এটা খুন নাকি আত্মহত্যা
স্টেশনে প্রায় দৌড়ে এসে, ওভার ব্রিজ ক্রস করে নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই ট্রেন এসে হাজির। অর্ক তাড়াতাড়ি ট্রেনের শেষ কম্পার্টমেন্টে উঠে দেখে ট্রেন পুরোটা খালি। অর্ক মনে মনে ভাবল, বেশি ভীড়ের কি বা প্রয়োজন।কিন্তু সে খেয়াল করলো, এই কামরায় পাখার ব্যাবস্থা থাকলেও কোনো পাখা ঘুরছে না।অর্ক মনে মনে এক মুহুর্তের জন্য রেল কতৃপক্ষকে মনে মনে গালিগালাজ করলো, এই গ্রীষ্মেও পাখাগুলোর দিকে নজর না দেওয়ার জন্য। অর্ক হাঁপাতে হাঁপাতে জলের বোতলের থেকে দু ঢোক জল খেয়ে নিল। তারপর জানালার ধারের একটা সিটে বসে ফুরফুরে হাওয়া উপভোগ করতে করতে সারাদিনের ক্লান্তি আর ব্যস্ততার জন্য তার দুচোখ জুড়ে ঘুম জড়িয়ে এল। এর মধ্যে কত সময় কেটে গেছে অর্ক এর খেয়াল নেই। হঠাৎ ফোনের রিংটন টা বেজে উঠলে অর্ক ফোনটার রিসিভ বটন র্টাচ করে আলস গলায় বলল,
-- হ্যালো, কে বলছেন ??
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসার আগেই অর্ক ফোন নম্বর খেয়াল করে, সজাক হয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
-- হ্যাঁ, বল অঙ্কুশ।
ওপাশ থেকে নরম কন্ঠে উত্তর এলো,
-- তুই আমার ব্যাবসায় এত বড়ো ক্ষতি করলি কেন ?
-- যখন আমি প্রথম ব্যাবসা শুরু করেছিলাম, মনে পড়ে তুই আমার ব্যাবসায় কত বড়ো ক্ষতি করেছিলি। সেদিন আমিও এই প্রশ্ন টা তোকে করতে পারতাম।
-- ওহ আচ্ছা। প্রতিশোধ নিচ্ছিস !
-- তা বলতে পারিস। আসলে সত্যি বলতে, যে গল্পের ভূমিকা তুই লিখেছিস, সেই গল্পের উপসংহার আমি না লিখলে গল্পটা দুজনের হবে কীভাবে !
এ কথার বলার পরই কলটা কেটে দিল অর্ক।
কথাটা বলার পরই অর্কর মনে পড়ল, ঠিক এই কথাটাই একদিন সৌম্য তাকে বলেছিল। অনেকদিন আগের কথা, অর্ক তখন কলেজের হোস্টেলে থাকত। থার্ড ইয়ার অর্থাৎ নিঃসন্দেহে অন্য দুটো ইয়ারের দাদা। সৌম্য তখন সবেমাত্র ফাস্ট ইয়ার। তাই অল্প একটু ragging সহ্য করতে হত ছোটোদের। একদিন হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই সৌম্যকে ragging করল অর্ক আর তার দুজন বন্ধু। ragging টা যে কি ছিল, সেটা অর্কের মনে আছে যদিও, কিন্তু সে তারপর থেকে কখনও মনে করতে চাইতো না। যাই হোক, সেদিন সৌম্য তখন খুব রেগে গিয়ে অর্ককে এই কথাটাই বলেছিল, "যে গল্পের ভূমিকা তুমি লিখেছো, সেই গল্পের উপসংহার আমি না লিখলে গল্পটা দুজনের হবে কীভাবে !"
অর্ক সেদিন রাতে বালিশে মাথা রেখে যখন ভাবছিল তখন অর্ক বুঝতে পেরেছিল,সেদিন সৌম্যর সাথে যেটা করা হয়েছিল, সেটা কখনও কারও সাথে করা উচিত নয়। অর্ক একবার ভেবেও ছিল সৌম্যের কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু থার্ড ইয়ার মনে পড়তেই অহংকার সব সুচিন্তাগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল।
এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় দু চোখ জুড়ে ঘুম জড়িয়ে এলো, ঠিক সেসময় অর্ক অনুভব করলো, যেন জানালার ধারে বসেও হাওয়া তার শরীরে লাগছে না। যেন মনে হচ্ছে কেউ জানালাকে ঢেকে বসে আছে। অর্কর গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো, জলের বোতল নিতে গিয়ে দেখলো, জলের বোতল টা সে খুঁজে পাচ্ছে না। অর্ক বুঝতে পারলো ,তার সাথে কিছু একটা ঘটছে।শেষমেশ
প্রচন্ড গরমে হাসফাস করতে করতে অর্ক কামরার গেটের সামনে দাঁড়ালো। আবার বাইরের ফুরফুরে হাওয়া তার শরীর জুড়ে একটা শান্তির অনুভূতি ছড়িয়ে দিল। কিন্তু কিছু সময় যেতে না যেতেই অর্ক আবার প্রচন্ড ঘুমে ঢলে পড়লো। একটা চিৎকার যেটা সবাই শুনতে পেল কিন্তু একটা হালকা ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসি যেটা কেউ শুনতে পায়নি বা শোনার চেষ্টা করেনি।
পরের দিন, রেল লাইনে অর্ক হালদার নামক ব্যক্তির রেলে কাটার খবর চারিদিকে পড়িয়ে পড়লো। প্রশাসনের মাথা ব্যথা, এটা খুন নাকি আত্মহত্যা !
