তরঙ্গের তাৎপর্য - প্রথম পরিচ্ছদ
প্রথম পরিচ্ছদ
-- হ্যালো প্রফেসর আলবার্ট। কনগ্রাজুলেশন .......
-- থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায়।
-- আজ আপনার এক্সজিবিশন দেখলাম। ওয়েবের উপরে দারুন কাজ করেছেন। তরঙ্গ দিয়েও যে এত কিছু করা যাই, তা মানুষের কল্পনার বাইরে।
-- থ্যাঙ্ক ইউ, মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড।
লম্বা, ফর্সা, মুখে এক মুখ দাড়ি, সাদা-কালো চুল, কালো কোট, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। হাতে একটা প্রায় তিরিশ বছরের পুরানো দম দেওয়া ঘড়ি। এটাই প্রফেসর আলবার্ট কাম্বলে। লোকটি বেশ ভাঙা ভাঙা বাংলাও বলতে পারেন দেখছি।
আজ প্রফেসর আলবার্টের ওয়েবের উপরে একটা গুরুত্বপূর্ণ এক্সজিবিশন ছিল। ওয়েব দিয়েও যে সময়ের ট্রাভেল করা যায় তা আজ প্রফেসর আলবার্টের এই অবিষ্কার না দেখলে হয়ত বিশ্বাস হত না। হ্যাঁ, আগেই অবিষ্কার হয়েছে কোনো পুরানো পাথর বা গাছের বা যেকোনো পুরানো জিনিসের বয়স নির্ণয়, কিন্তু এটা তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েবের সাহায্যে এখন সেই সময়ে ফিরে যাওয়াও সম্ভব। যন্ত্রটা দেখতে অনেকটা চশমার মতো। চোখে পড়ে একটা বোতাম চাপলেই সব চেঞ্জ। শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতেও যাওয়া সম্ভব। আমিও ওটা চোখে পড়েছিলাম, দেখলাম আমার আর সৌমিতা'র সম্পর্কের শেষ পরিণতি। যাই হোক, আমার মতে এটা ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রচুর উপকারে আসবে আসামীকে পাকড়াও করার জন্য।
আমার দিকে নির্দেশ করে প্রফেসর আলবার্ট বললেন, " এটা কে প্রফেসর ?"
-- আমার ছাত্র ড. সমীরণ গাঙ্গুলী।
-- ওহ আচ্ছা। বেশ ....
বলে প্রফেসর আলবার্ট আমার দিকে ফিরে মৃদ্যু হাসলেন। প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায়, প্রফেসর আলবার্টের দিকে একটা বই বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, " আমার লেখা বই, 'এ ব্রিফ হিস্টি অব ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েব'। আমার সম্প্রতী কিছু গবেষণা এই বইটিতে বর্ণনা করা আছে।"
প্রফেসর আলবার্ট ভ্রু কুঁচকে বললেন, " আমি মানে ....!"
