ধন্দ
শমীক , শ্যামলিমা , আর শ্রীকান্ত একই গ্রামে থাকত । গ্রামের নাম শিমুলপুর । তিনজনের নাম এমন কি গ্রামের নাম ও শ দিয়ে । কারণ এদের তিনজনের জীবন শ এর মাঝখানের গোল্লাগুলোর মত পেঁচিয়ে গিয়েছিল । শ্যামলিমা আর শ্রীকান্ত স্বামী স্ত্রী । তাদের বৈবাহিক জীবন খুব সুখের । শ্যামলিমার মত সতী লক্ষ্মী স্ত্রী আর হয় না । শ্যামলিমা দেখতেও খুব সুন্দর । চলনে বলনে কথাবার্তায় আচরণে তার মত মেয়ে বড় দেখা যায় না । আর শমীক হল শ্রীকান্তর বন্ধু , সহপাঠী । শ্যামলিমা কিন্তু আবার শমীকের পূর্বপরিচিত । তারা কোনোভাবে একে অপরকে চিনত ।
সুন্দর গ্রাম এই শিমুলপুর । গাছগাছালিতে ভরা এই গ্রামের প্রকৃতি খুব মনোরম । গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ক্ষীণকায়া কাঁসাই নদী ।
গ্রামের ঠিক পশ্চিম কোণে শ্যামলিমা ও শ্রীকান্তের ছোট্টো নীড় । গ্রামের কোনো লোক কখনো এই দম্পতির মধ্যে তীব্র কোনো মতবিরোধ প্রত্যক্ষ করেনি ।
কিন্তু শমীক মাঝে মাঝে বন্ধু শ্রীকান্তর কাছে আসত কখনো প্রয়োজনে কখনো গালগল্প করতে । আর শ্যামলিমার রূপমুগ্ধ গুণমুগ্ধ হয়ে পড়ত । হয়ত ঈশ্বরের কাছে তার মত স্ত্রীর কামনা করত । তার এই হাবভাব গ্রামের কিছু ছিদ্রান্বেষী মানুষের চোখ এড়ায়নি । যদিও এই ব্যাপারটার মধ্যে কোনো কিছু খারাপ ছিল না কিন্তু মানুষের কুটিল প্রশ্নের কোনো উত্তর কি কখনো দেওয়া যায় ?
এক দুর্যোগের সন্ধ্যা । বাইরে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি ও বজ্রপাত । শ্রীকান্ত কাজ থেকে তখনো বাড়ি ফেরেনি । আর শ্যামলিমা চিন্তায় চিন্তায় অস্থির । আর ঠিক সেই সময় শমীক এসেছে এই দুর্যোগে কিছুক্ষণ আশ্রয়ের জন্য । শ্যামলিমা তাকে বসিয়ে শ্রীকান্তর খোঁজ নেয় । শমীক বলল , " বৌঠান চিন্তা কোরো না । ঝড় বৃষ্টিতে কোথাও আটকে গেছে । নিশ্চয়ই তারপর বাড়ি ফিরে আসবে ।"
বাড়ির পাশ দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিল কুব্জদেহ কুটিল প্রৌঢ় জটিল ঘোষ । সে ভাবল স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার বন্ধুর সঙ্গে নিশ্চয়ই শ্যামলিমা ফস্টিনষ্টি করছে ।
একটু দেরী ক'রে শ্রীকান্ত বাড়ি ফিরল । ততক্ষণে বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে শমীক বাড়ি ফিরে গিয়েছে । শ্যামলিমা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল শ্রীকান্তর আগমনে । "এত দেরী করলে কেন গো ? জানো না কত চিন্তা হয় ? ওদিকে তোমার বন্ধু তো তোমার অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে বাড়ি ফিরে গেল " শ্যামলিমা বলল ।
"শুধু কি আমার বন্ধু ? তোমার কিছু নয় ? " শ্রীকান্ত ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল । " আমার আবার কি ? কোন্ এক যুগে আমার দাদার বন্ধু ছিল তাও কলেজে অন্য শাখায় পড়ত " শ্যামলিমা মিষ্টি হেসে বলল ।
