www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পোড়ো বাড়ির রহস্য - পর্ব - ৮

পর্ব - ৮

......................শূন্যের দিকে রেখে কিছু নিশ্চয়ই ভাবছে।

জ্যেঠু সিগারেট'টা বার ছয়েক জোরে টান দিয়ে শূন্যের দিকে ধোঁয়া উড়িয়ে আবার ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললেন, " সরকার পরিবার খুব কম দামে এই বাড়িটা পেয়ে যায়। এতটা কম দামে পেয়ে যায় যা সব্বাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ঐ বাড়িটার প্রতি অনেকের লোভ ছিল বলা যেতে পারে তার কারণ বিশেষত বাড়িটির অবস্থান। বাড়িটির সৌন্দর্য এবং তার আশপাশের অবস্থান এতটা সুন্দর ছিল যে যে কেউ দেখলেই পছন্দ করে ফেলতেন। তখন এই বাড়িটার পাশে শ্মশান বা কবর কিছুই ছিল না।"
হঠাৎ মনে একটা প্রশ্ন আসলো, " তাহলে বাড়িটির মালিক এটা বিক্রি করেছিল কেন ? " প্রশ্নটা জ্যেঠুকে করেই ফেললাম। উত্তরে জ্যেঠু বললেন, " মালিকের ছেলে কলকাতায় ভালো চাকরি পেয়েছিল সেজন্য এখানকার সবকিছু বিক্রি করে মা-বাবাকে নিয়ে কলকাতায় চলে যাই।"
আমার মনে একটা খটকা লাগল, শুনেছিলাম, জ্যেঠুদের তো টাকা পয়সা কম ছিল না তবুও জ্যেঠু'রা কেন বাড়িটা কিনে নেয়নি। কিন্তু সেটাকে দমিয়ে দিয়ে আমি ঘাড় নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম যে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।
জ্যুঠু একটু থেমে আবার ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলতে শুরু করলেন, " সালটা ১৯৭৪ এর গোড়ার দিকে। সরকার পরিবারের প্রধান কর্ম কর্তা ছিলেন শশীভূষণ সরকার। যিনি আমার বাবার খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। আমার বাবার হাত ধরেই উনারা পরিবার সহ এদেশে আসেন। শশীভূষণ সরকার হরফে শশী কাকু একজন মাষ্টার ছিলেন। তিনি স্থান ত্যাগ করলেও চাকরিটা হারাতে হয়নি। এটাই উনাদের বাঁচার একমাত্র আশ্বাস ছিল। শশী কাকুর দুই ছেলে ছিল। ছেলে দুটো তখন আমাদের মতোই বয়সি ছিল অর্থাৎ দশ বা বারোর কাছাকাছি। শশীভূষণ সরকারের একটা ভাই ছিল যিনি সেসময় তেমন কিছু করতেন না।"
এই পর্যন্ত বলার পর জ্যেঠু একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ একটানা সন্ধ্যা'র ঘোলাটে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যেন কি একটা দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। হয়ত অতীতের কোনো ইতিহাস। এমন ইতিহাস যা হাজার চেষ্টার ফলেও ভোলা যায় না। তারপর জ্যেঠিমা'র শঙ্খের আওয়াজে জ্যেঠু সম্বিত ফিরে পেলেন। একটা সিগারেট ধরালেন।
জ্যেঠু আগে এত সিগারেট খেতেন না। উনি প্রথমে শুনেছি ধূমপান করতেনই না। কিন্তু সম্ভবত সংসারের চাপ সামলার জন্যই সিগারেট, চিন্তা লঘু করার একমাত্র অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও জ্যেঠু আগে আমাদের সর্বদা বলতেন, " ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। "
সে সব কথা তোমাদের না হয় পরে একদিন সবিস্তারে বলব। আজ একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। জ্যেঠুর ছেলে প্রিয়তোষ দাদা চাকরি পেয়ে জ্যেঠুকে শহরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু জ্যেঠু ও জ্যেঠিমা যাননি।

জ্যেঠু সিগারেট'টা ধরালেন। সেই মৃদু দেশলাইয়ের আলোর জ্যেঠুর অস্পষ্ট মুখটি দেখলাম। একটা গভীর বেদনার সম্ভাবত নেতিবাচক ভঙ্গিমা। চোখ দুটো দেখলেই বোঝা যায় অনন্ত কাল ধরে কিছু একটা গোপন চেপে রাখতে রাখতে চোখ দুটো বসে গিয়েছে একটা গভীর কঠোরে।

জ্যেঠু সজোরে একটা টান নিয়ে ধীরে ধীরে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে নড়েচড়ে বসে বাকিটা বলার জন্য প্রস্তুত হলেন।

চলছে ..........
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৩০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০১/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বেশ ভালো
  • একনিষ্ঠ অনুগত ০৯/০১/২০২২
    রহস্য উদঘাটন হবে কবে?
  • ফয়জুল মহী ০৮/০১/২০২২
    নান্দনিক লিখনশৈলী , শুভ কামনা রইল নিরন্তর ।
 
Quantcast