প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায় একটু মৃদ্যু হেসে বললেন, " বন্ধুকে ছাড়া আর কাকে বিশ্বাস করতে পারি বলো। "
তারপর কিছুক্ষণ থেমে আবার বললেন, চোখে মুখে যেন একটা অবসন্নতা মাখা, " আমি হয়ত আর বেশি দিন বাঁচবো না, প্রফেসর। আমার গবেষণাগুলোকে একটু সদগতি করো। কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই। তোমাকে বিশ্বাস করে বইটি দিলাম।"
একথা শুনে আমিও একটু অবাক হলাম। স্যারের মুখে এমন কথা আগে শুনিনি। স্যারের চোখের কোণে জলের ফোঁটা চিকচিক করতে দেখলাম।
এরপর আরও কিছুক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শেষে আমরা ফিরলাম।
ঠিক দুদিন পর,
স্যারের সাথে আমি আরও একটা এক্সজিবিশনে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকমাস যাবৎ স্যার সর্বকাজে আমাকে সঙ্গে রাখেন। বেশিরভাগ সময়েই ইউনিভারসিটির ল্যাবরেটরিতেই থাকেন। মাঝে মাঝে ক্লাস নিতে যান, ফিরে এসে আবার ল্যাবরেটরিতে। কয়েকদিন আগে একটা ইনভাইট লেটার এসেছিল, প্রফেসর এন কিটেলের থেকে। তাতে স্যারের একা ইনভাইট ছিল, প্রফেসর কিটেলের ইউনিভারসিটিতে কি সব বিষয়ের উপরে এক্সজিবিশন ছিল। কিন্তু সেখানে স্যার আমাকেও নিয়ে গেলেন। প্রথম যেতে না বললেও, যখন স্যার বললেন, " বয়স বাড়ছে তো, এখন আর কোথাও একা যাওয়ার সাহস হয় না রে সমীরণ, তাই তোকে সঙ্গে নিয়ে যাই।" সত্যি, স্যারের বয়স এই ৫২ বছর। কয়েকদিন আগেই স্যারের জন্মদিন পালন করলাম। একথা শুনে আর না করতে পারলাম না।
আমরা পৌঁচ্ছানো মাত্র প্রফেসর কিটেল অভিনন্দন জানালেন। দেখলাম প্রফেসর কিটেলের সাথে স্যার আমাকে ছাত্র নয় বরং উনার অ্যাসিটেন্ট বললেন। বেশ ভালো লাগলো এটা ভেবে যে স্যার আমাকে কতটা ভালোবাসেন।
স্যার, প্রফেসর কিটেলের কানে কানে কি সব বিড়বিড় করে বললেন, তারপর স্যার আর প্রফেসর কিটেল পাশের রুমের দিকে চলে গেলেন। স্যার আমাকে বললেন, " সমীরণ, আমার ব্যাগটা দাও। আর তুমি দেখতে থাকো কে কি করেছে, এক্সজিবিশনে। আমরা একটু পরে আসছি।" রুমে ঢোকার সময় স্যার, নিজের ব্যাগটা আমার কাছে একটু ধরতে দিয়েছিলেন।
অনেকে অনেককিছু করেছে, তবে বেশিরভাগটা আমার জানা। আসলে ছাত্রদের এক্সজিবিশন তো, সেজন্য। কিছু দূরে দেখি একটা জায়গায় একটু ভীড়, ভীড় ঠেলে এগিয়ে দেখি, একটা ছেলে সবার থেকে আলাদা কিছু করেছে। একটা গোল বলের মতো একটা যন্ত্র, যার দিকে এক মিনিট তাকালেই মানুষ তার সেই মুহুর্তের ভাবনা বলে দেবে। ঠিক অনেকটা হিপনোটাইজড এর মতোই, তবে হিপনোটাইজড নয়। একটু আলাদা এবং সময় সাশ্রয়ী। আমি এটার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ছেলেটি যা বললো তা অনেকটা এরকম, ঐ বলের থেকে একটা আলো নির্গত হয়ে মানুষের চোখে এসে পড়ছে এবং সেটা সরাসরি মানুষের ব্রেনে আঘাত করছে, তারপর মানুষ তার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মানুষকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে, আসলে এটাই ভ্রম। তারপর সব কথা বলে দিচ্ছে, যেন সে মনে করছে, তার ঠিক সামনেই সেই ব্যক্তিটি। যাক, ক্রাইম ব্রাঞ্চের আরও একটু উপকার হলো। তবে যদি মানুষ সেই সময়ের সাথে সাথে অতীতের কথাও বলতে পারতো, আরও সুবিধা হত।
কিছুক্ষণ পর স্যার ফিরলেন। কাঁধের ব্যাগটা আমার হাতে দিলেন, দেখলাম ব্যাগটা অনেকটা হালকা, একটু আগে ব্যাগটা যখন আমার হাতে ছিল, তখন বেশ ভারী ছিল। যাই হোক, হয়ত কিছু নিয়ে এসেছিল প্রফেসর কিটেলকে দেবেন বলে।
স্যারের সাথে আরও কিছুক্ষণ এক্সজিবিশন পরিভ্রমণ করে অবশেষে প্রফেসর কিটেলের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ফিরে আসলাম।
চলছে ........
