মীরাক্কেল
দিনটা ছিল সম্ভবত মঙ্গলবার। সম্ভবত বলছি কারন এটা আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগের ঘটনা।সন্ধ্যে থেকে সেদিন খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল,সঙ্গে বিদ্যুতের চমকানি।দেখে মনে হচ্ছিল কেউ যেন উপর থেকে এই বিশৃঙ্খলাময় করুন পৃথিবীর ছবি তুলছে। তবে সেটা যাই হোক, এখন আসল ঘটনায় আসি।
সেই ঝড়বৃষ্টি মুখর রাতে প্রায় দশটা নাগাদ, হঠাৎ এক ব্যক্তির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমাদের সদর দরজার বাইরেই। অপরিচিত কন্ঠে সেই ব্যক্তিটি বলছিলেন,"প্লীজ, দরজাটা খুলুন। একটু ভিতরে আসতে দিন।"প্রথমে আমরা সবাই থতমত খেয়ে গেলাম। তারপর বাবা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। লোকটা ভিতরে আসতেই দেখলাম, তিনি আপাদমস্তক ভিজে গিয়েছেন।বাবা তাকে মাথা ও গা,হাত,পা মোছার জন্য তোয়ালে দিলেন।
এখানে বলে রাখা ভালো, আমার বাবা একজন ছোটোখাটো ব্যাবসাদার। আর এই ব্যাবসার কারনেই বাবাকে বেশিরভাগ সময়টা বাড়ির বাইরে কাটাতে হয়। তখন আমি আর মা বাড়িতেই থাকি। সেসময় কেউ(অচেনা ব্যক্তি) বাড়িতে এলে আমরা তাকে ভিতরে ঢুকতে দিই না।
বাবা আজ বাড়িতেই ছিলেন।
ভদ্রলোকটার পোষাক সম্পূর্ণরূপে ভিজে থাকায় বাবা নতুন পোষাক দিলেন এবং বসার জন্য একটা চেয়ার দিলেন। মা তখন রান্না ঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আর কারেন্ট না থাকায় আমি আমার ঘরে বসে ইমারজেন্সি বালব্ জ্বালিয়ে ফিজিক্স পড়ছিলাম। তারপর বাবা মাকে চা করতে বললেন। কিন্তু ভদ্রলোকটি চা খেতে নারাজ। তাই আর মা চা করলেন না। তারপর বাবা সেই অপরিচিত ব্যক্তিকে বললেন," আপনি এত রাতে কোথায় যাচ্ছিলেন?"এই প্রশ্নটায় অনেকক্ষণ ধরে আমি ভাবছিলাম এতক্ষণ পরে বাবা জিজ্ঞাসা করায় আমি খুবই জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলাম।(প্রশ্নটা আমি করতেই পারতাম কিন্তু আমাদের বাড়িতে বড়োদের মাঝে ছোটোদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই।সেটা প্রয়োজনীয় হোক বা অপ্রয়োজনীয়) তাই আমি ফিজিক্স বই তুলে অঙ্ক নিয়ে বসলাম।
বাবার প্রশ্নের উত্তরে সেই ভদ্রলোকটি খুব নিন্মস্বরে বললেন,"আমার নাম অখিলেশ ঘোষ।সবাই অখিল নামেই চেনে। আমার বাড়ি নিয়তিপুর নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে। শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরছিলাম বাইকে করে, আমি,স্ত্রী আর আমার ছেলে ঝন্টু। কিন্তু বিকেলে হঠাৎ যে ধুলিঝড় উঠেছিল। ওইটে হয়ে গেল সমস্যা। চোখে ধুলো যাওয়ায় রাস্তায় কিছুই দেখতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম কোথাও দাঁড়ায় কিন্তু আশেপাশে কোনো বাড়িঘর ছিল না।দেখবো কি করে, চোখে ধুলো পড়েছে তো আর বাইকটা যে থামাব তাও সে ব্রেক ফেল করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাই আর কি ...... " একথা শুনেই আমার সারা শরীর কেমন শিউরে উঠল।রক্ত হীম হয়ে গিয়েছিল।আমার অঙ্ক করা আর হল না। বাবা যে অখিলবাবুর কথা শুনছিলেন না সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। কারন বাবার ব্যাবসা অবনতির দিকে ছিল, আর বাবা সেটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় ছিলেন। সেজন্যই বাবা কোনো প্রশ্ন করছিলেন না। মনে হয় অখিলবাবুও সেটা বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু একজন অচেনা অতিথির বাড়িতে এসে চুপচাপ থাকলে কেমন দেখায়, তাই হয়ত বকছেন এত।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মা খাওয়ার জন্য ডাকলেন। কিন্তু অনেকবার জোর করা স্বত্ত্বেও অখিলবাবু কিছু খেতে চাইলেন না। সেজন্য মানবিকতার খাতিরে বাবাও কিছু খেলেন না। আমি একা একা খেতে গেলাম। মা ততক্ষণে অখিলবাবুর শোয়ার ব্যাবস্থা করলেন। আমাদের কোনো অতিরিক্ত ঘর নেই,তাই আমার ঘরেই উনার শোয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। একথা শুনে আমার ভয়টা চারগুণ বেড়ে গিয়েছিল। কারন অখিলবাবুর মুখে শোনা ঘটনাটি যদি ঘটে থাকে তাহলে উনি একজন ভূ'ত । তবুও উপায় না থাকায় বাড়িতে কারো কিছু বলতে পারলাম না।
তারপর আর কি! ঘুমাতে গেলাম। অখিলবাবু আমার পাশে। ঘরটা ঘুটঘুটি অন্ধকার। মা, বাবাও মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। পাশে অখিলবাবুও কি ঘুমিয়ে পড়েছেন। কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না।বারবার মনে হচ্ছিল আমারই দোষ, আমার বড়দের কথা শোনা উচিত হয়নি বরং অঙ্ক করলে অনুশীলনীটা শেষ হয়ে যেত। অনেক রাত পর্যন্ত এইরকম নানান চিন্তা করতে করতে অবশেষে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে।চোখ মুছতে মুছতে দরজার খিড়কি খুলতেই মা, বাবা ঘরে ঢুকে বলল, " অখিলবাবু কই?"
