সত্য নাকি ভালোবাসা
আজ থেকে প্রায় দু'বছর আগে, আমিও মুক্ত পরিবেশে মুক্তির স্বাদ নিয়েই বেঁচেছিলাম। আর মাঝের দু'টো বছর বদ্ধ ঘেরাটোপে ঘর বন্দি ছিলাম।আজ যদিও আবার মুক্ত পরিবেশে আছি কিন্তু মন থেকে মুক্তির স্বাদ নিতে পারছি না। প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যা তাদের জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ঠিক তেমনি আমার জীবনেও এমন একটা ঘটনা ঘটে যা আমাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে। আর সেটাই এখানে বলব।
আমি প্রান্তর। প্রান্তর রায়। বয়সটা এখন চব্বিশ পেরিয়ে গেছে।ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি এতটাই মনোনিবেশ ছিলাম যে কখনও কাউকে ভালোবাসতে পারবো ভাবেনি।কিন্তু হঠাৎ করে ভালোবাসাটাও জীবনে এসেছিল। কখন, কীভাবে এবং কেন যে আমি তৃণাকে ভালোবেসে ছিলাম,আমি জানি না। তবে এটা ঠিক তৃণাকে খুব ভালোবাসতাম। হয়ত নিজের থেকেও বেশি। হয়ত তৃণাও সেটা জানত, বুঝতেও পারতো কিন্তু কখনোই ধরা দিত না। আর যেদিন ধরা দিয়েছিল সেদিনই ওর সাথে আমার শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল।
সত্যি কথা বলতে ওকে ভালোবেসে কখনও আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে কোনো রকম সমস্যায় পড়িনি।বরং বারবারই ও বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদে পাশে থেকেছে। দূরে থেকেও কখনও বুঝতে দেয়নি যে আমি মাতৃহারা।কিন্তু একটা কথা বলতে ওর খুব আপত্তি ছিল। আর সেই আপত্তিকর কথাটা যে কি সেটা আমার বুঝতে বাকি ছিল না। সম্ভবত কথাটি হল এটাই যে ও আমাকে ভালোবাসতো। না, ও সরাসরি আমাকে কখনও কথাটা বলিনি। তার কারণ হয়ত আমরা সমবয়সি। যদি একটা সুস্থ মানুষের মতো বিচার করি তাহলে এটা বলতেই হবে যে ওর সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল সেদিনও। কিন্তু ও সবসময় চায়তো আমি তাড়াতাড়ি কোনো চাকরির সন্ধান করতে পারি। আর ঠিক সেজন্য প্রতিমুহূর্তে আমার অনুপ্রাণিত করার দায়িত্বটাও ও নিয়েছিল।
বয়সটা আঠারোর গন্ডি পার হওয়া মানেই যেমন ছেলেদের মধ্যে একটা বড়ো বড়ো ভাব চলে আসে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার প্রতি আসক্তি একটু হলেও বাড়ে। তার সঠিক কারণটা অবশ্যি আমার জানা নেই। তবে এটা যে হয় সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। এই বয়সেই যে কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছেলেদের মধ্যে একটা রোমান্টিসিজম কাজ করে। কিন্তু এটা কোনো অন্যায় নয়। তবে যেটা অন্যায় সেটাই আমি করেছিলাম। সন্দেহ। একটা মানুষের সাথে চার বছর মেশার পর যে তার প্রতি সন্দেহ করাটা চরম অবমাননা করা ছাড়া আর কিছুই নয়,সেটা আজ বুঝতে পারছি। তৃণার উপর সন্দেহ করেছিলাম।দু- চারদিন হিমাদ্রির সাথে দেখেই ভেবেছিলাম হিমাদ্রির সাথে হয়ত ওর সম্পর্ক আছে।হিমাদ্রি, আমাদের বন্ধু।তবে ছেলেটার স্বভাব চরিত্র যে খুব ভালো নয় সেটা শুধুমাত্র আমিই জানতাম। জানি সন্দেহ করাটা একটা চরম অন্যায়। তবুও তখন যেন মনের মধ্যে একটা হারানোর ভয় কাজ করছিল। হয়ত সেজন্যই........
