আসুন না বাবু খুশি করে দেবো
অনেক নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে
চাকরির আশায় শহরে এসে পৌঁছেছি।
‘কাবেরী বস্ত্রালয়’ থেকে কেনা নতুন শার্ট ;
৭৫০ টাকা দামের ফিলিপ্স আইরণে ইস্তি করা জামা ;
গায়ে নতুন লাঞ্চ করা ডেনিম পারফিউম ;
পকেটে দু’ভাঁজে ভাঁজ করা সুন্দর একখানা রুমাল ;
আর নতুন খাম খুলে মায়ের দেওয়া নগদ কিছু টাকা।
প্রথম শহরে এসে, অনেক কিছু দেখেছি
অনেক কিছু দেখছি
আর দেখলাম রাতের রহস্যে-মোড় এই শহরটাকেও।
সবমিলিয়ে আমার এতদিনের স্বপ্নে দেখা শহরটা
যেন আরো সুন্দর এবং আরো সুন্দর হয়ে ফুটে উঠল।
দেখতে দেখতে রাত বাড়তে লাগল।
এবার রাতের খাবার খাওয়ার সময় এল।
তারই জন্য সস্তা হোটেলের খোঁজে রাস্তায় বেড়োলাম।
শর্টকাটে যাবো বলেই অন্ধ-গলিপথ ধরলাম।
কিছুটা যেতে না যেতেই
দু’পাশ দেখে মাথা ঘুরতে শুরু করল।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম
এটা সেই জায়গা—
যেখানে রাতের নিশাচরেরা সারারাত ঘোরাফেরা করে।
কত ইসারা, কত চাপা আগুন, কত টানাপোড়েন...
সবকিছুকে উপেক্ষা করে তবুও আগিয়ে চলেছি।
হঠাৎ ডান-দিকের রাস্তার মোড় নিতে গিয়ে শুনতে পেলাম
বাঁ দিক থেকে কে যেন বলে উঠল
‘আসুন না বাবু ! খুশি করে দেবো’।
নিমেষের মধ্যে আমি থমকে দাঁড়ালাম।
সমস্ত বুক খাঁ খাঁ করে তোলপাড় হতে লাগল।
একবার মনে হতে লাগল এ কণ্ঠ যেন আমার কতদিনের কত চেনা।
অজ্ঞাত এক টানে আমি পিছন ফিরে তাকালাম।
একপলক দেখেই চিনে নিলাম
এটা আমার দশ বছর আগের বিক্রি করে দেওয়া ‘সেই দিদি’।
বাবা যখন কাজ ছাড়া
মদ আর মেয়ের নেশায় মাতাল-দিশাহারা।
তখনই বাবা আমার এই দিদিকে বিক্রি করে দেয়।
এটা আমার সেই দিদি
যার কথা মাকে জিজ্ঞাসা করলে, মা বলেন
‘হারিয়ে গেছে’।
বাবা শুনলে মারতে আসেন।
আর সারা পাড়া থু থু দেন।
অথচ কি আশ্চর্য দেখুন !
তার পাঠানো খামে মোড়া টাকাতেই আমাদের সংসার চলে।
তার সেই পাঠানো টাকাতে আমাদের বাড়িতে যে একটা নতুন নলকূপ বসানো হয়েছে
তার জল পাড়া-প্রতিবেশিরা এসে সবাই নিয়ে যান।
তবুও...
আমি বললাম, ‘দিদি তুমি আমাকে চিনতে পারছনা ?’
সে গম্ভীর হয়ে বলল, ‘দেখুন, নিশ্চয় আপনার কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে
আমি কারো দিদি নয়’।
আমি বুঝে গেলাম এটাই আমার দিদি।
আমি বললাম, ‘লক্ষ্মীদিদি আমার, ফিরে চল’।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিদি আমাকে বলল, ‘ তা আর হয় না। তুই যা।
কেন এসেছিস মিথ্যে এই শহরে ?’
