অস্ত যাওয়া ভালোবাসা
প্রিয় অনুষ্কা,
তোমার সাথে আমার গতকালই ফোনে কথা হয়েছিল। আন্দাজ পাঁচ - ছয় মাস ধরে তোমার সাথে আমি এভাবে কথা বলি, সুখ দুঃখ শেয়ার করি কিন্তু আমার অত্যন্ত ব্যক্তিগত একটা কথা যেটা তোমাকে কখনও বলা হয়নি। অনেকবার বলব ভেবেছি কিন্তু বারবারই তোমার মায়াভরা ভালোবাসার কাছে হার মেনেছি। সেজন্য আর বলা হয়ে ওঠেনি।
আমাদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে আগামী মাসের ২৬ তারিখে। এমনকি বিয়ের কার্ডও ছাপানো শেষ। যত দিন যাচ্ছে তত সময় কমে আসছে। তোমার সাথে ফোন করে কথাটা বলতে পারতাম কিন্তু আমার পক্ষে সুন্দর করে গুছিয়ে বলা সম্ভব নয়। তাই লিখতে বসলাম।
আজ থেকে বছর ছয়েক আগের কথা। আমার বয়স তখন কুড়ি। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। একদিন বাসে করে কোনো এক জায়গা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। প্রায় ঘন্টা তিনকের রাস্তা ছিল। মিনিট দশেক আসার পরেই আমার পাশের সিট খালি হয় এবং একটা মেয়ে সেই সিটে বসে। সত্যি বলতে আমি ছোটো থেকেই মেয়েদেরকে একটু এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু সে বার কেন জানি না একটু অন্য রকম অনুভূতি হল। বাস যতই চলছে আমার হৃদস্পন্দন যেন তত বেড়েই চলেছে। অনুভব করলাম আমি যেন ভালোবাসায় নিমগ্ন হয়ে পড়েছি। কিন্তু ভদ্রতার সাথে কিছুক্ষণ চুপচাপ শান্ত হয়ে বসার পরেও দেখলাম সে আমার সাথে কোনো কথা বলল না। সেজন্য বাধ্য হয়েই জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তার নাম স্নেহা রায়, আমাদের কলেজে আমাদের সাথেই পড়ে কিন্তু অন্য ডিপার্টমেন্টে। এটা জানার পর আমার মতো সেও যথেষ্ট খুশি ছিল। তারপর আরও নানা রকম কথা হল সারাটা পথ ধরে। গল্প করতে করতে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, স্নেহা ভালোবাসা বা প্রেম কোনোটাকেই তোয়াক্কা করে না। প্রায় ঘন্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ সে আমার কাছে ফোন নম্বর চাইলো। কিন্তু তার নম্বরটা দিয়ে যাইনি। তারপর সে নেমে গেল। এতদিন একা থাকার পরেও যে অনুভূতিটা কখনও হয়নি আজ যেন সেটাই হল। স্নেহা নেমে যাওয়ার পর বড়ো একাকিত্ব বোধ করলাম। মনে হল অনেক কিছু হারালাম।
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যাই। অনেকবার কলেজে গিয়েছি কোনোদিন ওর সাথে দেখা হয়নি। ওদের ডিপার্টমেন্টে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম স্নেহা রায় নামে ঐ ডিপার্টমেন্টে কেউ পড়ে না। তখন বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠলেও নিজেকে বুঝ দিলাম যে স্নেহা মিথ্যা বলতে পারে না। অনেক আশা করেছিলাম হয়ত ফোন করবে কিন্তু কোনোদিনই ফোনও করেনি। ফলে যেটুকু ভালোবাসা মনের মধ্যে জমা হয়েছিল তার জন্য খুব মায়া হল। বুঝলাম ভালোবাসা বড়ো জটিল বস্তু। তার উপর যদি সেটা এক তরফা হয়। এরপরেও বেশ কিছুদিন অপেক্ষায় থাকার পর যখন ভাবছি সবই স্বপ্ন ছিল, ঠিক তখনই মাঝরাতে রিংটোন বেজে উঠল, একটা অচেনা নম্বর। কথা বলে জানতে পারলাম ফোনের ওপারে রয়েছে স্নেহা। সে অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে আমার কাছে ক্ষমা চাইলো মিথ্যে বলার জন্য। প্রথমে ওর প্রতি একটা অভিমান থাকলেও পরে বুঝলাম ও পাথর নয়। যথেষ্ট মানবিকতা আছে ওর মধ্যে। ভালোবাসা কমার বদলে বরং অনেক বেড়ে গেল। তবুও নিজেকে সংযত করে অভিমানী কন্ঠে যখন ওকে জিজ্ঞাসা করলাম মিথ্যা বললে কেন, তখন ও হাসতে হাসতে বলেছিল যে তোমাদের মানে মেয়েদের নাকি এক অদ্ভুত গুন আছে। তোমরা মেয়েরা খুব সহজেই ধরতে পারো কে তোমাকে কতটা ভালোবাসে। সেজন্য স্নেহা আমার চোখ মুখ আর কথাবার্তা শুনে সহজেই একটা স্পষ্ট ধারণা করেছিল।
