www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তরঙ্গের তাৎপর্য - তৃতীয় পরিচ্ছদ

তৃতীয় পরিচ্ছদ (অন্তিম)

আবার দু'দিন পর,
আসুন, আসুন অফিসার। সমীরণ আপনাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল যে আমি ফিরেছি। আমিও আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শেষমেষ তাহলে চিনে আসতে পারলেন ! যাই হোক, আপনার মন্তব্য কি বলে ফেলুন, আমার আবার অনেক কাজ !
অফিসার বললেন, " প্রফেসর কিটেল আর প্রফেসর আলবার্টের মধ্যে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল, সে বিষয়ে কিছু জানেন ?
-- হুম। জানি তো ! তার আগে বলুন, কি খাবেন চা নাকি কপি !
-- প্রশ্নের উত্তর দিন প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায়।
-- বলছি, বলছি ..... আপনাকে বলব বলেই তো সমীরণকে ফোন করতে বলেছিলাম আপনার কাছে।
একটু থেমে স্যার বলতে শুরু করলেন, "ঐ যে এখান থেকে বছর তিন আগে যে অভিনব আবিষ্কার করে ওরা দুজন নোবেল পেয়েছিল। সেটা আসলে ওদের চুরির ফসল ছিল । সেটা পরে আলবার্ট জানতে পারে, তখন ওদের মধ্যে বষসা শুরু হয়। আসলে একটা কাজ দুজন মিলে করেছিল তো, তাই আর কি !
-- আপনি এগুলো জানলেন কি করে ?
আগেরদিন প্রফেসর কিটেলকে বই দেওয়ার জন্য ওর ডিস্কের ওখানে গিয়ে বসি। তারপর ও আমার জন্য কফি আনতে যায়। ঠিক তখন ওর ডাইরি থেকে একথা জানতে পারি।
আর কোনো প্রশ্ন ?
-- প্রশ্ন, না প্রশ্ন এই মুহুর্তে আর নেই তবে কিছু তথ্য আপনাকে দেওয়ার আছে। প্রফেসর আলবার্ট যখন মারা যান, তখন উনার সামনে যে বইটির শেষপাতা খোলা ছিল, প্রফেসর কিটেলেরও মৃত্যুর সময় সেই বইটির শেষপাতা খোলা ছিল। আর দুটো ঘটনার ক্ষেত্রেই মৃতদেহের পাশে একটা সাদা কাগজ পড়ে ছিল। সুতরাং আমার মনে হয় .......
-- আপনার মনে হয় দুটো খুনের সাথেই আমি জড়িত। আচ্ছা বেশ, তারপর .....,?
-- হ্যাঁ। তাছাড়া , আমিও পরশু ও গতকাল সারারাত জেগে বই পড়েছি।
-- হুম। ঐ জন্যই চোখের নীচে ডার্ক সারকেল পড়ে গিয়েছে। যাই হোক, কি বুঝলেন বইটি পড়ে ?
-- বইটি পড়ে তেমন কিছুই বুঝতে পারিনি তবে এটুকু অনুভব করলাম যেষ ওটা ঠিক বই নয়, একটা নেশার বস্তু। বুঝতে না পারলেও পড়তে বেশ ভালোই লাগছিল।
-- বুঝেছি। এখন আপনার প্রশ্ন, খুনটা আমি করেছি কিনা। চলো, তোমাকে একটা জিনিস দেখাই।
আমার দিকে ফিরে একটা টেবিলকে নির্দেশ করে স্যার বললেন, " সমীরণ, ঐ ড্রয়ারটা খুলে দেখো একটা কাগজ আছে ওটা অফিসারকে দাও।"
আমি কাগজটা অফিসারকে দিলাম। তারপর অফিসার ওটা আমার হাতে দিলেন। দেখলাম, এটাতে পুরো ব্যাখ্যা করা আছে। কেন বইটি পড়তে এত ইন্টারেস্ট, কেন মৃত্যু হল ঐ দুজনের, এটা পড়লে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারপর ধীরে ধীরে লেখাগুলো কাগজ থেকে মুছে গেল এবং পৃষ্ঠাটি সাদা হয়ে গেল।
ওটাতে যা লেখা ছিল, সেটা অনেকটা এরকম, ঐ বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় এমন একটা তেজস্ক্রিয় পদার্থ রাখা আছে যা খালি চোখে দেখা যাবে না। তবে সেটা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। বইটি যখন টেবিল ল্যাম্ফের নীচে রাখা হয়, তখন সেই অল্প তাপে পদার্থটি গরম হতে শুরু করে এবং ওটার থেকে একটা রশ্মি নির্গত হয়। যা সরাসরি চোখে প্রভাব ফেলে , ধীরে ধীরে চোখে একটা নেশা কাজ করে, এছাড়াও এটা নিশ্বাসের সাথেও মানুষের ফুসফুসে আঘাত করে। এটা দীর্ঘদিন হতে হতে একদিন হঠাৎ বুকে যন্ত্রণা শুরু হয় এবং হার্ট ব্লক হয়ে মৃত্যু হয়।
