www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কেমন তোমার পিতামাতা

মিঃবেন, বয়েস উনআশি। ব্যেসের ভাড়ে নুয়ে পড়েছে। তার স্ত্রী অনেক আগেই গত হয়েছে। বেন থাকেন স্থানীয় একটি নাসিং হোমে।এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেমেয়ে দুজনেই বিয়ে করার পর থেকেই আলাদা অন্য ষ্টেটে থাকে। বেনের সাথে আমার প্রথম দেখা আমার ষ্টোরে। সাথে ছিল একজন নার্স। আমাকে দেখে হেসে জিজ্ঞাসা করল আমার দেশ কোথায়? বললাম বাংলাদেশ। খুব খুশি হয়ে বলল। সে আমাদের দেশে গিয়েছে সরকারী সফরে।অতিথী পরায়ন দেশ। তার কথা শুনে খুব ভাল লাগল। আমার কাজ শেষ করে ঘরে ফিরছিলাম। সেও আমার সাথে ষ্টোর থেকে বের হল। সে জানালো সে এখন লেখা-লেখি করে সময় পার করছে। আমার হাতে তার একটি বই ধরিয়ে দিয়ে বলল, এতে আমার জীবন কাহিনী লেখা। হাতে নিলাম বইটি।

বইটি দেখে তার সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সে জানালো, তার স্ত্রী মারা গেছে অনেক আগে। ছেলেমেয়ে বিয়ে-স্বাদী করে আলাদা থাকে। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে, তার ছেলে এসে বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে এব্ং তাকে একটি নাসিং হোমে রেখে গেছে।
-আপনার ছেলেমেয়ে দেখতে আসে?
-আগে প্রায়ই দেখতে আসত। তারপর কমতে কমতে একমাস, ক্রিসমাস বা ইষ্টার। এখন আর আসে না।আগে ফোন করত এখন আর ফোন করে। লক্ষ্য করলাম বেনের চোখে পানি। এখন তার সময় কাটে ছেলেমেয়েদের ছোট্বেলার এলবাম দেখে। কাউকে কাছে পেলেই ডাক দিয়ে দেখাই এটা অতো সালের ছবি, এটা আমার ছেলে বয়েস ছয়। জানো কেউ কাছে আসতে চায় না। কথা শোনতে চায় না। এখন আমার একমাত্র সঙ্গী এলবাম। বেনকে জিজ্ঞাস করলাম আপনিও কি আপনার বাবা মায়ের সাথে ছিলেন? সে জানায় সেও বিয়ে করার পর আলাদা হয়ে সংসার করে। আর তার বাবা মাও ছিলেন নাসিং হোমে। আমি বললাম তাহলে আর কি আপনি বাবা মার সাথে যেমন করেছেন, আপনার ছেলেমেয়েও তাই করল। বেন চুপ।

ইদানীং আমেরিকান বুড়ো-বুড়িরা চালাক হয়ে গেছে। তাদের ছেলেমেয়েরা আলাদা হয়ে যাবার পর যখন কোন খোঁজ খবর নেয় না, তখন তারা ব্যাংক এর সাথে চুক্তি করে, ব্যাংক এর কাছে বাড়ী বিক্রি করে দেয়।শর্ত  থাকে তারা যখন মারা যাবে কেবল ব্যাংক তখন বাড়ী দখল নিতে পারবে তার আগে নয়। এজন্য ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে সে তিন থেকে চার হাজার ডলার পাবে।

মনে মনে ভাবি এই তুলনায় আমাদের দেশের বাবা মায়েরা অন্তত খুব ভালো আছে। বেনকে মনে মনে বলি,'মিঃ বেন, তোমার দেশ ধন-সম্পদে, অর্থনীতিতে, শিল্প-কারখানায়, শিক্ষা-দীক্ষায়,প্রযুক্তিতে আমাদের থেকে একশ বছর এগিয়ে। কিন্তু মানবতায়!!! হুম, আমাদের চেয়ে তোমরা দুইশ বছর পিছিয়ে!!!

০৯/৩০/২০১৩
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭৮৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • suman ০৪/১০/২০১৩
    দারূণ ! তবে আমি মিঃ বেনদেরকে দোষ দেই না ...নিষ্ঠুর সভ্যতা আমাদের মেকানিক্যাল করে ফেলেছে ...
  • ইসমাইল জসীম ৩০/০৯/২০১৩
    আপনার এই অভিজ্ঞতা আমাদের শেয়ার করেছেন এ জন্য ধন্যবাদ। আমাদের শিক্ষা নেয়ার অনেক আছে।
  • সুজয় আচার্য্য ৩০/০৯/২০১৩
    আমাদের স্ব্ত্তা অহংকারের কিন্তু আমরা কি তা জানি বা মূল্য দেই।
  • সহিদুল হক ৩০/০৯/২০১৩
    কথাটা আপাতত খাঁটি।কিন্তু ভয় হয় আমরা তো অন্ধভাবে পশ্চিমকে অনুসরণ করে চলেছি সব ব্যাপারে,য়ামাদের দেশেও না এসব শুরু হয়ে যায়,ইতিমধ্যেই কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমের চাহিদা বেড়ে চলেছে।তবে তোমার লেখাটা অত্যন্ত সময়োপযোগী সুবীরদা।
    আমার পাতায় যেও কিন্তু।
  • Înšigniã Āvî ৩০/০৯/২০১৩
    একদম ঠিক বলেছেন সুবীরদা.......
    আর আমার মনে হয় ওরা আরো ১০০০ বছর পিছিয়ে
  • ইব্রাহীম রাসেল ৩০/০৯/২০১৩
    --পড়লাম সুবীর দা, দারুণ বিষয়ের অবতারণা--
  • অথচ দুঃখের বিষয় হল আমরা ক্রমে ওদের সংস্কৃতি অনুসরণ করে আদর্শহীন মানবতাবর্জিত যান্ত্রিক জীবন যাপনের চেষ্টা করছি। আপনার লেখা পড়ে আমাদের চৈতন্য হোক
 
Quantcast