এরপর ধীরে ধীরে স্নেহার সঙ্গে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল। তারপর দু'জন দু'জনকে কখন ভালোবেসেছিলাম। দুজনের কেউ বুঝতেই পারলাম না। কিন্তু এত কিছুর পরেও সময় কিন্তু থেমে ছিল না। কালের খরস্রোতে সময় বয়ে গেল নিমেষে।
জানো অনুষ্কা, ছেলেদের জীবনের একটা ঘুমকাড়া সমস্যা আছে আর সেটা হল ভবিষ্যৎ। কমপক্ষে একটা শিক্ষিত ছেলের চাকরি পেতে কমপক্ষে চব্বিশ বছর লাগবেই। কিন্তু কোনো মেয়ের বাবা কি চাইবে মেয়েকে এতদিন আইবুড়ো রাখতে বা শুধু ভালোবাসার বাহানায় একটা দিন মজুর ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে। আবার ঘরে রেখে দিলে কলুষিত সমাজ তাকে যে কলঙ্কিত বানাবে খুব সহজেই। তাই সমবয়সি ছেলেদের ভালোবাসা এতটা সহজে পূর্ণতা পাই না। সেই নিয়মেই স্নেহা আর আমার ভালোবাসাটা কেমন যেন ফিকে হয়ে গেল। এর কিছুদিন পর শুনলাম স্নেহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তারপর থেকে ওর কাছে আর কখনও কথা বলা হয়নি।
জানো অনুষ্কা, ওর সাথে যেদিন আমি শেষ বারের মতো কথা বলেছিলাম সেদিন ও কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, ও ঐ বিয়েটা করতে চাই না। ও পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু এতকিছু জেনেও আমি ওর জন্য কিছুই করতে পারিনি। খুব কষ্ট হত সেইসময় গুলো। একা একা নদীর ধারে আনমনে সময় কাটাতাম। কেউ জানতেই পারতো না আমার মনের অবস্থাটা।
ওর বিয়েতে আমার নিমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু যেতে পারিনি। সত্যি বলতে, যাইনি। নিজের মনের ভেতরে যাকে জায়গা দিয়েছিলাম তাকে অন্যের হতে কীভাবে দেখতে পারি বলো তো।
এরমাঝেই অনেকটা দিন পার হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে স্নেহার শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখি ওই বাড়িতে আর কেউ থাকে না। পাশে একটা বাড়িতে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম স্নেহার স্বামী ওকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কারও সাথে বিয়ে করে ও স্থান ছেড়ে চলে গেছে। একথাটা শুনার পর কেন জানি না নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হল। তারপর স্নেহার বাপের বাড়িতে আসলে ওর বাবা জানালো, প্রায় বছর দুয়েক ও এখানেই আছে। স্নেহার সাথে দেখা করতেই দেখলাম ও কান্নায় ভেঙে পড়ল। ও সবিস্তারে আমাকে সবটা জানালো। আমি আর আমাদের বিয়ের কার্ডটা দিতে পারলাম না। শুধু বললাম, আমি আবার আসব,তোমার মুক্তি দিতে, তুমি তৈরি থেকো।
অনুষ্কা বিশ্বাস করো, সেদিন আমার আর কিছু বলার ছিল না। ওই মেয়েটারও তো মুক্তি চাই। তা না হলে সারাটা জীবন তো ওকে অন্যের কথা শুনে শুনে শেষ হয়ে যেতে হবে। ভালোবাসার কোনোদিন মৃত্যু হয় না। আমি আজও ওকে খুব ভালোবাসি, ঠিক আগের মতোই। আমি বুঝতে পারছি অনুষ্কা তুমিও আমায় খুব ভালোবাসো। তোমার খুব কষ্ট হবে। কিন্তু আমরা না হয় ভালো বন্ধু হয়ে থাকবো সারাটা জীবন। স্নেহার সাথে যে ভুলগুলো হয়েছে, সেগুলো কখনও তোমার সাথে হতে দেব না, তোমায় কথা দিলাম। প্লিজ তোমার মতামত কি সেটা আমাকে খুব দ্রুত জানিয়ে দিও। অপেক্ষায় থাকবো।
