প্রেম নিবেদন
#প্রেম_নিবেদন
শুভজিৎ বিশ্বাস
আচমকা ফোনটিতে টুং টুং করে আওয়াজ হতেই অনিন্দ্য ফাইলটি রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে আনলক করতেই নজর গেল তৃষার sms এর দিকে। বেশ অনেকদিন পর তৃষা এস এম এস করেছে। "এখন নিয়তিপুরে আছিস ?" অনিন্দ্য ঠোঁটের কোনে হালকা হাসির রেখা দেখা দিল। এক মুহুর্ত সময় অপচয় না করে অনিন্দ্য তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দিল, " আপতত তো নেই। সবেমাত্র অফিস থেকে বেরিয়েছি।" অনিন্দ্য জানত কেন তৃষা তাকে এমনটা জিজ্ঞাসা করেছিল।
আজ জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি থেকে বাড়ি ফেরার দিন। সেজন্য নিয়তিপুরে একটা বিশাল জায়গা জুড়ে উল্টো রথের মেলা বসে। সকাল থেকেই নানারকম ফলের গাছ থেকে ফুলের গাছ বিক্রি হয়। সন্ধ্যে হতে না হতেই সেখানে নানা রকম খাবারের দোকানের পাশাপাশি, বিভিন্ন স্টল সহ আরও নানারকম দোকানপাঠ বসে।
অনিন্দ্য এখন ট্রেনে বাইরের আবহাওয়া উপভোগ করছে কিছু স্মৃতি চারণার সাথে। তখন সবেমাত্র কলেজের সেকেন্ড ইয়ার। হঠাৎ কোনো একটা বিশেষ অনুষ্ঠানে দেখা তৃষার সাথে, সামান্য পরিচয়ও হয়। অনিন্দ্য জানতে পারে তৃষা তাদেরই কলেজের কিন্তু অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। তখন অনিন্দ্য যোগাযোগ করার ইচ্ছাটা অনেকখানি বেড়ে যায় কিন্তু বিশেষ কোনো কথা গড়ে ওঠেনি যা তাদের বন্ধুত্বকে একটা দীর্ঘস্থায়ী স্বীকৃতী দেওয়া যায়। এরপর বেশ বহুদিন তৃষার সাথে যোগাযোগ হয়নি অনিন্দ্যর। বলা যেতে পারে একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল তৃষাকে। কিন্তু একদিন হঠাৎ অনিন্দ্যের কোনো একটা ক্লাসমেটের স্টাটাসে দেখতে পায় তৃষাকে। ঠিক তখনই অনিন্দ্য তার কাছ থেকে তৃষার ফোন নম্বরটা চেয়ে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে যোগাযোগ মজবুত হয়, বলতে দ্বিধা নেই একটা সুন্দর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কলেজে তাদের বহুবার দেখা, কত কত গল্প, বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখা, আরও অনেক কিছু......
অনিন্দ্য ও তৃষার বন্ধুত্ব সরু সুতোর মতো নয়, একটা শক্ত দড়ির মতো হয়ে গেছে যা হয়ত কখনও ছিঁড়বে না। অনিন্দ্য লোকাল ট্রেনের ভীড়ের মাঝে ছোটো জানালা দিয়ে দেখতে পেল, এক পশলা বৃষ্টির পর সমস্ত সবুজের উপর কেউ যেন অন্ধকার কে রং তুলি দিয়ে টেনে দিচ্ছে এই সুন্দর প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তুলতে ...... ।
অনিন্দ্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে ব্যাগটা রেখে তৃষাকে ফোন করলো,
"হ্যালো, তুই কোথায় এখন ?" তৃষা বললো, " এবার বেরোব, পিসির সাথে ..... । আজ বিকেলেই পিসির বাড়ি এসেছি। " অনিন্দ্য জানত তৃষার পিসির বাড়ি নিয়তিপুরেই। অনিন্দ্য দের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে নয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিন্দ্য মেলায় পৌচ্ছালো। তার দুটো চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই চেনা মুখটাকে যেটাকে সে বারবার দেখতে চায়। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তৃষাকে দেখতে পেল অনিন্দ্য। ভীড়ে ঠেলে চোখের পলকে পৌঁছে গেল তৃষার কাছে ...... । সামান্য হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, " কেমন আছিস ? অনেকদিন পর দেখছি তোকে..." তৃষা ঠোঁটের কোনের মৃদু হাসিকে আহ্বান করে বলল, " চলছে কোনো রকমে। তুই কেমন আছিস ?" অনিন্দ্য হাসিটিকে বিস্তৃত করে বলল, " আমারও চলছে কোনো রকমে। " পাশেই তৃষার পিসি, পিসির মেয়ে সহ আরও দুজন নিজেদের মধ্যে গল্পে মজে আছে। অনিন্দ্য এতটাই আনন্দিত হয়েছে যে ও বুঝতেই পারছে না কীভাবে তৃষার সাথে একটু বেশি সময় কাটানো যায়। আমতা আমতা করতে করতে অবশেষে একটা দোকানের দিকে নির্দেশ করে বলেই বসল, " চল, ঐ দোকানে গরম গরম এগরোল আছে। খাওয়া যাক। " অনিন্দ্য তৃষার একটা বৈশিষ্ট্য জানত না, আজ জানলো, ও বড্ড ফ্রি মাইন্ডেড। তৃষা সংকোচ না করেই পিসিকে বললো, " পিসি এই সেই অনিন্দ্য, আমার বন্ধু অনি। আচ্ছা, আমি একটু ঐ দোকানটায় যাচ্ছি। তোমরা এখানেই থেকো কিন্তু... ।" হ্যাঁ, তৃষা অনিন্দ্য কে অনি বলেই ডাকত।
দুটো এগরোল দিতে বলে, অনিন্দ্য তৃষাকে বললো, " তারপর, বল কি করছিস? " তৃষা ঠোঁট উলটিয়ে বলল, " তেমন কিছু নয়। একটা ছোটোখাটো চাকরি করছি। শুনলাম তুই নাকি .....ইত্যাদি,ইত্যাদি।"
অনিন্দ্য যেন অনুভব করছে, তার অফিসের অত্যাধিক চাপের ফলে ও অন্যান্য কারণে তার মনটা বেশ কয়েকদিন খারাপ ছিল। এই তো কয়েকদিন আগে অনিন্দ্যের মা অনিন্দ্য কি একটা যেন জানতে চাইলে মাকে খুব বকেছিল ও। বুঝতে পেরেছিল, মায়ের সাথে এমনটা করা উচিত হয় নি। কিন্তু আজ যেন সেসব কিছুই নেই। মনটা বড্ড ফুরফুরে লাগছে আজ অনিন্দ্যের ! আচ্ছা, তৃষার সাথে দেখা করার পর মনটা এত উৎফুল্ল হল কেন অনিন্দ্যের ! কয়েকদিন আগে অর্ঘ্য তো অনিন্দ্যের সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, কিন্তু অনিন্দ্য সেটা এড়িয়ে গিয়েছিল, খুব সুন্দর করে। তাহলে আজ কেন এত আগ্রহ ! ভীড়ের মধ্যেই তৃষাকে খোঁজার যে অনুভূতি সেটা সে খুব সুন্দর ভাবেই উপভোগ করলো। কিন্তু এরকমটা কেন হল ! সে কেন তৃষার সাথে বেশি সময় কাটাতে চায়ছে ! দিন কয়েক আগেই তো ট্রেনে জেনারেল কম্পার্টমেন্টে পায়েলের সাথে দেখা হয়েছিল, কিন্তু পায়েল স্টেশনে নামার সাথে সাথেই অনিন্দ্য হাঁফ ছেড়েছিল কেন ! তাহলে কি সে তৃষাকে ভালোবেসে ফেলেছে। অনিন্দ্য বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে ঠিক কি করা উচিত।
হঠাৎ তৃষার ডাকে অনির ভাবনার পৃষ্ঠা বন্ধ করতে হল। টাকাটা মিটিয়ে অনিন্দ্য তৃষার সাথে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে মেলা ঘুরতে লাগলো, তৃষা নানারকম গল্প করতে লাগলো। এর আগেই তৃষার সাথে ও পাশাপাশি হেঁটেছে কিন্তু আজ যেন একটা অন্যরকম অনুভূতির সঞ্চার হচ্ছে ওর নিভৃত মনে। যেন ও ডুবে যাচ্ছে এক অগোছালো ভাবুক রাজ্যে ......। অনিন্দ্যর মনে হচ্ছে, এখনই তৃষাকে বলে দেবে, ও ওকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু কীভাবে বলবে ! এমনকি প্রোপজ কেমন করে করতে তাও জানা নেই অনিন্দ্যের। এমন সময় তৃষা একটা ফুলগাছ কিনবে বলে গাছের সামনে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে অনিন্দ্যের নজরে এল একটা গোলাপ গাছ। ওটা নিল এবং এক মিনিটও দেরী না করেই বললো, " তৃষা , এটা তোর জন্য ..... । " তৃষা গাছটি নিতে নিতে বললো, " এটা দেওয়ার অর্থ কি ! যাই হোক, Thank you.." অনিন্দ্য আমতা আমতা করছে দেখে তৃষা বললো, " তোর একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। " অনিন্দ্য একটু মৃদু হেসে বললো, " বাহ। খুশি হলাম। ভালো মন্দ খাওয়া যাবে তাহলে .....। "
অনিন্দ্য এই প্রথম অনুভব করলো একটা চাপা কষ্ট যা কাউকে ভাগ দেওয়া যায় না। যেটা শুধুমাত্র নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে খায়, প্রতিটি একাকিত্বের সময়।
যাওয়ার সময় শুধু একটা কথায় বলেছিল অনিন্দ্য, " দেখিস, গাছটিতে মনে করে জল দিস, প্রতিটি ডালে গোলাপ হবে।"
আর বাকিটা অনিন্দ্য মনে মনে বললো, শুধু ভালোবাসা জন্মাবে না !
ফেসবুক পেজ - শুভজিৎ -এর কলমে
#ছোটোগল্প , #প্রেম
শুভজিৎ বিশ্বাস
আচমকা ফোনটিতে টুং টুং করে আওয়াজ হতেই অনিন্দ্য ফাইলটি রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে আনলক করতেই নজর গেল তৃষার sms এর দিকে। বেশ অনেকদিন পর তৃষা এস এম এস করেছে। "এখন নিয়তিপুরে আছিস ?" অনিন্দ্য ঠোঁটের কোনে হালকা হাসির রেখা দেখা দিল। এক মুহুর্ত সময় অপচয় না করে অনিন্দ্য তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দিল, " আপতত তো নেই। সবেমাত্র অফিস থেকে বেরিয়েছি।" অনিন্দ্য জানত কেন তৃষা তাকে এমনটা জিজ্ঞাসা করেছিল।
আজ জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি থেকে বাড়ি ফেরার দিন। সেজন্য নিয়তিপুরে একটা বিশাল জায়গা জুড়ে উল্টো রথের মেলা বসে। সকাল থেকেই নানারকম ফলের গাছ থেকে ফুলের গাছ বিক্রি হয়। সন্ধ্যে হতে না হতেই সেখানে নানা রকম খাবারের দোকানের পাশাপাশি, বিভিন্ন স্টল সহ আরও নানারকম দোকানপাঠ বসে।
অনিন্দ্য এখন ট্রেনে বাইরের আবহাওয়া উপভোগ করছে কিছু স্মৃতি চারণার সাথে। তখন সবেমাত্র কলেজের সেকেন্ড ইয়ার। হঠাৎ কোনো একটা বিশেষ অনুষ্ঠানে দেখা তৃষার সাথে, সামান্য পরিচয়ও হয়। অনিন্দ্য জানতে পারে তৃষা তাদেরই কলেজের কিন্তু অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। তখন অনিন্দ্য যোগাযোগ করার ইচ্ছাটা অনেকখানি বেড়ে যায় কিন্তু বিশেষ কোনো কথা গড়ে ওঠেনি যা তাদের বন্ধুত্বকে একটা দীর্ঘস্থায়ী স্বীকৃতী দেওয়া যায়। এরপর বেশ বহুদিন তৃষার সাথে যোগাযোগ হয়নি অনিন্দ্যর। বলা যেতে পারে একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল তৃষাকে। কিন্তু একদিন হঠাৎ অনিন্দ্যের কোনো একটা ক্লাসমেটের স্টাটাসে দেখতে পায় তৃষাকে। ঠিক তখনই অনিন্দ্য তার কাছ থেকে তৃষার ফোন নম্বরটা চেয়ে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে যোগাযোগ মজবুত হয়, বলতে দ্বিধা নেই একটা সুন্দর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কলেজে তাদের বহুবার দেখা, কত কত গল্প, বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখা, আরও অনেক কিছু......
অনিন্দ্য ও তৃষার বন্ধুত্ব সরু সুতোর মতো নয়, একটা শক্ত দড়ির মতো হয়ে গেছে যা হয়ত কখনও ছিঁড়বে না। অনিন্দ্য লোকাল ট্রেনের ভীড়ের মাঝে ছোটো জানালা দিয়ে দেখতে পেল, এক পশলা বৃষ্টির পর সমস্ত সবুজের উপর কেউ যেন অন্ধকার কে রং তুলি দিয়ে টেনে দিচ্ছে এই সুন্দর প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তুলতে ...... ।
অনিন্দ্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে ব্যাগটা রেখে তৃষাকে ফোন করলো,
"হ্যালো, তুই কোথায় এখন ?" তৃষা বললো, " এবার বেরোব, পিসির সাথে ..... । আজ বিকেলেই পিসির বাড়ি এসেছি। " অনিন্দ্য জানত তৃষার পিসির বাড়ি নিয়তিপুরেই। অনিন্দ্য দের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে নয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিন্দ্য মেলায় পৌচ্ছালো। তার দুটো চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই চেনা মুখটাকে যেটাকে সে বারবার দেখতে চায়। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তৃষাকে দেখতে পেল অনিন্দ্য। ভীড়ে ঠেলে চোখের পলকে পৌঁছে গেল তৃষার কাছে ...... । সামান্য হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, " কেমন আছিস ? অনেকদিন পর দেখছি তোকে..." তৃষা ঠোঁটের কোনের মৃদু হাসিকে আহ্বান করে বলল, " চলছে কোনো রকমে। তুই কেমন আছিস ?" অনিন্দ্য হাসিটিকে বিস্তৃত করে বলল, " আমারও চলছে কোনো রকমে। " পাশেই তৃষার পিসি, পিসির মেয়ে সহ আরও দুজন নিজেদের মধ্যে গল্পে মজে আছে। অনিন্দ্য এতটাই আনন্দিত হয়েছে যে ও বুঝতেই পারছে না কীভাবে তৃষার সাথে একটু বেশি সময় কাটানো যায়। আমতা আমতা করতে করতে অবশেষে একটা দোকানের দিকে নির্দেশ করে বলেই বসল, " চল, ঐ দোকানে গরম গরম এগরোল আছে। খাওয়া যাক। " অনিন্দ্য তৃষার একটা বৈশিষ্ট্য জানত না, আজ জানলো, ও বড্ড ফ্রি মাইন্ডেড। তৃষা সংকোচ না করেই পিসিকে বললো, " পিসি এই সেই অনিন্দ্য, আমার বন্ধু অনি। আচ্ছা, আমি একটু ঐ দোকানটায় যাচ্ছি। তোমরা এখানেই থেকো কিন্তু... ।" হ্যাঁ, তৃষা অনিন্দ্য কে অনি বলেই ডাকত।
দুটো এগরোল দিতে বলে, অনিন্দ্য তৃষাকে বললো, " তারপর, বল কি করছিস? " তৃষা ঠোঁট উলটিয়ে বলল, " তেমন কিছু নয়। একটা ছোটোখাটো চাকরি করছি। শুনলাম তুই নাকি .....ইত্যাদি,ইত্যাদি।"
অনিন্দ্য যেন অনুভব করছে, তার অফিসের অত্যাধিক চাপের ফলে ও অন্যান্য কারণে তার মনটা বেশ কয়েকদিন খারাপ ছিল। এই তো কয়েকদিন আগে অনিন্দ্যের মা অনিন্দ্য কি একটা যেন জানতে চাইলে মাকে খুব বকেছিল ও। বুঝতে পেরেছিল, মায়ের সাথে এমনটা করা উচিত হয় নি। কিন্তু আজ যেন সেসব কিছুই নেই। মনটা বড্ড ফুরফুরে লাগছে আজ অনিন্দ্যের ! আচ্ছা, তৃষার সাথে দেখা করার পর মনটা এত উৎফুল্ল হল কেন অনিন্দ্যের ! কয়েকদিন আগে অর্ঘ্য তো অনিন্দ্যের সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, কিন্তু অনিন্দ্য সেটা এড়িয়ে গিয়েছিল, খুব সুন্দর করে। তাহলে আজ কেন এত আগ্রহ ! ভীড়ের মধ্যেই তৃষাকে খোঁজার যে অনুভূতি সেটা সে খুব সুন্দর ভাবেই উপভোগ করলো। কিন্তু এরকমটা কেন হল ! সে কেন তৃষার সাথে বেশি সময় কাটাতে চায়ছে ! দিন কয়েক আগেই তো ট্রেনে জেনারেল কম্পার্টমেন্টে পায়েলের সাথে দেখা হয়েছিল, কিন্তু পায়েল স্টেশনে নামার সাথে সাথেই অনিন্দ্য হাঁফ ছেড়েছিল কেন ! তাহলে কি সে তৃষাকে ভালোবেসে ফেলেছে। অনিন্দ্য বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে ঠিক কি করা উচিত।
হঠাৎ তৃষার ডাকে অনির ভাবনার পৃষ্ঠা বন্ধ করতে হল। টাকাটা মিটিয়ে অনিন্দ্য তৃষার সাথে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে মেলা ঘুরতে লাগলো, তৃষা নানারকম গল্প করতে লাগলো। এর আগেই তৃষার সাথে ও পাশাপাশি হেঁটেছে কিন্তু আজ যেন একটা অন্যরকম অনুভূতির সঞ্চার হচ্ছে ওর নিভৃত মনে। যেন ও ডুবে যাচ্ছে এক অগোছালো ভাবুক রাজ্যে ......। অনিন্দ্যর মনে হচ্ছে, এখনই তৃষাকে বলে দেবে, ও ওকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু কীভাবে বলবে ! এমনকি প্রোপজ কেমন করে করতে তাও জানা নেই অনিন্দ্যের। এমন সময় তৃষা একটা ফুলগাছ কিনবে বলে গাছের সামনে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে অনিন্দ্যের নজরে এল একটা গোলাপ গাছ। ওটা নিল এবং এক মিনিটও দেরী না করেই বললো, " তৃষা , এটা তোর জন্য ..... । " তৃষা গাছটি নিতে নিতে বললো, " এটা দেওয়ার অর্থ কি ! যাই হোক, Thank you.." অনিন্দ্য আমতা আমতা করছে দেখে তৃষা বললো, " তোর একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। " অনিন্দ্য একটু মৃদু হেসে বললো, " বাহ। খুশি হলাম। ভালো মন্দ খাওয়া যাবে তাহলে .....। "
অনিন্দ্য এই প্রথম অনুভব করলো একটা চাপা কষ্ট যা কাউকে ভাগ দেওয়া যায় না। যেটা শুধুমাত্র নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে খায়, প্রতিটি একাকিত্বের সময়।
যাওয়ার সময় শুধু একটা কথায় বলেছিল অনিন্দ্য, " দেখিস, গাছটিতে মনে করে জল দিস, প্রতিটি ডালে গোলাপ হবে।"
আর বাকিটা অনিন্দ্য মনে মনে বললো, শুধু ভালোবাসা জন্মাবে না !
ফেসবুক পেজ - শুভজিৎ -এর কলমে
#ছোটোগল্প , #প্রেম
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ১০/০৮/২০২২খুব সুন্দর
-
নাসিফ আমের চৌধুরী ১৯/০৭/২০২২সুন্দর
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৮/০৭/২০২২দারুণ