প্রতিশোধ
সময়টা ছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন পর। গ্রাম-বাংলার প্রতিটি অঞ্চল তখন প্রায় জনশূন্য। চারিদিকে শুধু ঘন জঙ্গল।তার মাঝখান দিয়ে একটা সরু মাটির রাস্তা। আর মাঝে মাঝে একটা দুটো দোচালা মাটির ঘর। এরকমই ছিল আমাদের গ্রাম। এখনও এই এলাকায় বিদ্যুৎ এসে পৌঁছায়নি। তাই লম্ফ, হ্যারিকেন আজ রাজত্ব করছে এখানে। তেলের পরিমাণটা নির্দিষ্ট থাকায় রাত্রি আটটার মধ্যেই সব বাড়ি অন্ধকার। শুধু বাড়ি বলা ভুল, সমগ্র অঞ্চলটি অন্ধকার। আমাদের গ্রামে গাছ গাছালির পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে সূর্য বা চাঁদ কেউই মুখ ফিরে চাইতো না। হয়ত সেজন্যই গ্রামে সর্বদা অন্ধকার বিরাজ করত।
দিনটা ছিল কৃষ্ণপক্ষ। তাই রাত্রিটা ছিল খুবই অন্ধকার। প্রতিদিনের মতো সেদিনও হ্যারিকেন হাতে নিয়ে হাটে গিয়েছিলাম। কিন্তু একটা বিশেষ কারণে হাট থেকে ফিরতে দেরি হয়ে যায়। হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দিব্যি আসছিলাম।হঠাৎ দেখি হ্যারিকেনের আলো ক্ষীণ হয়ে দপ করে নিভে গেল।সম্ভাবত তেল ফুরিয়ে গিয়েছিল।তখন প্রায় বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছেছে গিয়েছিলাম। যেহেতু এই রাস্তা ধরে বহুদিন ধরে যাতায়াত করছি সেহেতু ভাবলাম যেমন করে হোক বাড়ি পৌঁছে যাবো। দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুদূর যেতেই শুনতে পেলাম আমি ছাড়া অন্য কারোর পায়ের শব্দ। সারা শরীর শিউরে উঠল। কারণ এ রাস্তা দিয়ে তেমন লোকজন চলাচল করে না। তাহলে ওই পায়ের শব্দটা কোথা থেকে আসছে? ভয় আরও বেড়ে গেল। নিজেকে বোঝানোর জন্য ভাবলাম হয়ত কোনো কুকুর বা বিড়াল হবে।ভাবতে ভাবতে হঠাৎই শুনি শব্দটা আমার খুব নিকটে। এবার তো চুপ থাকলে হবে না। তাই মনে অনেক সাহস জুগিয়ে বললাম, " কে? কে ওখানে? " তারপর আবার সব চুপচাপ। কয়েক সেকেন্ড পর যেই মাত্র বাড়ি ফেরার জন্য ঘুরেছি অমনি পিছন থেকে উত্তর আসলো, তবে সেটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়, "আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে। আমি জানি আপনি সেটা পারবেন।" কথাটা নয় বরং কন্ঠটা শুনে আমার গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। একটা বাচ্ছা ছেলে। বয়স, কন্ঠ শুনে মনে হল বারো না হয় তেরো, তার বেশি নয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে একটা ভাবনা মাথায় এলো এরকম একটা ছোট্ট ছেলে একটা আঠাশ বছরের লোকের কাছ থেকে কি করে নিতে চায়? পরক্ষন ভাবলাম হয়ত বলবে অন্ধকারে বাড়ির পথ চিনতে পারছি না। আমাকে বাড়ি পৌঁচ্ছে দিন বা এমন ধরনের অন্য কিছু। একটু অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেই বললাম, " বলো, তোমার জন্য আমি কি করতে পারি।" প্রশ্নটা যতটা সাহসিকতার সাথে করেছিলাম, উত্তরটা শুনে ততটা সাহস আর থাকল না। বাচ্চাটা দৃড় কন্ঠে বলল," ওই শয়তান হরিদাসকে হত্যা করতে হবে।"