আমার চোখ কপালে উঠেছে, স্যারের বুদ্ধি দেখে কিন্তু অফিসার ভাবছে অন্য কথা। উনিও পুরো বইটি পড়েছেন। তার মানে .....
স্যার বললেন, " সমীরণ, অফিসারকে ড্রয়ার থেকে একটা ঔষধ দাও। একটাই আছে। আর কিছুক্ষণ থাকলে উনি মারা যাবেন।"
আমি দিচ্ছি না দেখে স্যার আমাকে ধমক দিলেন, বললেন, উনি আমাদের অতিথি। আমরা কখনও উনার ক্ষতি করতে পারি না। উনি কোনো অন্যায় করেননি।"
এতক্ষণে অফিসার ঢলে পড়লেন, সোফার উপরে। আমি তাড়াতাড়ি ঔষধটা খাওয়ায়ে দিলাম। স্যার আবার বলতে শুরু করলেন, " তুমি কিন্তু দেশের ভবিষ্যত। আমি তো আজ চলে যাব, তবে কখনও মনের ভুলেও ঐ বই পড়ার চেষ্টা করবে না। ওটা বই নয়, মৃত্যুর মায়াজাল। হ্যাঁ, ওটাতে আমার আবিষ্কার ছিল। তবে আমার আবিষ্কার আর তার তথ্য সবই এখন থেকে মূল্যহীন। আর প্রফেসর কিটেল আর প্রফেসর আলবার্টের কাছে যে দুটো বই আছে তা আর দু'একদিনের মধ্যেই সব লেখা মুছে যাবে। "
অফিসার ধীরে ধীরে উঠে বললেন, " প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায়, ইউ আর আন্ডার অ্যারেষ্ট ।" স্যার হাসতে হাসতে বললেন, " শুনবেন না, কেন খুন করলাম ওদের ?"
অফিসার বললেন, " এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি, আপনার আবিষ্কারের সব তথ্য চুরি করে ওরা নোবেল পেয়েছিল, কিন্তু আমার প্রশ্ন আপনি জানলেন কীভাবে যে ওরাই চুরি করেছিল ?
স্যার হাসলেন, তারপর বললেন, " ওরা আমার যে থিসিস চুরি করেছিল,ওটাতে একটা সেন্সর লাগানো ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম,ওরা চুরি করেছিল। চাইলেই ওদেরকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু এটা করলে যে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যেত। এই সমাজে আমার উপযুক্ত প্রশংসাটা পেতাম না।" বলতে বলতে স্যার কেঁদে ফেললেন।
অফিসার সোজা হতে হতে বললেন, " তাই বলে মৃত্যু ! প্রফেসর আলবার্ট তো এসব কিছূই জানতেন না, তাহলে উনাকে মারলেন কেন ? এটা কি সঠিক বিচার হল প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায় !!
একটু একটু মৃদ্যু হাসলেন। তারপর বললেন," ওপারে গিয়ে আবার দেখা হবে, আবার নতুন করে বন্ধুত্ব হবে আমাদের।"
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, " অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহ্য করে সবাই সমান দোষী, তাই তো সমীরণ !!"
অফিসার স্যারের হাতে হাতকড়া পড়ালেন, স্যার শুধু বললেন, " আমাকে আটকে রাখতে পারবে তো, হয়ত পারবে কিন্তু বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না।"

চব্বিশ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই অফিসার অ্যাঞ্জেলের টেলিগ্রাম, প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায় হার্ট অ্যাটার্কে মারা গেছেন। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যাইনি। স্যারকে হারানোর সাথে সাথে আমার শুধু একটা আফসোস থেকে গেল, বইতে যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ লাগিয়ে রাখা হয়েছিল, সেটার নামটা জানা হল না।

সমাপ্ত
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৪৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০১/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Extraordinary
  • ফয়জুল মহী ১০/০১/২০২৩
    অপূর্ব
  • সুন্দর
 
Quantcast