www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রান্তরের পদার্পণ - হীরা চুরি - তৃতীয় পরিচ্ছদ (অন্তিম)

তৃতীয় পরিচ্ছদ

প্রান্তর সকালে আমার ঘরে এসে বলল, " তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নে, মধ্যমগ্রাম যেতে হবে।" প্রায় পনেরো মিনিটের মধ্যেই আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম। যখন ট্রেনে করে যাচ্ছি তখন আমি প্রান্তরকে বললাম, " আচ্ছা। আমরা মধ্যমগ্রামে যাচ্ছি কেন?" প্রান্তর বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল, "রাজের পিসির বাড়ি। " আমি খুশি হয়েই বললাম, " তা বেশ ভালোই হল।"
কিছুক্ষণ পর আমি আবার প্রশ্ন করলাম, " আচ্ছা, রাজের পিসোমশাই আসেন নি তো। ওর পিসি তো সিন্দুর পরে ছিলেন, তারমানে ওর পিসোমশাই আছেন। " রাজ এবার হাসতে হাসতে বলল, " আছেন তো। উনি উনার কাজের জন্য একটু বাইরে গেছেন। সেজন্য আসতে পারেন নি। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় পিসি এটাই বলেছিলেন।" তারপর এ বিষয়ে আর কোনো কথা হয় নি। অনেক খোঁজা খুঁজির পর পিসির বাড়িতে পৌঁচ্ছালাম। দেখলাম একটা সাদামাটা ঘর। আমি অবাক হয়েই বললাম, " আমি ভেবেছিলাম পিসির বড়ো সুন্দর বাড়ি হবে, যেভাবে উনি রাজ'দের বাড়িতে ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যক্তিগত ড্রাইভার নিয়ে গিয়েছিলেন। তাতে এই ধারণাই হয়। " প্রান্তর দেখলাম আমার সাথে সহমত পোষণ করল। আমরা বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরের ভেতরে যাওয়ার উপায় নেই। তাই বাইরের চারপাশটা ঘুরতে লাগলাম। প্রান্তর দেখলাম একটা জানালার ধারে গিয়ে ভেতরের কিসের একটা ফটো তুলছে। পরে জিজ্ঞাসা করলে ও বলল ফটোটা ওর খুব ভালো লেগেছে। তারপর ওখান থেকে বেরোনোর পর প্রান্তর বলল, "এবার বারাসাত যেতে হবে একটু, রাজের মামার বাড়ি। " তখন আমি লাফিয়ে উঠে বললাম, " ওখানে তো আমার দিদির বাড়ি। চল, আমার দিদির বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।" কিন্তু প্রান্তর বলল, "না আজ নয়। তুই ঘুরে আয়। আমি বাড়ি যাওয়ার সময় তোকে কল করে নেব। " তারপর প্রান্তর রাজের মামার বাড়িতে গেল। আমি দিদির বাড়িতে গেলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক পর প্রান্তর ফোন করলে স্টেশনে ওর সাথে দেখা করলাম। তারপর সারা রাস্তা দিদির বাড়িতে আনন্দ আর ভাগ্নের সাথে খুনসুটির গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরলাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি তখন তিনটে বেজে গেছে।

ঘন্টাখানেকের মধ্যেই গুছিয়ে নিয়ে আমরা রাজ'দের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। পথে যেতে যেতে প্রান্তর থানায় ফোন করে দীপঙ্কর চক্রবর্তী কে অভিলাষ কাকু'র বাড়িতে আসতে বললেন। তারপর রাজদীপ'কে ফোন করে সব্বাইকে বাড়িতে থাকতে বলল। প্রায় মিনিট দশ পরে আমরা রাজ'দের বাড়িতে পৌঁচ্ছালাম। গিয়ে দেখি সব্বাই ব্যাগ পত্তর নিয়ে প্রস্তুত। শুধুমাত্র পুলিশের অনুমতির অপেক্ষায়।