কথাটা শুনে আমার যেন মনে হল যে আমার পায়ের তলার মাটি টাও আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে। জীবনে কখনও কাউকে হত্যা করিনি এমনকি কোনোদিন ভাবেই নি। তবে কেন ছেলেটার আমার প্রতি এত বিশ্বাস। এ প্রশ্নটা আর করলাম না। কারণ প্রশ্ন করার মতো পরিস্থিতি আমার ছিল না। হরিদাস বিশ্বাসকে আমি চিনতাম। চিনতাম মানে লোকের মুখে উনার অনেক নাম শুনেছি। উনি ইংরেজদের পোষ্য। এককথায় দেশদ্রোহী। ইংরেজদের কথা অনুযায়ী এরা নিজের দেশের সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করত। কেউ এজন্য এনাকে সহ্য করতে পারতেন না। তবে যাই হোক একটা প্রশ্ন না করে পারলাম না। বললাম, " আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি কে? আর তুমি হরিদাসকে মারতে চাও কেন?তাছাড়া ইংরেজরা এতদিন এদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে। নিশ্চয়ই হরিদাসকেও সঙ্গে নিয়ে গেছে।" বাচ্চাটা উত্তর দিল শুধু নিজের পরিচয় গোপন রাখলো। তবে বাচ্চাটার উত্তর শুনতে শুনতে আমার মনে হল যেন কোনো বিদ্রোহী আমার মনে সাহস জোগানোর শক্তি জোগাচ্ছে। সে বলল, "আচ্ছা,বলুন তো একটা কলম ব্যবহারের পর আর সেটা যত্ন করে তুলে রাখেন?নিশ্চয় রাখেন না। হরিদাস আজ বাদ দেওয়া পেন হয়ে গেছে।" বুঝলাম ছেলেটা কি বোঝাতে চাইছে। তারপর ও বলতে শুরু করল, "১৯৪৬ সালের ২৫ শে আগস্ট, ঠিক আজকের দিনে ঐ শয়তন দেশদ্রোহী খাজনা দেরীতে দেওয়ার অপরাধে আমাদের বাড়িতে আসে। জানেন আমার মা নেই। বাবাই আমার সব। বাবা সবেমাত্র খেতে বসেছিল। এমন সময় হরিদাস এসে বাবাকে ঘর থেকে বের করে আনলেন আর অনেক লোকজনের সামনে বাবাকে বেতের বারি মারলেন। তারপর কিছুদিনের মধ্যেই বাবার খুব জ্বর হয় আর মারাও যান। জানেন, আমার খুব রাগ হল ঐ শয়তানের উপর। তা না হলে এরকম কত লোককে যে ও মেরে ফেলবে তার ঠিক নেই। আমি ভাবলাম আমি তো একা। তাই মরে গেলে কারও কোনো অসুবিধা হবে না। তবে যদি মরতেই হয় ঐ শয়তানকে মেরেই মরব। সেই মতো মতলব করলাম।" তারপর একটু থেমে বাচ্চাটা আবার বলা শুরু করল, " হরিদাস একদিন ইংরেজদের সঙ্গে একটা পার্টি শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। আমি একটা ঝোপের মধ্যে অপেক্ষা করছিলাম তির আর ধনুক নিয়ে। যেই যাবে সেই ছুড়বো।আমি খুব ভালো তিরন্দাজ ছিলাম মানে জঙ্গলে গিয়ে পাখি মেরেছি অনেক।" এমন সময় আমি ভাবছি জিজ্ঞাসা করব 'ছিলাম' বলছে কেন। কিন্তু তার আগেই ও আবার বলল, "জানেন তির নিক্ষেপ করেছিলাম কিন্তু মনে হয় ওর গায়ে লাগেনি। অন্ধকার ছিল তাই দেখতে পায়নি।দেখলাম আমার দিকে কেউ লাইট মেরেছে।