বিরহী জীবনানন্দ
জীবনানন্দ দাশ কখনো "রূপসী বাংলা"র কবি,কখনো বা "নাগরিক"কবি।আমরা যে নামেই তাকে ডাকি না কেন তাঁর প্রেমিকসত্তাকে কিছুতেই অস্বীকার করতে পারিনা। আর যেখানে প্রেম সেখানেই বিরহ।সেই বিরহের তীব্র আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর "ধূসর পান্ডুলিপি"র তিনটি কবিতা "নির্জন স্বাক্ষর","বোধ" ও "ক্যাম্পে"তে।কি বিভিন্ন,বিচিত্র আর অভূতপূর্ব সে বিরহের প্রকাশভঙ্গি।সেই বিরহ আমাদের লালায়িত করে প্রেমে পড়তে যাতে সেইরকম বিরহের আস্বাদ নিতে পারি।"নির্জন স্বাক্ষর" কবিতায় কবি জীবনানন্দ তাঁর প্রিয়াকে বলছেন,"আমি ঝরে যাব,তবু জীবন অগাধ/তোমারে রাখিবে ধ'রে সেইদিন পৃথিবীর 'পরে-/আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে"।আর তাঁর ঝরে যাওয়াকে চিরন্তন নিয়মের সঙ্গে সংযুক্ত করে বলেছেন,"পুরানো সে নক্ষত্রের দিন শেষ হয়,/নতুনেরা আসিতেছে বলে!-"।আবার পরক্ষণেই প্রেমের শাশ্বত বহমানতাকে মনে করিয়ে দিয়ে বলছেন,"আমার বুকের থেকে তবুও কি পড়িয়াছে স্খ'লে-/কোনো এক মানুষীর তরে/যেই প্রেম জ্বালায়েছি পুরোহিত হয়ে তার বুকের উপরে!"কি অদ্ভুত ব্যঞ্জনা; নিজের বুকে যে প্রেমের আগুন জ্বলে সত্যিই তো আমরাই তো পুরোহিত হয়ে তা নিজের বুকে জ্বালি,সত্যিই কি অদ্ভুত গোপন মুক্তসত্য! তারপরই ঝরে যাবার অমোঘ নিয়মকে মনে করিয়ে দিতে বলছেন,"আমি সেই পুরোহিত-সেই পুরোহিত!-/যে নক্ষত্র মরে যায়,তাহার বুকের শীত/লাগিতেছে আমার শরীরে,-"জীবনানন্দের পক্ষেই সম্ভব বিজ্ঞান আর কল্পনাকে এমনভাবে একসূত্রে বাঁধা। মরে যাওয়া নক্ষত্রের ভেতরে যে জ্বালানিশূণ্যতা তাকে তিনি শীতের সঙ্গে তুলনা করেছেন আর এই শীতকে কবিতায় প্রয়োগ করেছেন মৃত্যুর দ্যোতক হিসেবে। বিরহী হৃদয়ের সঙ্গে মৃত নক্ষত্রের তুলনা বাংলা সাহিত্যে ও কবিতায় নিঃসন্দেহে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। (ক্রমশ)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মাহিদ সিদ্দিকী আলিফ ০৪/১১/২০১৭একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম...
-
সোলাইমান ০৪/১১/২০১৭দারুন সুন্দর । শুভকামনা রইল।
-
মধু মঙ্গল সিনহা ০৩/১১/২০১৭অতিরিক্ত সুন্দর।