-- হ্যালো প্রফেসর আলবার্ট। কনগ্রাজুলেশন .......
-- থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায়।
-- আজ আপনার এক্সজিবিশন দেখলাম। ওয়েবের উপরে দারুন কাজ করেছেন। তরঙ্গ দিয়েও যে এত কিছু করা যাই, তা মানুষের কল্পনার বাইরে।
-- থ্যাঙ্ক ইউ, মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড।
লম্বা, ফর্সা, মুখে এক মুখ দাড়ি, সাদা-কালো চুল, কালো কোট, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। হাতে একটা প্রায় তিরিশ বছরের পুরানো দম দেওয়া ঘড়ি। এটাই প্রফেসর আলবার্ট কাম্বলে। লোকটি বেশ ভাঙা ভাঙা বাংলাও বলতে পারেন দেখছি।
আজ প্রফেসর আলবার্টের ওয়েবের উপরে একটা গুরুত্বপূর্ণ এক্সজিবিশন ছিল। ওয়েব দিয়েও যে সময়ের ট্রাভেল করা যায় তা আজ প্রফেসর আলবার্টের এই অবিষ্কার না দেখলে হয়ত বিশ্বাস হত না। হ্যাঁ, আগেই অবিষ্কার হয়েছে কোনো পুরানো পাথর বা গাছের বা যেকোনো পুরানো জিনিসের বয়স নির্ণয়, কিন্তু এটা তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েবের সাহায্যে এখন সেই সময়ে ফিরে যাওয়াও সম্ভব। যন্ত্রটা দেখতে অনেকটা চশমার মতো। চোখে পড়ে একটা বোতাম চাপলেই সব চেঞ্জ। শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতেও যাওয়া সম্ভব। আমিও ওটা চোখে পড়েছিলাম, দেখলাম আমার আর সৌমিতা'র সম্পর্কের শেষ পরিণতি। যাই হোক, আমার মতে এটা ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রচুর উপকারে আসবে আসামীকে পাকড়াও করার জন্য।
আমার দিকে নির্দেশ করে প্রফেসর আলবার্ট বললেন, " এটা কে প্রফেসর ?"
-- আমার ছাত্র ড. সমীরণ গাঙ্গুলী।
-- ওহ আচ্ছা। বেশ ....
বলে প্রফেসর আলবার্ট আমার দিকে ফিরে মৃদ্যু হাসলেন। প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায়, প্রফেসর আলবার্টের দিকে একটা বই বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, " আমার লেখা বই, 'এ ব্রিফ হিস্টি অব ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েব'। আমার সম্প্রতী কিছু গবেষণা এই বইটিতে বর্ণনা করা আছে।"
প্রফেসর আলবার্ট ভ্রু কুঁচকে বললেন, " আমি মানে ....!"
প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায় একটু মৃদ্যু হেসে বললেন, " বন্ধুকে ছাড়া আর কাকে বিশ্বাস করতে পারি বলো। "
তারপর কিছুক্ষণ থেমে আবার বললেন, চোখে মুখে যেন একটা অবসন্নতা মাখা, " আমি হয়ত আর বেশি দিন বাঁচবো না, প্রফেসর। আমার গবেষণাগুলোকে একটু সদগতি করো। কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই। তোমাকে বিশ্বাস করে বইটি দিলাম।"
একথা শুনে আমিও একটু অবাক হলাম। স্যারের মুখে এমন কথা আগে শুনিনি। স্যারের চোখের কোণে জলের ফোঁটা চিকচিক করতে দেখলাম।
এরপর আরও কিছুক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শেষে আমরা ফিরলাম।
ঠিক দুদিন পর,