তাড়াতাড়ি ভয়ে পালাত পালাতে একটা নদীতে গিয়ে ঝাঁপ দিলাম। কিন্তু আমি সাঁতার কাটতে পারতাম না। তাই জলে তলিয়ে গেলাম। " আমার প্রশ্নের উত্তরটা এবার পেলাম। আমার সাথে কোনো মানুষ কথা বলছে না বরং একটা ভূত বা আত্মা। কিন্তু আমার মধ্যে থেকে কখন যেন সব ভয় উবে গেছে। আমি আবার প্রশ্ন করতে গিয়ে বুঝতে পারি যে আমার পাশে আর কেউ নেই। আমি আবার একা। তাড়াতাড়ি কষ্ট করে চিনে বাড়ি ফিরলাম। কিন্তু সারারাত ঘোমাতে পারিনি। সারারাত অস্বস্তি বোধ করলাম। পরের দিন সকাল হতে না হতেই আমি বেরিয়ে পড়লাম হরিদাস বিশ্বাস-এর উদ্দেশ্যে। অনেক কষ্টে দুপুরের দিকে বাড়িটা খুঁজে পায়। কিন্তু দেখে মনে হল যেন এ বাড়িতে অনেকদিন ধরে কেউ থাকে না। কাছাকাছি যেতে দেখি বাইরের দরজায় তালা দেওয়া। কাছাকাছি একটা বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, " হরিদাস বিশ্বাস কোথায় থাকে বলতে পারবেন? "উত্তর যেটা শুনলাম তা আমি কখনও প্রত্যাশা করিনি। লোকটা বলল, " আগের বছর এমন সময় আকস্মিকভাবে হরিদাসের মৃত্যু হয়। কেউ তাকে তির বিদ্ধ করেছিল। কিন্তু কে করছিল আজও জানা যায়নি। ঐ একই দিনে পাশের একটা নদী থেকে বাচ্চার ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। " আমি সেই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম। যদিও বুঝতে পারছিলাম আমার হাঁটার মতো ক্ষমতাও আর নেই।যাই হোক আবার বাড়ির দিকেই রওনা দিলাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সময়ের হিসাব সব গড়মিল হয়ে গেছে। আমি রয়েছি বিংশ শতকে। তাহলে এতক্ষণ যেটা দেখলাম ওটা কি? কিছুক্ষণ ভাবার পর বুঝলাম ওটা আমার গতকালের স্বপ্ন।আর স্বপ্নেই কেবল সময়ের গড়মিল ঘটানো সম্ভব।তবে একটা কথা কিন্তু ঠিক। মানুষের মনে যদি প্রতিশোধের তির পিছু নেয়, সে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে, কোনো বিপদের কথা না ভেবেই।
দিনটা ছিল কৃষ্ণপক্ষ। তাই রাত্রিটা ছিল খুবই অন্ধকার। প্রতিদিনের মতো সেদিনও হ্যারিকেন হাতে নিয়ে হাটে গিয়েছিলাম। কিন্তু একটা বিশেষ কারণে হাট থেকে ফিরতে দেরি হয়ে যায়। হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দিব্যি আসছিলাম।হঠাৎ দেখি হ্যারিকেনের আলো ক্ষীণ হয়ে দপ করে নিভে গেল।সম্ভাবত তেল ফুরিয়ে গিয়েছিল।তখন প্রায় বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছেছে গিয়েছিলাম। যেহেতু এই রাস্তা ধরে বহুদিন ধরে যাতায়াত করছি সেহেতু ভাবলাম যেমন করে হোক বাড়ি পৌঁছে যাবো। দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুদূর যেতেই শুনতে পেলাম আমি ছাড়া অন্য কারোর পায়ের শব্দ। সারা শরীর শিউরে উঠল। কারণ এ রাস্তা দিয়ে তেমন লোকজন চলাচল করে না। তাহলে ওই পায়ের শব্দটা কোথা থেকে আসছে? ভয় আরও বেড়ে গেল। নিজেকে বোঝানোর জন্য ভাবলাম হয়ত কোনো কুকুর বা বিড়াল হবে।