(গল্প) প্রতিদ্বন্দ্বী
ইতিহাস বই মাথায় দিয়ে শুয়ে আছে হিয়া। চারদিক নিস্তব্ধ। ফুড়ুত ফুড়ুত নাক ডাকার শব্দে জিয়ার হুঁশ ফিরল, দেখল দিদি সোফায় কাত। কালকের ক্লাস টেস্টের চিন্তা বইর নীচে চাপা দিয়ে দিব্যি নাক ডাকাচ্ছে। জিয়ার ও কাল
টেস্ট আছে, এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ। ওয়াটার পলিউসান এন্ড রিসাইকেল এর কঠিন ফেরে পড়ে চোখে অন্ধকার দেখছে সে। আর দিদি কি বিন্দাস, চিন্তা
ভাবনা নেই। গুপ্তা ডাইনেস্টি চুলোয় যাক, গোল্ডেন এজে গুলি মারো, তার কিছু যায় আসে না। জিয়ার ও তার দিদির মত হতে ইচ্ছে করে, কেন করবে না! সেতো মাত্র দেড় বছরের ছোট হিয়ার থেকে, এক স্কুলে পড়ে। অথচ প্রতিবারে মম তাকেই টার্গেট করে রাখে। পেপার বেরলেই ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড চেক করবে, একটু আধটু ভুল হলে আর রক্ষে নেই। কথায় কেলিয়ে দেবে একেবারে । আর হিয়া কে দেখো, আকচার পেপার বেরনোর কথা চেপে যাবে, যদিও বা দেখাবে, মমের হাত গুজে দিয়ে হয় ওয়াসরুমে হাওয়া, নয়তো টেলিফোন নিয়ে ব্যাল্কনিতে। মম কি বলল না বলল ডোন্ট কেয়ার। জিয়ার খুব অভিমান হচ্ছে আজ। জিনিসটাকে বেশী স্পেস দেওয়া ঠিক হবে না। সে জানে কোন লাভ নেই। সবাই বলে তার পুরো বডি নাকি পাপার জেরক্স। পাপাও খুব ক্লোজ তার কাছে। পাপা
তার দলে আছে বটে তবে ডাইরেক্ট এনকাউন্টার হলে মার কাছে হেরে ভুত। ফায়ারের আগেই সারেন্ডার। খাওয়ার টেবিলে নখরা করবে হিয়া, স্কুল টিফিন নিয়ে
বাহানা করবে হিয়া, সব মাফ। আর জিয়া যদি একটু ব্যাগরবাঁই করেছে, আর রক্ষা
নেই। দুনিয়ার যত সারনম তার জন্য রাখা, অয়ান বাই অয়ান তাকে শুনতে হবে।
এমনকি বাড়ির আয়া রমাদি পর্যন্ত তাকে নরম করে বলবে - তুমি না ভালো মেয়ে,
বেস্ট ডটার, তোমার এরকম করা একদম উচিত নয়।
কে চেয়েছে বেস্ট ডটার হতে। সে কি শুধু বেস্ট হওয়ার কমপিটিসানে নামতে
জন্মেছে এই ঘরে । স্কুলে টেন অন টেন আনো, ঘরে সবার কথা মানো, একেবারে
আইডিয়াল গুডগার্ল। সে পাপার মত দেখতে বলে কি পাপার মত ব্রাইট স্টুডেন্ট
হতে হবে! তাকেও এমন ক্যারিয়ার বিলড আপ করতে হবে? হিয়াও তো মমের
মত। বরং তার চেয়েও দশগুন সুন্দরী, কেউ তো তাকে মমের মতন হতে বলে না।
মমও ওয়ার্কিং উওম্যান। মমও কত কষ্ট করে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী নিয়েছে। তবে কেন
হিয়াকে সেরকম হতে চাপ দেওয়া হয় না। মমও মেনে নিয়েছে যেন তার এই বেয়াদপি।
