বেকার ও বেকারত্ব
বয়স প্রায় কুড়ি অথ্যাৎ সময়ের মাপকাঠিতে বেকার শিরোপা পাওয়ার যোগ্য হয়ে গেছি অনেক আগেই। যখন ছোটো ছিলাম তখন সবাই বলত "এ ছেলেটা লেখাপড়ায় খুব ভালো। চাকরি পেয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। বাবা মা'র মুখ উজ্জ্বল করবে। " সত্যি কথা বলতে তখন কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগত কারণ আমার ছোটো থেকেই রেজাল্ট খুব ভালো ছিল। কিন্তু সেসব দিনগুলো আজ স্বপ্ন বলে মনে হয়। আজ তারা আর কেউ আমার প্রশাংসা করে না। বরং তারাই কখনও আড়ালে বা কখনও প্রকাশ্যে বেকার শিরোপা দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করেন না। আমি অতি সাধারণ পরিবারের ছেলে। এক কথায় যাকে বলা যেতে পারে গরীব। বি এস সি পড়ার সাথে সাথে বাচ্চাদের টিউশনি করাই। কিন্তু তাতে কিচ্ছু হয় না। নিজের কলেজ ফ্রি আর টিউশন ফ্রি দিতে দিতেই সব শেষ। এগুলো দেওয়ার পর নিজের প্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্র কেনার সামর্থ্য আর থাকে না। তারমধ্যে এই করোনাকালে যেসব টিউশনি ছিল সেটাও অর্ধেক হয়ে গেছে। যেহেতু গত দু'বছর ধরে বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন বন্ধ, যেহেতু গত দু'বছর ধরে বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন বন্ধ,ছেলেমেয়েদের টিউশনি বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে অর্থাভাব যেন আমাকে তার মায়ায় আকৃষ্ট করছে। আজ বুঝতে পারি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে গেলে শুধু টাকার প্রয়োজন। টাকা দিয়ে শুধু দ্রব্য নয়, স্বপ্ন কেনা যাই, সম্পর্ক কেনা যাই, ভালোবাসা কেনা যাই। যখন রাতে বালিশে মাথা রাখি তখন যেন চিন্তাগুলো দ্বন্দ্ব শুরু করে। রাতে ঘুম আসে না। সেজন্য টেবিল ল্যাম্প জালিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ারে বসেই সময় কেটে যাই। ঘুটঘুটে অন্ধকারে যেন টেবিল ল্যাম্পের আলোয় আমি ভবিষ্যতের উজ্জ্বল রেখা খোঁজার চেষ্টা করি। অনেক ভাবি বই পড়ব কিন্তু পড়তে বসলেই মনে হয় টিউশনের ফ্রি বাকী আছে, এত তারিখের মধ্যে কলেজে ফ্রি দিতে হবে, এটা কিনতে হবে ওটা কিনতে হবে ইত্যাদি। ফলে পড়াশোনা আর শেষ হয়ে ওঠে না। টেবিলের উপরে সাজানো বইগুলো নীরবতার সাথে যেন লড়াই করছে একাই। একটা সময় ছিল যখন মনে মনে গর্ব বোধ করতাম আমি একজন বাঙালি। খুব অহংকার করতাম একজন ভারতীয় হিসেবে। কিন্তু আজ এই বাংলার প্রতি, এই ভারতবর্ষের প্রতি যেন একপ্রকার অভিমান জমা হয়েছে। আর সেই অভিমান এসে অভিযোগ করে একটা জবের,একটা কাজের। আমাদের মতো বেকারদের একটা কাজের জন্য কত আন্দোলন হয় দিনের পর দিন। কিন্তু একটা সত্য হল, তারা সারাদিন যতই রব তুলুক না কেন, দিনশেষে তারাই সবচেয়ে বেশি নীরব।