শ্রীকান্ত অবাক দৃষ্টিতে শ্যামলিমার দিকে তাকিয়ে রইল । শ্যামলিমা বলল , " কি দেখছ ? " । " কে বলল আজ চাঁদ ওঠেনি ? আমার আকাশে তো জোছনা দেখতে পাচ্ছি " । শ্রীকান্ত মুগ্ধ কন্ঠে বলতে লাগল ! শ্যামলিমা বলল , " ধ্যাৎ ! কি যে বলো না তুমি ? "
সকালে পাখির কলকাকলিতে শিমুলপুর গ্রামের সকলে উঠে পড়েছে । হঠাৎ শ্রীকান্তর বাড়িতে কড়া নাড়ার আওয়াজ শোনা গেল । শ্রীকান্ত চাকরি করতে বেরিয়েছে । ঘরে শ্যামলিমা একা ।
মোড়লের কর্মচারী সনাতন এসেছে । " শীতলা কালী মন্দিরের দালানে সভা বসেছে । গেরামে সকলকে যেতে বলেছে কর্তা মা " । " বাবু তো বাড়িতে নেই " । " তবে আপনি একাই চলেন গো " সনাতন জানাল ।
কালী মন্দিরের সামনে পুরো গ্রামের লোকজন ভেঙে পড়েছে । কিসের কারণে সভা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতার পর মোড়লমশাই মুখ খুললেন " গ্রামে যে অনাচার হয়েছে গতকাল রাতে আজ তার বিচার হবে " । " গতকাল রাতে শ্রীকান্তর বৌ শ্যামলিমা আর শ্রীকান্তর বন্ধু শমীককে আপত্তিজনক অবস্থায় দেখেছে আমাদের গ্রামের বয়স্ক মানুষ জটিল ঘোষ । " শ্যামলিমা বসে বসে সব শুনছে আর চোখের জল ফেলছে । তাকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না ।
এই সময়ে কারোর কাছে কোনোরকমে খবর পেয়ে শ্রীকান্ত সেখানে পৌঁছে গেল । সবকিছু শুনে সে সত্যি মনে করল । এই অপমান সে মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না । সটান মন্দিরে ঢুকে প্রতিমার হাত থেকে খাঁড়া নিয়ে নিজের ঘাড়ের উপর সর্বশক্তি দিয়ে এক কোপ চালাল । মাথা আর ধড় আলাদা হয়ে গেল । গ্রামশুদ্ধ লোক হায় হায় করতে লাগল । শ্যামলিমা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল পাগলের মত ।
হঠাৎ ক'রে ধূমকেতুর মতো এসে জুটল শমীক । এইসব দৃশ্য দেখে সে নিজেকেই দোষী বলে ভাবতে শুরু করল । মাটি থেকে খাঁড়া তুলে নিয়ে সেও চালিয়ে দিল ঘাড়ের উপর । মাথা ছিটকে পড়ল । মাথাকাটা দেহে হাত পা ছটফট করতে করতে স্তব্ধ হয়ে গেল ।
এইসব দেখেশুনে শ্যামলিমা মা কালীর কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকল । " আমি যদি স্বামী ছাড়া আর কারোর সাথে সম্পর্ক না রাখি এবং আমি যদি সৎপথে থাকি তাহলে এই দুইজন নিরপরাধ মানুষের প্রাণ ফিরিয়ে দাও মা ফিরিয়ে দাও ফিরিয়ে দাও মা .... " ।
হঠাৎ আকাশে বিনা মেঘে বজ্রপাত হল । বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠস্বর ভেসে এল " ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে যদি দুজনের মাথা দেহের সঙ্গে স্পর্শ করিয়ে দেওয়া হয় তাহলে দুজনেই প্রাণ ফিরে পাবে । "
সেইমত শ্যামলিমা দুজনের মাথা দেহের সঙ্গে স্পর্শ করিয়ে দিল । কিন্তু তাড়াহুড়োতে এর মাথা ওর দেহে আর ওর মাথা এর দেহে লেগে গেল ।
দুজনেই প্রাণ ফিরে পেল । কিন্তু শ্যামলিমার কাছে চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে গেল সারাটা জীবন ।
