দক্ষিণা
১৯৯৮ অক্টোবর মাস।চারিদিকে পূজোর ধুম পড়ে গেছে। এই সময়ে ঠিক হলো আমাকে দশ জনের একটি দল নিয়ে যেতে হবে ভারতের গোয়া রাজ্যে। দলের প্রধান ছিলাম আমি, বাকী একজন ছাড়া সবাই কলেজের ছাত্র-ছাত্রী। পনের দিনের ট্রেনিং প্রোগ্রাম ও মিটিং। পূজোর সপ্তাহ খানেক আগে ঢাকা থেকে বাসযোগে রওনা হলাম। যাব বেনাপুল। রাত ৮টায় বাসে উঠলাম এব্ং সকাল ৭টায় বেনাপুল সীমান্তে পৌঁছলাম। বাংলাদেশ সীমান্তে ইমিগ্রেশনে সব পাসপোর্ট এক সাথে জমা দিলাম। একজন অফিসার এসে বলল, ২০টাকা দেন তাড়াতাড়ি করে দেই। দিলাম। ১০ মিনিটে বর্ডার পার হয়ে হরিদাসপুর(ভারতের অংশের নাম.) আবার ভারতীয় ইমগ্রেশনে সব পাসপোর্ট জমা দিলাম , এক অফিসার তখন সকালের নাস্তা করছিল। কিছু বলল না। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাদের পিছনে ইতোমধ্যে কয়েকজ্ন পাসপোর্ট জমা দিয়ে দিব্যি বেড়িয়ে গেল। বললাম স্যার আমাদেরটা? লোকটা এমন ভাবে তাকালো যেন জিজ্ঞাস করে আমি মহা অন্যায় করেছি। পরে এক লোক জানালো ও দাদা মাল ছাড়েন তবে তো? দিলাম ৫০ টাকা। সব পাসপোর্ট হাতে পেয়ে হরিদাসপুর থেকে পাঁচটি রিক্সাযোগে আমরা দশজন রোনা দিলাম।পথিঅমধ্যে একদল চেংড়া ছেলে রিক্সা দাঁড় করিয়ে পাশে েক পূজামন্ডপ দেখিয়ে বলল কিছু দিবেন কি? দিলাম ৫টাকা।পাশেই একদল বিএসএফ জোয়ান দাঁড়িয়েছিল চুপচাপ! একটু এগোতেই আবার একই অবস্থা দিলাম পাঁচ টাকা! না নিবে না! এভাবে যতই বনগাঁ ষ্টেশনের দিকে এগুচ্ছি টাকার পরিমানো বাড়তে থাকে। না দিলে খারাপ ব্যাবহার করে। মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে দিয়ে দিলাম।
বনগাঁ ষ্টেশন এসে কলকাতা শিয়ালদহগামী ট্রেনে চাপলাম। ট্রেনে উঠে সীট পেয়ে সবাই একসাথে বসলাম। আবারও কিছু চেংড়া ছেলেপুলে টাকা দাবি করে পূজো দিবে বলে। দিলাম ২০টাকা। পরের ষ্টেশন আরেকদল।দিলাম। পরের ষ্টেশন আরেকদল বেশ মারদাংগা ভঙ্গিতে জিজ্ঞাস করে কতজন? মানে? মানে আপনারা বাংলাদেশ থেকে কতজন এসেছেন? বললাম দশ জন। কে দলের লিডার? বললাম আমি। দিন জন প্রতি ৫০টাকা হিসেবে ৫০০টাকা দিন। বললাম এটা কি মগের মুল্লুক। এই শালার ব্যাগ সব নিয়ে নে তো! লজ্জায় অপমানে চোখে জল এসে গেল দিলাম। ৫০০টাকা। আমাদের পাশেই দুটি ছেলে ছিল। ভারতে পড়াশোনা করে। সে টাকা দেয়নি বলে অনেক মারধর করে মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। খুব খারাপ লাগল। শিয়ালদহ ষ্টেশনে পৌঁছে টেক্সি নিলাম। যাব ডনবস্কো স্কুলে। সেখানে গিয়ে সবার মন খারাপ। সিদ্ধান্ত নিলাম চলে আসব দেশে। সেখানকার পরিচালক ফাদার রবিন গোমেজ বললেন এখন যদি ফিরে যাও আবার তোমাদের টাকা খোয়াতে খোয়াতে যেতে হবে। ভাবলাম যা হবার হবে। সন্ধ্যে সাতটায় ট্রেন।