আমি বললাম,"কেন কি হয়েছে?"
বাবা আমার সামনে আজকের কাগজ দিয়ে বলল, " হেডলাইনটা পড়ে।"
দেখলাম লেখা আছে 'ঝড়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পোষ্টের সাথে ধাক্কায় মৃত তিন'। নীচে ছবি দেখলাম, অখিলেশ ঘোষ, তার স্ত্রী এবং একটা ছেলে।
এবার বুঝলাম বন্ধ ঘরের মধ্য থেকে কীভাবে একটা ব্যক্তি বেরোতে পারে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।কিন্তু আমার চিন্তা হতে থাকে।কারন একটু পরে পড়তে যেতে হবে,কিন্তু এখনও একটাও অঙ্ক করিনি। সেজন্য তাড়াতাড়ি করে আমি অঙ্ক করতে গিয়ে দেখি সব অঙ্কই সমাধান করা আছে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।অঙ্কগুলো কে করে দিয়েছে?তাহলে কি অখিলেশ ঘোষ গনিতের শিক্ষক! যদিও এই ঘটনাটা কখনো কাউকে বলিনি। আজই প্রথম আপনাকে বললাম।আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি?
সেই ঝড়বৃষ্টি মুখর রাতে প্রায় দশটা নাগাদ, হঠাৎ এক ব্যক্তির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমাদের সদর দরজার বাইরেই। অপরিচিত কন্ঠে সেই ব্যক্তিটি বলছিলেন,"প্লীজ, দরজাটা খুলুন। একটু ভিতরে আসতে দিন।"প্রথমে আমরা সবাই থতমত খেয়ে গেলাম। তারপর বাবা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। লোকটা ভিতরে আসতেই দেখলাম, তিনি আপাদমস্তক ভিজে গিয়েছেন।বাবা তাকে মাথা ও গা,হাত,পা মোছার জন্য তোয়ালে দিলেন।
এখানে বলে রাখা ভালো, আমার বাবা একজন ছোটোখাটো ব্যাবসাদার। আর এই ব্যাবসার কারনেই বাবাকে বেশিরভাগ সময়টা বাড়ির বাইরে কাটাতে হয়। তখন আমি আর মা বাড়িতেই থাকি। সেসময় কেউ(অচেনা ব্যক্তি) বাড়িতে এলে আমরা তাকে ভিতরে ঢুকতে দিই না।
বাবা আজ বাড়িতেই ছিলেন।
ভদ্রলোকটার পোষাক সম্পূর্ণরূপে ভিজে থাকায় বাবা নতুন পোষাক দিলেন এবং বসার জন্য একটা চেয়ার দিলেন। মা তখন রান্না ঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আর কারেন্ট না থাকায় আমি আমার ঘরে বসে ইমারজেন্সি বালব্ জ্বালিয়ে ফিজিক্স পড়ছিলাম। তারপর বাবা মাকে চা করতে বললেন। কিন্তু ভদ্রলোকটি চা খেতে নারাজ। তাই আর মা চা করলেন না। তারপর বাবা সেই অপরিচিত ব্যক্তিকে বললেন," আপনি এত রাতে কোথায় যাচ্ছিলেন?"এই প্রশ্নটায় অনেকক্ষণ ধরে আমি ভাবছিলাম এতক্ষণ পরে বাবা জিজ্ঞাসা করায় আমি খুবই জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলাম।(প্রশ্নটা আমি করতেই পারতাম কিন্তু আমাদের বাড়িতে বড়োদের মাঝে ছোটোদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই।সেটা প্রয়োজনীয় হোক বা অপ্রয়োজনীয়) তাই আমি ফিজিক্স বই তুলে অঙ্ক নিয়ে বসলাম।
বাবার প্রশ্নের উত্তরে সেই ভদ্রলোকটি খুব নিন্মস্বরে বললেন,"আমার নাম অখিলেশ ঘোষ।সবাই অখিল নামেই চেনে। আমার বাড়ি নিয়তিপুর নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে। শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরছিলাম বাইকে করে, আমি,স্ত্রী আর আমার ছেলে ঝন্টু। কিন্তু বিকেলে হঠাৎ যে ধুলিঝড় উঠেছিল। ওইটে হয়ে গেল সমস্যা। চোখে ধুলো যাওয়ায় রাস্তায় কিছুই দেখতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম কোথাও দাঁড়ায় কিন্তু আশেপাশে কোনো বাড়িঘর ছিল না।