স্যারের সাথে আমি আরও একটা এক্সজিবিশনে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকমাস যাবৎ স্যার সর্বকাজে আমাকে সঙ্গে রাখেন। বেশিরভাগ সময়েই ইউনিভারসিটির ল্যাবরেটরিতেই থাকেন। মাঝে মাঝে ক্লাস নিতে যান, ফিরে এসে আবার ল্যাবরেটরিতে। কয়েকদিন আগে একটা ইনভাইট লেটার এসেছিল, প্রফেসর এন কিটেলের থেকে। তাতে স্যারের একা ইনভাইট ছিল, প্রফেসর কিটেলের ইউনিভারসিটিতে কি সব বিষয়ের উপরে এক্সজিবিশন ছিল। কিন্তু সেখানে স্যার আমাকেও নিয়ে গেলেন। প্রথম যেতে না বললেও, যখন স্যার বললেন, " বয়স বাড়ছে তো, এখন আর কোথাও একা যাওয়ার সাহস হয় না রে সমীরণ, তাই তোকে সঙ্গে নিয়ে যাই।" সত্যি, স্যারের বয়স এই ৫২ বছর। কয়েকদিন আগেই স্যারের জন্মদিন পালন করলাম। একথা শুনে আর না করতে পারলাম না।
আমরা পৌঁচ্ছানো মাত্র প্রফেসর কিটেল অভিনন্দন জানালেন। দেখলাম প্রফেসর কিটেলের সাথে স্যার আমাকে ছাত্র নয় বরং উনার অ্যাসিটেন্ট বললেন। বেশ ভালো লাগলো এটা ভেবে যে স্যার আমাকে কতটা ভালোবাসেন।
স্যার, প্রফেসর কিটেলের কানে কানে কি সব বিড়বিড় করে বললেন, তারপর স্যার আর প্রফেসর কিটেল পাশের রুমের দিকে চলে গেলেন। স্যার আমাকে বললেন, " সমীরণ, আমার ব্যাগটা দাও। আর তুমি দেখতে থাকো কে কি করেছে, এক্সজিবিশনে। আমরা একটু পরে আসছি।" রুমে ঢোকার সময় স্যার, নিজের ব্যাগটা আমার কাছে একটু ধরতে দিয়েছিলেন।
অনেকে অনেককিছু করেছে, তবে বেশিরভাগটা আমার জানা। আসলে ছাত্রদের এক্সজিবিশন তো, সেজন্য। কিছু দূরে দেখি একটা জায়গায় একটু ভীড়, ভীড় ঠেলে এগিয়ে দেখি, একটা ছেলে সবার থেকে আলাদা কিছু করেছে। একটা গোল বলের মতো একটা যন্ত্র, যার দিকে এক মিনিট তাকালেই মানুষ তার সেই মুহুর্তের ভাবনা বলে দেবে। ঠিক অনেকটা হিপনোটাইজড এর মতোই, তবে হিপনোটাইজড নয়। একটু আলাদা এবং সময় সাশ্রয়ী। আমি এটার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ছেলেটি যা বললো তা অনেকটা এরকম, ঐ বলের থেকে একটা আলো নির্গত হয়ে মানুষের চোখে এসে পড়ছে এবং সেটা সরাসরি মানুষের ব্রেনে আঘাত করছে, তারপর মানুষ তার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মানুষকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে, আসলে এটাই ভ্রম। তারপর সব কথা বলে দিচ্ছে, যেন সে মনে করছে, তার ঠিক সামনেই সেই ব্যক্তিটি। যাক, ক্রাইম ব্রাঞ্চের আরও একটু উপকার হলো। তবে যদি মানুষ সেই সময়ের সাথে সাথে অতীতের কথাও বলতে পারতো, আরও সুবিধা হত।
কিছুক্ষণ পর স্যার ফিরলেন। কাঁধের ব্যাগটা আমার হাতে দিলেন, দেখলাম ব্যাগটা অনেকটা হালকা, একটু আগে ব্যাগটা যখন আমার হাতে ছিল, তখন বেশ ভারী ছিল। যাই হোক, হয়ত কিছু নিয়ে এসেছিল প্রফেসর কিটেলকে দেবেন বলে।
স্যারের সাথে আরও কিছুক্ষণ এক্সজিবিশন পরিভ্রমণ করে অবশেষে প্রফেসর কিটেলের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ফিরে আসলাম।
চলছে ........
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রাফিয়া নূর পূর্বিতা ২৮/০১/২০২৩Woww