নিঃশব্দে ইতিহাসের চেতনায় প্রবেশ করে প্রভাবিত করেছে তার গতি ও অভিমুখকে।কিন্তু তা এতটাই নিরুচ্চারে সম্পাদিত হয়েছে যে আজও তার সঠিক বিশ্লেষণী মূল্যায়ন সুচারুভাবে হয়ে ওঠেনি।
একজন জমিদার বংশের প্রতিনিধির লোকায়ত দর্শন বা লোকজীবনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা একমাত্র যদি নাও হয় তবু অতিবিরল তো বটেই।তবে রবীন্দ্রনাথ একাজে তাঁর একজন পূর্বসূরী পেয়েছিলেন,তিনি তাঁর 'জ্যোতিদাদা' অর্থাৎ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।এই মানুষটি রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমস্ত রীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের দিশারী ছিলেন শুধু তাই নয় রবীন্দ্রনাথের উপর তাঁর প্রভাবও ছিল সুদূরপ্রসারী।ইতিহাসের কোন্ লীলাখেলায় তাঁকে চিরদিন রবীন্দ্রনাথের ছায়ায় অদৃশ্য থাকতে হল তা অন্য কোনো প্রবন্ধের বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে উৎসুক রইল।ঠাকুরবাড়ির কুষ্ঠিয়াতে জমিদারি ছিল,জমিদারি ছিল সাহাজাদপুর,পতিসর,কালীগঙ্গা ও শিলাইদহেও।রবীন্দ্রনাথ হাউসবোটে করে ঘুরতেন ও লেখালেখি করতেন।এখানেই গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁর কথা ও আলাপ-আলোচনা হতো,তিনি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতেন আর এভাবেই তিনি পেয়েছিলেন সেই যোগসূত্র যা ক্রমে তাঁকে বিশ্বপথিক থেকে মানবসাধকে রূপান্তরিত করবে।এইসব অভিজ্ঞতাই সজীব হয়ে উঠেছে তাঁর 'সোনার তরী' ও 'চিত্রা' কাব্যগ্রন্থের কবিতায়,'ছিন্নপত্র'র চিঠিতে ও 'গল্পগুচ্ছ'র কিছু গল্পে। (ক্রমশ)
একজন জমিদার বংশের প্রতিনিধির লোকায়ত দর্শন বা লোকজীবনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা একমাত্র যদি নাও হয় তবু অতিবিরল তো বটেই।তবে রবীন্দ্রনাথ একাজে তাঁর একজন পূর্বসূরী পেয়েছিলেন,তিনি তাঁর 'জ্যোতিদাদা' অর্থাৎ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।এই মানুষটি রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমস্ত রীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের দিশারী ছিলেন শুধু তাই নয় রবীন্দ্রনাথের উপর তাঁর প্রভাবও ছিল সুদূরপ্রসারী।ইতিহাসের কোন্ লীলাখেলায় তাঁকে চিরদিন রবীন্দ্রনাথের ছায়ায় অদৃশ্য থাকতে হল তা অন্য কোনো প্রবন্ধের বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে উৎসুক রইল।ঠাকুরবাড়ির কুষ্ঠিয়াতে জমিদারি ছিল,জমিদারি ছিল সাহাজাদপুর,পতিসর,কালীগঙ্গা ও শিলাইদহেও।রবীন্দ্রনাথ হাউসবোটে করে ঘুরতেন ও লেখালেখি করতেন।এখানেই গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁর কথা ও আলাপ-আলোচনা হতো,তিনি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতেন আর এভাবেই তিনি পেয়েছিলেন সেই যোগসূত্র যা ক্রমে তাঁকে বিশ্বপথিক থেকে মানবসাধকে রূপান্তরিত করবে।এইসব অভিজ্ঞতাই সজীব হয়ে উঠেছে তাঁর 'সোনার তরী' ও 'চিত্রা' কাব্যগ্রন্থের কবিতায়,'ছিন্নপত্র'র চিঠিতে ও 'গল্পগুচ্ছ'র কিছু গল্পে। (ক্রমশ)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।