আমি আর প্রান্তর আরও দশ মিনিট অপেক্ষা করলাম, দীপঙ্কর চক্রবর্তীর জন্য। প্রান্তর আমার কানে কানে বলল, "পিসির গাড়ির ড্রাইভার বাইরে আছে, ভেতরে ডেকে নিয়ে আসতে। " আমি ওর কথামত সেটাই করলাম। সবাই উপস্থিত হওয়ার পর প্রান্তর রাজ'কে জিজ্ঞাসা করল, " বন্ধ ঘর থেকে বল তো কীভাবে হীরা চুরি হতে পারে? " কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ থাকার পর প্রান্তর নিজেই বলল, " যদি হীরাটাকে ঘরের কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়। ঠিক বললাম তো রাজদীপ রায়চৌধুরী! " দেখলাম রাজ থতমত খেয়ে গেছে। আমতা আমতা করে রাজ বলল, " হ্যাঁ, আমিই মানে...... "প্রান্তর বলল, " থাক এখন তোর আর বলতে হবে না। আমি বলছি।"
"রাজ হীরাটাকে নিজেই নিজের ঘরে লুকিয়ে রেখেছিল, টেবিল ল্যাম্পের মধ্যে। তার কারণ সম্ভবত আমার সাথে রসিকতা। আগেরদিন ওর ঘর তল্লাশি করতে গিয়ে এটা খুঁজে পাই। আমি সেটা তুলে নিয়ে ওখানে একটা কাচের টুকরো রেখে দিয়েছিলাম, যেটা ও পরে বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারিনি, লজ্জায়। তা যাই হোক ও ভুল কিছু করিনি। এর মাধ্যমে ও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। ও যে হীরাটা লুকিয়ে রেখেছিল ওটা আমি পরীক্ষা করে দেখেছিলাম।ওটা একটা নকল হীরা। আসল হীরা ওর জন্মদিনের দিন রাতে চুরি হয়নি।আমি নিশ্চিত তাঁর দু'একদিন আগেই চুরিটা হয়েছিল।সেটা ও বুঝতেই পারিনি।"
এরপর প্রান্তর সেই নকল হীরাটা সকলের সামনে এনে রাখল।
আবার প্রান্তর বলতে শুরু করল।
"এখন প্রশ্ন একটাই আসল হীরা কোথায়? বা জহুরি কি খাঁটি হীরা দিয়েছিল? হ্যাঁ, দিয়েছিল। জহুরি খাঁটি হীরায় দিয়েছিল। কারণ জহুরি অভিলাষ কাকু'র খুব ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু। তাহলে প্রশ্ন একটাই আসল হীরা কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসল এক অজানা তথ্য।"
রাজদীপ'কে সেই ফটোটা দেখিয়ে প্রান্তর বলল, " এটা তোর কে হয় বলতো! পিসোমশাই তো। এবার এই মুখ টাতে গোঁপ দাড়ি লাগিয়ে দিলে আর একটা চেনা মুখ উঠে আসে।" বলতে বলতে প্রান্তর ড্রাইভারের সামনে গিয়ে গোঁফ আর দাড়ি ধরে দিল টান। আসলে ওগুলো সবই নকল ছিল। দেখলাম সবাই অবাক হয়ে গেল। এবার প্রান্তর পিসি আর পিসোমশাইকে বলল, " এই ছদ্মবেশের কারণ কি?মাথা নীচু করে পিসি বলল,"গত বছর লকডাউনে ওর চাকরিটা চলে গেছে। যা একটু আধটু টাকা পয়সা জমিয়েছিলাম, সব খরচ হয়ে গিয়েছিল। আমরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। ওর আর নতুন চাকরিও হল না। তাই ভেবেছিলাম যদি হীরাটি পাওয়া যাই। অনেক দাম ওটার। কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না।" প্রান্তর বলল, " তার মানে আপনারা নেননি। তাহলে নিল কে? "
তারপর সবার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে প্রান্তর বলতে লাগল, " প্রথমে এক বছর মতো একটা হীরা কাটার কারখানায় কাজ করেছিলাম। তারপর একটা স্বর্ণ কারের দোকানে দিন মজুরি করতাম। তারপর অবশেষে নিজের একটা জুয়েলারী খুলে বসলাম। কিন্তু মানুষকে এত পরিমাণে ঠকাতে শুরু করলাম যে আমার ভিটে মাটি, বিষয় সম্পত্তি সবই হারাতে হল। আর সেটা হওয়ায় স্বাভাবিক ছিল কারণ জনগণের ক্ষমতা অনেক।ঠিক বললাম তো মামা!" মামার দিকে তাকিয়ে প্রান্তর বলল।মামা'র কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। মামা অস্বীকার করতে শুরু করলে দীপঙ্কর চক্রবর্তী'কে প্রান্তর বলল, " উনার ব্যাগটা কে ভালো করে দেখুন। তা না হলে পকেটগুলো। এখান থেকেই পেয়ে যাবেন। কারণ আসল হীরা সরিয়ে নিখুঁতভাবে নকল হীরা রাখা একমাত্র উনার পক্ষেই সম্ভব।" কিছুক্ষণ খান তল্লাশি করার পর ব্যাগের ভেতর একটা লুকানো পকেট থেকে খাঁটি হীরা উদ্ধার হল।

ফিরে আসার সময় প্রান্তর রাজদীপ'কে বলল, " কখনও কখনও আমাদের রসিকতা বড়ো কিছু করে দেখানোর সুযোগ করে দেই। তাই রসিকতা করতে ভুলো না। " তারপর আমি বললাম, " কাল আমরা সবাই মুর্শিদাবাদ যাবো রাজদীপ আমাদের সঙ্গে তুইও চল। খুব মজা হবে। " রাজ শুধু বলল, " আমি রাতে জানিয়ে দেব। " এরপর দীপঙ্কর বাবু আমাদের ধন্যবাদ দেওয়ার সাথে সাথে বলল, "কাল থেকে পাঁচ দিন আমি ছুটিতে আছি। তাহলে চলো আমিও তোমাদের সঙ্গে ঘুরে আসি। আমি হাসতে হাসতে বললাম, " অবশ্যই।"

রাজ'দের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমি প্রান্তরকে বললাম,"তুই মলয় কাকু'কে সন্দেহ করলি না কেন?"প্রান্তর শুধু বলল, " আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম উনি একজন ইন্ডিয়ান আর্মি ছিলেম। কিন্তু একদিন হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দেন। তারপর বসিরহাট হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষক। শুনেছি মানুষটা ছাত্রছাত্রীদের কাছে ঈশ্বর সমতুল্য। তাছাড়া আমার জিজ্ঞাসাবাদে উনার প্রতি কোনোপ্রকার সন্দেহের সৃষ্টি হয়নি। সুতরাং উনার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।"

মাঠ ঘুরে বাড়িতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। আসতে আসতে আমি প্রান্তরকে বললাম, "তুই খাঁটি হীরা চিনতে শিখলি কবে থেকে? " ও শুধু একটু মৃদু হেসে ছিল। বাড়িতে এসে প্রান্তর অবাক হয়ে গেল। ওর মা আর বাবা এসেছে। ওর মা ওকে বলল, " আবার তুই এখানে এসেও সত্য অন্বেষণ করা শুরু করলি! " রাত দশটা নাগাদ রাজদীপ ফোন করে বলল, " ওরাও স্বপরিবারে আমাদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ যাবে। "

(সমাপ্ত)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩০২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০২/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর লেখা
  • ফয়জুল মহী ২০/০২/২০২২
    লেখার মাঝে সুন্দর ভাবার্থ ফুটে উঠেছে।
  • ভাল
 
Quantcast