সে যে কাকে গ্রহণ করবে এটা পাঠককুলই ভালো বলতে পারবেন ।
সুন্দর গ্রাম এই শিমুলপুর । গাছগাছালিতে ভরা এই গ্রামের প্রকৃতি খুব মনোরম । গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ক্ষীণকায়া কাঁসাই নদী ।
গ্রামের ঠিক পশ্চিম কোণে শ্যামলিমা ও শ্রীকান্তের ছোট্টো নীড় । গ্রামের কোনো লোক কখনো এই দম্পতির মধ্যে তীব্র কোনো মতবিরোধ প্রত্যক্ষ করেনি ।
কিন্তু শমীক মাঝে মাঝে বন্ধু শ্রীকান্তর কাছে আসত কখনো প্রয়োজনে কখনো গালগল্প করতে । আর শ্যামলিমার রূপমুগ্ধ গুণমুগ্ধ হয়ে পড়ত । হয়ত ঈশ্বরের কাছে তার মত স্ত্রীর কামনা করত । তার এই হাবভাব গ্রামের কিছু ছিদ্রান্বেষী মানুষের চোখ এড়ায়নি । যদিও এই ব্যাপারটার মধ্যে কোনো কিছু খারাপ ছিল না কিন্তু মানুষের কুটিল প্রশ্নের কোনো উত্তর কি কখনো দেওয়া যায় ?
এক দুর্যোগের সন্ধ্যা । বাইরে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি ও বজ্রপাত । শ্রীকান্ত কাজ থেকে তখনো বাড়ি ফেরেনি । আর শ্যামলিমা চিন্তায় চিন্তায় অস্থির । আর ঠিক সেই সময় শমীক এসেছে এই দুর্যোগে কিছুক্ষণ আশ্রয়ের জন্য । শ্যামলিমা তাকে বসিয়ে শ্রীকান্তর খোঁজ নেয় । শমীক বলল , " বৌঠান চিন্তা কোরো না । ঝড় বৃষ্টিতে কোথাও আটকে গেছে । নিশ্চয়ই তারপর বাড়ি ফিরে আসবে ।"
বাড়ির পাশ দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিল কুব্জদেহ কুটিল প্রৌঢ় জটিল ঘোষ । সে ভাবল স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার বন্ধুর সঙ্গে নিশ্চয়ই শ্যামলিমা ফস্টিনষ্টি করছে ।
একটু দেরী ক'রে শ্রীকান্ত বাড়ি ফিরল । ততক্ষণে বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে শমীক বাড়ি ফিরে গিয়েছে । শ্যামলিমা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল শ্রীকান্তর আগমনে । "এত দেরী করলে কেন গো ? জানো না কত চিন্তা হয় ? ওদিকে তোমার বন্ধু তো তোমার অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে বাড়ি ফিরে গেল " শ্যামলিমা বলল ।
"শুধু কি আমার বন্ধু ? তোমার কিছু নয় ? " শ্রীকান্ত ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল । " আমার আবার কি ? কোন্ এক যুগে আমার দাদার বন্ধু ছিল তাও কলেজে অন্য শাখায় পড়ত " শ্যামলিমা মিষ্টি হেসে বলল ।
শ্রীকান্ত অবাক দৃষ্টিতে শ্যামলিমার দিকে তাকিয়ে রইল । শ্যামলিমা বলল , " কি দেখছ ? " । " কে বলল আজ চাঁদ ওঠেনি ? আমার আকাশে তো জোছনা দেখতে পাচ্ছি " । শ্রীকান্ত মুগ্ধ কন্ঠে বলতে লাগল ! শ্যামলিমা বলল , " ধ্যাৎ ! কি যে বলো না তুমি ? "
সকালে পাখির কলকাকলিতে শিমুলপুর গ্রামের সকলে উঠে পড়েছে । হঠাৎ শ্রীকান্তর বাড়িতে কড়া নাড়ার আওয়াজ শোনা গেল । শ্রীকান্ত চাকরি করতে বেরিয়েছে । ঘরে শ্যামলিমা একা ।