তোমার বাবা মা'কে আমার প্রনাম জানিও।
ইতি ---
তোমার প্রিয় বন্ধু অনুপম
দু'দিন পরে....,
প্রিয় অনুপম,
তোমার আগের চিঠিটা আমি একটু আগে পেলাম। খুব ভালো লাগলো এটা জেনে যে তোমার মানবিকতাকে তুমি হারাতে দেও নি। তোমার আগের চিঠিটা পড়ার পর আমার এটাই মনে হচ্ছে যে তুমি স্নেহাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক করেছো। তোমার জায়গায় আমি থাকলে এটাই করতাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য রকম, কীভাবে ম্যানেজ করবো। কার্ড ছাপানো, নিমন্ত্রণ করা হয়ে গেছে। অনেক ভেবেচিন্তে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্নেহাকে একদিনের জন্য অনুষ্কা হতে হবে। আর আমি হব স্নেহা। আমি তোমার বন্ধু হয়েই যাবো। আমি বাবাকে পুরোটা বলেছি। বাবাও তোমাকে সমর্থন করেছে। আমাদের নিমন্ত্রণের বিষয়টা বাবা ম্যানেজ করে নেবে বলেছেন। তোমরা দু'জনে খুব সুখী হবে। ঈশ্বরের কাছে এই কামনা করছি। আর খুব তাড়াতাড়ি তোমার সাথে দেখা হবে, তোমার বিয়েতে। ততদিন ভালো থেকো।
তোমার বাবা, মা'কে আমার ভালোবাসা জানিও।
ইতি -----
তোমার প্রিয় বন্ধু অনুষ্কা
তোমার সাথে আমার গতকালই ফোনে কথা হয়েছিল। আন্দাজ পাঁচ - ছয় মাস ধরে তোমার সাথে আমি এভাবে কথা বলি, সুখ দুঃখ শেয়ার করি কিন্তু আমার অত্যন্ত ব্যক্তিগত একটা কথা যেটা তোমাকে কখনও বলা হয়নি। অনেকবার বলব ভেবেছি কিন্তু বারবারই তোমার মায়াভরা ভালোবাসার কাছে হার মেনেছি। সেজন্য আর বলা হয়ে ওঠেনি।
আমাদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে আগামী মাসের ২৬ তারিখে। এমনকি বিয়ের কার্ডও ছাপানো শেষ। যত দিন যাচ্ছে তত সময় কমে আসছে। তোমার সাথে ফোন করে কথাটা বলতে পারতাম কিন্তু আমার পক্ষে সুন্দর করে গুছিয়ে বলা সম্ভব নয়। তাই লিখতে বসলাম।
আজ থেকে বছর ছয়েক আগের কথা। আমার বয়স তখন কুড়ি। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। একদিন বাসে করে কোনো এক জায়গা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। প্রায় ঘন্টা তিনকের রাস্তা ছিল। মিনিট দশেক আসার পরেই আমার পাশের সিট খালি হয় এবং একটা মেয়ে সেই সিটে বসে। সত্যি বলতে আমি ছোটো থেকেই মেয়েদেরকে একটু এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু সে বার কেন জানি না একটু অন্য রকম অনুভূতি হল। বাস যতই চলছে আমার হৃদস্পন্দন যেন তত বেড়েই চলেছে। অনুভব করলাম আমি যেন ভালোবাসায় নিমগ্ন হয়ে পড়েছি। কিন্তু ভদ্রতার সাথে কিছুক্ষণ চুপচাপ শান্ত হয়ে বসার পরেও দেখলাম সে আমার সাথে কোনো কথা বলল না। সেজন্য বাধ্য হয়েই জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তার নাম স্নেহা রায়, আমাদের কলেজে আমাদের সাথেই পড়ে কিন্তু অন্য ডিপার্টমেন্টে। এটা জানার পর আমার মতো সেও যথেষ্ট খুশি ছিল। তারপর আরও নানা রকম কথা হল সারাটা পথ ধরে। গল্প করতে করতে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, স্নেহা ভালোবাসা বা প্রেম কোনোটাকেই তোয়াক্কা করে না। প্রায় ঘন্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ সে আমার কাছে ফোন নম্বর চাইলো। কিন্তু তার নম্বরটা দিয়ে যাইনি। তারপর সে নেমে গেল। এতদিন একা থাকার পরেও যে অনুভূতিটা কখনও হয়নি আজ যেন সেটাই হল। স্নেহা নেমে যাওয়ার পর বড়ো একাকিত্ব বোধ করলাম। মনে হল অনেক কিছু হারালাম।