মাথা নীচু করে আমি জবাব দিলাম, ‘চাকরীর জন্য। কিন্তু এখন তুমি ফিরে চল’।
দিদি বলল, ‘আমাকে নিয়ে সমাজে চলতে পারবি ?’
আমি বললাম, ‘নিশ্চয় পারব’।
দিদি বলল, ‘পারবি না। এর আগে কেউ পারে নি ; তুই-ও পারবি না।
আর এও জানি, সমাজকে না বদলাতে পেরে শেষপর্যন্ত
নিজেকেই বদলে নিবি।’
আমি বললাম, ‘কিন্তু দিদি…’
মাঝখানে কথা থামিয়ে দিদি বলল, ‘আর কোনো কথা নয়।
এখান থেকে এক্ষুণি তুই চলে যা। আর কখনো আসবিনা।
মা-বাবাকে দেখিস। আমার কথা কাউকে বলিস না।
আর শোন্, এতদূর এসে তোর চাকরি করার কোনো দরকার নেই।
প্রতি মাসে আমি যেমন পারি পাঠিয়ে দেবো।
তাতে তোদের ভালোভাবেই চলে যাবে’।
দিদি কোনো কথা না বলেই মুখ ফিরিয়ে নিল।
আমি ফিরবার পথ ধরলাম।
মনের ভিতর খুব কষ্ট পেয়েছি।
হঠাৎ ভেবে দেখলাম আমার দিদি হারে নি ;
নিজে এত দুঃখে থেকেও
প্রত্যেককেই খুশি করায় তার যে চেষ্টা তা
বিশ্বসংসারে আজ পর্যন্ত ক’জন পেরেছে ?
হে মহামান্য ভদ্রমণ্ডলীগণ আপনারাও শুনুন।
আপনারা কি শুনতে পারছেন না
আমার দিদির সেই আত্মনাদ ?
‘আসুন না বাবু ! খুশি করে দেবো’।
চাকরির আশায় শহরে এসে পৌঁছেছি।
‘কাবেরী বস্ত্রালয়’ থেকে কেনা নতুন শার্ট ;
৭৫০ টাকা দামের ফিলিপ্স আইরণে ইস্তি করা জামা ;
গায়ে নতুন লাঞ্চ করা ডেনিম পারফিউম ;
পকেটে দু’ভাঁজে ভাঁজ করা সুন্দর একখানা রুমাল ;
আর নতুন খাম খুলে মায়ের দেওয়া নগদ কিছু টাকা।
প্রথম শহরে এসে, অনেক কিছু দেখেছি
অনেক কিছু দেখছি
আর দেখলাম রাতের রহস্যে-মোড় এই শহরটাকেও।
সবমিলিয়ে আমার এতদিনের স্বপ্নে দেখা শহরটা
যেন আরো সুন্দর এবং আরো সুন্দর হয়ে ফুটে উঠল।
দেখতে দেখতে রাত বাড়তে লাগল।
এবার রাতের খাবার খাওয়ার সময় এল।
তারই জন্য সস্তা হোটেলের খোঁজে রাস্তায় বেড়োলাম।
শর্টকাটে যাবো বলেই অন্ধ-গলিপথ ধরলাম।
কিছুটা যেতে না যেতেই
দু’পাশ দেখে মাথা ঘুরতে শুরু করল।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম
এটা সেই জায়গা—
যেখানে রাতের নিশাচরেরা সারারাত ঘোরাফেরা করে।
কত ইসারা, কত চাপা আগুন, কত টানাপোড়েন...