আজ থেকে প্রায় দু'বছর আগে, একদিন সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা পিকনিকের আয়োজন করেছিলাম। সেখানে তৃণাও ছিল। ছিল হিমাদ্রিও। আয়োজনটা আমিই করেছিলাম। কারণ তৃণার প্রতি আমার সন্দেহের অবসান ঘটানো বা হয়ত হারানোর ভয়টা কাটিয়ে ওঠা। তবে ঠিক কি কারণ সেটা সম্পর্কে আজ আমি নিজেই দ্বিধাগ্রস্থ। আমরা অনেক তর্ক বিতর্কের পর আমাদের আর এক বন্ধু কুমারেশদের তে'তলা বাড়ির ছাদেই এক অমাবস্যার রাতেই পিকনিকের আয়োজন করেছিলাম। অমাবস্যা রাতের প্রয়োজনটা হয়েছিল আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য।সারা সময়টা অপেক্ষা করার পর অবশেষে সুযোগটা পেয়েই যায়। অনেক হই হুল্লোড় করার পর, খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতেই রাত্রি প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছিল। আর যেহেতু সময়টা গ্রীষ্মকাল ছিল তাই খাওয়ার পর সবাই চেয়েছিল ছাদের উপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিতে। আর আমিও সুযোগ বুঝেই হিমাদ্রিকে ছাদ থেকে নীচে ঠেলে দিয়েছিলাম, অমাবস্যার রাত থাকায় কেউ কিছু বুঝতেই পারিনি। তাছাড়া ঐ সময়ের শীতল হাওয়াই অনেকের তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। পরের দিন ঠিক এই কারণটাকেই দায়ী করা হয় হিমাদ্রির মৃত্যুর জন্য।
এর বেশ কিছুদিন পর, আমি আর তৃণা রাত্রি প্রায় এগারোটার সময় একটা বন্ধুর পার্টি থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। সেদিনও ছিল অমাবস্যা। সবেমাত্র বন্ধুদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু'জনে গল্প করতে করতে কিছু দূর এসেছি হঠাৎই হিমাদ্রির কথা মনে পড়ল। আমার সারা শরীর জুড়ে একটা শীতল ঢেউ নিমেষের মধ্যে বয়ে গেল। আমার মধ্যে যে কি হচ্ছে সেটা তৃণা বুঝতেই পারলো না। আসলে ওর বোঝার কথাও নয়। ও স্বাভাবিকভাবেই গল্প করতে লাগল। কিন্তু আমার বুক ধড়ফড়ানি কমলো না কোনোমতে। তারপর হঠাৎ করে তৃণার হাত থেকে এক ঝাটকায় আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, " ও আমাকে মেরে ফেলবে। ও আমাকে ছাড়বে না। হিমাদ্রি বারণ করছি কিন্তু, কাছে আসবি না। না হলে আজ আবার ঠেলে ফেলে দেব কিন্তু ..... সর বলছি, সর ...... ।"তারপর আমি বেঁহুশ হয়ে গিয়েছিলাম।
পরের দিন সকালে যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি সেই বন্ধুর বাড়ি। কিন্তু তখন তৃণা আমায় কিছু বলেনি।তারপর ও আমাকে আমার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল। তারপর যেটা ঘটেছিল সেটা আমি কস্মিনকালেও ভাবেনি। বাড়িতে এসে দেখি বাড়িতে পুলিশ। তখন আমি কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। তৃণাকে বললাম, " বাড়িতে পুলিশ কেন? " তখন তৃণা বললো, " অপরাধ করে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে নিজেকে নিরাপরাধ ভাবলেই তুমি নিজের বিবেকের কাছে কখনও নিরাপরাধ হতে পারবেনা। তাই শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। " তখন আমি মৃদ্যু হেসে বললাম, " আজ উপযুক্ত প্রমাণ কৈ? " তারপর তৃণা শুধু একটি কথায় বলেছিল, " আমি আর আমার ভালোবাসা। "তারপর আমি আর কোনো কথা বলিনি। আমার চার বছরের জন্য জেল হয়েছিল।
প্রথম কয়েকদিন তৃণা জেলে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল।তারপর হঠাৎ করেই আসা বন্ধ করে দেয়। এর বেশ কিছুদিন পর, জেলে আমার সাথে দেখা করতে আসে কুমারেশ। আমি ওর কাছে তৃণার না আসার কারণ জানতে চাইলে ও শুধু বললো, " তোর সাজা দু'বছর কমানো হয়েছে। জেল থেকে বেরোনোর পর সোজা আমাদের বাড়িতে যাবি। "
কুমারেশের কথানুযায়ী প্রায় দু'বছরের মাথায় আমার বন্দি জীবনের মেয়াদ শেষ হয়। তারপর কুমারেশদের বাড়িতেই এসেছিলাম। এখন আমি কুমারেশদের বাড়িতে। হাতে একটা চিঠি। বলতে পারো এটাই আমার ভালোবাসার শেষ স্বাক্ষর অর্থাৎ তৃণার চিঠি । চিঠিটাতে কি লেখা ছিল সেটা নিন্মে উল্লেখ করলাম।
প্রিয় প্রান্তর,
সত্যকে কখনও চেপে রাখা যায় না। একদিন সে প্রকাশ পাবেই। সত্যি কথা বলতে আমি কোনোদিনই ভাবেনি তুই এমন কাজ করতে পারিস। তুই যেমন আমাকে ভালোবাসতিস, ঠিক তেমন আমিও তোকে ভালোবাসতাম। আমি এটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি যে আমিই পুলিশের কাছে ফোন করেছিলাম। কারণ আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম তুই খুনি। হয়ত অবাক হয়ে যাচ্ছিস কথাটা শুনে, যে আমি নিশ্চিত হলাম কীভাবে। সেই দিন রাতে তুই হিমাদ্রিকে দেখতে পেয়েছিল কিন্তু আমি হাজার চেষ্টার পরেও দেখতে পায়নি। কারণ মৃত ব্যক্তি কীভাবে ফিরে আসবে? তারপরে তো নিজে মুখেই সবকিছু বললি।আসলে সেদিন তোর বিবেকবোধ তোকে ধরিয়ে দিয়েছে বাস্তবতার কাছে। তোর মন কখনও তোর খারাপ চায়নি। তোর মনের উপর হিমাদ্রির ছবি, কথা ফুটে উঠেছিল বলেই তুই ধরা পড়লি। আর তুই তো জানিস আমার কাছে আগে সত্য তারপর ভালোবাসা। তাছাড়া আমি সেই ভালোবাসা চায়নি যেখানে মৃত্যুর ছোঁয়া লেগে থাকবে।
আমার বিয়ে হয়ে গেছে, গতবছর। কোথায় বিয়ে হয়েছে এ খবর না শুনলেই ভালো থাকবি। আর আমার স্বামী একজন উকিল। তার সহযোগিতায় তোর সাজা কমানোর ব্যাবস্থা করেছি। যাতে তুই নতূন করে জীবন শুরু করার সুযোগটুকু পাস।তাই এই চেষ্টা। ভালো থাকিস। সুস্থ থাকিস। ভালোবাসা রইল, ভালো থাকার।
-- ইতি,
তৃণা রায়
আমি প্রান্তর। প্রান্তর রায়। বয়সটা এখন চব্বিশ পেরিয়ে গেছে।ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি এতটাই মনোনিবেশ ছিলাম যে কখনও কাউকে ভালোবাসতে পারবো ভাবেনি।কিন্তু হঠাৎ করে ভালোবাসাটাও জীবনে এসেছিল। কখন, কীভাবে এবং কেন যে আমি তৃণাকে ভালোবেসে ছিলাম,আমি জানি না। তবে এটা ঠিক তৃণাকে খুব ভালোবাসতাম। হয়ত নিজের থেকেও বেশি। হয়ত তৃণাও সেটা জানত, বুঝতেও পারতো কিন্তু কখনোই ধরা দিত না। আর যেদিন ধরা দিয়েছিল সেদিনই ওর সাথে আমার শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল।
সত্যি কথা বলতে ওকে ভালোবেসে কখনও আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে কোনো রকম সমস্যায় পড়িনি।বরং বারবারই ও বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদে পাশে থেকেছে। দূরে থেকেও কখনও বুঝতে দেয়নি যে আমি মাতৃহারা।কিন্তু একটা কথা বলতে ওর খুব আপত্তি ছিল। আর সেই আপত্তিকর কথাটা যে কি সেটা আমার বুঝতে বাকি ছিল না। সম্ভবত কথাটি হল এটাই যে ও আমাকে ভালোবাসতো। না, ও সরাসরি আমাকে কখনও কথাটা বলিনি। তার কারণ হয়ত আমরা সমবয়সি। যদি একটা সুস্থ মানুষের মতো বিচার করি তাহলে এটা বলতেই হবে যে ওর সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল সেদিনও। কিন্তু ও সবসময় চায়তো আমি তাড়াতাড়ি কোনো চাকরির সন্ধান করতে পারি। আর ঠিক সেজন্য প্রতিমুহূর্তে আমার অনুপ্রাণিত করার দায়িত্বটাও ও নিয়েছিল।
বয়সটা আঠারোর গন্ডি পার হওয়া মানেই যেমন ছেলেদের মধ্যে একটা বড়ো বড়ো ভাব চলে আসে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার প্রতি আসক্তি একটু হলেও বাড়ে। তার সঠিক কারণটা অবশ্যি আমার জানা নেই। তবে এটা যে হয় সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। এই বয়সেই যে কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছেলেদের মধ্যে একটা রোমান্টিসিজম কাজ করে। কিন্তু এটা কোনো অন্যায় নয়। তবে যেটা অন্যায় সেটাই আমি করেছিলাম। সন্দেহ। একটা মানুষের সাথে চার বছর মেশার পর যে তার প্রতি সন্দেহ করাটা চরম অবমাননা করা ছাড়া আর কিছুই নয়,সেটা আজ বুঝতে পারছি। তৃণার উপর সন্দেহ করেছিলাম।দু- চারদিন হিমাদ্রির সাথে দেখেই ভেবেছিলাম হিমাদ্রির সাথে হয়ত ওর সম্পর্ক আছে।হিমাদ্রি, আমাদের বন্ধু।তবে ছেলেটার স্বভাব চরিত্র যে খুব ভালো নয় সেটা শুধুমাত্র আমিই জানতাম। জানি সন্দেহ করাটা একটা চরম অন্যায়। তবুও তখন যেন মনের মধ্যে একটা হারানোর ভয় কাজ করছিল। হয়ত সেজন্যই........
আজ থেকে প্রায় দু'বছর আগে, একদিন সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা পিকনিকের আয়োজন করেছিলাম। সেখানে তৃণাও ছিল। ছিল হিমাদ্রিও। আয়োজনটা আমিই করেছিলাম। কারণ তৃণার প্রতি আমার সন্দেহের অবসান ঘটানো বা হয়ত হারানোর ভয়টা কাটিয়ে ওঠা। তবে ঠিক কি কারণ সেটা সম্পর্কে আজ আমি নিজেই দ্বিধাগ্রস্থ। আমরা অনেক তর্ক বিতর্কের পর আমাদের আর এক বন্ধু কুমারেশদের তে'তলা বাড়ির ছাদেই এক অমাবস্যার রাতেই পিকনিকের আয়োজন করেছিলাম। অমাবস্যা রাতের প্রয়োজনটা হয়েছিল আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য।সারা সময়টা অপেক্ষা করার পর অবশেষে সুযোগটা পেয়েই যায়। অনেক হই হুল্লোড় করার পর, খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতেই রাত্রি প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছিল। আর যেহেতু সময়টা গ্রীষ্মকাল ছিল তাই খাওয়ার পর সবাই চেয়েছিল ছাদের উপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিতে। আর আমিও সুযোগ বুঝেই হিমাদ্রিকে ছাদ থেকে নীচে ঠেলে দিয়েছিলাম, অমাবস্যার রাত থাকায় কেউ কিছু বুঝতেই পারিনি। তাছাড়া ঐ সময়ের শীতল হাওয়াই অনেকের তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। পরের দিন ঠিক এই কারণটাকেই দায়ী করা হয় হিমাদ্রির মৃত্যুর জন্য।
এর বেশ কিছুদিন পর, আমি আর তৃণা রাত্রি প্রায় এগারোটার সময় একটা বন্ধুর পার্টি থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। সেদিনও ছিল অমাবস্যা। সবেমাত্র বন্ধুদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু'জনে গল্প করতে করতে কিছু দূর এসেছি হঠাৎই হিমাদ্রির কথা মনে পড়ল। আমার সারা শরীর জুড়ে একটা শীতল ঢেউ নিমেষের মধ্যে বয়ে গেল। আমার মধ্যে যে কি হচ্ছে সেটা তৃণা বুঝতেই পারলো না। আসলে ওর বোঝার কথাও নয়। ও স্বাভাবিকভাবেই গল্প করতে লাগল। কিন্তু আমার বুক ধড়ফড়ানি কমলো না কোনোমতে। তারপর হঠাৎ করে তৃণার হাত থেকে এক ঝাটকায় আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, " ও আমাকে মেরে ফেলবে। ও আমাকে ছাড়বে না। হিমাদ্রি বারণ করছি কিন্তু, কাছে আসবি না। না হলে আজ আবার ঠেলে ফেলে দেব কিন্তু ..... সর বলছি, সর ...... ।"তারপর আমি বেঁহুশ হয়ে গিয়েছিলাম।
