লড়াকু এক ছেলের গল্প - প্রথম পর্ব
আমরা সাধারণত মধ্যবিত্ত বা গরীবের বা ধনী ব্যক্তিদের অনেক জীবনকথা শুনেছি। শুনেছি তাদের সন্তানদের বিলাসীতা বা সংগ্রামের মর্মকথা। কিন্তু এখানে আজ বলব এমন এক ছেলের জীবনকথা যে মধ্যবিত্ত নয়ই,একটু ভেবেচিন্তে গরীব বলা যেতে পারে। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থান এই দুটোর মাঝে। তাদের দিন আনা দিন খাওয়া। তাদের সঞ্চয় সর্বদা শূন্য। তাদের জীবনের প্রতিটি কোনায় কোনায় লড়াই অবস্থান করে। এমনই এক ছেলে যার নাম ত্রিকোন (ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তিত) । তবে তার জন্ম থেকেই গল্পটা শুরু যাক। সালটা ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০১, রবিবার। ছেলেটির জন্ম এক শীতের মধ্যরাতে, প্রচন্ড এক গরীব পরিবারে। ছেলেটির বাবা একটু অলস প্রকৃতির। যার মনোভাব, 'হচ্ছে হবে, যাচ্ছে যাবে' এমন প্রকৃতির।আর মা প্রচন্ড কাজের। তবে অন্ধকারে ভয় পান, তবে হয়ত একজন মেয়ে বলেই। কিন্তু লড়াই করতে ভালোবাসেন ষোলো আনা। সন্ধ্যাবেলা থেকে বারান্দায় কনকনে শীতে একটা ছেঁড়া কাপড়ের টুকরোতে ছেলেটিকে জড়িয়ে তার মা লক্ষী আগুনের ধারে বসে আছেন। তার পাশে শুয়ে আছে তাদের এক বছরের কন্যা ভুবনেশ্বরী। বাবা ত্রিদেব বাইরের ভাঙা বেঞ্চেতে বসে আছেন। তিনি এতটাই নিশ্চিত যে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই রাতে কি খেতে হবে, সন্তানের কি খেতে দিতে হবে এসব বিষয়ে। কিন্তু লক্ষীদেবীর চিন্তার শেষ নেই। একদিকে তিনি নতুন বউ, অন্যদিকে সন্তান প্রসবের কারণে শারীরিকভাবে যথেষ্ট অসুস্থ। যখন আদ্যপান্ত ভেবে কিছুই উদ্ধার করতে পারলেন না, তখন স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলেন --
- রাতে কি রান্না করব ?
- যা আছে তাই করো।
- কিছুই তো নেই। এমনকি চাল ও নেই।
স্বামী কিছু না বলে কিছুক্ষণ পরে পাশের মুদির দোকান থেকে মুড়ি কিনে নিয়ে এলেন। রাতে একমুঠো মুড়ি আর জল খেয়েই তাদের রাত কাটলো।
পরের দিন সকাল সাড়ে আটটায় ত্রিদেব ঘুম থেকে উঠে বিছানা মাদুর গুছিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখেন লক্ষীদেবী দুই সন্তানকে নিয়ে রোদে বসে আছেন। স্বামী মুখ ধুয়ে গেলে তিনি স্বামীর জন্য চা করে আনলেন। চা খেতে খেতে স্বামী বললেন,
- আমি বাজার যাচ্ছি। কোনো খদ্দের আসলে বসতে বলো।
- আচ্ছা। বলছি, চ্যাং মাছ পেলে নিয়ে এসো তো। খুব দূর্বল লাগছে।
- টাকা নেই।
যাই হোক, দুপুরে ফ্যানে ভাতে খেতে হয়েছিল। আর এদিকে খদ্দের একজন বা দুজন এসেছিল। ত্রিদেব বাবুর আয় পত্তর ও খুব বেশী নয়।
এভাবেই বেশ কয়েকদিন চলার পর, একদিন হঠাৎ এক মহামারী নেমে এলো বাড়িটার উপরে। যেন বিপদের ছোঁয়া। আর এটাই ছিল তাদের ছোটো সন্তান, ত্রিকোণ এর জীবনের প্রথম বিপদ। যার ফলশ্রুতিতে তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
কেন হয়েছিল সেটা হয়ত জানা নেই। তবে হয়েছিল, জন্ডিস, মারাত্মক। সারা শরীর ঠান্ডা। হলুদ শরীর হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু এত কিছুর ত্রিদেবকে কোনো মুখ্য চরিত্রে দেখা গেল না। ছেলে মারা যেতে পারে, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক কম। যত সময় যাচ্ছে, ততই যেন সে মৃত্যুর দিকে ঢলে যাচ্ছে। ছেলেটির মা কি করবেন বুঝতে পারছেন না, বুঝতে পারছেন না তার স্বামী এখনও চুপচাপ। তার কি করা উচিত, তিনি বুঝতে পারছেন না। এই রকম সমস্যার আগে তাকে কখনও মুখোমুখি হতে হয়নি। পরের দিন সকালে তিনি ছেলেকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালের দিকে। কিন্তু গরীবের জীবন সমস্যার একটা রূপ। সেজন্য তিনি ছেলেকে কোলে নিয়ে ছুটছেন পথে গাড়ি পেলে উঠবেন। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছেন না। যখন তিনি নিজেকে সামলাতে পারছেন না, তখন তিনি প্রায় কেঁদে ফেললেন। ঠিক এমন সময় দেবতার মতো পাশে দাঁড়ালেন এক মুসলিম টিকার চালক। তিনি হয়ত সবার দেবতা না হলেও ত্রিকোণের একমাত্র দেবতা। অবশেষে সেই অচেনা ব্যক্তির তৎপরতায় ত্রিকোণ কে হাসপাতালে পৌচ্ছানো হল। শুধু তাই নয়, সেই ব্যক্তিই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলেন। ছেলেটি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকলেন। সেই অচেনা ব্যক্তিকে লক্ষী দেবী ভাই বলে অভিহিত করেন। সেই সূত্র ধরেই তিনি ত্রিকোণ এর মামা হলেন।
কিন্তু ছেলেটিকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই আরও একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
চলছে .......