মোড়লের কর্মচারী সনাতন এসেছে । " শীতলা কালী মন্দিরের দালানে সভা বসেছে । গেরামে সকলকে যেতে বলেছে কর্তা মা " । " বাবু তো বাড়িতে নেই " । " তবে আপনি একাই চলেন গো " সনাতন জানাল ।
কালী মন্দিরের সামনে পুরো গ্রামের লোকজন ভেঙে পড়েছে । কিসের কারণে সভা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতার পর মোড়লমশাই মুখ খুললেন " গ্রামে যে অনাচার হয়েছে গতকাল রাতে আজ তার বিচার হবে " । " গতকাল রাতে শ্রীকান্তর বৌ শ্যামলিমা আর শ্রীকান্তর বন্ধু শমীককে আপত্তিজনক অবস্থায় দেখেছে আমাদের গ্রামের বয়স্ক মানুষ জটিল ঘোষ । " শ্যামলিমা বসে বসে সব শুনছে আর চোখের জল ফেলছে । তাকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না ।
এই সময়ে কারোর কাছে কোনোরকমে খবর পেয়ে শ্রীকান্ত সেখানে পৌঁছে গেল । সবকিছু শুনে সে সত্যি মনে করল । এই অপমান সে মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না । সটান মন্দিরে ঢুকে প্রতিমার হাত থেকে খাঁড়া নিয়ে নিজের ঘাড়ের উপর সর্বশক্তি দিয়ে এক কোপ চালাল । মাথা আর ধড় আলাদা হয়ে গেল । গ্রামশুদ্ধ লোক হায় হায় করতে লাগল । শ্যামলিমা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল পাগলের মত ।
হঠাৎ ক'রে ধূমকেতুর মতো এসে জুটল শমীক । এইসব দৃশ্য দেখে সে নিজেকেই দোষী বলে ভাবতে শুরু করল । মাটি থেকে খাঁড়া তুলে নিয়ে সেও চালিয়ে দিল ঘাড়ের উপর । মাথা ছিটকে পড়ল । মাথাকাটা দেহে হাত পা ছটফট করতে করতে স্তব্ধ হয়ে গেল ।
এইসব দেখেশুনে শ্যামলিমা মা কালীর কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকল । " আমি যদি স্বামী ছাড়া আর কারোর সাথে সম্পর্ক না রাখি এবং আমি যদি সৎপথে থাকি তাহলে এই দুইজন নিরপরাধ মানুষের প্রাণ ফিরিয়ে দাও মা ফিরিয়ে দাও ফিরিয়ে দাও মা .... " ।
হঠাৎ আকাশে বিনা মেঘে বজ্রপাত হল । বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠস্বর ভেসে এল " ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে যদি দুজনের মাথা দেহের সঙ্গে স্পর্শ করিয়ে দেওয়া হয় তাহলে দুজনেই প্রাণ ফিরে পাবে । "
সেইমত শ্যামলিমা দুজনের মাথা দেহের সঙ্গে স্পর্শ করিয়ে দিল । কিন্তু তাড়াহুড়োতে এর মাথা ওর দেহে আর ওর মাথা এর দেহে লেগে গেল ।
দুজনেই প্রাণ ফিরে পেল । কিন্তু শ্যামলিমার কাছে চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে গেল সারাটা জীবন ।
সে যে কাকে গ্রহণ করবে এটা পাঠককুলই ভালো বলতে পারবেন ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আর, এস, রায়হান মজুমদার ১৭/০২/২০১৮সুন্দর
-
আবু সাইদ লিপু ২৭/০১/২০১৮আহারে!
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৫/০১/২০১৮লেখার ধরণ চমৎকার ছিল।
-
তরীকুল ইসলাম সৈকত ২৪/০১/২০১৮দারুন!!
-
মধু মঙ্গল সিনহা ২৪/০১/২০১৮ভালো লাগলো..
-
তরীকুল ইসলাম সৈকত ২৩/০১/২০১৮সুন্দর!
-
আব্দুল হক ২৩/০১/২০১৮ভালো লিখেছেনঃ ধন্যবাদ!