পরের দিন সকালে যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি সেই বন্ধুর বাড়ি। কিন্তু তখন তৃণা আমায় কিছু বলেনি।তারপর ও আমাকে আমার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল। তারপর যেটা ঘটেছিল সেটা আমি কস্মিনকালেও ভাবেনি। বাড়িতে এসে দেখি বাড়িতে পুলিশ। তখন আমি কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। তৃণাকে বললাম, " বাড়িতে পুলিশ কেন? " তখন তৃণা বললো, " অপরাধ করে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে নিজেকে নিরাপরাধ ভাবলেই তুমি নিজের বিবেকের কাছে কখনও নিরাপরাধ হতে পারবেনা। তাই শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। " তখন আমি মৃদ্যু হেসে বললাম, " আজ উপযুক্ত প্রমাণ কৈ? " তারপর তৃণা শুধু একটি কথায় বলেছিল, " আমি আর আমার ভালোবাসা। "তারপর আমি আর কোনো কথা বলিনি। আমার চার বছরের জন্য জেল হয়েছিল।
প্রথম কয়েকদিন তৃণা জেলে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল।তারপর হঠাৎ করেই আসা বন্ধ করে দেয়। এর বেশ কিছুদিন পর, জেলে আমার সাথে দেখা করতে আসে কুমারেশ। আমি ওর কাছে তৃণার না আসার কারণ জানতে চাইলে ও শুধু বললো, " তোর সাজা দু'বছর কমানো হয়েছে। জেল থেকে বেরোনোর পর সোজা আমাদের বাড়িতে যাবি। "
কুমারেশের কথানুযায়ী প্রায় দু'বছরের মাথায় আমার বন্দি জীবনের মেয়াদ শেষ হয়। তারপর কুমারেশদের বাড়িতেই এসেছিলাম। এখন আমি কুমারেশদের বাড়িতে। হাতে একটা চিঠি। বলতে পারো এটাই আমার ভালোবাসার শেষ স্বাক্ষর অর্থাৎ তৃণার চিঠি । চিঠিটাতে কি লেখা ছিল সেটা নিন্মে উল্লেখ করলাম।
প্রিয় প্রান্তর,
সত্যকে কখনও চেপে রাখা যায় না। একদিন সে প্রকাশ পাবেই। সত্যি কথা বলতে আমি কোনোদিনই ভাবেনি তুই এমন কাজ করতে পারিস। তুই যেমন আমাকে ভালোবাসতিস, ঠিক তেমন আমিও তোকে ভালোবাসতাম। আমি এটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি যে আমিই পুলিশের কাছে ফোন করেছিলাম। কারণ আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম তুই খুনি। হয়ত অবাক হয়ে যাচ্ছিস কথাটা শুনে, যে আমি নিশ্চিত হলাম কীভাবে। সেই দিন রাতে তুই হিমাদ্রিকে দেখতে পেয়েছিল কিন্তু আমি হাজার চেষ্টার পরেও দেখতে পায়নি। কারণ মৃত ব্যক্তি কীভাবে ফিরে আসবে? তারপরে তো নিজে মুখেই সবকিছু বললি।আসলে সেদিন তোর বিবেকবোধ তোকে ধরিয়ে দিয়েছে বাস্তবতার কাছে। তোর মন কখনও তোর খারাপ চায়নি। তোর মনের উপর হিমাদ্রির ছবি, কথা ফুটে উঠেছিল বলেই তুই ধরা পড়লি। আর তুই তো জানিস আমার কাছে আগে সত্য তারপর ভালোবাসা। তাছাড়া আমি সেই ভালোবাসা চায়নি যেখানে মৃত্যুর ছোঁয়া লেগে থাকবে।
আমার বিয়ে হয়ে গেছে, গতবছর। কোথায় বিয়ে হয়েছে এ খবর না শুনলেই ভালো থাকবি। আর আমার স্বামী একজন উকিল। তার সহযোগিতায় তোর সাজা কমানোর ব্যাবস্থা করেছি। যাতে তুই নতূন করে জীবন শুরু করার সুযোগটুকু পাস।তাই এই চেষ্টা। ভালো থাকিস। সুস্থ থাকিস। ভালোবাসা রইল, ভালো থাকার।
-- ইতি,
তৃণা রায়
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৮/০৩/২০২২অনুফম সাবলীল লেখনী
-
মোঃ আমিনুল ইসলাম মিঠু ২৬/০২/২০২২পড়তে পড়তে দারুন লাগে
-
ফয়জুল মহী ১৮/০২/২০২২সুন্দর সাবলীল রচনা