স্কুলে যাওয়ার সময় যথারীতি হিয়া, জুতোর পালিস নিয়ে নখরা করতে লাগল। জিয়া একদম
টাইট হয়ে রইল। আজ আর মমের কথা শুনে সে ওর জুতো পালিশ করে দেবে না। যতই
হিয়া প্যানপ্যান করুক, মম বলবে - তোরটা হয়ে গেলে ওরটাও একটু ঘসে দিস। না সে
দেবে না আজ, কিছুতেই দেবে না। কিন্তু আজ একটু অন্যরকম হল, মম কঠিন গলায় বলল -
ডু ইয়োরশেল্ফ। হিয়া করুন চোখে দেখল বোনকে, জিয়া ততক্ষণে দরজা পেরিয়ে সিঁড়িতে।
দিনের শুরুতে এমন অপ্রত্যাশিত জয় পেয়ে জিয়ার মনটা ভালো হয়ে গেল। সে ঠিক করল
আজ আরও কয়েকবার তার ভাগ্য পরীক্ষা করতে হবে। কারন যেদিন ভালো যায়, সেদিন
সবকিছু ভালো হয়। কি করবে সে, ভাবল সে। সাওনির টিফিনে বালি দিয়ে দেবে ? শালা
দুবার তার টিফিন নষ্ট করেছে পেন্সিলকাটা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে। না, তারচেয়ে ভালো
হয় যদি আজ টেস্টে কিছু না লিখে ব্ল্যাংক সীট জমা দিলে। সিওর গার্জেন কল হবে।
হোক, সেও হিয়ার মত বলবে - মাথা ধরেছিল, চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিল না।
বাবা করুন মুখে এসে মিসের কাছে ওর হয়ে ও এয়াপলজি চাইবে। বেশ হবে।
একদিনের জন্য হলেও সে হবে
হিয়ার সমান। প্রায় কালো রঙ একবিঘত চকোলেট দু খণ্ড করে একভাগ দিল সাওনি। খা,
অরিজিনাল অস্ট্রেলিয়ান মাল। এখানে পাবি না। জিনিসটা দেখে জিভে ডগা ওয়াটার ওয়াটার
হয়ে গেল, মুখে একটুও সে ভাব আনল না সে। খুব অনিচ্ছায় যেন একটা কামড় দিল তাতে।
সাওনি বলল - এই, হিয়াদি আজ লিপগ্লস লাগিয়েছে না ন্যাচারেল কালার লিপস্টিক রে ?
- জানিনা। ইস, যা ঘ্যামা লাগছে না। ওঃ আমার যদি ওরকম কমপ্লেক্সান থাকত !
- কি হত, তোর ল্যাজ বেরত।
- অ্যাই, জেলাস হবি না , তুই ভালোই জানিস কি হত, এই গাধার মত হোমট্যাক্স করতে বয়ে
যেত আমার। কোনরকমে ডিঙি মেরে পাশ করে গেলেই ব্যাস।
- তারপর !
- তারপর তোর হেডেক, বুদ্ধু। শালা এলিজিবল ছেলেদের লাইন লেগে যেত। একটা ব্যাপক হাই ফাই মুর্গা পকিয়ে ঝুলে পড়তাম। নো চিন্তা।
- তাই ! জিয়া ওর সটান চিন্তায় অবাক হয়ে গেল। বেল বেজে গেছে, দুদ্দাড় করে ক্লাসরুমে
ঢুকে পড়ল সবাই। সোজা পেপার। সবকটা আন্সার জানা। তবু লিখতে পারছিল না জিয়া। বার বার
খালি সাওনির কথাগুলো কানে বাজছিল। নিতাপিসি কি সেজন্যই মাকে বলে - তোর আর কোন চিন্তা নেই
দুটো মেয়েই দারুন, একটা রূপবতী, একটা গুণবতী।
আসলে সবাই এমনি করে ভাবে, যেভাবে সাওনি এক্সপ্লেন করল। মমও কি এমন করে ভাবে ?