ভাবতে ভাবতে হঠাৎই শুনি শব্দটা আমার খুব নিকটে। এবার তো চুপ থাকলে হবে না। তাই মনে অনেক সাহস জুগিয়ে বললাম, " কে? কে ওখানে? " তারপর আবার সব চুপচাপ। কয়েক সেকেন্ড পর যেই মাত্র বাড়ি ফেরার জন্য ঘুরেছি অমনি পিছন থেকে উত্তর আসলো, তবে সেটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়, "আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে। আমি জানি আপনি সেটা পারবেন।" কথাটা নয় বরং কন্ঠটা শুনে আমার গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। একটা বাচ্ছা ছেলে। বয়স, কন্ঠ শুনে মনে হল বারো না হয় তেরো, তার বেশি নয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে একটা ভাবনা মাথায় এলো এরকম একটা ছোট্ট ছেলে একটা আঠাশ বছরের লোকের কাছ থেকে কি করে নিতে চায়? পরক্ষন ভাবলাম হয়ত বলবে অন্ধকারে বাড়ির পথ চিনতে পারছি না। আমাকে বাড়ি পৌঁচ্ছে দিন বা এমন ধরনের অন্য কিছু। একটু অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেই বললাম, " বলো, তোমার জন্য আমি কি করতে পারি।" প্রশ্নটা যতটা সাহসিকতার সাথে করেছিলাম, উত্তরটা শুনে ততটা সাহস আর থাকল না। বাচ্চাটা দৃড় কন্ঠে বলল," ওই শয়তান হরিদাসকে হত্যা করতে হবে।"কথাটা শুনে আমার যেন মনে হল যে আমার পায়ের তলার মাটি টাও আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে। জীবনে কখনও কাউকে হত্যা করিনি এমনকি কোনোদিন ভাবেই নি। তবে কেন ছেলেটার আমার প্রতি এত বিশ্বাস। এ প্রশ্নটা আর করলাম না। কারণ প্রশ্ন করার মতো পরিস্থিতি আমার ছিল না। হরিদাস বিশ্বাসকে আমি চিনতাম। চিনতাম মানে লোকের মুখে উনার অনেক নাম শুনেছি। উনি ইংরেজদের পোষ্য। এককথায় দেশদ্রোহী। ইংরেজদের কথা অনুযায়ী এরা নিজের দেশের সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করত। কেউ এজন্য এনাকে সহ্য করতে পারতেন না। তবে যাই হোক একটা প্রশ্ন না করে পারলাম না। বললাম, " আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি কে? আর তুমি হরিদাসকে মারতে চাও কেন?তাছাড়া ইংরেজরা এতদিন এদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে। নিশ্চয়ই হরিদাসকেও সঙ্গে নিয়ে গেছে।" বাচ্চাটা উত্তর দিল শুধু নিজের পরিচয় গোপন রাখলো। তবে বাচ্চাটার উত্তর শুনতে শুনতে আমার মনে হল যেন কোনো বিদ্রোহী আমার মনে সাহস জোগানোর শক্তি জোগাচ্ছে। সে বলল, "আচ্ছা,বলুন তো একটা কলম ব্যবহারের পর আর সেটা যত্ন করে তুলে রাখেন?নিশ্চয় রাখেন না। হরিদাস আজ বাদ দেওয়া পেন হয়ে গেছে।" বুঝলাম ছেলেটা কি বোঝাতে চাইছে। তারপর ও বলতে শুরু করল, "১৯৪৬ সালের ২৫ শে আগস্ট, ঠিক আজকের দিনে ঐ শয়তন দেশদ্রোহী খাজনা দেরীতে দেওয়ার অপরাধে আমাদের বাড়িতে আসে। জানেন আমার মা নেই। বাবাই আমার সব। বাবা সবেমাত্র খেতে বসেছিল। এমন সময় হরিদাস এসে বাবাকে ঘর থেকে বের করে আনলেন আর অনেক লোকজনের সামনে বাবাকে বেতের বারি মারলেন। তারপর কিছুদিনের মধ্যেই বাবার খুব জ্বর হয় আর মারাও যান। জানেন, আমার খুব রাগ হল ঐ শয়তানের উপর। তা না হলে এরকম কত লোককে যে ও মেরে ফেলবে তার ঠিক নেই। আমি ভাবলাম আমি তো একা। তাই মরে গেলে কারও কোনো অসুবিধা হবে না। তবে যদি মরতেই হয় ঐ শয়তানকে মেরেই মরব। সেই মতো মতলব করলাম।" তারপর একটু থেমে বাচ্চাটা আবার বলা শুরু করল, " হরিদাস একদিন ইংরেজদের সঙ্গে একটা পার্টি শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। আমি একটা ঝোপের মধ্যে অপেক্ষা করছিলাম তির আর ধনুক নিয়ে। যেই যাবে সেই ছুড়বো।