www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভীমরতি -২

বাইরে ঝির ঝিরে বৃষ্টি । সন্ধ্যা যাই যাই করছে। বারান্দায় তোয়ালে নিতে এসে থমকে দাঁড়ালেন রত্না। রাস্তার হলুদ আলোয় বৃষ্টি ফোঁটাগুলোকে অন্য রকম লাগছে । কার্নিশের মাধবিলতার ঝাড়ে ফুলের বন্যা বয়েছে। মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে । মন অবস করে দেওয়ার জন্য আইডিয়াল সিচুয়েসান। চায়ের জল চাপিয়ে এসেছেন গ্যাসে। টিভির সামনে মা ছেলে বসে চায়ের অপেক্ষা করছে। জল ফুটে হয়ত শুকিয়ে গেল। তবু যেতে ইচ্ছে করছে না তার। আর একটু থাকি আর একটু বলে কে যেন তাকে প্ররোচিত করে যাচ্ছে। সামনের ফ্লাটে সিঞ্চিনি থাকে, তার ঘরে সবসময় খুব হালকা আলো জ্বলে। কাঁচের জানালা দিয়ে ছায়া ছায়া অবয়ব দেখা যাচ্ছে, মনে হয় আরও কেউ আছে ওর সঙ্গে। বদনাম আছে বটে তবে মেয়েটা ভালো গায়। ওর ঘর থেকে গান ভেসে আসছে -এমন দিনে তারে বলা যায়...। এমন ঘনঘোর বরষায় ...। যেটুকু কন্ট্রোল মনের উপর ছিল এই দু লাইনের তোড়ে কোথায় ভেসে চলে গেল। রত্না অবশ হয়ে ব্যাল্কনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন। বিয়ের পরের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল । শ্রাবণে বিয়ে হয়েছিল তাদের। তখন থাকতেন শহরতলির একতলার ভাড়া বাড়িতে। তবে সামনে বাগান ছিল অনেকখানি। একটা দোলনা ছিল সেখানে। এমনি কত বর্ষার দিনে বাইরের আলো নিভিয়ে দিয়ে দোলনায় দুলেছেন তিনি। সুবিনয় চা বানিয়ে এনে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছ তাকে। একদিন গেটের বাইরে বাড়িওয়ালার আওয়াজ পেয়ে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে দোলনা থেকে পড়লেন । পা মুচকে গেল। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলে সুবিনয় এসে দেখেন পা ধরে বসে আছে সে। কিছু বোঝার আগেই বপরিণীতা বধূ কে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়েছিল যুবক বর। ফাঁকা বাড়ি, এমন বর্ষা ঘন সন্ধ্যায় সেদিন অনেকক্ষণ তাকে দুহাতে ভাসিয়ে রেখেছিল সে।এমনি ফুলের গন্ধ ছিল বাতাসে। সেদিনের কথা মনে পড়তে আজ বুকের বাঁপাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলেন রত্না। কত যুগের ওপার থেকে যেন সেই বউটি আজ তাকে দেখে মুখ টিপে হাসছে। নিজেকে নিজেই ধমকালেন রত্না –ছিঃ ।
বর্তমানে ফিরে এলেন তিনি। চায়ের জল এতক্ষণে ফুটে ফুটে নির্ঘাত বাস্প হয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল অথচ চায়ের জন্য ঘরের অন্য দুজনের কারো ডাকাডাকি শুনতে পাওয়া গেল না কেন ? নাকি বেখেয়ালে তিনি শুনতে পান নি। তোয়ালে টা ভিজে গেছে। তিনি আবার সেটাকে মেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে পিছন যেই পিছন ফিরেছেন – দেখলেন ধোঁয়া ওঠা দুটি চায়ের কাপ হাতে মূর্তিমান সুবিনয় হাসি হাসি মুখে দাঁড়ানো । মুখে চোখে কৌতুক উপচে পড়ছে। ভদ্রলোক ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ির গ্যাপ দিয়ে দন্ত বিকাশ করে বললেন - কি গো, পুরনো কথা মনে পড়ে গেছল
নাকি ?
রত্না নিজের কাপটা হাতে নিয়ে চাপা গলায় ধমকালেন – আহা ভীমরতি !
“ভীমরতি কার !”- বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না সুবিনয়। দেখলেন – রত্নার লজ্জা রাঙা আরক্ত মুখে হাসি ঝিকমিক করছে, সেই সঙ্গে দুই চোখের তারায় টলটলে জল .........।

----(6/9/2015)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৯১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৯/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দারুন !
  • খুব সুন্দর । ভালো লাগলো বেশ। আমার ব্লগেও আপনাকে জানাই আমন্ত্রণ।
  • কিশোর কারুণিক ০৭/০৯/২০১৫
    বেশ
 
Quantcast