প্রাইমারী স্কুলের বদরুন্নেসা
গ্রামেই প্রাইমারী বিদ্যালয় । শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত।পঞ্চম শ্রেণী কেন ছিলো না জানি না।আমার শিশুকালের লেখাপড়ার হাতেখড়ি বাড়ীর পাশেই ছিল বিদ্যালয়টি। এই বিদ্যালয়ের ছোট একটা ঘটনা। সরকার গণশিক্ষার স্বাক্ষরতার হার পরিস্ংখ্যানের জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ে জরিপ চালায়। প্রত্যেক ছাত্র/ছাত্রী একটি কাগজে নিজের নামের স্বাক্ষর করবে। আমি গেলা শিক্ষক রুমে। এক বদরাগী শিক্ষক ছিলেন। আমি স্বাক্ষর করতে সামান্য ভুল হলে উনি চপাং করে আমার চোখে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আমার ভাগ্য ভালো চোখের সমস্যায় বেশীদিন ভুগতে হয়নি। অল্পের জন্য চোখটি বেঁচে গেছে।আরেকটু হলে আজ এক চোখ দিয়ে আমাকে দেখতে হতো!
চতুর্থ শ্রেণীর গন্ডি পেরোতে আমাকে চলে যেতে হলো সাড়ে তিন মাইল দুরে সরকারী বালক বিদ্যালয়ে। পঞ্চম শেণীতে ভর্তি। আমাদের ক্লাশ শিক্ষিকা হলেন সে বিখ্যাত চরম রাগী, চির অসুখী বদরুন্নেসা(এটা ছদ্ম নাম), মুখে কোন দিন হাসির রেখা দেখিনি। একটানা ক্লাশ নিতে। মাঝে শুধু অন্য এক শিক্ষিকা বিজ্ঞান পড়াতেন। তো এই বদরুন্নেসা। কারনে অকারণে আমাদের পেটাতেন। দেখা গেছে ক্লাশে ময়লা পড়ে আছে! ব্যাস ঢালাও পিটুনী। যেনতেন পিটুনী না। জম্মের পিটুনী। উনার পিটুনীর পছন্দের জায়গা ছিলো হাত এব্ং পিছনের নিম্নাংশে। এছাড়া আত্র আরেকটি বদ অভ্যাস হলো প্রতি শনিবার আমাদের খাতায় লিখতে বলতেন কি কি ভাল কাজ করেছি। কেউ না করলে পিটুনী সাথে ক্লাশ বাদ দিয়ে রাস্তায় গিয়ে ভাল কাজ করে আসতে হত।
একবার আমি করিনি, তাই আমিসহ বেশ কয়েকজন বের হলাম ভাল কাজের সন্ধানে। পেলাম না, শেষে পেলাম এক অন্ধ ফকিরকে। জিজ্ঞাস করলাম ও কাকু সাহায়্য লাগবে। ব্যাটা তো মহাখুশি। বলে আমাকে নাগরী পৌঁছে দাও! খাইছে নাগরী! সাত মাইল দুর! বুঝুন অবস্থা কি ছিল!
বিদ্যালয়ে টয়লেট ছিলো একটা। সরকারী তয়লেট যেমন হয়। শুধু শিক্ষক/শিক্ষিকারা ব্যাবহার করতে।আমাদের যেতে হত রাস্তার পাশে খোলা ধান অথবা পাট ক্ষেতে! এজন্য ক্ষেতের মালিক গাবি মিয়া প্রায়ই তাড়া করত। কিন্তু কত জনকে তাড়া করবে। বিদ্যালয়ে ৬০০ ছাত্র। এই জন্য এমন গালি দিতেন, যা একবার শোনলে দ্বিতীয়বার না শোনার জন্য অনেকে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলত। ক্ষেতের পাশেই ছিল মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয়। জানালা দিয়ে সব দেখা যায়।মেয়েরা তাকিয়ে থাকে। থাকুক। ছোট মানুষের ছোট জিনিষ। তা ছাড়া এতো দুর থেকে দুরবীন ছাড়া দেখাও সম্ভব না!!