সবকিছুকে উপেক্ষা করে তবুও আগিয়ে চলেছি।
হঠাৎ ডান-দিকের রাস্তার মোড় নিতে গিয়ে শুনতে পেলাম
বাঁ দিক থেকে কে যেন বলে উঠল
‘আসুন না বাবু ! খুশি করে দেবো’।
নিমেষের মধ্যে আমি থমকে দাঁড়ালাম।
সমস্ত বুক খাঁ খাঁ করে তোলপাড় হতে লাগল।
একবার মনে হতে লাগল এ কণ্ঠ যেন আমার কতদিনের কত চেনা।
অজ্ঞাত এক টানে আমি পিছন ফিরে তাকালাম।
একপলক দেখেই চিনে নিলাম
এটা আমার দশ বছর আগের বিক্রি করে দেওয়া ‘সেই দিদি’।
বাবা যখন কাজ ছাড়া
মদ আর মেয়ের নেশায় মাতাল-দিশাহারা।
তখনই বাবা আমার এই দিদিকে বিক্রি করে দেয়।
এটা আমার সেই দিদি
যার কথা মাকে জিজ্ঞাসা করলে, মা বলেন
‘হারিয়ে গেছে’।
বাবা শুনলে মারতে আসেন।
আর সারা পাড়া থু থু দেন।
অথচ কি আশ্চর্য দেখুন !
তার পাঠানো খামে মোড়া টাকাতেই আমাদের সংসার চলে।
তার সেই পাঠানো টাকাতে আমাদের বাড়িতে যে একটা নতুন নলকূপ বসানো হয়েছে
তার জল পাড়া-প্রতিবেশিরা এসে সবাই নিয়ে যান।
তবুও...
আমি বললাম, ‘দিদি তুমি আমাকে চিনতে পারছনা ?’
সে গম্ভীর হয়ে বলল, ‘দেখুন, নিশ্চয় আপনার কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে
আমি কারো দিদি নয়’।
আমি বুঝে গেলাম এটাই আমার দিদি।
আমি বললাম, ‘লক্ষ্মীদিদি আমার, ফিরে চল’।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিদি আমাকে বলল, ‘ তা আর হয় না। তুই যা।
কেন এসেছিস মিথ্যে এই শহরে ?’
মাথা নীচু করে আমি জবাব দিলাম, ‘চাকরীর জন্য। কিন্তু এখন তুমি ফিরে চল’।
দিদি বলল, ‘আমাকে নিয়ে সমাজে চলতে পারবি ?’
আমি বললাম, ‘নিশ্চয় পারব’।
দিদি বলল, ‘পারবি না। এর আগে কেউ পারে নি ; তুই-ও পারবি না।
আর এও জানি, সমাজকে না বদলাতে পেরে শেষপর্যন্ত
নিজেকেই বদলে নিবি।’
আমি বললাম, ‘কিন্তু দিদি…’
মাঝখানে কথা থামিয়ে দিদি বলল, ‘আর কোনো কথা নয়।
এখান থেকে এক্ষুণি তুই চলে যা। আর কখনো আসবিনা।
মা-বাবাকে দেখিস। আমার কথা কাউকে বলিস না।
আর শোন্, এতদূর এসে তোর চাকরি করার কোনো দরকার নেই।
প্রতি মাসে আমি যেমন পারি পাঠিয়ে দেবো।
তাতে তোদের ভালোভাবেই চলে যাবে’।
দিদি কোনো কথা না বলেই মুখ ফিরিয়ে নিল।
আমি ফিরবার পথ ধরলাম।
মনের ভিতর খুব কষ্ট পেয়েছি।
হঠাৎ ভেবে দেখলাম আমার দিদি হারে নি ;
নিজে এত দুঃখে থেকেও
প্রত্যেককেই খুশি করায় তার যে চেষ্টা তা
বিশ্বসংসারে আজ পর্যন্ত ক’জন পেরেছে ?
হে মহামান্য ভদ্রমণ্ডলীগণ আপনারাও শুনুন।
আপনারা কি শুনতে পারছেন না
আমার দিদির সেই আত্মনাদ ?
‘আসুন না বাবু ! খুশি করে দেবো’।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মীর মামুন হোসেন ০৬/০৪/২০১৪
লেখাই জীবন্ত রুপ পেয়েছে।
শুভ কামনা রইল।