তার রূপ কম বলে ক্যারিয়ারের উপর এত জোর দেয়, তাই কি ...। পাপা ও কি এমন ।
তার পেন থেমে নেই, শুধু কোথা থেক যেন দুটো বড় বড় ফোঁটায় জল পেপারের উপর ঝরে পড়ল।
-------- শ্রীতরুণ (গিরি)
৩০/৭/২০১৫
টেস্ট আছে, এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ। ওয়াটার পলিউসান এন্ড রিসাইকেল এর কঠিন ফেরে পড়ে চোখে অন্ধকার দেখছে সে। আর দিদি কি বিন্দাস, চিন্তা
ভাবনা নেই। গুপ্তা ডাইনেস্টি চুলোয় যাক, গোল্ডেন এজে গুলি মারো, তার কিছু যায় আসে না। জিয়ার ও তার দিদির মত হতে ইচ্ছে করে, কেন করবে না! সেতো মাত্র দেড় বছরের ছোট হিয়ার থেকে, এক স্কুলে পড়ে। অথচ প্রতিবারে মম তাকেই টার্গেট করে রাখে। পেপার বেরলেই ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড চেক করবে, একটু আধটু ভুল হলে আর রক্ষে নেই। কথায় কেলিয়ে দেবে একেবারে । আর হিয়া কে দেখো, আকচার পেপার বেরনোর কথা চেপে যাবে, যদিও বা দেখাবে, মমের হাত গুজে দিয়ে হয় ওয়াসরুমে হাওয়া, নয়তো টেলিফোন নিয়ে ব্যাল্কনিতে। মম কি বলল না বলল ডোন্ট কেয়ার। জিয়ার খুব অভিমান হচ্ছে আজ। জিনিসটাকে বেশী স্পেস দেওয়া ঠিক হবে না। সে জানে কোন লাভ নেই। সবাই বলে তার পুরো বডি নাকি পাপার জেরক্স। পাপাও খুব ক্লোজ তার কাছে। পাপা
তার দলে আছে বটে তবে ডাইরেক্ট এনকাউন্টার হলে মার কাছে হেরে ভুত। ফায়ারের আগেই সারেন্ডার। খাওয়ার টেবিলে নখরা করবে হিয়া, স্কুল টিফিন নিয়ে
বাহানা করবে হিয়া, সব মাফ। আর জিয়া যদি একটু ব্যাগরবাঁই করেছে, আর রক্ষা
নেই। দুনিয়ার যত সারনম তার জন্য রাখা, অয়ান বাই অয়ান তাকে শুনতে হবে।
এমনকি বাড়ির আয়া রমাদি পর্যন্ত তাকে নরম করে বলবে - তুমি না ভালো মেয়ে,
বেস্ট ডটার, তোমার এরকম করা একদম উচিত নয়।
কে চেয়েছে বেস্ট ডটার হতে। সে কি শুধু বেস্ট হওয়ার কমপিটিসানে নামতে
জন্মেছে এই ঘরে । স্কুলে টেন অন টেন আনো, ঘরে সবার কথা মানো, একেবারে
আইডিয়াল গুডগার্ল। সে পাপার মত দেখতে বলে কি পাপার মত ব্রাইট স্টুডেন্ট
হতে হবে! তাকেও এমন ক্যারিয়ার বিলড আপ করতে হবে? হিয়াও তো মমের
মত। বরং তার চেয়েও দশগুন সুন্দরী, কেউ তো তাকে মমের মতন হতে বলে না।
মমও ওয়ার্কিং উওম্যান। মমও কত কষ্ট করে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী নিয়েছে। তবে কেন
হিয়াকে সেরকম হতে চাপ দেওয়া হয় না। মমও মেনে নিয়েছে যেন তার এই বেয়াদপি।
স্কুলে যাওয়ার সময় যথারীতি হিয়া, জুতোর পালিস নিয়ে নখরা করতে লাগল। জিয়া একদম
টাইট হয়ে রইল। আজ আর মমের কথা শুনে সে ওর জুতো পালিশ করে দেবে না। যতই
হিয়া প্যানপ্যান করুক, মম বলবে - তোরটা হয়ে গেলে ওরটাও একটু ঘসে দিস। না সে