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যাই। অনেকবার কলেজে গিয়েছি কোনোদিন ওর সাথে দেখা হয়নি। ওদের ডিপার্টমেন্টে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম স্নেহা রায় নামে ঐ ডিপার্টমেন্টে কেউ পড়ে না। তখন বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠলেও নিজেকে বুঝ দিলাম যে স্নেহা মিথ্যা বলতে পারে না। অনেক আশা করেছিলাম হয়ত ফোন করবে কিন্তু কোনোদিনই ফোনও করেনি। ফলে যেটুকু ভালোবাসা মনের মধ্যে জমা হয়েছিল তার জন্য খুব মায়া হল। বুঝলাম ভালোবাসা বড়ো জটিল বস্তু। তার উপর যদি সেটা এক তরফা হয়। এরপরেও বেশ কিছুদিন অপেক্ষায় থাকার পর যখন ভাবছি সবই স্বপ্ন ছিল, ঠিক তখনই মাঝরাতে রিংটোন বেজে উঠল, একটা অচেনা নম্বর। কথা বলে জানতে পারলাম ফোনের ওপারে রয়েছে স্নেহা। সে অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে আমার কাছে ক্ষমা চাইলো মিথ্যে বলার জন্য। প্রথমে ওর প্রতি একটা অভিমান থাকলেও পরে বুঝলাম ও পাথর নয়। যথেষ্ট মানবিকতা আছে ওর মধ্যে। ভালোবাসা কমার বদলে বরং অনেক বেড়ে গেল। তবুও নিজেকে সংযত করে অভিমানী কন্ঠে যখন ওকে জিজ্ঞাসা করলাম মিথ্যা বললে কেন, তখন ও হাসতে হাসতে বলেছিল যে তোমাদের মানে মেয়েদের নাকি এক অদ্ভুত গুন আছে। তোমরা মেয়েরা খুব সহজেই ধরতে পারো কে তোমাকে কতটা ভালোবাসে। সেজন্য স্নেহা আমার চোখ মুখ আর কথাবার্তা শুনে সহজেই একটা স্পষ্ট ধারণা করেছিল।
এরপর ধীরে ধীরে স্নেহার সঙ্গে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল। তারপর দু'জন দু'জনকে কখন ভালোবেসেছিলাম। দুজনের কেউ বুঝতেই পারলাম না। কিন্তু এত কিছুর পরেও সময় কিন্তু থেমে ছিল না। কালের খরস্রোতে সময় বয়ে গেল নিমেষে।
জানো অনুষ্কা, ছেলেদের জীবনের একটা ঘুমকাড়া সমস্যা আছে আর সেটা হল ভবিষ্যৎ। কমপক্ষে একটা শিক্ষিত ছেলের চাকরি পেতে কমপক্ষে চব্বিশ বছর লাগবেই। কিন্তু কোনো মেয়ের বাবা কি চাইবে মেয়েকে এতদিন আইবুড়ো রাখতে বা শুধু ভালোবাসার বাহানায় একটা দিন মজুর ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে। আবার ঘরে রেখে দিলে কলুষিত সমাজ তাকে যে কলঙ্কিত বানাবে খুব সহজেই। তাই সমবয়সি ছেলেদের ভালোবাসা এতটা সহজে পূর্ণতা পাই না। সেই নিয়মেই স্নেহা আর আমার ভালোবাসাটা কেমন যেন ফিকে হয়ে গেল। এর কিছুদিন পর শুনলাম স্নেহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তারপর থেকে ওর কাছে আর কখনও কথা বলা হয়নি।
জানো অনুষ্কা, ওর সাথে যেদিন আমি শেষ বারের মতো কথা বলেছিলাম সেদিন ও কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, ও ঐ বিয়েটা করতে চাই না। ও পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু এতকিছু জেনেও আমি ওর জন্য কিছুই করতে পারিনি। খুব কষ্ট হত সেইসময় গুলো। একা একা নদীর ধারে আনমনে সময় কাটাতাম। কেউ জানতেই পারতো না আমার মনের অবস্থাটা।