আজ বাস্তবের সাথে লড়াই করতে করতে স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে একটা স্পস্ট পার্থক্য দেখতে পাই। পড়াশোনা করে নিজের জীবনে অল্প অপ্রয়োজনীয় শান্তি আসলেও পকেটে অর্থ না থাকলে সেই শান্তি বিরক্তিকর লাগে বড্ড বেশি। আজ যদিও ভারতবর্ষের কোনো বেকারের বয়স থেমে নেই কিন্তু থেমে আছে ভবিষ্যৎ,স্বপ্ন,সম্পর্ক আরও কত কিছু ! ফলে মাঝরাতের নিঃশব্দ অন্ধকার ঘরে সেই বেকার ছেলেটার চোখের জল কেউ দেখতেই পাই না।
যোগ্যতার ভর পিঠে ঝুলতে ঝুলতে আজ হয়ত বেশিরভাগ বেকারের স্পন্ডাইলাইটিস হয়ে গেছে, ঘাড় - পিঠ অসহ্য যন্ত্রনা করছে কিন্তু ঔষধ কেনার টাকা পর্যন্ত নেই। তাদের মানসিক যন্ত্রনার খোঁজ কেউ নেই না।
না...., সাধারণত সুশিক্ষিত ব্যক্তি কখনও রাজনীতি করে না। এর বিশেষ কারণ, রাজনীতি খারাপ নয়, রাজনৈতিক ঘটনাগুলো খারাপ। আর যাই হোক, জোচ্চর, ধোকাবাজ হতে পারব না। রাজ্য সহ দেশের নেতা মন্ত্রীদের মতো, মিথ্যা দিয়ে ভবিষ্যৎ আঁকতে পারব না। এগুলো দেখলে দিন শেষে মনে হয়, মিথ্যা বলার থেকে চাকরি না করাই ভালো। করোনা, ওমিক্রন এর যুগে মন্ত্রীগুলো বেকারদের নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবেন না। তারা সিংহাসনের লড়াইয়ে মত্ত।
মায়ের হাতে টাকা দিয়ে ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা জাতি, যুগ যুগ বেকারত্বের মূল কারণ হয়ে দাঁড়াক। দুই টাকা কেজি দরে চাল দিয়ে স্বপ্নের স্বাদ ভুলিয়েছে যে জাতি, তারা মাথা উঁচু করুক। শিক্ষাকে মূল্যহীন করা জাতি, নিজের মেরুদণ্ড সোজা করুক। কি অদ্ভুত এই আজব জাতি ! প্রতিশ্রুতি দেয় সমগ্র জাতি রক্ষার কিন্তু রক্ষা করে নিজের জাতি। না...... হয়ত ওদের দোষ নয়, যে ছেলেটি মাঝরাতে অস্পষ্ট আলো খোঁজে, এটা তার দোষ, যে মা সামান্য টাকার জন্য ছেলের ভবিষ্যৎ ভুলে যাই, তার দোষ। যে বাবা ২ টাকার চালের জন্য স্বপ্নের স্বাদ ভুলে যাই, এটা তো তাদেরই দোষ।
মাঝে মাঝে ভাবি, যে দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ সেই দেশ কিভাবে অদ্ভুত প্রকল্পের জন্য জাতীয় পুরস্কার পায় ! হয়ত আগামীতে আবার ক্রিতোদাস হবে প্রত্যেকটি মানুষ আর রাজার হালে থাকবে রাজনৈতিক নেতারা ........! হয়ত সেদিন মানুষ ভিক্ষা করবে, আর দেশ বিক্রি হবে বিদেশের হাতে ........ । আর যদি তা না হয়, তাহলে এই বেকারাই নিজেদের অধিকার বুঝে নেবে। ছেলের কাঁধে হাত রেখে মা - বাবা এগিয়ে আসবে। মা - বাবা হাতে হাত রেখে এগিয়ে আসবে প্রতিবেশী। সেদিন ..... হ্যাঁ সেদিনই রাজত্ব করা মানুষগুলো, স্বার্থপর, বেইমান মানুষগুলো হারিয়ে যাবে অনৈতিকতার দেশে। জগৎ সভায় আমার দেশ আবার শ্রেষ্ঠ আসন দখল করবে।
