www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

“আজ শুধু কবিতারা কথা বলবে” পর্ব-০২

সু__
একবুক দূরে, নীল স্বাতী নক্ষত্রের দেশ।
আর সামনের দিকে পা বাড়ালেই
আবহমানকালের সেই হৃদয় মোচড়ানো মাথাব্যথা এবং মরীচিকা।
কলেজে আমার তখন কাকতাড়ুয়া তৃতীয়বর্ষ ;
উপাসনা রায় আরো দু’বছরের পিছনের ঝোপের বিন্দুতে দাঁড়িয়ে
দু’চোখে দ্বীপ রেখে লতা-পাতায় চিত্রার্পিতা হতে চায়।

এরপর থেকেই ক্রমশ দ্রুত মূর্তিমতী হয় ; নিঃসঙ্গতার নদী।
সম্ভব হয় ; নক্ষত্র জয়।
যখন—
হঠাৎ একদিন আসে তার উড়ো আকাশে আমার নেমন্ত্রণ।

তখন, সে শরীর উপুর করা একটি পাতলা-নীল বর্ণচোরা খাতা।
তখন, আমি খুব সহজেই—
সেই খাতার পাতার উপর ভিনদেশী নৌকার মতো
অনভিজ্ঞতার কাঁটা-কম্পাস নিঙড়ে নিজেকে ভাসাই।

সেই জলকন্যা তখন
ঝর্ণামাপিক বৃষ্টিসমাচার হয়ে এতটাই বেপরোয়া কস্তূরীমৃগ ;
তার উপদ্রুত অঞ্চলে পা না রেখেই আমি হই ইত্যাকার উত্তরীয়।
যদিও লাইভ-কাস্ট ছায়াময় ঘরে সে সুগন্ধের মতো বর্ধিত অস্থির।
বাতাসের বংশীঠোঁটে শুকনো পাতার মতো বারবার অবারিত উড়ে যায়।
তবুও একদা—
হঠাৎ বৃষ্টিতে হারিয়ে যায় সবুজ-জটিল উপত্যকা।

তারপর সময় সময়ের মণ্ডপে এসে ; ঘোর পিশাচী হয়।
আজ মুখ ফিরিয়ে হাঁটে উপাসনা সান্যাল।

আমি আজো ভেসে থাকি ;
হলুদ পাতামোড়া প্রচ্ছদের ভিতর
ভাঙা চিড়-খাওয়া শব্দের না হয়ে ওঠা কিছু পঙ্‌তিমালায়।
ঋ— আমি রূপা। নিশ্চয় ভাবছেন কোন রূপা ? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, রজতের রূপা। আমি সেই রজতের রূপা– যেই রজতের কথা ভাবলে আমার ন্দীর পাড়ের কাশবন ফুলসমেত দুলে ওঠে। কেননা, রজতই আমার যেকোনো ধরনের লাল চোখকে ডিঙানোর দুর্দান্ত-প্রবল দুঃসাহস। রজত আমার হাতে পাওয়া সোনার চাঁদ। আমার আরো আরো আরো বেশি চাওয়ার হিসেবহীন প্রশ্রয়, জীবনপণ দাবী। অসামান্য জোৎস্নারাতে সাদা ডীঙা ভাসাবার অভূতপূর্ব বন্দোবস্ত। রজত আমার হাতে বুনে চলা উলের সূক্ষ্ম কারুকার্জ। আর আমি তার দু”হাতে চেপে গড়ে তোলা হাজার পাগলামি।
এতক্ষণ ধরে রজত আপনাদেরকে যেই কথগুলো বলেছে তা একেবারেই বর্ণে বর্ণে ধ্রুব সত্য। আমিই সেই ভাগ্যহীনা যে তার একমাত্র প্রিয় প্রেমিকের মনের না বলা সারি সারি ভালোবাসার কথাগুলোকে পড়তে পারিনি। তার এতটুকু বুকের অতখানি ভালোবাসাকেও টের করতে পারি নি। আর তাই তো এর আগেও তার মাশুল দিয়েছি ; আজও সমানে তার মাশুল দিচ্ছি ; আর মৃত্যু পর্যন্ত আগামি দিনগুলোতেও এই একইরকমভাবে দিয়ে যাবো। আর এটাই বুঝি আমার ভাগ্যে ছিল। আসলে কি জানেন সব নদীই সাগরকে পাবার দুরন্ত আশায় অস্থির-বেপরোয়া হয়ে পা বাড়ায় ঠিকই। কিন্তু সবাই কি আর সাগরের কাছে গিয়ে পৌঁছাতে পারে ? পারে না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দুর্গম পাহাড়, দুর্ভেদ্য জঙ্গল পার করেও সমতলে এসে আটকে পড়ে। কেউ-বা আবার সামান্য পাহাড়ই ডিঙাতে পারে না। আর আমরা তো দুই দিক থেকেই পরাজিত। আমরা আমাদের প্রেমকে তাই কবুল করেছি একটু অন্যভাবে, সেজন্যই তার পাতা উল্টালেই পরতে পরতে শুধু নানাবর্ণের হাজার দুঃখের শ্বাসরোধী ঘনঘটা।


বিঃ দ্রঃ - এই সিরিজটি “আজ শুধু কবিতারা কথা বলবে কবি সুব্রত সামন্ত-র কিছু বাছাইকৃত কবিতা সংকলন" অডিও সিডি থেকে ধারাবাহিকভাবে ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে । এটি সিডি প্রকাশের পূর্ববর্তী রচনা। সিডিতে অনেক সংশধন রয়েছে।
সুব্রত সামন্ত।
পশ্চিমবাংলা, ভারত। / মানামা, বাহ্-রাইন।
২৯।০৭।২০১৪।
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ৬০৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৭/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast