রেললাইন
রাত জেগে ল্যাপটপ দেখাটা অভীকের যেন একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। ফেসবুকে কখন কোন পেজে কত ফলোয়ার্স বাড়ছে, কোন ইউটিউবে কত সাবস্ক্রাইব বাড়লো, ভিউস কেমন বেড়েছে। এসব তো আছেই। তাছাড়া কখন কোন কনটেন্ট দেওয়া যাবে, সেটা কেমন চলবে এসব নিয়েও ভাবনা চিন্তা একেবারে কম নয়। এখন আবার অভীক একজন বড়ো মাপের সোস্যাল মিডিয়া ওয়ার্কার হয়েছে। কোন ফলোয়ার্স কি কমেন্ট করলো, সেসবও তার খেয়াল রাখতে হয়। আজও এসব কাজের কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। এখন রাত প্রায় দুটো। অভীক বিভিন্ন ফলোয়ার্সের কমেন্ট পড়ছে, প্রয়োজনমতো রিপ্লাই করছে। নিজে নিজেই কখনও হাসছে, কখনও অন্যমনস্ক হচ্ছে। অনেকরকম ই কমেন্ট আসে। কখনও কখনও তো আবার অভীকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কমেন্ট আসে। অভীক এগুলো কানে নেয় না।তবুও আজ যেন এসবের মধ্যে একটা কমেন্ট দেখে তার অবিশ্বাস্য মনে হল। "হাই অভীক, তোমার বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছে করছে"। কমেন্ট'টার কোনার দিকে সময় খেয়াল করলো অভীক। এইমাত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অভীকের মনে হল কেউ তার সাথে মজা করছে। সেজন্য সে হাসির ইমোজি পাঠাতে যাবে এমন সময় তার ল্যাপটপ'টার ব্যাটারি লো দেখিয়ে সুইচ অফ হয়ে গেল। চার্জে বসিয়ে অভীক বারবার খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারলো না। ঠিক এমন সময় বাইরের দরজায় ঠক ঠক করে একবার শব্দ হল। অভীকে বুক'টা একটু ধরাস করে উঠলেও সে ভাবল হয়ত বাতাসের শব্দ। কিন্তু পরেরক্ষণেই আবার একই রকম ঠক ঠক শব্দ। আবার ...... এরকমভাবে তিন চারবার আওয়াজ শুনে অভীক ধীরে ধীরে দরজার কাছে গেল। দরজাটা খুলে কাউকে দেখতে পেল না। তারপর সে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো। দেখল আশেপাশে কেউ নেই। সে সামনে এগিয়ে চারিদিকে টর্চ জ্বালিয়ে দেখল , না কেউ তো নেই। ঠিক এমন সময় অভীক যেন অনুভব করলো, ওর পিছন দিয়ে কেউ ঘরে ঢুকেছে। অভীক তাড়াতাড়ি পেছন ঘুরলো , ঘরে ঢুকলো। না .... কেউ নেই। অভীক আবার আগের মতোই দরজা বন্ধ করে নিজের ঘরে গেল। ঘরে ঢুকে সে আবার ল্যাপটপটা অন করতে গেল, কিন্তু প্রয়োজনীয় চার্জের অভাবে অন হল না। সেই সময় হঠাৎ লোড শেডিং হল। তাড়াতাড়ি অভীক মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালাতে গিয়ে দেখল মোবাইল অন হচ্ছে না, কারণ মোবাইলেও চার্জ শূন্য। এবার অন্ধকারে হাতড়ে চার্জার লাইট খুঁজে জ্বালাতে গিয়ে দ্যাখে, সেটাতে অল্প চার্জ আছে। ধীরে ধীরে সে দেওয়ালের গা ঘেঁষে অন্যপ্রান্তে বিছানার কাছে যেতে গিয়ে হাতের ধাক্কায় চার্জার লাইটটি নীচে পড়ে অফ হয়ে গেল। অভীক বুঝতে পারলো তার সাথে কিছু একটা হচ্ছে।তা না হলে একই সময়ে ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জহীন, লোড শেডিং হত না। একমুহূর্তের জন্য সে নিজেই নিজের অলসতাকে দায়ী করলো। যদি সে একটা মোমবাতি কিনে আনত তাহলে এত সমস্যার সম্মুখীন হতে হত না। অভীক অনুভব করলো, তার ঘাড়ের কাছে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে কেউ। সে ভয়ে ভয়ে অন্ধকারের মধ্যেই ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,
কে ? কে আমার পিছনে ?
কোনো উত্তর নেই। অভীক প্রশ্নটা আবার করলো।
কে ? কে এই ঘরে ?
অভীক শুনতে পেল কেউ অস্পষ্ট সুরে বলছে, " আমি ..... চিনতে পারছিস আমাকে ..... বলেই একটা খিল খিল হাসি। কথাটা শুনে অভীকের মনে হল যেন ব্যক্তিটি অনেক দূর থেকে আছে তার থেকে। কিন্তু তাহলে তার ঘাড়ের কাছে জোরে জোরে কে নিশ্বাস নিচ্ছিল ! এসব ভাবতেই অভীক আরও ভয় পেয়ে গেল। সে পাল্টা প্রশ্ন করলো।
"আমি কে ? পরিচয় কি ?"
আবার সেই অস্পষ্ট স্বরে উত্তর আসলো, " সব বলব এদিকে আয়...এদিকে আয় .... এদিকে আয় ...... "
অভীক নিজের অজান্তেই দেওয়ালে হাত দিয়ে আন্দাজে আন্দাজে সরতে লাগলো। কিন্তু অন্ধকারে সে বুঝতে পারলো না যে সে ধীরে ধীরে বাইরের দিকে যাচ্ছে।
তার কানের কাছে যেন কেউ অবিরাম বলে চলছে, " আয়, এদিকে আয়, সব বলব ...... সব বলব ...... সেই আবার খিল খিল হাসি। "
অভীক ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে, বারান্দা ছেড়ে ছোটো রাস্তায় এসে পড়েছে। যেন সে কোনো এক মায়ায় পড়েছে। যেন কাউকে অন্ধের মতো অনুসরণ করছে সে। সে নিজের অজান্তেই যেন বলছে, " কে তুমি ? কি তোমার পরিচয় ? " অভীকের বিপরীত দিক থেকে উত্তর আসছে, " বলব, সব বলব, এদিকে আয় ....... "
অভীক ছোটো রাস্তা ছেড়ে, বড়ো রাস্তায় এসে পড়েছে।
অভীক শুনতে পাচ্ছে, হয়ত বুঝতে পারছে না। সেই অস্পষ্ট কন্ঠে কেউ বলছে, " আমাকে বাঁচালি না। আমাকে নিয়ে ভিডিও করে ফলোয়ার্স বাড়িয়েছিস।কিন্তু সে ভিডিও না করে যদি একটু আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতিস তাহলে হয়ত আমি বেঁচে যেতাম।" এবার কথাগুলো শুনে মনে হলো একটা মেয়ে কথাগুলো বলছে। যেন এখনও সেই যন্ত্রণা তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সে বাঁচতে চায়।
এরপর বড়ো রাস্তা ছেড়ে অভীক এখন রেল লাইনে এসে পড়েছে। বাড়ি থেকে অনেক দূরে। এখন ভোর হতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। অভীক যেন নিজের আনমনেই রেল লাইন ধরে হাটতে থাকলো। বেশ কিছুসময় পরে, হঠাৎ দূর পাল্লার ট্রেনের লাইট তার চোখে পড়তেই তার জ্ঞান ফিরলো। সে রেল লাইনে দাঁড়িয়ে সামনে ট্রেন আসছে। সে দৌড়ে পালাতে গিয়ে তার পা আটতে গেল রেল লাইনেই।
ভোর হতে না হতেই অভীকের দেহের টুকরো টুকরো অংশ গুলো ছড়িয়ে রইল রেল লাইনের চারিধারে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই, অনেকে এসে সেটা ভিডিও করে পোষ্ট করলো, ফেসবুকে, ইউটিউবে... । কেউ কেউ তো সরাসরি লাইভ করতে শুরু করেছে। অনেক সাংবাদিক এসেছে। সংবাদপত্রে পরের দিন হেড লাইন হয়েছে, " রহস্যজনক মৃত্যু স্যোশাল মিডিয়া ওয়ার্কার অভীক দত্তের " । খবরের ভিতরে লেখা ছিল, 'বেশ নামকরা স্যোশাল মিডিয়া ওয়ার্কার, ইউটিউবার অভীক দত্তের ট্রেনের ধাক্কায় আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। এটা আত্ম হত্যা নাকি খুন, সে পুলিশ খতিয়ে দেখছে। অভীক দত্ত বেশ কিছুদিন ধরে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে অনেক বেশি active থাকতেন। অভীক দত্ত ভিডিও করতেন অনেকদিন ধরেই। তবে তিনি মাঝে সাড়া জাগিয়েছিলেন শ্রেয়সী ভৌমিক নামে একটা মেয়ের রেলে কেটে যাওয়াকে কেন্দ্র করে একটা লাইভ ভিডিওতে ...... ।' এছাড়াও আরও অনেক কিছু লেখা ছিল।
আজও সমাজ কেন এমনটা করে। কারোর বিপদে তাকে সাহায্য না করে তাকে নিয়ে ভিডিও করে নিজে টাকা আয় করতে চায়। এটাই কি বর্তমান সভ্যতার উন্নতির একটা নমুনা !
কে ? কে আমার পিছনে ?
কোনো উত্তর নেই। অভীক প্রশ্নটা আবার করলো।
কে ? কে এই ঘরে ?
অভীক শুনতে পেল কেউ অস্পষ্ট সুরে বলছে, " আমি ..... চিনতে পারছিস আমাকে ..... বলেই একটা খিল খিল হাসি। কথাটা শুনে অভীকের মনে হল যেন ব্যক্তিটি অনেক দূর থেকে আছে তার থেকে। কিন্তু তাহলে তার ঘাড়ের কাছে জোরে জোরে কে নিশ্বাস নিচ্ছিল ! এসব ভাবতেই অভীক আরও ভয় পেয়ে গেল। সে পাল্টা প্রশ্ন করলো।
"আমি কে ? পরিচয় কি ?"
আবার সেই অস্পষ্ট স্বরে উত্তর আসলো, " সব বলব এদিকে আয়...এদিকে আয় .... এদিকে আয় ...... "
অভীক নিজের অজান্তেই দেওয়ালে হাত দিয়ে আন্দাজে আন্দাজে সরতে লাগলো। কিন্তু অন্ধকারে সে বুঝতে পারলো না যে সে ধীরে ধীরে বাইরের দিকে যাচ্ছে।
তার কানের কাছে যেন কেউ অবিরাম বলে চলছে, " আয়, এদিকে আয়, সব বলব ...... সব বলব ...... সেই আবার খিল খিল হাসি। "
অভীক ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে, বারান্দা ছেড়ে ছোটো রাস্তায় এসে পড়েছে। যেন সে কোনো এক মায়ায় পড়েছে। যেন কাউকে অন্ধের মতো অনুসরণ করছে সে। সে নিজের অজান্তেই যেন বলছে, " কে তুমি ? কি তোমার পরিচয় ? " অভীকের বিপরীত দিক থেকে উত্তর আসছে, " বলব, সব বলব, এদিকে আয় ....... "
অভীক ছোটো রাস্তা ছেড়ে, বড়ো রাস্তায় এসে পড়েছে।
অভীক শুনতে পাচ্ছে, হয়ত বুঝতে পারছে না। সেই অস্পষ্ট কন্ঠে কেউ বলছে, " আমাকে বাঁচালি না। আমাকে নিয়ে ভিডিও করে ফলোয়ার্স বাড়িয়েছিস।কিন্তু সে ভিডিও না করে যদি একটু আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতিস তাহলে হয়ত আমি বেঁচে যেতাম।" এবার কথাগুলো শুনে মনে হলো একটা মেয়ে কথাগুলো বলছে। যেন এখনও সেই যন্ত্রণা তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সে বাঁচতে চায়।
এরপর বড়ো রাস্তা ছেড়ে অভীক এখন রেল লাইনে এসে পড়েছে। বাড়ি থেকে অনেক দূরে। এখন ভোর হতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। অভীক যেন নিজের আনমনেই রেল লাইন ধরে হাটতে থাকলো। বেশ কিছুসময় পরে, হঠাৎ দূর পাল্লার ট্রেনের লাইট তার চোখে পড়তেই তার জ্ঞান ফিরলো। সে রেল লাইনে দাঁড়িয়ে সামনে ট্রেন আসছে। সে দৌড়ে পালাতে গিয়ে তার পা আটতে গেল রেল লাইনেই।
ভোর হতে না হতেই অভীকের দেহের টুকরো টুকরো অংশ গুলো ছড়িয়ে রইল রেল লাইনের চারিধারে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই, অনেকে এসে সেটা ভিডিও করে পোষ্ট করলো, ফেসবুকে, ইউটিউবে... । কেউ কেউ তো সরাসরি লাইভ করতে শুরু করেছে। অনেক সাংবাদিক এসেছে। সংবাদপত্রে পরের দিন হেড লাইন হয়েছে, " রহস্যজনক মৃত্যু স্যোশাল মিডিয়া ওয়ার্কার অভীক দত্তের " । খবরের ভিতরে লেখা ছিল, 'বেশ নামকরা স্যোশাল মিডিয়া ওয়ার্কার, ইউটিউবার অভীক দত্তের ট্রেনের ধাক্কায় আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। এটা আত্ম হত্যা নাকি খুন, সে পুলিশ খতিয়ে দেখছে। অভীক দত্ত বেশ কিছুদিন ধরে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে অনেক বেশি active থাকতেন। অভীক দত্ত ভিডিও করতেন অনেকদিন ধরেই। তবে তিনি মাঝে সাড়া জাগিয়েছিলেন শ্রেয়সী ভৌমিক নামে একটা মেয়ের রেলে কেটে যাওয়াকে কেন্দ্র করে একটা লাইভ ভিডিওতে ...... ।' এছাড়াও আরও অনেক কিছু লেখা ছিল।
আজও সমাজ কেন এমনটা করে। কারোর বিপদে তাকে সাহায্য না করে তাকে নিয়ে ভিডিও করে নিজে টাকা আয় করতে চায়। এটাই কি বর্তমান সভ্যতার উন্নতির একটা নমুনা !
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সুকান্ত ঘোষ ১৫/০৬/২০২২একদম।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৪/০৬/২০২২ভালো
-
ফয়জুল মহী ১২/০৬/২০২২মাশাআল্লাহ
অনবদ্য এবং অসাধারণ ,
অনিন্দ্য সুন্দর লিখেছেন ।