আমি খুব ভালো তিরন্দাজ ছিলাম মানে জঙ্গলে গিয়ে পাখি মেরেছি অনেক।" এমন সময় আমি ভাবছি জিজ্ঞাসা করব 'ছিলাম' বলছে কেন। কিন্তু তার আগেই ও আবার বলল, "জানেন তির নিক্ষেপ করেছিলাম কিন্তু মনে হয় ওর গায়ে লাগেনি। অন্ধকার ছিল তাই দেখতে পায়নি।দেখলাম আমার দিকে কেউ লাইট মেরেছে।তাড়াতাড়ি ভয়ে পালাত পালাতে একটা নদীতে গিয়ে ঝাঁপ দিলাম। কিন্তু আমি সাঁতার কাটতে পারতাম না। তাই জলে তলিয়ে গেলাম। " আমার প্রশ্নের উত্তরটা এবার পেলাম। আমার সাথে কোনো মানুষ কথা বলছে না বরং একটা ভূত বা আত্মা। কিন্তু আমার মধ্যে থেকে কখন যেন সব ভয় উবে গেছে। আমি আবার প্রশ্ন করতে গিয়ে বুঝতে পারি যে আমার পাশে আর কেউ নেই। আমি আবার একা। তাড়াতাড়ি কষ্ট করে চিনে বাড়ি ফিরলাম। কিন্তু সারারাত ঘোমাতে পারিনি। সারারাত অস্বস্তি বোধ করলাম। পরের দিন সকাল হতে না হতেই আমি বেরিয়ে পড়লাম হরিদাস বিশ্বাস-এর উদ্দেশ্যে। অনেক কষ্টে দুপুরের দিকে বাড়িটা খুঁজে পায়। কিন্তু দেখে মনে হল যেন এ বাড়িতে অনেকদিন ধরে কেউ থাকে না। কাছাকাছি যেতে দেখি বাইরের দরজায় তালা দেওয়া। কাছাকাছি একটা বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, " হরিদাস বিশ্বাস কোথায় থাকে বলতে পারবেন? "উত্তর যেটা শুনলাম তা আমি কখনও প্রত্যাশা করিনি। লোকটা বলল, " আগের বছর এমন সময় আকস্মিকভাবে হরিদাসের মৃত্যু হয়। কেউ তাকে তির বিদ্ধ করেছিল। কিন্তু কে করছিল আজও জানা যায়নি। ঐ একই দিনে পাশের একটা নদী থেকে বাচ্চার ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। " আমি সেই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম। যদিও বুঝতে পারছিলাম আমার হাঁটার মতো ক্ষমতাও আর নেই।যাই হোক আবার বাড়ির দিকেই রওনা দিলাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সময়ের হিসাব সব গড়মিল হয়ে গেছে। আমি রয়েছি বিংশ শতকে। তাহলে এতক্ষণ যেটা দেখলাম ওটা কি? কিছুক্ষণ ভাবার পর বুঝলাম ওটা আমার গতকালের স্বপ্ন।আর স্বপ্নেই কেবল সময়ের গড়মিল ঘটানো সম্ভব।তবে একটা কথা কিন্তু ঠিক। মানুষের মনে যদি প্রতিশোধের তির পিছু নেয়, সে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে, কোনো বিপদের কথা না ভেবেই।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৭/০২/২০২২ভালো, বেশ ভালো
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ১৭/০২/২০২২বেশ।
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৬/০২/২০২২দারুণ