আজ বাস্তবের সাথে লড়াই করতে করতে স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে একটা স্পস্ট পার্থক্য দেখতে পাই। পড়াশোনা করে নিজের জীবনে অল্প অপ্রয়োজনীয় শান্তি আসলেও পকেটে অর্থ না থাকলে সেই শান্তি বিরক্তিকর লাগে বড্ড বেশি। আজ যদিও ভারতবর্ষের কোনো বেকারের বয়স থেমে নেই কিন্তু থেমে আছে ভবিষ্যৎ,স্বপ্ন,সম্পর্ক আরও কত কিছু ! ফলে মাঝরাতের নিঃশব্দ অন্ধকার ঘরে সেই বেকার ছেলেটার চোখের জল কেউ দেখতেই পাই না।
যোগ্যতার ভর পিঠে ঝুলতে ঝুলতে আজ হয়ত বেশিরভাগ বেকারের স্পন্ডাইলাইটিস হয়ে গেছে, ঘাড় - পিঠ অসহ্য যন্ত্রনা করছে কিন্তু ঔষধ কেনার টাকা পর্যন্ত নেই। তাদের মানসিক যন্ত্রনার খোঁজ কেউ নেই না।
না...., সাধারণত সুশিক্ষিত ব্যক্তি কখনও রাজনীতি করে না। এর বিশেষ কারণ, রাজনীতি খারাপ নয়, রাজনৈতিক ঘটনাগুলো খারাপ। আর যাই হোক, জোচ্চর, ধোকাবাজ হতে পারব না। রাজ্য সহ দেশের নেতা মন্ত্রীদের মতো, মিথ্যা দিয়ে ভবিষ্যৎ আঁকতে পারব না। এগুলো দেখলে দিন শেষে মনে হয়, মিথ্যা বলার থেকে চাকরি না করাই ভালো। করোনা, ওমিক্রন এর যুগে মন্ত্রীগুলো বেকারদের নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবেন না। তারা সিংহাসনের লড়াইয়ে মত্ত।
মায়ের হাতে টাকা দিয়ে ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা জাতি, যুগ যুগ বেকারত্বের মূল কারণ হয়ে দাঁড়াক। দুই টাকা কেজি দরে চাল দিয়ে স্বপ্নের স্বাদ ভুলিয়েছে যে জাতি, তারা মাথা উঁচু করুক। শিক্ষাকে মূল্যহীন করা জাতি, নিজের মেরুদণ্ড সোজা করুক। কি অদ্ভুত এই আজব জাতি ! প্রতিশ্রুতি দেয় সমগ্র জাতি রক্ষার কিন্তু রক্ষা করে নিজের জাতি। না...... হয়ত ওদের দোষ নয়, যে ছেলেটি মাঝরাতে অস্পষ্ট আলো খোঁজে, এটা তার দোষ, যে মা সামান্য টাকার জন্য ছেলের ভবিষ্যৎ ভুলে যাই, তার দোষ। যে বাবা ২ টাকার চালের জন্য স্বপ্নের স্বাদ ভুলে যাই, এটা তো তাদেরই দোষ।
মাঝে মাঝে ভাবি, যে দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ সেই দেশ কিভাবে অদ্ভুত প্রকল্পের জন্য জাতীয় পুরস্কার পায় ! হয়ত আগামীতে আবার ক্রিতোদাস হবে প্রত্যেকটি মানুষ আর রাজার হালে থাকবে রাজনৈতিক নেতারা ........! হয়ত সেদিন মানুষ ভিক্ষা করবে, আর দেশ বিক্রি হবে বিদেশের হাতে ........ । আর যদি তা না হয়, তাহলে এই বেকারাই নিজেদের অধিকার বুঝে নেবে। ছেলের কাঁধে হাত রেখে মা - বাবা এগিয়ে আসবে। মা - বাবা হাতে হাত রেখে এগিয়ে আসবে প্রতিবেশী। সেদিন ..... হ্যাঁ সেদিনই রাজত্ব করা মানুষগুলো, স্বার্থপর, বেইমান মানুষগুলো হারিয়ে যাবে অনৈতিকতার দেশে। জগৎ সভায় আমার দেশ আবার শ্রেষ্ঠ আসন দখল করবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুল মান্নান মল্লিক ০৭/০৬/২০২২একদম সঠিক কথা
-
তানভীর রহমান শুভ্র ০১/০৫/২০২২সত্যিই ভাববার মতো!
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৯/০৩/২০২২খুব সত্য কথা
-
মোঃ বুলবুল হোসেন ০৭/০৩/২০২২সুন্দর