দেবে না আজ, কিছুতেই দেবে না। কিন্তু আজ একটু অন্যরকম হল, মম কঠিন গলায় বলল -
ডু ইয়োরশেল্ফ। হিয়া করুন চোখে দেখল বোনকে, জিয়া ততক্ষণে দরজা পেরিয়ে সিঁড়িতে।
দিনের শুরুতে এমন অপ্রত্যাশিত জয় পেয়ে জিয়ার মনটা ভালো হয়ে গেল। সে ঠিক করল
আজ আরও কয়েকবার তার ভাগ্য পরীক্ষা করতে হবে। কারন যেদিন ভালো যায়, সেদিন
সবকিছু ভালো হয়। কি করবে সে, ভাবল সে। সাওনির টিফিনে বালি দিয়ে দেবে ? শালা
দুবার তার টিফিন নষ্ট করেছে পেন্সিলকাটা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে। না, তারচেয়ে ভালো
হয় যদি আজ টেস্টে কিছু না লিখে ব্ল্যাংক সীট জমা দিলে। সিওর গার্জেন কল হবে।
হোক, সেও হিয়ার মত বলবে - মাথা ধরেছিল, চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিল না।
বাবা করুন মুখে এসে মিসের কাছে ওর হয়ে ও এয়াপলজি চাইবে। বেশ হবে।
একদিনের জন্য হলেও সে হবে
হিয়ার সমান। প্রায় কালো রঙ একবিঘত চকোলেট দু খণ্ড করে একভাগ দিল সাওনি। খা,
অরিজিনাল অস্ট্রেলিয়ান মাল। এখানে পাবি না। জিনিসটা দেখে জিভে ডগা ওয়াটার ওয়াটার
হয়ে গেল, মুখে একটুও সে ভাব আনল না সে। খুব অনিচ্ছায় যেন একটা কামড় দিল তাতে।
সাওনি বলল - এই, হিয়াদি আজ লিপগ্লস লাগিয়েছে না ন্যাচারেল কালার লিপস্টিক রে ?
- জানিনা। ইস, যা ঘ্যামা লাগছে না। ওঃ আমার যদি ওরকম কমপ্লেক্সান থাকত !
- কি হত, তোর ল্যাজ বেরত।
- অ্যাই, জেলাস হবি না , তুই ভালোই জানিস কি হত, এই গাধার মত হোমট্যাক্স করতে বয়ে
যেত আমার। কোনরকমে ডিঙি মেরে পাশ করে গেলেই ব্যাস।
- তারপর !
- তারপর তোর হেডেক, বুদ্ধু। শালা এলিজিবল ছেলেদের লাইন লেগে যেত। একটা ব্যাপক হাই ফাই মুর্গা পকিয়ে ঝুলে পড়তাম। নো চিন্তা।
- তাই ! জিয়া ওর সটান চিন্তায় অবাক হয়ে গেল। বেল বেজে গেছে, দুদ্দাড় করে ক্লাসরুমে
ঢুকে পড়ল সবাই। সোজা পেপার। সবকটা আন্সার জানা। তবু লিখতে পারছিল না জিয়া। বার বার
খালি সাওনির কথাগুলো কানে বাজছিল। নিতাপিসি কি সেজন্যই মাকে বলে - তোর আর কোন চিন্তা নেই
দুটো মেয়েই দারুন, একটা রূপবতী, একটা গুণবতী।
আসলে সবাই এমনি করে ভাবে, যেভাবে সাওনি এক্সপ্লেন করল। মমও কি এমন করে ভাবে ?
তার রূপ কম বলে ক্যারিয়ারের উপর এত জোর দেয়, তাই কি ...। পাপা ও কি এমন ।
তার পেন থেমে নেই, শুধু কোথা থেক যেন দুটো বড় বড় ফোঁটায় জল পেপারের উপর ঝরে পড়ল।
-------- শ্রীতরুণ (গিরি)
৩০/৭/২০১৫
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ১২/০১/২০১৮সুন্দর লিখেছেন।
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ১১/০৯/২০১৫দারুন বিশ্লেষণ। ভাল লাগল ।
-
অভিষেক মিত্র ০৩/০৯/২০১৫বাঃ।