- রাতে কি রান্না করব ?
- যা আছে তাই করো।
- কিছুই তো নেই। এমনকি চাল ও নেই।
স্বামী কিছু না বলে কিছুক্ষণ পরে পাশের মুদির দোকান থেকে মুড়ি কিনে নিয়ে এলেন। রাতে একমুঠো মুড়ি আর জল খেয়েই তাদের রাত কাটলো।
পরের দিন সকাল সাড়ে আটটায় ত্রিদেব ঘুম থেকে উঠে বিছানা মাদুর গুছিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখেন লক্ষীদেবী দুই সন্তানকে নিয়ে রোদে বসে আছেন। স্বামী মুখ ধুয়ে গেলে তিনি স্বামীর জন্য চা করে আনলেন। চা খেতে খেতে স্বামী বললেন,
- আমি বাজার যাচ্ছি। কোনো খদ্দের আসলে বসতে বলো।
- আচ্ছা। বলছি, চ্যাং মাছ পেলে নিয়ে এসো তো। খুব দূর্বল লাগছে।
- টাকা নেই।
যাই হোক, দুপুরে ফ্যানে ভাতে খেতে হয়েছিল। আর এদিকে খদ্দের একজন বা দুজন এসেছিল। ত্রিদেব বাবুর আয় পত্তর ও খুব বেশী নয়।
এভাবেই বেশ কয়েকদিন চলার পর, একদিন হঠাৎ এক মহামারী নেমে এলো বাড়িটার উপরে। যেন বিপদের ছোঁয়া। আর এটাই ছিল তাদের ছোটো সন্তান, ত্রিকোণ এর জীবনের প্রথম বিপদ। যার ফলশ্রুতিতে তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
কেন হয়েছিল সেটা হয়ত জানা নেই। তবে হয়েছিল, জন্ডিস, মারাত্মক। সারা শরীর ঠান্ডা। হলুদ শরীর হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু এত কিছুর ত্রিদেবকে কোনো মুখ্য চরিত্রে দেখা গেল না। ছেলে মারা যেতে পারে, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক কম। যত সময় যাচ্ছে, ততই যেন সে মৃত্যুর দিকে ঢলে যাচ্ছে। ছেলেটির মা কি করবেন বুঝতে পারছেন না, বুঝতে পারছেন না তার স্বামী এখনও চুপচাপ। তার কি করা উচিত, তিনি বুঝতে পারছেন না। এই রকম সমস্যার আগে তাকে কখনও মুখোমুখি হতে হয়নি। পরের দিন সকালে তিনি ছেলেকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালের দিকে। কিন্তু গরীবের জীবন সমস্যার একটা রূপ। সেজন্য তিনি ছেলেকে কোলে নিয়ে ছুটছেন পথে গাড়ি পেলে উঠবেন। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছেন না। যখন তিনি নিজেকে সামলাতে পারছেন না, তখন তিনি প্রায় কেঁদে ফেললেন। ঠিক এমন সময় দেবতার মতো পাশে দাঁড়ালেন এক মুসলিম টিকার চালক। তিনি হয়ত সবার দেবতা না হলেও ত্রিকোণের একমাত্র দেবতা। অবশেষে সেই অচেনা ব্যক্তির তৎপরতায় ত্রিকোণ কে হাসপাতালে পৌচ্ছানো হল। শুধু তাই নয়, সেই ব্যক্তিই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলেন। ছেলেটি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকলেন। সেই অচেনা ব্যক্তিকে লক্ষী দেবী ভাই বলে অভিহিত করেন। সেই সূত্র ধরেই তিনি ত্রিকোণ এর মামা হলেন।
কিন্তু ছেলেটিকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই আরও একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
চলছে .......
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ০৫/০৪/২০২২ভালো
-
মোঃ আমিনুল ইসলাম মিঠু ২১/০৩/২০২২অনন্য সুন্দর লিখিয়ে
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৯/০৩/২০২২পড়তে থাকি।
-
ফয়জুল মহী ১৮/০৩/২০২২ভীষণ সুন্দর
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৮/০৩/২০২২খুবই সুন্দর