গাবি মিয়আ অগ্যতা প্রধান শিক্ষককে নালিশ জানালেন। তিনি কিছু বললেন না। কিন্তু আমাদের বদরুন্নেসার কড়া হুকুম কেউ যাবে না। গেলে... আর বলতে হবে না। পরদিন টিফিনের সময় সবাই অভ্যাসবর প্রাকৃতিক সেড়ে খেলায় ব্যাস্ত। আমরা কয়েকজন যাইনি। টিফিনে প্রায়ই রেল লাইন সড়কের পাশে দাড়িয়ে রেলগাড়ি দেখতাম। টিফিন শেষ এলাম ক্লাশে। যথারীতি প্রতিদিনের মত সবাই অপেক্ষমাণ আজ কী কারনে পিটাবে? সঙ্গে সঙ্গে এই কে কে আজ বাইরে গিয়েছ? আমিও গেছি, আসলে তিনি বুঝাতে চাইলেন, রাস্তার পাশে কে কে সেড়েছ? না বুঝে সবাই গেলাম, ঝপাং ঝপাং ঝ, হাতে পিছিনে! খামাখা মার খেলাম।
এই বদরুন্নেসার কারণে অনেকে দুটো পরে প্যান্ট পড়ত। তার মারের ভয়ে অনেকে বিদ্যালয় পরিত্যাগ করেছে। আমার সাথে দুই ভাই নজরুল ও শামসুল পড়ত। দুজনের হাতের লেখা ছিল খুবই সুন্দর। অদের দুজনকে পাশ করার পর আর দেখিনি। প্রায় এক যুগ পর শামসুলকে দেখলাম। রিক্সা চালাছে! এমন অবস্থা কেন জানতে চাইলাম। বলল ভয়ে বিদ্যালয় পরিয়াগ করেছি। মানে পিটুনীর ভয়ে। এমন আরও অনেকে একই কারনে পড়াশোনা আর করেনি।
মাঝে মাঝে বদরুন্নেসার সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করতাম। মনে পড়ে কেমন পিটাতেন আমাদের। বদরু মুচকি হেসে বলে এইজন্য তোরা আজ মানুষ হয়েছিস। মনে মনে বলি বদের বদরু আর তোমার লাঠির ভয়ে যারা পড়াশোনা ছেড়েছে? তাদের কথা ভেবেছ? তোমার কারণে শামসু আজ অফিসার না হয়ে হয়েছে রিক্সাচালক। এর জন্য দায়ী কে??
০৯/২১/২০১৩
চতুর্থ শ্রেণীর গন্ডি পেরোতে আমাকে চলে যেতে হলো সাড়ে তিন মাইল দুরে সরকারী বালক বিদ্যালয়ে। পঞ্চম শেণীতে ভর্তি। আমাদের ক্লাশ শিক্ষিকা হলেন সে বিখ্যাত চরম রাগী, চির অসুখী বদরুন্নেসা(এটা ছদ্ম নাম), মুখে কোন দিন হাসির রেখা দেখিনি। একটানা ক্লাশ নিতে। মাঝে শুধু অন্য এক শিক্ষিকা বিজ্ঞান পড়াতেন। তো এই বদরুন্নেসা। কারনে অকারণে আমাদের পেটাতেন। দেখা গেছে ক্লাশে ময়লা পড়ে আছে! ব্যাস ঢালাও পিটুনী। যেনতেন পিটুনী না। জম্মের পিটুনী। উনার পিটুনীর পছন্দের জায়গা ছিলো হাত এব্ং পিছনের নিম্নাংশে। এছাড়া আত্র আরেকটি বদ অভ্যাস হলো প্রতি শনিবার আমাদের খাতায় লিখতে বলতেন কি কি ভাল কাজ করেছি। কেউ না করলে পিটুনী সাথে ক্লাশ বাদ দিয়ে রাস্তায় গিয়ে ভাল কাজ করে আসতে হত।
একবার আমি করিনি, তাই আমিসহ বেশ কয়েকজন বের হলাম ভাল কাজের সন্ধানে। পেলাম না, শেষে পেলাম এক অন্ধ ফকিরকে। জিজ্ঞাস করলাম ও কাকু সাহায়্য লাগবে। ব্যাটা তো মহাখুশি। বলে আমাকে নাগরী পৌঁছে দাও! খাইছে নাগরী! সাত মাইল দুর! বুঝুন অবস্থা কি ছিল!
বিদ্যালয়ে টয়লেট ছিলো একটা। সরকারী তয়লেট যেমন হয়। শুধু শিক্ষক/শিক্ষিকারা ব্যাবহার করতে।আমাদের যেতে হত রাস্তার পাশে খোলা ধান অথবা পাট ক্ষেতে! এজন্য ক্ষেতের মালিক গাবি মিয়া প্রায়ই তাড়া করত। কিন্তু কত জনকে তাড়া করবে। বিদ্যালয়ে ৬০০ ছাত্র। এই জন্য এমন গালি দিতেন, যা একবার শোনলে দ্বিতীয়বার না শোনার জন্য অনেকে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলত। ক্ষেতের পাশেই ছিল মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয়। জানালা দিয়ে সব দেখা যায়।মেয়েরা তাকিয়ে থাকে। থাকুক। ছোট মানুষের ছোট জিনিষ। তা ছাড়া এতো দুর থেকে দুরবীন ছাড়া দেখাও সম্ভব না!!