ওর বিয়েতে আমার নিমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু যেতে পারিনি। সত্যি বলতে, যাইনি। নিজের মনের ভেতরে যাকে জায়গা দিয়েছিলাম তাকে অন্যের হতে কীভাবে দেখতে পারি বলো তো।
এরমাঝেই অনেকটা দিন পার হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে স্নেহার শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখি ওই বাড়িতে আর কেউ থাকে না। পাশে একটা বাড়িতে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম স্নেহার স্বামী ওকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কারও সাথে বিয়ে করে ও স্থান ছেড়ে চলে গেছে। একথাটা শুনার পর কেন জানি না নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হল। তারপর স্নেহার বাপের বাড়িতে আসলে ওর বাবা জানালো, প্রায় বছর দুয়েক ও এখানেই আছে। স্নেহার সাথে দেখা করতেই দেখলাম ও কান্নায় ভেঙে পড়ল। ও সবিস্তারে আমাকে সবটা জানালো। আমি আর আমাদের বিয়ের কার্ডটা দিতে পারলাম না। শুধু বললাম, আমি আবার আসব,তোমার মুক্তি দিতে, তুমি তৈরি থেকো।
অনুষ্কা বিশ্বাস করো, সেদিন আমার আর কিছু বলার ছিল না। ওই মেয়েটারও তো মুক্তি চাই। তা না হলে সারাটা জীবন তো ওকে অন্যের কথা শুনে শুনে শেষ হয়ে যেতে হবে। ভালোবাসার কোনোদিন মৃত্যু হয় না। আমি আজও ওকে খুব ভালোবাসি, ঠিক আগের মতোই। আমি বুঝতে পারছি অনুষ্কা তুমিও আমায় খুব ভালোবাসো। তোমার খুব কষ্ট হবে। কিন্তু আমরা না হয় ভালো বন্ধু হয়ে থাকবো সারাটা জীবন। স্নেহার সাথে যে ভুলগুলো হয়েছে, সেগুলো কখনও তোমার সাথে হতে দেব না, তোমায় কথা দিলাম। প্লিজ তোমার মতামত কি সেটা আমাকে খুব দ্রুত জানিয়ে দিও। অপেক্ষায় থাকবো।
তোমার বাবা মা'কে আমার প্রনাম জানিও।
ইতি ---
তোমার প্রিয় বন্ধু অনুপম
দু'দিন পরে....,
প্রিয় অনুপম,
তোমার আগের চিঠিটা আমি একটু আগে পেলাম। খুব ভালো লাগলো এটা জেনে যে তোমার মানবিকতাকে তুমি হারাতে দেও নি। তোমার আগের চিঠিটা পড়ার পর আমার এটাই মনে হচ্ছে যে তুমি স্নেহাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক করেছো। তোমার জায়গায় আমি থাকলে এটাই করতাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য রকম, কীভাবে ম্যানেজ করবো। কার্ড ছাপানো, নিমন্ত্রণ করা হয়ে গেছে। অনেক ভেবেচিন্তে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্নেহাকে একদিনের জন্য অনুষ্কা হতে হবে। আর আমি হব স্নেহা। আমি তোমার বন্ধু হয়েই যাবো। আমি বাবাকে পুরোটা বলেছি। বাবাও তোমাকে সমর্থন করেছে। আমাদের নিমন্ত্রণের বিষয়টা বাবা ম্যানেজ করে নেবে বলেছেন। তোমরা দু'জনে খুব সুখী হবে। ঈশ্বরের কাছে এই কামনা করছি। আর খুব তাড়াতাড়ি তোমার সাথে দেখা হবে, তোমার বিয়েতে। ততদিন ভালো থেকো।
তোমার বাবা, মা'কে আমার ভালোবাসা জানিও।
ইতি -----
তোমার প্রিয় বন্ধু অনুষ্কা
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৭/০২/২০২২ঠাস বুননে অসাধারণ ভালবাসার গল্প
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৭/০২/২০২২দারুণ
-
মোঃ আমিনুল ইসলাম মিঠু ২৬/০২/২০২২খুবই সুন্দর একটি গল্প। ভাল থাকুন প্রিয় লেখক
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৬/০২/২০২২খুবই সুন্দর লেখা
-
ফয়জুল মহী ২৪/০২/২০২২সমৃদ্ধ সৃজন
অসাধারণ বুনুন