www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সুশান্তর দুর্গা

আজ সকাল থেকেই সুশান্তর মনটা ভালো নেই। মজুমদার মশাই বলে গেছেন এবার মা আসছেন নৌকায়।
'নৌকায় আসবেন? তার মানে তো আবার বান আসবে। কত মানুষ ঘরছাড়া হবে! কত মানুষ ভেসে যাবে! আচ্ছা মা, মা দুগ্গা তো সবাইকে ভালোবাসে, তবে মা দুগ্গা আসলেই বান আসে কেন?'
'ওসব কতা বলে না সোনা। দুগ্গা! দুগ্গা!' সুশান্তের মা হাতজোড়া কপালে ঠেকালেন।

সুশান্তর বয়স প্রায় নয় বছর । গত বছরের আগের বছর শীর্ষা'য় মামাবাড়ি থাকতে সে প্রথম বন্যার ভয়াবহতা স্বচক্ষে দেখেছিল। তাই বন্যার কথা ভাবতেই তার গা যেন শিউরে ওঠে।
এদিকে পাড়ার ক্লাবগুলিতে মা দুর্গার আরাধনার তোড়জোর চলছে জোরকদমে। চলছে বিরাট প্রতিযোগিতা, কার দুর্গা সেরার শিরোপা পায়।

মা আসতে আর মাত্র বাইশ দিন বাকি। চারিদিকে সাজো সাজো রব। সকালের শিশির মাখা শিউলির ঘ্রাণে চারিদিক যেন এক অপরূপ নেশায় আচ্ছন্ন। খণ্ড খণ্ড শুভ্রমেঘ বালিকার ওড়নার মতো মুক্ত আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। মাঠকে মাঠ তুলোর মতো মলিন কাশফুলগুলি বাতাসের একটু দোলায় নিজেকে এলিয়ে দিচ্ছে আর তুষারের মতো তার পালকগুলি বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে আগমনীর বার্তা।

দেখতে দেখতে এই বাইশটি দিন কিভাবে কেটে গেল সুশান্ত টের-ই পেল না। আজ ষষ্ঠী। ঢাকের বাদ্যে চারিদিক মুখরিত। সুশান্তর মনে আজ ভারি আনন্দ। মা বলেছে এবার নাকি বান আসার সম্ভাবনা কেটে গেছে। হয়তো সুশান্তর সরল মনের দরদী চেতনা দেবী মাকে মুগ্ধ করেছে।

সুশান্তর বাবা জয়নারায়ন বাড়ুজ্যে নামী ব্যবসায়ী। প্রত্যেক বছরের মতো এবছরও নবমীর দিন তার বাড়িতে বিরাট ভুঁড়িভোজের আয়োজন হয়েছে। আমন্ত্রিত সকলের সাথে সুশান্তর পাতেও রকমারি খাবার সজ্জিত। সরু সুগন্ধি চালের ভাত তার সাথে বেগুন ভাজা, ডাল, কাঁতলা মাছের কালিয়া, গলদা চিংড়ির মালাইকারি, পাঁঠার মাংস, দই-সন্দেশ-মিষ্টি আরও কত কি! এমন সময় সুশান্তর চোখ পড়ল সদর দরজার দিকে। প্রায় তারই বয়সী একটি মেয়ে ময়লা জামা আর জট পাঁকানো চুলে তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে। এরপর যা ঘটল তা উপস্থিত সকলের ভাবনারও অতীত। সুশান্ত মেয়েটির হাত ধরে তাকে পাশে বসিয়ে নিজের খাবারটা দিল। মেয়েটি গোগ্রাসে খাচ্ছে। সুশান্তর মুখমন্ডলে যেন একটি পরম তৃপ্তির আভাস ফুটে উঠেছে। তার ওই চোখদুটি যেন অন্তহীন মহাসাগরের মতো, যেখানে এই পৃথিবীর সমস্ত জাত-পাত, বর্ণ-ভেদ অতল জলরাশির নীচে চিরতরে সমাহিত হয়ে যায় ৷ উপস্থিত সকল সভ্যগণের জ্ঞানচক্ষুর তুলনায় সুশান্তর নির্বোধ দুটি চোখ যে এত বেশি তীক্ষ্ণ; একথা বুঝতে পেরেই হয়তো সকলের মুখমন্ডলে একটি গভীর লজ্জাবোধ ধরা পড়ল।
জয়নারায়নবাবু সুশান্তর পিঠ চাঁপড়ে বললেন -'তোমার দুর্গাই সেরা!'
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৪৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/১০/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast