রহস্যময় মৃত্যু লীলা - চতুর্থ পরিচ্ছদ
চতুর্থ পরিচ্ছদ
সত্যিই এই পৃথিবী বড়োই বিচিত্র। যত মানুষ, ততই মানুষের প্রকার। এইভাবেও হাসি খুশির মধ্য দিয়ে মৃত্যুকে মেনে নেওয়া যায় ! পুষ্পিতা কে একটু আগে পর্যন্ত হাসতে দেখেছিলাম, সেই কিনা মনে মনে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো যা আমরা কেউ ধরতেই পারিনি। এসব ভাবতে ভাবতেই যেন আমি এক অন্য জগতে হারিয়ে গেলাম। প্রান্তর পাশে এসে হালকা চিমটি কাটলে হুষ ফিরে পেলাম।
যাই হোক, এরপর নেমে পড়লেন সেই ঘটনার পর্দা সরাতে ..... ।
প্রান্তর বলতে শুরু করলেন, " এই বাড়িতে আসার প্রথম দিন থেকেই একটা গুরুতর সমস্যার সন্ধান পায়। কিন্তু সমস্যাটা কতটা গভীর সেই সম্পর্কে প্রথম ধারণা তৈরি হয় যখন দেখি, ভোর রাতে, সময়টা আন্দাজ চারটে নাগাদ, এক ব্যক্তি পাঁচিল টপকে ভিতরে প্রবেশ করলেন। মেন গেট বন্ধই ছিল। আপনারা অবশ্যই ভাবতেই পারেন,সেই সময় আমি বাইরে কি করছিলাম। এর একটা অবশ্য খুব সুন্দর কারণ আছে,অচেনা জায়গায় আমার সহজে ঘুম আসে না। কাল রাতেও সেটাই হয়েছিল আর সেজন্য বাইরে পায়চারি করতে গিয়েই এটা নজরে আসে। আবছা অন্ধকার ঠেলে বোঝা মুশকিল ছিল, তার চেয়ারা। যাই হোক, তৎক্ষণাৎ আমি নিঃশব্দে নীচে আসলাম। কিন্তু নীচে এসেই আমি আরও স্তম্ভিত হয়ে যাই, দেখলাম খামে মোড়া একটা চিঠি মেঝেতে পড়ে আছে।" বলতে বলতে প্রান্তর পকেট থেকে ঘামে মোড়া চিঠিটা সেই অবস্থায় বের করে আবারও বলতে লাগলেন, " এরপর আমি চিঠিটা নীচ থেকে তুলি। এক মুহুর্তের জন্য ভাবলাম, চিঠিটা পড়া উচিত কিনা! ঠিক সেই মুহুর্তে আমার নজর গেল মেঝেতে পড়ে থাকা একটা কার্ডের দিকে। সেটাও সঙ্গে নিতেই বাইরে হালকা হাঁটার শব্দে সজাগ হলাম। সঙ্গে সঙ্গে একটা দরজার আড়ালে চলে গেলাম। দেখলাম সেই অচেনা ব্যক্তিটি একটা মাঝারি সাইজের বাক্স দরজার বাইরে রাখলেন, এরপর এদিক ওদিক দেখে চলে গেলেন।
আমি সঙ্গে সঙ্গে পকেট হাতড়ে একটা নকল চাবি দিয়ে নিঃশব্দে গেট খুললাম। তারপর বেশি কিছু না ভেবেই বাক্সটা খুলে দেখি, একটা মেয়ের রক্ত মাখা জামা। তার নীচে একটা ছবি।" প্রান্তর এবার পকেট থেকে আবারও একটা ছবি বের করলো। আর যেহেতু আমি প্রান্তরের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম,সেজন্য ছবিটিতে আমার নজর খুব তাড়াতাড়ি গেল। দেখলাম, সেটা পুষ্পিতার ছবি। প্রান্তর বললো, "দেখলাম,এটা আমাদের প্রায় সমবয়সি একটা মেয়ের ছবি। এরপর ভাঁজ করা সেই রক্ত মাখা জামাটা খুলতেই সমগ্র বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গেল। কোনো বিশেষ কারণে এই বাড়ির মেয়েকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি আবার এমন করে তালা মারলাম যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে এখানে এতকিছু হয়েছে। আমি এক মিনিটও দেরী না করে লোকটির পিছু নিলাম। সঙ্গে শুধু চিঠিটা আর ছবিটা। আর অভিজিৎ বাবু জামাটা বাইরের বাগানেই, গোলাপ গাছের পাশেই রাখা আছে। যাওয়ার সময় নিয়ে নেবেন।
দেখলাম, অচেনা ব্যক্তিটি খুব নিঃশব্দে পাঁচিল টপকালো। আমিও পাঁচিল টপকালাম। ব্যক্তিটি আমার থেকে কুড়ি হাত দূরে ছিল। আমি খুব দ্রুত হেঁটে তার ঘাড়ে হাত রেখে এমনভাবে কথা বলা শুরু করলাম, যাতে আমার প্রতি তার কোনো সন্দেহ তৈরি হয়।" এতক্ষণ প্রান্তর হাটতে হাটতে এক কোণার দিকে থাকা সেই অচেনা ব্যক্তিটির কাছে গেলো যাকে ও নিয়ে এসেছিল। তারপর বললো, " আমার সকালের সেই অচেনা ব্যক্তিটিই সুবিনয়, সুবিনয় দেবনাথ। আমার থেকে বছর দুয়ের বড়ো। বেচারা অনেক দিন থেকেই পুষ্পিতাকে ভালোবাসে। কিন্তু পুষ্পিতা তাকে আজও 'হ্যাঁ' বলেনি। যাই হোক, সেই সব পরে আলোচনা করা যাবে। এখন কাজের কথায় আসি। প্রান্তর টেবিলের উপরে রাখা গ্লাস থেকে অল্প জল খেয়ে বললো, " সমস্যা তো বুঝলাম স্পষ্টভাবেই। কিন্তু সমাধান কোথায় !" সেজন্য আমাকে একটু কঠোর হতে হল। আর কিছুটা অভিনয় করতে হল। সুবিনয়কে গল্পে গল্পে কাছাকাছি একটা জনবিরল স্থানে নিয়ে গেলাম। তারপর বাক্সের মধ্যে কি রাখা ছিল জিজ্ঞাসা করতেই, দেখলাম বেচারা ঘেমে স্নান করে ফেলেছে। সেজন্য আর বেশি পুলিশের ভয় দেখানোর প্রয়োজন পড়েনি। আমি ওর থেকে বয়সে ছোটো হলেও উচ্চতায় আমি একটু বেশি লম্বা। আর এজন্য এক্ষেত্রে আমার মিথ্যা অভিনয় কাজে লেগেছিল। তবে কেন ভোর রাতে এসে সুবিনয় রক্ত মাখা জামা ও ছবি সহ বাক্স রেখে গিয়েছিল, সেটা জানার আগে এটা জানা খুব জরুরি যে কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে সেটা কিন্তু সুবিনয় নিজেই বলবে। বলো সুবিনয়। "
সুবিনয় বলতে শুরু করলো, " আগের দিন, যখন পুষ্পিতাকে রাস্তা থেকে কিডন্যাপ করা হয়, তখন আমি দূর থেকেই ওকে দেখতে পাই। কিন্তু ঘটনাকে কিডন্যাপ বলা চলে না। খুব সাধারণ ভাবেই পুষ্পিতাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, যেটা দেখে কেউ সন্দেহ করতেই পারবে না। দেখলাম, ও অচেনা একজনের কালো রঙের গাড়িতে উঠলো। তারপরের দিন শুনলাম, ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন বুঝলাম ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আমি ওর বাড়িতে এটা বোঝানোর জন্যই রক্ত মাখা জামা ও ছবি সহ বাক্সটা রেখেছিলাম। ওর একটা ছবি অনেক দিন থেকেই আমার কাছে ছিল, আর জামাটা নতুন কিনেছিলাম, ওটাই রক্ত ছিল না, লাল রং দিয়েছিলাম। কি করা উচিত, সেই মুহুর্তে বুঝতে না পেরে এটা করেছিলাম। এটার জন্য আমি দুঃখিত।"
সুবিনয় চুপ করলে প্রান্তর আবার বললো, " সুবিনয়ের গল্প থেকে আমি কোনো ক্লু পেলাম। শুধু একটু নিশ্চিত হলাম যে পুষ্পিতা কিডন্যাপ হয়েছে। অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনা এক্ষেত্রে একটু কম ছিল। তখন হঠাৎই মনে পড়লো, কার্ডের কথা।" এবার বুক পকেট থেকে কার্ড বের করতে করতে প্রান্তর বললো, " প্রথমে কার্ডের কথা মনেই ছিল না। যখন কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছিলাম না, ঠিক তখনই কার্ডের কথা মনে পড়ে। কার্ডটি যে ফেলে গিয়েছিল, সেই যে চিঠিটা রাখতে এসেছিল। সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, সেটা কার্ডের পড়ে থাকার অবস্থান দেখেই অনুমান করা যাই। কার্ডে লেখা ছিল , সেই দোকানের নাম, যেখান থেকে চিঠিটা টাইপিং করে প্রিন্ট আউট করা হয়। দোকানের নামটি না হয় ইচ্ছা করেই বললাম না। তবে, কার্ডে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী দোকানে তো যাই তবে সেখানেও একটা সমস্যা হয়। যে টাইপিং করতে এসেছিলেন, সেই লোকটিকে দোকানদার চেনেন না। যখন ভাবছি কি করা যায়, ঠিক তখনই সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে নজর যাই। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে লোকটার ছবি সহ তার বাইকের নম্বর পেয়ে যাই যা তাকে খুঁজতে অনেক সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে অভিজিৎ স্যার আমাকে সাহায্য করেছিলেন, আগের কোনো ঘটনা না জেনেই। সেজন্য অভিজিৎ স্যারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
যাই হোক, অবশেষে সেই লোকটার ঠিকানা পেলাম। দেখা করলাম সেই ব্যক্তির সাথে, ওখানেও ছলনার আশ্রয় নিতে হয়েছিল এবং কিছু শর্তের ও অর্থের বিনিময়ে আসল সত্য জানতে পারি। আর সেটাই হল ঐ বাড়িটা যেখানে পুষ্পিতাকে বন্দী করে রাখা হয়। তবে একটা কথা এখনও জানা যায়নি আর সেটাই জানাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এসবের পিছনে আসলে কে আছে ? আর সেটা অভিজিৎ স্যারের জন্য থাক, কারণ মিঃ মজুমদার উনাকেই তো নিয়োগ করেছেন এ সমস্যা সমাধানে। " এরপর প্রান্তর একটা দম নিয়ে বললো, "তারপর যা হয়েছিল, সেটা মনে হয় আমি আসার আগে দেবা সবাইকে বলেছে। "
দেখলাম, মিঃ মজুমদারের চোখে জল। উনার বয়স পঞ্চাশ উর্দ্ধে......। সম্ভাবত ইনিই পুষ্পিতার ঠাকুরদাদা, অর্থাৎ বাড়ির এখনও হর্তাকর্তা। এছাড়াও আরও দুজন মাঝারি বয়সের লোক ছিলেন। সম্ভাবত, এনারাই মিঃ মজুমদারের দুই ছেলে। উনাদের পাশে সম্ভাবত উনাদের স্ত্রী। এজন্য পুষ্পিতা পাশে যে সেই আসলে পুষ্পিতা মা ও বাবা। অন্য দম্পতি দুটো তাহলে অবশ্যই ওর কাকা ও কাকিমা।
মিঃ মজুমদার ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলেন প্রান্তরের দিকে। তারপর বললেন, " বাবা, তুমি আজ শুধু আমার নাতনিকে বাঁচাও নি, তুমি আমাদেরকেও বাঁচিয়েছো। তোমার এ ঋণ কীভাবে শোধ করবো জানি না। " বলতে বলতে তিনি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন। প্রান্তর তার চোখের জল মুছিয়া দিয়ে বললো, " কাঁদবেন না। জীবন থাকলে তো সমস্যা থাকবেই। আর সমস্যা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ।"
কিছুক্ষণ পর চিঠিটা দেখিয়ে প্রান্তর বললো, " এই পুরো ঘটনায় এই চিঠিটা মূল্যহীন কিনা জানি না। তবে চিঠিটা আমি আপনাদের কাউকে দিতে নারাজ। প্লিজ, কিছু মনে করবেন না। এটা আমি আমার কাছেই রাখতে চাই।
চলছে ......
সত্যিই এই পৃথিবী বড়োই বিচিত্র। যত মানুষ, ততই মানুষের প্রকার। এইভাবেও হাসি খুশির মধ্য দিয়ে মৃত্যুকে মেনে নেওয়া যায় ! পুষ্পিতা কে একটু আগে পর্যন্ত হাসতে দেখেছিলাম, সেই কিনা মনে মনে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো যা আমরা কেউ ধরতেই পারিনি। এসব ভাবতে ভাবতেই যেন আমি এক অন্য জগতে হারিয়ে গেলাম। প্রান্তর পাশে এসে হালকা চিমটি কাটলে হুষ ফিরে পেলাম।
যাই হোক, এরপর নেমে পড়লেন সেই ঘটনার পর্দা সরাতে ..... ।
প্রান্তর বলতে শুরু করলেন, " এই বাড়িতে আসার প্রথম দিন থেকেই একটা গুরুতর সমস্যার সন্ধান পায়। কিন্তু সমস্যাটা কতটা গভীর সেই সম্পর্কে প্রথম ধারণা তৈরি হয় যখন দেখি, ভোর রাতে, সময়টা আন্দাজ চারটে নাগাদ, এক ব্যক্তি পাঁচিল টপকে ভিতরে প্রবেশ করলেন। মেন গেট বন্ধই ছিল। আপনারা অবশ্যই ভাবতেই পারেন,সেই সময় আমি বাইরে কি করছিলাম। এর একটা অবশ্য খুব সুন্দর কারণ আছে,অচেনা জায়গায় আমার সহজে ঘুম আসে না। কাল রাতেও সেটাই হয়েছিল আর সেজন্য বাইরে পায়চারি করতে গিয়েই এটা নজরে আসে। আবছা অন্ধকার ঠেলে বোঝা মুশকিল ছিল, তার চেয়ারা। যাই হোক, তৎক্ষণাৎ আমি নিঃশব্দে নীচে আসলাম। কিন্তু নীচে এসেই আমি আরও স্তম্ভিত হয়ে যাই, দেখলাম খামে মোড়া একটা চিঠি মেঝেতে পড়ে আছে।" বলতে বলতে প্রান্তর পকেট থেকে ঘামে মোড়া চিঠিটা সেই অবস্থায় বের করে আবারও বলতে লাগলেন, " এরপর আমি চিঠিটা নীচ থেকে তুলি। এক মুহুর্তের জন্য ভাবলাম, চিঠিটা পড়া উচিত কিনা! ঠিক সেই মুহুর্তে আমার নজর গেল মেঝেতে পড়ে থাকা একটা কার্ডের দিকে। সেটাও সঙ্গে নিতেই বাইরে হালকা হাঁটার শব্দে সজাগ হলাম। সঙ্গে সঙ্গে একটা দরজার আড়ালে চলে গেলাম। দেখলাম সেই অচেনা ব্যক্তিটি একটা মাঝারি সাইজের বাক্স দরজার বাইরে রাখলেন, এরপর এদিক ওদিক দেখে চলে গেলেন।
আমি সঙ্গে সঙ্গে পকেট হাতড়ে একটা নকল চাবি দিয়ে নিঃশব্দে গেট খুললাম। তারপর বেশি কিছু না ভেবেই বাক্সটা খুলে দেখি, একটা মেয়ের রক্ত মাখা জামা। তার নীচে একটা ছবি।" প্রান্তর এবার পকেট থেকে আবারও একটা ছবি বের করলো। আর যেহেতু আমি প্রান্তরের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম,সেজন্য ছবিটিতে আমার নজর খুব তাড়াতাড়ি গেল। দেখলাম, সেটা পুষ্পিতার ছবি। প্রান্তর বললো, "দেখলাম,এটা আমাদের প্রায় সমবয়সি একটা মেয়ের ছবি। এরপর ভাঁজ করা সেই রক্ত মাখা জামাটা খুলতেই সমগ্র বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গেল। কোনো বিশেষ কারণে এই বাড়ির মেয়েকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি আবার এমন করে তালা মারলাম যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে এখানে এতকিছু হয়েছে। আমি এক মিনিটও দেরী না করে লোকটির পিছু নিলাম। সঙ্গে শুধু চিঠিটা আর ছবিটা। আর অভিজিৎ বাবু জামাটা বাইরের বাগানেই, গোলাপ গাছের পাশেই রাখা আছে। যাওয়ার সময় নিয়ে নেবেন।
দেখলাম, অচেনা ব্যক্তিটি খুব নিঃশব্দে পাঁচিল টপকালো। আমিও পাঁচিল টপকালাম। ব্যক্তিটি আমার থেকে কুড়ি হাত দূরে ছিল। আমি খুব দ্রুত হেঁটে তার ঘাড়ে হাত রেখে এমনভাবে কথা বলা শুরু করলাম, যাতে আমার প্রতি তার কোনো সন্দেহ তৈরি হয়।" এতক্ষণ প্রান্তর হাটতে হাটতে এক কোণার দিকে থাকা সেই অচেনা ব্যক্তিটির কাছে গেলো যাকে ও নিয়ে এসেছিল। তারপর বললো, " আমার সকালের সেই অচেনা ব্যক্তিটিই সুবিনয়, সুবিনয় দেবনাথ। আমার থেকে বছর দুয়ের বড়ো। বেচারা অনেক দিন থেকেই পুষ্পিতাকে ভালোবাসে। কিন্তু পুষ্পিতা তাকে আজও 'হ্যাঁ' বলেনি। যাই হোক, সেই সব পরে আলোচনা করা যাবে। এখন কাজের কথায় আসি। প্রান্তর টেবিলের উপরে রাখা গ্লাস থেকে অল্প জল খেয়ে বললো, " সমস্যা তো বুঝলাম স্পষ্টভাবেই। কিন্তু সমাধান কোথায় !" সেজন্য আমাকে একটু কঠোর হতে হল। আর কিছুটা অভিনয় করতে হল। সুবিনয়কে গল্পে গল্পে কাছাকাছি একটা জনবিরল স্থানে নিয়ে গেলাম। তারপর বাক্সের মধ্যে কি রাখা ছিল জিজ্ঞাসা করতেই, দেখলাম বেচারা ঘেমে স্নান করে ফেলেছে। সেজন্য আর বেশি পুলিশের ভয় দেখানোর প্রয়োজন পড়েনি। আমি ওর থেকে বয়সে ছোটো হলেও উচ্চতায় আমি একটু বেশি লম্বা। আর এজন্য এক্ষেত্রে আমার মিথ্যা অভিনয় কাজে লেগেছিল। তবে কেন ভোর রাতে এসে সুবিনয় রক্ত মাখা জামা ও ছবি সহ বাক্স রেখে গিয়েছিল, সেটা জানার আগে এটা জানা খুব জরুরি যে কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে সেটা কিন্তু সুবিনয় নিজেই বলবে। বলো সুবিনয়। "
সুবিনয় বলতে শুরু করলো, " আগের দিন, যখন পুষ্পিতাকে রাস্তা থেকে কিডন্যাপ করা হয়, তখন আমি দূর থেকেই ওকে দেখতে পাই। কিন্তু ঘটনাকে কিডন্যাপ বলা চলে না। খুব সাধারণ ভাবেই পুষ্পিতাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, যেটা দেখে কেউ সন্দেহ করতেই পারবে না। দেখলাম, ও অচেনা একজনের কালো রঙের গাড়িতে উঠলো। তারপরের দিন শুনলাম, ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন বুঝলাম ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আমি ওর বাড়িতে এটা বোঝানোর জন্যই রক্ত মাখা জামা ও ছবি সহ বাক্সটা রেখেছিলাম। ওর একটা ছবি অনেক দিন থেকেই আমার কাছে ছিল, আর জামাটা নতুন কিনেছিলাম, ওটাই রক্ত ছিল না, লাল রং দিয়েছিলাম। কি করা উচিত, সেই মুহুর্তে বুঝতে না পেরে এটা করেছিলাম। এটার জন্য আমি দুঃখিত।"
সুবিনয় চুপ করলে প্রান্তর আবার বললো, " সুবিনয়ের গল্প থেকে আমি কোনো ক্লু পেলাম। শুধু একটু নিশ্চিত হলাম যে পুষ্পিতা কিডন্যাপ হয়েছে। অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনা এক্ষেত্রে একটু কম ছিল। তখন হঠাৎই মনে পড়লো, কার্ডের কথা।" এবার বুক পকেট থেকে কার্ড বের করতে করতে প্রান্তর বললো, " প্রথমে কার্ডের কথা মনেই ছিল না। যখন কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছিলাম না, ঠিক তখনই কার্ডের কথা মনে পড়ে। কার্ডটি যে ফেলে গিয়েছিল, সেই যে চিঠিটা রাখতে এসেছিল। সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, সেটা কার্ডের পড়ে থাকার অবস্থান দেখেই অনুমান করা যাই। কার্ডে লেখা ছিল , সেই দোকানের নাম, যেখান থেকে চিঠিটা টাইপিং করে প্রিন্ট আউট করা হয়। দোকানের নামটি না হয় ইচ্ছা করেই বললাম না। তবে, কার্ডে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী দোকানে তো যাই তবে সেখানেও একটা সমস্যা হয়। যে টাইপিং করতে এসেছিলেন, সেই লোকটিকে দোকানদার চেনেন না। যখন ভাবছি কি করা যায়, ঠিক তখনই সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে নজর যাই। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে লোকটার ছবি সহ তার বাইকের নম্বর পেয়ে যাই যা তাকে খুঁজতে অনেক সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে অভিজিৎ স্যার আমাকে সাহায্য করেছিলেন, আগের কোনো ঘটনা না জেনেই। সেজন্য অভিজিৎ স্যারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
যাই হোক, অবশেষে সেই লোকটার ঠিকানা পেলাম। দেখা করলাম সেই ব্যক্তির সাথে, ওখানেও ছলনার আশ্রয় নিতে হয়েছিল এবং কিছু শর্তের ও অর্থের বিনিময়ে আসল সত্য জানতে পারি। আর সেটাই হল ঐ বাড়িটা যেখানে পুষ্পিতাকে বন্দী করে রাখা হয়। তবে একটা কথা এখনও জানা যায়নি আর সেটাই জানাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এসবের পিছনে আসলে কে আছে ? আর সেটা অভিজিৎ স্যারের জন্য থাক, কারণ মিঃ মজুমদার উনাকেই তো নিয়োগ করেছেন এ সমস্যা সমাধানে। " এরপর প্রান্তর একটা দম নিয়ে বললো, "তারপর যা হয়েছিল, সেটা মনে হয় আমি আসার আগে দেবা সবাইকে বলেছে। "
দেখলাম, মিঃ মজুমদারের চোখে জল। উনার বয়স পঞ্চাশ উর্দ্ধে......। সম্ভাবত ইনিই পুষ্পিতার ঠাকুরদাদা, অর্থাৎ বাড়ির এখনও হর্তাকর্তা। এছাড়াও আরও দুজন মাঝারি বয়সের লোক ছিলেন। সম্ভাবত, এনারাই মিঃ মজুমদারের দুই ছেলে। উনাদের পাশে সম্ভাবত উনাদের স্ত্রী। এজন্য পুষ্পিতা পাশে যে সেই আসলে পুষ্পিতা মা ও বাবা। অন্য দম্পতি দুটো তাহলে অবশ্যই ওর কাকা ও কাকিমা।
মিঃ মজুমদার ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলেন প্রান্তরের দিকে। তারপর বললেন, " বাবা, তুমি আজ শুধু আমার নাতনিকে বাঁচাও নি, তুমি আমাদেরকেও বাঁচিয়েছো। তোমার এ ঋণ কীভাবে শোধ করবো জানি না। " বলতে বলতে তিনি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন। প্রান্তর তার চোখের জল মুছিয়া দিয়ে বললো, " কাঁদবেন না। জীবন থাকলে তো সমস্যা থাকবেই। আর সমস্যা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ।"
কিছুক্ষণ পর চিঠিটা দেখিয়ে প্রান্তর বললো, " এই পুরো ঘটনায় এই চিঠিটা মূল্যহীন কিনা জানি না। তবে চিঠিটা আমি আপনাদের কাউকে দিতে নারাজ। প্লিজ, কিছু মনে করবেন না। এটা আমি আমার কাছেই রাখতে চাই।
চলছে ......
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২২/০৬/২০২২খুব সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ২১/০৬/২০২২খুব সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