মনের দুঃখে পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম এক হাজার টাকা গুরু দক্ষিণা দিতে হয়েছে। আমার অফিসে কীভাবে টাকার হিসেবটা দেখাব বুঝতে পারছিলাম না। এভাবেই আনন্দে কেটে গেল পনের দিন। আসার সময় কি হয়েছিল সব ভুলে গেলাম সবার ভালোবাসা পেয়ে।
১০/০১/২০১৩
বনগাঁ ষ্টেশন এসে কলকাতা শিয়ালদহগামী ট্রেনে চাপলাম। ট্রেনে উঠে সীট পেয়ে সবাই একসাথে বসলাম। আবারও কিছু চেংড়া ছেলেপুলে টাকা দাবি করে পূজো দিবে বলে। দিলাম ২০টাকা। পরের ষ্টেশন আরেকদল।দিলাম। পরের ষ্টেশন আরেকদল বেশ মারদাংগা ভঙ্গিতে জিজ্ঞাস করে কতজন? মানে? মানে আপনারা বাংলাদেশ থেকে কতজন এসেছেন? বললাম দশ জন। কে দলের লিডার? বললাম আমি। দিন জন প্রতি ৫০টাকা হিসেবে ৫০০টাকা দিন। বললাম এটা কি মগের মুল্লুক। এই শালার ব্যাগ সব নিয়ে নে তো! লজ্জায় অপমানে চোখে জল এসে গেল দিলাম। ৫০০টাকা। আমাদের পাশেই দুটি ছেলে ছিল। ভারতে পড়াশোনা করে। সে টাকা দেয়নি বলে অনেক মারধর করে মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। খুব খারাপ লাগল। শিয়ালদহ ষ্টেশনে পৌঁছে টেক্সি নিলাম। যাব ডনবস্কো স্কুলে। সেখানে গিয়ে সবার মন খারাপ। সিদ্ধান্ত নিলাম চলে আসব দেশে। সেখানকার পরিচালক ফাদার রবিন গোমেজ বললেন এখন যদি ফিরে যাও আবার তোমাদের টাকা খোয়াতে খোয়াতে যেতে হবে। ভাবলাম যা হবার হবে। সন্ধ্যে সাতটায় ট্রেন।
মনের দুঃখে পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম এক হাজার টাকা গুরু দক্ষিণা দিতে হয়েছে। আমার অফিসে কীভাবে টাকার হিসেবটা দেখাব বুঝতে পারছিলাম না। এভাবেই আনন্দে কেটে গেল পনের দিন। আসার সময় কি হয়েছিল সব ভুলে গেলাম সবার ভালোবাসা পেয়ে।
১০/০১/২০১৩
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দীপঙ্কর বেরা ২০/১০/২০১৩Ghus . Er theke mukti nei .
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ০৮/১০/২০১৩খুব বেদনা বিধুর ঘটনা।মানুষের জীবনে এমন কিছু সময় যায় যার নিয়ন্ত্রণ মানুষের কাছে থাকে না।তাকে চলতে হয় সময়ের পরিস্থিতির সাথে।তবে লেখা পড়ে অভিজ্ঞতা অর্জন হলো।
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ০১/১০/২০১৩কখনো কখনো সময়টা খুব বিপরীতে থাকে। আমাদেরও এমন অভিজ্ঞতা আছে। লেখা পড়ে সেসব কথা খুব মনে পড়ছে। খুব ভালো লেখা
-
বিশ্বজিৎ বণিক ০১/১০/২০১৩ভালো চালিয়ে যান ।
-
Înšigniã Āvî ০১/১০/২০১৩
-
নির্ঝর রাজু ০১/১০/২০১৩ধন্যবাদ, এভাবেই ব্লগে বৈচিত্র আসবে, পড়ে ভাল লাগলো,লিখতে থাকুন, ব্লগও পাকবে আপনার হাত ও পাকবে********** ************************* নিমন্ত্রন রইল নির্ঝরের ব্লগ বাড়িতে ঘুরে আসার !