www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভীমরতি -১

সুবিনয় সমাদ্দার হালে দাড়ি রেখেছন, বেশ কেতার দাড়ি। থুতনির নীচে টবে ঝোলান লতার মত ঝুলছে। পড়ি পড়ি করেও পড়ছে না। গাল মসৃণ কামান। পাতাবাহার গাছের যেমন হয়, দুএকটা করে পাতা লাল, সাদা, তেমনি তার দাড়িতেও লাল সাদা চুলের বাহার দেখা যাচ্ছে। ইদানীং রত্না লক্ষ করেছে দাড়ির সঙ্গে গলার আওয়াজ ভারি করার চেষ্টাও হচ্ছে। অমিতাভের কপি করা । সেরকম গমগমে ব্যারিটোন আওয়াজ বেরোচ্ছে না বটে মাঝে মাঝে ব্রেকটোন হয়ে যাচ্ছে, তবে চেষ্টার ত্রুটি নেই। মনে হয় কিছুদিনের মধ্যে দরজার আড়াল থেকে তাকে শুনলে অমিতাভের ভাই মনে হতে পারে। রত্না মুখ বেঁকিয়ে হাসলেন, অমিতাভ, ফুঃ , বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে। ব্যাটাকে দুমিনিটে ঠিক করে দিতে পারেন , কিন্তু সেই দু মিনিট কায়দা মত পাচ্ছেন না তিনি। মাসখানেক হল সুবিনয়ের মা, তার শাশুড়িঠাকুরুন এসেছেন এখানে। তাই সব সয়ে নিচ্ছেন রত্না। কিন্তু সুদে বাড়ছে। সুদে আসলে উসুল হবে ঠিক সময়ে।
আজ তরকারি কাটার সময় তাড়াহুড়োতে আঙ্গুল কাটল রত্নার। টুপটুপিয়ে রক্ত পড়তে লাগল আলুর উপর। রত্না তাড়াতাড়ি আলুর বাটি সমেত হাত কলের নীচে ধরে ডাক দিলেন পতিকে - অ্যাই, শুনছ, ডেটলের শিশিটা আনো না ! সুবিনয় ব্যাল্কনিতে দাড়ি সৌন্দর্যায়নে ব্যস্ত। ছোট কাঁচি, চিমটা, রেজারসেট নিয়ে এলাহি ব্যাবস্থা। শুনতে পেলেন না। অন্য সময় হলে ডেটলের নাম শুনেই লাফ মেরে আসত, কি হল- কেমন করে হল- বলে বাড়ি মাথায় করত। আর আজ দুবার ডেকে সাড়া না পেয়ে রত্না রাগ করে দাঁড়িয়ে রইলেন । রক্ত পড়ছে পড়ুক। একেবারে শেষ হয়ে যাক। তারপর এ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হলে বুঝবে লোকটা। শাশুড়ি আছেন বলে চিল্লে কিছু বলাও যাচ্ছে না । নাহলে নাম ধরে খুব কষে গরমা গরম শুনিয়ে দিতেন । শাশুড়ি মহিমা কি কারনে এসেছিলেন কিচেনে , তিনি দেখতে পেয়ে তুলো এনে বেঁধে দিলেন। বললেন -থাক মা, আমি কেটে দিচ্ছি বাকিটা।
খেতে বসে বাঁহাতে হাতা ধরা দেখে খেয়াল হল সুবিনয়ের। কি করে হল গো বলে জানতে চেয়ে ফ্যাসাদে পড়ে গেলেন তিনি। রত্না চাপা গলায় হিস হিসিয়ে বললেন - থাক আর ঢং করতে হবে না। খাচ্চ খাও, কাজের লোকের হাত নিয়ে ভাবতে হবে না। যেদিন মরে পড়ে থাকব সেদিন তোমার দাড়ির পালিশ দিয়ে আমাকে জ্বালাতে যেও...।
কাজের লোক ! সুবিনয় হতভম্ব হয়ে গেলেন। বুঝে গেলেন আর একটি কথা বাড়ালে প্রলয়ঙ্কর হতে পারে। মানে মানে খাওয়া শেষ করে পালিয়ে বাঁচলেন।
(ক্রমশ......)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৪৪৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৯/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শুরুটা বেশ সুন্দর হয়েছে।
  • কিশোর কারুণিক ০৫/০৯/২০১৫
    ভাল
  • ঐশিকা বসু ০৪/০৯/২০১৫
    শুরুটা বেশ মজাদার। পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম।
 
Quantcast