দেখবো কি করে, চোখে ধুলো পড়েছে তো আর বাইকটা যে থামাব তাও সে ব্রেক ফেল করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাই আর কি ...... " একথা শুনেই আমার সারা শরীর কেমন শিউরে উঠল।রক্ত হীম হয়ে গিয়েছিল।আমার অঙ্ক করা আর হল না। বাবা যে অখিলবাবুর কথা শুনছিলেন না সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। কারন বাবার ব্যাবসা অবনতির দিকে ছিল, আর বাবা সেটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় ছিলেন। সেজন্যই বাবা কোনো প্রশ্ন করছিলেন না। মনে হয় অখিলবাবুও সেটা বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু একজন অচেনা অতিথির বাড়িতে এসে চুপচাপ থাকলে কেমন দেখায়, তাই হয়ত বকছেন এত।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মা খাওয়ার জন্য ডাকলেন। কিন্তু অনেকবার জোর করা স্বত্ত্বেও অখিলবাবু কিছু খেতে চাইলেন না। সেজন্য মানবিকতার খাতিরে বাবাও কিছু খেলেন না। আমি একা একা খেতে গেলাম। মা ততক্ষণে অখিলবাবুর শোয়ার ব্যাবস্থা করলেন। আমাদের কোনো অতিরিক্ত ঘর নেই,তাই আমার ঘরেই উনার শোয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। একথা শুনে আমার ভয়টা চারগুণ বেড়ে গিয়েছিল। কারন অখিলবাবুর মুখে শোনা ঘটনাটি যদি ঘটে থাকে তাহলে উনি একজন ভূ'ত । তবুও উপায় না থাকায় বাড়িতে কারো কিছু বলতে পারলাম না।
তারপর আর কি! ঘুমাতে গেলাম। অখিলবাবু আমার পাশে। ঘরটা ঘুটঘুটি অন্ধকার। মা, বাবাও মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। পাশে অখিলবাবুও কি ঘুমিয়ে পড়েছেন। কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না।বারবার মনে হচ্ছিল আমারই দোষ, আমার বড়দের কথা শোনা উচিত হয়নি বরং অঙ্ক করলে অনুশীলনীটা শেষ হয়ে যেত। অনেক রাত পর্যন্ত এইরকম নানান চিন্তা করতে করতে অবশেষে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে।চোখ মুছতে মুছতে দরজার খিড়কি খুলতেই মা, বাবা ঘরে ঢুকে বলল, " অখিলবাবু কই?"
আমি বললাম,"কেন কি হয়েছে?"
বাবা আমার সামনে আজকের কাগজ দিয়ে বলল, " হেডলাইনটা পড়ে।"
দেখলাম লেখা আছে 'ঝড়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পোষ্টের সাথে ধাক্কায় মৃত তিন'। নীচে ছবি দেখলাম, অখিলেশ ঘোষ, তার স্ত্রী এবং একটা ছেলে।
এবার বুঝলাম বন্ধ ঘরের মধ্য থেকে কীভাবে একটা ব্যক্তি বেরোতে পারে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।কিন্তু আমার চিন্তা হতে থাকে।কারন একটু পরে পড়তে যেতে হবে,কিন্তু এখনও একটাও অঙ্ক করিনি। সেজন্য তাড়াতাড়ি করে আমি অঙ্ক করতে গিয়ে দেখি সব অঙ্কই সমাধান করা আছে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।অঙ্কগুলো কে করে দিয়েছে?তাহলে কি অখিলেশ ঘোষ গনিতের শিক্ষক! যদিও এই ঘটনাটা কখনো কাউকে বলিনি। আজই প্রথম আপনাকে বললাম।আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৭/০২/২০২২ভালো
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ২০/০২/২০২২বেশ।
-
ফয়জুল মহী ১৭/০২/২০২২ভালো লেখা।