গাবি মিয়আ অগ্যতা প্রধান শিক্ষককে নালিশ জানালেন। তিনি কিছু বললেন না। কিন্তু আমাদের বদরুন্নেসার কড়া হুকুম কেউ যাবে না। গেলে... আর বলতে হবে না। পরদিন টিফিনের সময় সবাই অভ্যাসবর প্রাকৃতিক সেড়ে খেলায় ব্যাস্ত। আমরা কয়েকজন যাইনি। টিফিনে প্রায়ই রেল লাইন সড়কের পাশে দাড়িয়ে রেলগাড়ি দেখতাম। টিফিন শেষ এলাম ক্লাশে। যথারীতি প্রতিদিনের মত সবাই অপেক্ষমাণ আজ কী কারনে পিটাবে? সঙ্গে সঙ্গে এই কে কে আজ বাইরে গিয়েছ? আমিও গেছি, আসলে তিনি বুঝাতে চাইলেন, রাস্তার পাশে কে কে সেড়েছ? না বুঝে সবাই গেলাম, ঝপাং ঝপাং ঝ, হাতে পিছিনে! খামাখা মার খেলাম।
এই বদরুন্নেসার কারণে অনেকে দুটো পরে প্যান্ট পড়ত। তার মারের ভয়ে অনেকে বিদ্যালয় পরিত্যাগ করেছে। আমার সাথে দুই ভাই নজরুল ও শামসুল পড়ত। দুজনের হাতের লেখা ছিল খুবই সুন্দর। অদের দুজনকে পাশ করার পর আর দেখিনি। প্রায় এক যুগ পর শামসুলকে দেখলাম। রিক্সা চালাছে! এমন অবস্থা কেন জানতে চাইলাম। বলল ভয়ে বিদ্যালয় পরিয়াগ করেছি। মানে পিটুনীর ভয়ে। এমন আরও অনেকে একই কারনে পড়াশোনা আর করেনি।
মাঝে মাঝে বদরুন্নেসার সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করতাম। মনে পড়ে কেমন পিটাতেন আমাদের। বদরু মুচকি হেসে বলে এইজন্য তোরা আজ মানুষ হয়েছিস। মনে মনে বলি বদের বদরু আর তোমার লাঠির ভয়ে যারা পড়াশোনা ছেড়েছে? তাদের কথা ভেবেছ? তোমার কারণে শামসু আজ অফিসার না হয়ে হয়েছে রিক্সাচালক। এর জন্য দায়ী কে??
০৯/২১/২০১৩
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ভানম আলয় ২৩/০৯/২০১৩সুবীর দা ... অজস্র সালাম...
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ২২/০৯/২০১৩একদম ঠিক, উন্নত দেশে এটা দণ্ডনীয় অপরাধ, অথচ
ওরা সব শিশু শয়তান,বললেন সম্রাট শাহজাহান
ওদের সকালে ও বিকালে প্রহার কর। -
ইব্রাহীম রাসেল ২১/০৯/২০১৩--শিখলাম আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে--
-
Înšigniã Āvî ২১/০৯/২০১৩অসাধারণ.....
এ রকম শিক্ষক বেশ কয়েকনকে দেখেছি আমার স্কুল লাইফএ, -
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ২১/০৯/২০১৩ঠিক বলেছেন। মারের কারনেই নয় শুধু। আরো অনেক ভাবেই অনেক শিক্ষক অনেক ছাত্রের জীবন নষ্ট করেন। আমার সাথের এক ছেলে আলু বিক্রি করে স্কুলে থাকতে মুটামুটি ভাল স্টুডেন্ট ছিল আর একটু শয়তান। স্যার না মারলে ও তার বাবার কাছে কখন তার ভাল কিছু বলেননি আর খারাপ সামান্যকে বড় করে বর্ণনা তো আছেই এই রকম করতে করতে বাবার শাল্টিং খেয়েই সে পড়া ছেড়েছে। এটা কোন গ্রাম্য স্কুল ছিলনা এটা শহরের স্কুল আর আমি একজনের কথা বললাম আরো অনেক আছে আমার দেখা ।