সৌম্য কিন্তু জানে এটা খুন নাকি আত্মহত্যা। ঠিক একইরকমভাবে একদিন সৌম্য রেললাইনে লাফ দিয়েছিল, শুধুমাত্র ragging এর হাত থেকে বাঁচতে, সেদিনও একই প্রশ্ন উঠেছিল, এটা খুন নাকি আত্মহত্যা !
সেদিন যদি হোস্টেলে অর্ক সব অহংকার ভুলে একবার ক্ষমা চেয়ে নিত সৌম্যের থেকে তাহলে হয়ত এভাবে অর্ককে গল্পের উপসংহার হতে হত না।
সমাপ্ত
-- হ্যালো, কে বলছেন ??
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসার আগেই অর্ক ফোন নম্বর খেয়াল করে, সজাক হয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
-- হ্যাঁ, বল অঙ্কুশ।
ওপাশ থেকে নরম কন্ঠে উত্তর এলো,
-- তুই আমার ব্যাবসায় এত বড়ো ক্ষতি করলি কেন ?
-- যখন আমি প্রথম ব্যাবসা শুরু করেছিলাম, মনে পড়ে তুই আমার ব্যাবসায় কত বড়ো ক্ষতি করেছিলি। সেদিন আমিও এই প্রশ্ন টা তোকে করতে পারতাম।
-- ওহ আচ্ছা। প্রতিশোধ নিচ্ছিস !
-- তা বলতে পারিস। আসলে সত্যি বলতে, যে গল্পের ভূমিকা তুই লিখেছিস, সেই গল্পের উপসংহার আমি না লিখলে গল্পটা দুজনের হবে কীভাবে !
এ কথার বলার পরই কলটা কেটে দিল অর্ক।
কথাটা বলার পরই অর্কর মনে পড়ল, ঠিক এই কথাটাই একদিন সৌম্য তাকে বলেছিল। অনেকদিন আগের কথা, অর্ক তখন কলেজের হোস্টেলে থাকত। থার্ড ইয়ার অর্থাৎ নিঃসন্দেহে অন্য দুটো ইয়ারের দাদা। সৌম্য তখন সবেমাত্র ফাস্ট ইয়ার। তাই অল্প একটু ragging সহ্য করতে হত ছোটোদের। একদিন হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই সৌম্যকে ragging করল অর্ক আর তার দুজন বন্ধু। ragging টা যে কি ছিল, সেটা অর্কের মনে আছে যদিও, কিন্তু সে তারপর থেকে কখনও মনে করতে চাইতো না। যাই হোক, সেদিন সৌম্য তখন খুব রেগে গিয়ে অর্ককে এই কথাটাই বলেছিল, "যে গল্পের ভূমিকা তুমি লিখেছো, সেই গল্পের উপসংহার আমি না লিখলে গল্পটা দুজনের হবে কীভাবে !"
অর্ক সেদিন রাতে বালিশে মাথা রেখে যখন ভাবছিল তখন অর্ক বুঝতে পেরেছিল,সেদিন সৌম্যর সাথে যেটা করা হয়েছিল, সেটা কখনও কারও সাথে করা উচিত নয়। অর্ক একবার ভেবেও ছিল সৌম্যের কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু থার্ড ইয়ার মনে পড়তেই অহংকার সব সুচিন্তাগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল।
এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় দু চোখ জুড়ে ঘুম জড়িয়ে এলো, ঠিক সেসময় অর্ক অনুভব করলো, যেন জানালার ধারে বসেও হাওয়া তার শরীরে লাগছে না। যেন মনে হচ্ছে কেউ জানালাকে ঢেকে বসে আছে। অর্কর গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো, জলের বোতল নিতে গিয়ে দেখলো, জলের বোতল টা সে খুঁজে পাচ্ছে না। অর্ক বুঝতে পারলো ,তার সাথে কিছু একটা ঘটছে।শেষমেশ
প্রচন্ড গরমে হাসফাস করতে করতে অর্ক কামরার গেটের সামনে দাঁড়ালো। আবার বাইরের ফুরফুরে হাওয়া তার শরীর জুড়ে একটা শান্তির অনুভূতি ছড়িয়ে দিল। কিন্তু কিছু সময় যেতে না যেতেই অর্ক আবার প্রচন্ড ঘুমে ঢলে পড়লো। একটা চিৎকার যেটা সবাই শুনতে পেল কিন্তু একটা হালকা ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসি যেটা কেউ শুনতে পায়নি বা শোনার চেষ্টা করেনি।
পরের দিন, রেল লাইনে অর্ক হালদার নামক ব্যক্তির রেলে কাটার খবর চারিদিকে পড়িয়ে পড়লো। প্রশাসনের মাথা ব্যথা, এটা খুন নাকি আত্মহত্যা !
সৌম্য কিন্তু জানে এটা খুন নাকি আত্মহত্যা। ঠিক একইরকমভাবে একদিন সৌম্য রেললাইনে লাফ দিয়েছিল, শুধুমাত্র ragging এর হাত থেকে বাঁচতে, সেদিনও একই প্রশ্ন উঠেছিল, এটা খুন নাকি আত্মহত্যা !
সেদিন যদি হোস্টেলে অর্ক সব অহংকার ভুলে একবার ক্ষমা চেয়ে নিত সৌম্যের থেকে তাহলে হয়ত এভাবে অর্ককে গল্পের উপসংহার হতে হত না।
সমাপ্ত
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৯/০৭/২০২৩খুবই তাৎপর্যপূর্ণ লেখা
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৯/০৭/২০২৩বেশ সুন্দর লেখা